যেতে যেতে পথে
রোশেনারা খান
পর্ব ৮০
রানীর কাছে শুনলাম ছেলে ওকে বলেছে, ‘আমার ৩৬৫ দিনই ২৪ ঘণ্টা ডিউতি। বেশিরভাগ দিন বাড়ি থাকতে পারব না’। রানীর প্রশ্ন ,আমি তাহলে সারাদিন জঙ্গলে একা একা কী করব? কারো সঙ্গে মেলামেশাও করা চলবে না’।তাছাড়া ছেলে বেঁটে, ওর বেঁটে ছেলে একদম পছন্দ নয়। যাক, যা হয়েছে ভালই হয়েছে।
এদিকে শাহটিম্বার থেকে ওদের ছেলের জন্য বলছে। এঁরা আমার শ্বশুরবাড়ির তরফের পুরনো আত্মীয়। একদিন ছেলের বাবা সাহজামাল এসেছিলেন, কিন্তু বিয়ের ব্যপারে কিছু বলে উঠতে পারেননি। রানী একদিন নিজেই বিষয়টা আমাকে জানায়, ও রোজ কলেজ বাস থেকে ওদের বাড়ির সামনে নামে, ওঠেও। ওদের বাড়ির নিচে যে অ্যাপোলো ফার্মেসী আছে সেখানে ২/১ বার ওষুধ কিনতে গিয়ছে। সেই রকমই একদিন ওষুধ কেনার সময় সাহজামাল ওকে ডেকে খোঁজ খবর নিয়েছিল। খান সাহেব মেসো হয় শুনে বলেছিল, ‘উনি আমাদের আত্মীয়’। সম্ভবত রানিকে ছেলে (সাহবাজ) আগে পছন্দ করে। নিজেই বাবাকে কথা বলতে বলে। ওরা খুবই ধনী, সেটা বড়কথা নয়। ছেলে কেমন? কী করে? বিয়ের ক্ষেত্রে এটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেটাও নিরাশাব্যাঞ্জক নয়, সাহবাজ টেকনো ইণ্ডিয়া থেকে পাশ করে আলিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে এম বি এ করে ষ্টেট ব্যঙ্কে চাকরি পেয়েছিল, ঘড়ি ধরে হাজিরা দেওয়া ওর পোষায়নি। বাড়ি ফিরে নিজেদের প্রোমোটারি বিজনেসে যোগ দেয়। মেজদা প্রথমে ছেলের বাড়ি গিয়েছিল। মানে সাহবাজ কোর্ট থেকে দাদাকে নিয়ে এসেছিল বিয়ের ব্যপারে কথাবার্তা বলার জন্য। ওরাও একদিন আমার বাড়িতে আসে। এরপর দাদা আর একদিন ওদের বাড়িতে কথা বলতে গেলে দুই পক্ষেরই কারো কথা কারো পছন্দ হয়নি। দাদা আমার ওপর সব ভার তুলে দিয়ে সরে দাঁড়ায়। ছোটরা স্বামী-স্ত্রী এই বিয়েটা হোক, একদমই চাইনা। ওরা চেয়েছিল গ্রামের অল্প শিক্ষিত ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে। তাছাড়া ওরা আগেই জানিয়ে দিয়েছিল রানীর বিয়ের কোনও দায়িত্ব ওরা নিতে পারবে না। এত ধনী বাড়িতে রানীর বিয়ে প্রসঙ্গে বলেই দেয়, ‘কোনও টাকা দিতে পারব না। বড়লোক বাড়িতে বিয়ে দিলে ওদের সব অনুষ্ঠানে সোনার জিনিস গিফট দিতে হবে। তুমি কেন এই পরিবারে রানীর বিয়ের কথা ভাবছ’? এগুলো শুরুর দিকের কথা। মেজদা তখন বিয়ের পক্ষেই ছিলেন। তিনি একদিন কথা প্রসঙ্গে বলেন, এখানে বিয়েতে পাপুর কেন এত আপত্তি? রানী গাড়ি চড়ে বেড়াবে, সেটা ওর বৌ সহ্য করতে পারবে না বলে? বিয়েটা ভাঙ্গানোর চেষ্টা হচ্ছে এবং সেটা তথাকথিত নিজের লোকেরাই করছে, বুঝতে পেরে রটিয়ে দেওয়া হয়েছিল, রানীর বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে।
আজ সকাল থেকে তিনবার ব্যঙ্কে গিয়ে তবে কাজ সম্পূর্ণ হল। প্রথমে ওরা বলল,’দাদার ফুল সই চায়’। বাড়ি এসে করিয়ে নিয়ে গেলাম। ওনারা সব গুছিয়ে ম্যানেজারের কাছে জমা দিয়ে আমাকে বাড়ি চলে যেতে বললেন। বিকেলে আবার ফোন, ছবি দেওয়া হয়নি, আরো কিছু সইও বাকি থেকে গেছে। ৫টার সময় খান সাহেবকে নিয়ে আবার গেলাম। ৬ টায় বাড়ি ফিরলাম।
আজ বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠের(বালিকা) হীরকজয়ন্তী উতসবে গিয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অভ্র বসু ও ওনার স্ত্রী শীলা বসুর সঙ্গে আলাপ হল। ‘আমার বাঙালি মুসলিম সমাজ ও নারী’ বইটির এক কপি অভ্র বসুর হাতে দিলে উনি বইটি শীলা বসুর হাতে দেন। কিছু পরে শ্রীমতী বসু নিজে এসে আলাপ করে বলেন ‘আপনার বইটি খুবই সুন্দর, আমি এখানে বসেই দুটো লেখা পড়ে ফেললাম। ভীষণ ভাল লাগল, পুরো বইটা পড়া হলে ফোন করে অপনাকে জানাব।
ভাইঝি সুহানা, বোনঝি রানী, দুজনেই বাড়ি গেছে। নার্সিংহোম থেকে ফিরে রান্না করলাম। আজ রানীর বিয়ের বিষয়ে অনেক কথা হয়েছে। ছেলের(সাহবাজ) সঙ্গে কথা বলে রেজিস্ট্রিটা তাড়াতাড়ি করতে বলেছি। দেখা যাক মেয়েটার কপালে কী আছে? বিয়ে ভাঙ্গার খবরে খুশি চেপে রাখতে না পেরে ছোট বলেই ফেলেছে, ‘ঠিক হয়েছে, খুব শখ, বড়লোক বাড়ির বৌ হবে, গাড়িচড়ে বেড়াবে’! নিজের কেউ এভাবে বললে বোঝা যায় তার মনের মধ্যে কতখানি ঈর্ষা আক্রোশ লুকিয়ে আছে।
সকালে একটুখানি কাজ করলাম। সাহাবাজের বাবাকে বললাম কেন আমরা রেজিস্ট্রিটা আগে চাইছি। সব শুনে বললেন, ‘বাড়ি ফিরে বড় ছেলের কথা মাথায় রেখে আলোচনা করে জানাচ্ছি। বিকেলে রন্ধন প্রতিযোগিতায় যেতে দেরি হল। তবুও সাদরে বরণ করে আমাকে কিছু বলতে বলা হল। প্রথম পুরস্কার দেওয়া হল আমার হাত দিয়ে।
চারিদিকটা কেমন যেন বদলে যাচ্ছে, মানুষ বদলে যাচ্ছে, মানুষের মানসিকতা বদলে যাচ্ছে, সমাজ বদলাচ্ছে, প্রকৃতিও বদলে যাচ্ছে। রানীর বিয়েতে অনেককেই চেনা হয়ে যাবে। আসলে পুঁথিগত বিদ্যা অর্জন আর প্রকৃত শিক্ষা লাভ এক নয়। বিয়েতে যৌতুক নেওয়া ও দেওয়ে আইনত অপরাধ জেনেও ধনি পরিবারের একটা শিক্ষিত ছেলে কী করে বলে? আমার ভাইয়ের এটা শখ, ওটা শখ, আরও অনেক কিছু। তা আর উল্লেখ করছিনা। আমার ভাইদের মধ্যে সেজভাই মনির সঙ্গেই কথা বলা যায়। ওকে বললাম, এখন রানীর রেজিস্ট্রিটা হয়ে গেলে ১ বছর সময় পাওয়া যাবে, তার মধ্যে টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। যদিও মামিরা কেউই চায় না রানীর বিয়েটা এখানে হোক। ওর বাবাও তাই, নিজের স্বার্থটা দেখছে। বিয়ের খরচের ব্যপারে কথা বলতে গেলাম, বলে কিনা, ‘মামাদের কাছে বড় হয়েছে, ওনারা কী দিচ্ছেন? রানীর বিয়ের খরচ মামাদেরই তো দেওয়া উচিৎ, না দিলে জায়গা জমি বিক্রি করে আমি যেখানে পারব সেখানে একাই বিয়ে দেব’। সবার ভাবখানা এমন, যেন মেয়েটা আমার।
এত বাজে আবহাওয়া, বৃষ্টি নেই, প্রচণ্ড গরম। এতেই খান সাহেবকে কলকাতা নিয়ে গেছলাম চেকআপে। ডাক্তার বললেন, অনেকখানি ওয়েট লস হয়েছে। ভাল খেতে হবে। বাকি সব মোটামুটি ঠিক আছে। সন্ধ্যায় ব্লাড রিপোর্ট দেখেও একই কথা বললেন। হিমোগ্লোবিন কম আছে, তবে আইরন লাগবে না।
ক্লিক করে পড়ে দেখতে পারেন 👇
হে, কবি হে... /ঋত্বিক ত্রিপাঠী আজকাল থেকে শীর্ষ মেসেজ পাঠিয়েছে, আমার ব্যাঙ্ক ডিটেস চেয়েছে, টাকা পাঠাবে বলে।এর আগে যিনি ছিলেন, তিনি কোনও টাকা পাঠাননি। আনন্দবাজারের অঞ্জনও কোনও টাকা দেননি। জয়ন্ত ব্যাঙ্ক ডিটেলস নিয়েছে, কিন্তু এখনো টাকা ঢোকেনি। আমি টাকার জন্য লিখিনা, তবে পেলে ভাল লাগে।
কয়েকদিন পরেই লোকসভা ভোট। এবিষয়ে বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দিরে আয়োজিত একটি আলোচনায় যোগ দিতে এসেছিলেন অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র, কবি মন্দাক্রান্তা সেন অধ্যাপক সুবিমল বাবু, আরো অনেকে। অনেকদিন পর আম্বিকেশ ও মন্দাক্রান্তার সঙ্গে দেখা হয়ে খুব ভাল লাগল। অনেক কথাও হল।
আজ (১২/০৫/১৯)লোকসভা ভোট। ইচ্ছে ছিল না, তবুও ভোট দিয়ে এলাম। প্রচণ্ড গরমে নাজেহাল অবস্থা। আর পারা যাচ্ছে না। এইমাত্র খবরে শুনলাম আমার শ্বশুরবাড়ির গ্রাম দোগাছিয়াতে খুব গণ্ডগোল মারামারি হয়েছে। ছাপ্পা ভোট হচ্ছে শুনে মেদিনীপুরের প্রাক্তন এস পি, বর্তমানে বিজেপির প্রার্থী ভারতী ঘোষ গেছলেন, তাঁকেও মেরেছে। বিকেলে বামফ্রন্টের প্রাক্তন বিধায়ক ইব্রাহিম ফোন করে বলল, ‘হলদিয়াতে ভাল অবস্থায় ছিলাম, কিন্তু কেন্দ্রিয় বাহিনী না আসাতে, এস পিকে হাত করে শুভেন্দু অধিকারী নিজে উপস্থিত থেকে ছাপ্পা ভোট দেওয়া করিয়েছে। এরপর কী হবে সেতো আমার জানা।
যাই ঘোটুক না কেন, আমার জীবন যেমন চলছে তেমনই চলবে। ‘থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়’। কঠোর বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে টাকার চিন্তা করতে বাধ্য হচ্ছি। ওনাকে নিয়ে পেনশন অফিসে গেছলাম। লাইফ সার্টিফিকেট জমা না দেওয়ার জন্য যৎসামান্য একটা পেনশন প্রথম থেকেই চালু ছিল, সেটা বন্ধ হয়ে গেছ। সব কাগজপত্র জমা দিয়েছি, এখনো ওটা চালু হয়নি। অফিসার খুবই ভাল। আজ নতুন করে সব করে দিলেন, কিন্তু আধার কার্ডে শুধু জন্ম সালের উল্লেখ রয়েছে, মাস ও তারিখের উল্লেখ নেই, তাই উনি কিছু করতে পারলেন না। পরের মাসে সব ঠিক করে নিয়ে যেতে বলেছেন। এখান থেকে UBI ব্যাঙ্কে এসে পাশবুক আপডেট করলাম, ATM কার্ডের জন্য ফর্ম নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।
ওনার শরীর একেবারেই ভাল যাচ্ছে না। ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি, কিন্তু প্রকাশ করতে পারছি না। একবার ভেঙে পড়লে আর উঠে দাঁড়াতে পারব না। সব কাজ থেমে যাবে। আজ ভোর পাঁচটায় ডায়ালিসিস শুরু হওয়ার কথা ছিল, পৌঁছে দেখি গেট খোলেনি। যাইহোক, ৯ টায় ডায়ালিসিস শেষ হল। যখন কাউন্টারে টাকা জমা দিচ্ছি, একটি মেয়ে এসে বলল, স্যার আপনাকে ডাকছেন (নার্সিংহোমের মালিক দেবল দত্ত)। গিয়ে বসতেই একজন চা দিয়ে গেল, উনি ওনার নার্সিংহোমে কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না জানতে চাইলেন। তারপর উনি নার্সিংহোম, হাসপাতাল, ডাক্তারদের নিয়ে লিখতে বললেন। উনি কিছু তথ্য দেবার কথাও বললেন।
আজ শরীরটা খুব খারাপ লাগছে, সবসময়ের একটা লোক রাখতেই হবে।আসলে সবসময়ের লোক পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল থেকে বৃষ্টি নেমেছে, তাই গরম কিছুটা কম। ওঁর শরীরও খুব দুর্বল, তাকানো যাচ্ছে না। জানিনা ভাগ্যে কী লেখা আছে। তবে ‘ভাগ্য’ বলতে আমি ভবিষ্যতের কথা বোঝাতে চেয়েছি। আমি ‘তকদির’ এর থেকে ‘তদবির’ এ বেশি বিশ্বাস করি। আজ ডায়ালিসিসের সময় তিন ঘণ্টা অক্সিজেন চলেছে। ইঞ্জেক্সন দেওয়ার ডেট ছিল, কিন্তু নিয়ে যেতে ভুলে গেছলাম, বাড়ি এসে নিয়ে যেতে হয়েছিল। আজও দেবল বাবুর সঙ্গে অনেক কথা হয়েছে।
গাছের আম পেকে মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি করছে। ওসব দিকে কোনো নজর নেই। কি হবে আম? যে মানুষটার আম সবার থেকে প্রিয় ছিল, তারই খাওয়া বারণ। নিজেই মাঝে মাঝে ২/১ টা পাড়ি। রানি এ সব পারেনা। আজ ওর কলেজে (স্বশাসিত) সিনিয়র দিদিদের বিদায় সম্বর্ধনা ছিল, দেখলাম শাড়িতে ওকে ভালই মানায়। ভাইঝি সুহানা গতকাল তার ছোট কাকার বাড়ি গেছল ফেরেনি। আজ ফোন করে বলল, রাকার(ছোটভাইয়ের মেয়ে) জন্মদিন, কাকা থাকতে বলেছে। অথচ রানী এত কাছে থাকে, কোনদিন দিন ডাকেনি। এসব আমার গা সওয়া হয়ে গেছে। ওদের হাড়ে হাড়ে চিনে গেছি। ওরা হাত পেতে নিতেই জানে, দিতে জানে না। ওদের যেন তাই করতে হয়। রানী এম এ পড়ছে, সেটাও ওদের হিংসা। রানীর বিয়ে নিয়ে ওরা যা করছে, তাতে ওদের আসল চেহারাটা বেরিয়ে পড়েছে। দেখা যাক, শেষপর্যন্ত কী হয়।
(ক্রমশ)
0 Comments