ছোটোবেলা বিশেষ ১৪৩
চিত্রগ্রাহক ঋপণ আর্য
সম্পাদকীয়,
সে খিলখিল করে হাসে। হ্যাঁ, তাকে হাসতে বললেই সে খিলখিল করে হেসে গড়িয়ে যায়। সেই হাসির ছবি ঋপণ আঙ্কেল পাঠিয়েছে। আমরা বড়োরা কিন্তু এমন খিলখিল করে হাসতে পারিনা। কেবল ছোটোরা খিলখিল করে হাসতে পারে। ছোটো হবার এটাই সুবিধা। ছোটো হবার আরো অনেক অনেক সুবিধা আছে। যেমন ছোটো বলেই ঋতব্রত কি সুন্দর স্বপ্ন দেখছে। ছোটো বলেই অনিন্দিতা আর অভিষিক্তা অত সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকতে পারে। তাইতো মানসী পিসি রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখেছে। তবে বড়োরা চাইলে ছোটোদের মতো খিলখিল করে হাসতে না পারলেও ছোটোদের হাসাতে পারে। এই যেমন আজকের লাচুঙ পড়তে শুরু করেই আমার হাসি পেল। হাসার কি আছে নেপালি ভাষা শুনে? আরে আমি তো আর রামগরুড়ের ছানা নই, যে আমার হাসতে মানা?
আরে হাসির কথায় বলতে ভুলে গেছি, অবনী বাবুর গল্পটা এ সপ্তাহে শেষ করল শর্মিষ্ঠা আন্টি। আর দোলনচাঁপা আন্টি হিরোশিমা দিবসের কথা বলেছে। জেনে আমার কান্না পায়। কথায় আছে হাসলে কিন্তু কাঁদতে হবে। তোমরা হাসো কি কাঁদো মনে রেখো ১৫০ তম সংখ্যার আর দেরি নেই। -মৌসুমী ঘোষ।
ধারাবাহিক উপন্যাস
লাচুঙের নেকড়ে
পর্ব ২২
শ্রীকান্ত অধিকারী
অত্যন্ত দুখদ খবরঃ। ভারত স্থিত কেদারনাথকো গৌরিকুন্ডমা পহিরো খসদা টুয়েন্টি ভন্দা বটী নেপালী হরুকো জান গয়কো খবর প্রাপ্ত ভয়কো ছ। সম্পূর্ণ পরিবারমা হার্দিক শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ গর্দছৌঁ।’-রেডিও নেপাল বট।
আরেক দিক থেকে ভেসে আসছে বি বি সি নিউজ ব্রেকিং!
ভালো করে লক্ষ করলে দেখতে পাওয়া যাবে এই সব ভাষ্য ভেসে আসছে একটা ছোটো ঘর থেকে। যে ঘরটা এমন কিছু আহামরি নয়। আর পনেরোটা ঘর যেমন রয়েছে। বাঁশ আর কাঠ দিয়ে বানানো। চারদিকেই পাহাড়ের খাড়াই। কোথাও ঘন কোথাও ছাড়া ছাড়া জঙ্গল। তার পাশ দিয়ে মেঘগুলো মাঝে মাঝে উড়ে যাচ্ছে। কিছু দূরে পাহাড়ের গায়ে ভেড়া আর ইয়াকের দল চড়ে বেড়াচ্ছে। দু একটা থেকে ঘণ্টা বেজে উঠছে।
আশপাশের ঘরগুলোতে খুব যে লোক রয়েছে মনে হয় না। তবু যে ক’টা মহিলা ও পুরুষ নিজের ঘর গুছানো বা দরজায় ঝিমানো ছাড়া কিছু করছে না। একটা ঘরের ভেতর থেকে গানের সুর ভেসে আসছিল। দ্রুত লয়ে এবং বার বার একই কথা সুর করে গায় ছিল এবং খুব জোরালো ভাবে। কেবল দূরে একেবারে সমতলে যেমন বাঁশ-বাতার বেড়া দিয়ে ঘেরা জায়গা দেখা যায় ঠিক তেমনি দুটো ঘেরা জায়গা রয়েছে। সেখান থেকে ভুসভুস করে বুনো গন্ধ ভেসে আসছে। তাতে এ গ্রামের লোকের তেমন কিছু মনে হয় না। ভোরের গাছ গাছালি থেকে লম্বা লেজের লামি ফো আর কোকিলের মত নাম ফ্রায়ান ফো ডেকে উঠছিল।
অতি শান্ত গাঁয়ে একটা ঘরের ভেতর থেকে শুধু রেডিও থেকে এই রকম কতগুলো কথা ভেসে আসছে সেদিকে কারও ভ্রক্ষেপ নেই। যে যার কাজে ব্যস্ত।
ঘরটাতে একটা ছেলে কেবল মুখ বুজে বাঁশের টেবিলে কতকগুলো রেডিও ট্রানজিস্টার আর কতগুলো তারের গোছা ঝুলিয়ে মাথার ওপর আরও একটা তারের সঙ্গে যুক্ত করে রেখেছে। সেই সঙ্গে হেয়ারিং প্যাডের মত কিছু নিয়ে মাঝে মাঝে কানের কাছে নিয়ে আসছে। আর মাঝে মাঝে নীচে রাখা কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে একটা ট্রানজিস্টারে বেঁধে দেবার চেষ্টা করছে। সেও আগে পিছে বাইরের দিকে লক্ষ্য করার মত সময় পাচ্ছে না। আসলে তখনো সূর্য ঠিক মত দেখা যাচ্ছে না। তবে আলো ফুটে গেছে। এমনিতে এই গ্রামে সকাল হয় দেরিতে। আর এই ঘরটাতে কেউ বেশি আসেও না, আবার এই ঘরটাকে নিয়ে কেউ মাথা ও ঘামায় না।
সারা গ্রামে অন্য কোনো শহুরে লোকের প্রভাবও পড়েছে বলে মনে হয় না। তারই মাঝে এক ব্যতিক্রমী ঘর ও তার বাসিন্দা এক মনে কাজ করে যাচ্ছে।
কখন যে তার পিছনে কতগুলো ওর মত লোক এসে ওর কাজ দেখছে সে হয়তো খেয়াল করেনি। খেয়াল হল ঘরের এক কোণে থাকা এক ঝাঁকড়া চুলের কুকুরের চিৎকারে। কুকুরটার তেমন কোনো বিশেষত্ব না থাকলেও স্ট্রিট ডগের মত খেঁখিয়ে ওঠে। পরক্ষণেই কুঁই কুঁই করতে করতে আবার নিজের জায়গায় গুটলি পাকিয়ে শুয়ে পড়ে। হয়তো এদের চিনতে পেরেছে।
আগন্তুকদের অবশ্য সেদিকে ভ্রক্ষেপ নেই।
ছেলেটা মাথা তুলে তাকাতেই লেপচা ভাষায় বলে, খামরি! চেষ্টা চলছে। সময় লাগবে।
-তাওকছি! অর্থাৎ ধন্যবাদ। কিন্তু আমাদের দ্রুত কাজ চাই। প্রয়োজনে এই লোকটাকে কাজে নাও। ওদের মধ্যে একজন লেপচা ছিল না। সমতলের লোক। আর এফ ই।-রেডিও ফ্রিক্যুয়েন্সি ইঞ্জিনিয়ার। একজন লেপচা বলল, এই লোকটা তোমার কাজে লাগবে।
লোকটাকে একটা বাঁশের বসার জায়গা এগিয়ে দিল। অনেকটা টুলের আকারে। সমতলের লোকটা বসল না দাঁড়িয়ে থাকল।
লেপচাদের প্রত্যেকের কোমরে অস্ত্র থাকলেও হাতে লম্বা হাসুয়ার মত ধারালো অস্ত্র বেরিয়েই ছিল। সেইদিকে তাকিয়ে লোকটা বেশ ভয় পেয়েছিল এবং বার বার ঐদিকেই তাকিয়েছিল।
তবে ওরা ওকে সে রকম কিছু ভয় না দেখালেও চোখের ঈশারায় বসতে বলল। অমনি লোকটা কথা না বাড়িয়ে বসে সঙ্গে সঙ্গে হাতের কাছে রেডিওটার দিকে হাত বাড়াল।
ওরা চলে যাবার সময় বলে গেল- টাছাইয়ি নইয়িমা ও ! অর্থাৎ কঙ্গ্রাজুলেশন টু ইউ!
(ক্রমশ)
অনিন্দিতা কর গুপ্ত
সপ্তম শ্রেণি, কেশপুর গার্লস হাই স্কুল, পশ্চিম মেদিনীপুর
পরীর দেশে
মানসী গাঙ্গুলী
কালকে রাতে এক পরীর ডানায় চেপে
পরীর দেশে যাই
গিয়ে দেখি সবার কেমন ডানা রয়েছে
আমার শুধু নাই।
তাই না দেখে কেঁদে ফেলি ভ্যাঁ করে
পরীর রানী তখনি এসে ভরায় আদরে
কোথা থেকে দুই ডানা এনে পড়ায় আমায়
অমনি আমি পরীদের সাথে ভেসে বেড়াই।
উড়তে উড়তে কখন যেন পৌঁছে গেছি চাঁদের দেশে
চাঁদের বুড়ী গল্প করে ফোকলা দাঁতে হেসে
এমন সময় আকাশ ঢাকে বেজায় কালো মেঘে,
পাছে ডানা ভিজে যায় তাই উড়ি বিষম বেগে।
উড়তে উড়তে হঠাৎ যেন পড়লাম দুম করে
চমকে দেখি রয়েছি আমি খাটের তলায় পড়ে।
গল্প
অন্য মানুষ
শর্মিষ্ঠা বসু
শেষ পর্ব
লাড্ডুর কথার মধ্যে এমন আত্মবিশ্বাসের সুর ছিল যে অবনীবাবু খানিকটা নিশ্চিন্ত হলেন।
সেদিন থেকেই কাজে বহাল হয়ে গেল লাড্ডু। সুলতা দেবীও খুশী হলেন।দেখা গেলো ছেলেটা শুধু সাহসী নয়, কাজকর্মেও বেশ পটু।
মাসদুয়েক এভাবেই কাটল।এদিকে ফুলডাঙায় চোরের উপদ্রব ক্রমশ বেড়েই চলেছে। প্রায়ই এখানে ওখানে চুরির খবর পাওয়া যায়।
প্রথমদিকে লাড্ডুকে দেখে মনে খানিকটা সাহস পেলেও এখন আবার আগের মতোই রাত হলেই চোরের ভয়ে বুক ধুকপুক করেঅবনীবাবুর। একটু খুট্ করে শব্দ হলেই চমকে ওঠেন, ঘরের মধ্যে বসে ছটফট করেন।
সেদিন ছিল অমাবস্যা।শীতের রাত, বাইরে ঘন অন্ধকার। মাঝরাতে হঠাৎ একটা খুটখুট শব্দে অবনীবাবুর ঘুম ভেঙে গেল।শব্দটা কানে আসতেই ভয়ে হাড় হিম হয়ে গেলো তাঁর। বুকের ধুকপুকানিটা আবার ফিরে এলো। নির্ঘাত চোর এসেছে বাড়িতে।
খানিকক্ষণ এপাশ ওপাশ করে, অনেক কষ্টে উঠে বসলেন অবনীবাবু। তারপর আত্মরক্ষার প্রবল তাগিদে মশারির বাইরে এসেদাঁড়ালেন। ভয়ে তখন তাঁর দমবন্ধ হয়ে আসার মতো অবস্হা। শরীর থরথর করে কাঁপছে ,প্রচন্ড শীতেও সর্বাঙ্গে ঘাম ছুটছে।
তখন মাঝরাত, চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। বেশ কিছুদিন ধরে ঠান্ডাও পড়েছে বেশ। নিজের ঘরে কম্বল জড়িয়ে আরামেঘুমোচ্ছিল লাড্ডু। পা টিপে টিপে কোনরকমে লাড্ডুর ঘরে ঢুকে কপালের ঘাম মুছলেন অবনীবাবু। তারপর
ভীত স্বরে বললেন , লাড্ডু , ওঠ, চোর এসেছে । বারকয়েক ডাকার পরেও লাড্ডুর ঘুম ভাঙার কোন লক্ষণ দেখা গেলোনা । বাধ্য হয়ে অবনীবাবু লাড্ডুকে ধাক্কা দিতে লাগলেন ।
অবিরাম ধাক্কায় লাড্ডুর ঘুম ভাঙল । চোখ খুলে বেশ খানিকক্ষণ ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সে । অনেক কষ্টে অবনীবাবু আবার বললেন , “লাড্ডু , চোর এসেছে । “
এবার বোবা চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল লাড্ডু । তারপর কোথায় কী হচ্ছে কিছু বুঝতে না পেরে , মুখের এক বিচিত্র ভঙ্গী করেঘুম জড়ানো গলায় বলল ,”কি বলছেন ? ভোর হয়েছে ? “
স্তব্দ্ধ , স্তম্ভিত অবনীবাবুর আর কোনো কথা বলার সুযোগ হলোনা । কম্বল গায়ে জড়িয়ে আবার চোখ বুজল লাড্ডু । গভীরঘুমে তলিয়ে গেল এক নিমেষেই ।
সম্মোহিতের মত কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থেকে পায়ে পায়ে ঘরে চলে এলেন অবনীবাবু । ফ্যাকাশে মুখে বসে রইলেন অনেকক্ষণ ।বিস্ময় , ভয় আর হতাশায় তিনি তখন ক্লান্ত ।
রাত তখন প্রায় দুটো বাজে । চারিদিক নির্জন , নিস্তব্ধ , গাঢ় অন্ধকারে ঢেকে আছে ।
কী করবেন বুঝতে না পেরে অন্ধকারে একা বসে রামনাম জপ করতে লাগলেন অবনীবাবু । রাতের নিস্তব্ধতার মাঝে বসে থাকতেথাকতে তাঁর হঠাৎই মনে হলো কোন এক জাদুমন্ত্রবলে তাঁর ভয়ডর সব যেন উধাও হয়ে গেছে ।
একটা বিষয় তাঁকে খুব বিচলিত করছিল । অবনীবাবুর মনে হচ্ছিল এতক্ষণ তিনি অকারণে ভয় পেয়েছেন । চোর আসার মতোএকটা তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে আসলে এত উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই । এসব অনায়াসে একাই সামলে নেওয়া যায় ।
আসলে জীবনে বোধহয় কোনো কিছু নিয়েই বেশি ভয় পেতে নেই । সমস্যাকে অযথা গুরুত্ব দিলে বা ভয় পেলে সমস্যার আদৌকোনো সমাধান হয়না ।
এসব কথা ভাবতে ভাবতে অদ্ভুত এক অনুভূতি সঞ্চারিত
হচ্ছিল তাঁর মনের মধ্যে ।
ইতিমধ্যে ঠকঠক শব্দটাও আর শোনা যাচ্ছেনা । বোধহয় গৃহস্থ সজাগ আছে টের পেয়ে চোর পালিয়ে গেছে ।
একটা প্রশ্ন অবনীবাবুর মনের মধ্যে বারবার ঘোরাফেরা করছিল । আজ সত্যিই কি বাড়িতে চোর এসেছিল ? নাকি তিনি কোনকারণ ছাড়াই ভয়ে থরথর করে কাঁপছিলেন ! এ বাড়িতে ইঁদুরের উৎপাত আছে যথেষ্ট । হয়ত সেসব শব্দ শুনেই এতক্ষণ ভয় করছিল তাঁর ।
এতদিনে অবনীবাবু বুঝতে পারছিলেন চোর কোন সমস্যা নয় , মূল সমস্যা হলো ভয় ।আর ভয় , ভীতি এসব আসলেঅনেকটাই মনগড়া । এতে আসল সমস্যার সমাধান কিছু হয়না বরং
পরিস্হিতি আরো জটিল হয় ।
অনেক ভাবনাচিন্তার পরে বড় একগ্লাস জল খেয়ে শুয়ে পড়লেন অবনীবাবু । আর শোওয়ার আগে তিনি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েফেললেন । এখন থেকে তিনি আর কোনো পরিস্হিতিতে ভয় পাবেন না ।
ভোর হচ্ছে । পাখির কলকাকলি শোনা যাচ্ছে । সোনালী রঙের আলো পূবের জানালা দিয়ে এসে ঘরের মেঝেতে লুটিয়ে
পড়েছে । বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লেন অবনীবাবু । আজ থেকে তিনি এক অন্য মানুষ ।
সেদিন অফিসে যেতেই প্রতিদিনের মতো বড়বাবু তাঁকে ডেকে পাঠালেন ।তারপর ধমকের সুরে বললেন , “কী ব্যাপার অবনীবাবু ? কাজটা এখনও হয়নি দেখছি ।অবশ্য হবেই বা কী করে । আপনাকে দিয়ে কখনও কোনো কাজ ঠিকমতন হয়না । “
এটা নিত্যদিনের ঘটনা । অবনীবাবুর কাজে কোথাও এতটুকু ত্রুটি বা গাফিলতি না থাকলেও এভাবেই রোজ তাঁকে অকারণে হেনস্হা করেন বড়বাবু ।
এতদিন অপমানিত বোধ করলেও , প্রতিবাদ করতে ভয় পেয়েছেন অবনীবাবু ।
তবে আজ আর ভয় করছিল না তাঁর । বড়বাবুর চোখের দিকে সোজা তাকিয়ে বললেন , “কাজটা এখনও হয়নি । শেষ করতেখানিকক্ষণ সময় লাগবে । তবে আমি কখনও কোনো কাজ ফেলে রাখিনা তাই ঠিক সময় ফাইলটা আপনার টেবিলে পাঠিয়েদেবো । আর হ্যাঁ , আর কোনো বাড়তি কাজ আমাকে পাঠাবেন না ।একটু ব্যস্ত আছি । আমাকে আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে।"
বিস্ময়ে মুখটা হাঁ হয়ে গেলো বড়বাবুর । চোখ গোলগোল করে তিনি অনেকক্ষণ অবনীবাবুর দিকে তাকিয়ে রইলেন । বড়বাবুর বিস্ফারিত দৃষ্টির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন আত্মবিশ্বাসী অবনীবাবু ।
মেজাজ সহসা ফুরফুরে হয়ে গেছে । অন্য মানুষ হওয়ার মধ্যে যে এত আনন্দ , কে জানত !
সেদিন বাড়ি ফেরার পথে বাজারে গিয়ে কিলোখানেক পাঁঠার মাংস আর নদীর টাটকা মাছ কিনলেন অবনীবাবু ।মাছের দোকানে দরদামও করলেন বেশ খানিকটা ।দোকানদারের বিস্ময় আর সমীহ মেশানো দৃষ্টি দেখে অতিকষ্টে
হাসি চাপতে হলো তাঁকে।
নিজের পরিবর্তনের মজাটা বেশ উপভোগ করতে করতে সুলতা দেবীর হাতের মাছের কালিয়া আর কষা মাংস দিয়ে রাতের খাওয়াসেরে একটা ভূতের গল্পের বই নিয়ে অবনীবাবু বিছানায় শুতে গেলেন । ইচ্ছে থাকলেও বেশিক্ষণ বই পড়তে পারলেন না অবশ্য ।দু চোখ জুড়ে ঘুম নামছে ।
আজ অনেকদিন পরে নির্ভয়ে , নিশ্চিন্তে একটু ঘুমোতে পারবেন অবনী বটব্যাল ।
আমার স্বপ্ন
ঋতব্রত সিংহ মহাপাত্র
ষষ্ঠ শ্রেণি, সরস্বতী দেবী ইন্টারন্যাশানাল স্কুল, বাঁকুড়া
আমার একটা স্বপ্ন আছে
রোদ্রদিনে ছায়া
আমার স্বপ্ন সবার মনে
জেগে থাকুক মায়া।
আমার স্বপ্ন সবাই বাঁচুক
সুস্থ সবল মনে
আমার স্বপ্ন অন্ন জুটুক বস্ত্র জুটুক
থাকুক সবাই আপন বাসস্থানে।
এইটুকু তো স্বপ্ন আমার
রোজই ভাবি স্বপ্নে
মানুষ ছাড়াও পশু পাখি
থাকুক সবাই যত্নে।
স্মরণীয় দিবস
হিরোশিমা দিবস
(৬ই আগস্ট)
কলমে - দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে
আজ হিরোশিমা দিবস, এটি কোন খুশির উদযাপনের দিন নয়, বরং প্রতিবছর সে দেশের অর্থাৎ জাপানের তথা বিশ্বের মানুষের কাছে অনেক নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় মানুষের মৃত্যুতে শোক ও শ্রদ্ধা যাপনের দিন।
চলো, এর একটু ইতিহাস আমরা জেনে নিই। জানা যায় ৬ অগাস্ট সকাল আটটা পনের মিনিট নাগাদ ইনোলা কগে নামক যুদ্ধবিমান নিয়ে জাপানের হিরোশিমাতে মার্কিন সেনাবাহিনী হামলা চালায়। যে পরমাণু বোমাটি নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তাকে মার্কিনিরা ভালোবেসে নাম দিয়েছিল 'লিটিল বয়'। সেই লিটিল বয় অর্থাৎ পরমাণু বোমাটির তীব্রতা এত বেশি ছিল যে তা প্রায় ১৫ হাজার টন বিস্ফোরণের সমান।
আজ থেকে ঠিক ৭৬ বছর আগে ৬ আগস্ট তারিখে পৃথিবীর বুকে কোন যুদ্ধে প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র পরমাণু বোমা। জাপানের হিরোশিমা শহরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই পরমাণু বোমাটি নিক্ষেপ হয়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল হাজার হাজার নিরীহ মানুষের। এর ঠিক তিনদিন পরে ৯ অগাস্ট দ্বিতীয় বোমাটি নিক্ষেপ করা হয় জাপানের আরেকটি সমৃদ্ধ শহর নাগাসাকিতে।
বর্তমানে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতমের শিরোপা পেয়েছে জাপান। বিজ্ঞান প্রযুক্তি কোন দিক থেকেই আজ পিছিয়ে নেই, বরং বলা যায় বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশের থেকেও প্রযুক্তিতে জাপান এখন অনেক এগিয়ে তবে সেদিনের সেই ধ্বংসলীলার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে ওয়াকোকু চিনে ( এই নামে পরিচিত জাপান)।
সেই দেশে এখনো অনেকেই আছেন যা সেদিনের সেই বীভৎস স্মৃতিকে মনে করে আঁতকে ওঠেন।
এই ঘটনায় ঠিক কতজনের মৃত্যু হয়েছিল তা গোটা বিশ্বের কাছে আজও অজানা। তবে জাপান সরকারের দেওয়া তথ্য অনুসারে হিরোশিমাতে প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ঠিক তিনদিন পর ৯ই অগাস্ট নাগাসাকিতে প্রায় ৭৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
সেই বোমায় তাপ এবং কেমিক্যাল রিঅ্যাকশনের ফলে পরবর্তী কয়েক বছর পর্যন্ত বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। যারা এই ঘটনায় বেঁচে গিয়েছিলেন তাঁরা শরীরে নানান ধরনের সমস্যা বহন করে চলেছেন এমন কি সেই সময় মাতৃগর্ভে যারা ছিল তারাও বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মেছিল। বলা হয় আজও পর্যন্ত সেই পরমাণু বোমার রিঅ্যাকশনে প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হয় (এদের বিশ্ব হিবাকুশা নামে চেনে) এই ভয়াবহ ঘটনার পরপরই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতি টানা হয়।
এই বোমা মুহূর্তে যেন গ্রাস করে ফেলেছিল একটি সভ্যতাকে।
পাঠপ্রতিক্রিয়া
( ছোটোবেলা ১৪২ পড়ে প্রিয় পাঠক সব্যসাচী ধর যা লিখলেন)
যে কাজ আগেও করেছি সেই একই কাজ মাঝে মাঝে খুব কঠিন হয়ে পড়ে। যেমন জ্বলদর্চি ছোটোবেলার এই ১৪২ সংখ্যার পাঠ প্রতিক্রিয়া দেওয়া। সকলেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে এত মুন্সীয়ানা দেখিয়েছে যার মূল্যায়ন করা বড় গুরুভার।
কেউ বলতে পারবে অপু পালের প্রচ্ছদের ছবিটিতে কতগুলো রং আছে? এমন আলোকবিচ্ছুরণ, প্রতিফলন প্রতিসরণ, এমন বিচিত্র বর্ণ মেঘ, গাছপালা স্থির প্রকৃতি, তার মাঝে একজন কৃষক ধানের চারা রোপন করছে। এ যে সোনার তরী! প্রকৃতির প্রায় সবটা ধরা এই ছবি -- বিস্ময় জাগে...! এর মূল্যায়ন করি কি করে!
এরপর আসে অনুভবের হাতে আঁকা ছবি। চমৎকার চমৎকার। তবে একটা জিনিস নজরে পড়ল, তিনটি মহিলার পিছনে ছায়া পড়েছে-- কোথাও তো সূর্য নেই । এটা একটু ভেবে দেখবে।
সাথীর ছবি মখমলের মতো। খুব ভালো রং লাগিয়েছো। এত রংকে এভাবে পেষ্ট করা সহজ নয়। তোমার রঙে জাদুু আছে।
সম্পাদক মৌসুমী ঘোষের সম্পাদকীয় নিয়ে কী বলবো! শুধু মিষ্ট নয়, অদ্ভুত এক পেলবতা বা মসৃণতা আছে ওর গদ্য চর্চায়। আমরা যারা খরগদ্যের লোক তারা শিখতে পারি কিভাবে মিষ্টি ও তুষ্টি আনা যায় লেখার মধ্যে।
বিশিষ্ট সাহিত্যিক শ্রীকান্ত অধিকারীর লাচুঙের নেকড়ে অনেকটা পথ অতিক্রম করেছে। মেধাভিত্তিকতা ও রোমাঞ্চ এই রচনাটির একটা বড় গুণ। ছোটরা অনেক কিছু পেতে পারো এই লেখায় । অ্যাপোক্যালিপ্টো যুগ বলে একটা কথা আছে এই রচনায়। অ্যাপোক্যালিপ্টো নামে বড়দের একটা সিনেমা আছে। একটু বড় হয়ে দেখে নিয়ো ।
জয়দেব সাঁতরা মা ও ছেলের মধ্যে অনেকটা কথোপকথনের আলোকে বড় সুন্দর কবিতা লিখেছেন। তবে 'স্টেটস্'তো বড় ছেলেদের কথা। আবার অনুভূতিতে মনে হচ্ছে ছেলেটি ছোট। পিতা মাতা ও স্টেটস্ --এই তিন জায়গায় যদি বাবা মা আর বিদেশ বসানো হয়, কেমন হয় ? কবিতাটি কিন্তু ভারী সুন্দর।
শৌনকশৌর্য উইজার্ড ক্লাবের আয়োজনে সামার ক্যাম্পে গিয়ে ছবি আঁকার তালিম নিয়েছে। সত্যি করেই ছুটিও সৃজনশীলতার একটি পর্যায় হতে পারে-- যদি কারো মধ্যে সেই ভাবনা থাকে। শৌনকশৌর্য সেই প্রেরণা দিয়েছে।
শর্মিষ্ঠা বসুর অন্যমানুষ গল্পের মধ্যে রসালো বর্ননা আছে। সুন্দর কথাচিত্র আছে। অবনী বটব্যাল ও লাড্ডুর গড়াইয়ের চিত্র দারুণ এঁকেছেন। এখন কাহিনি কোন দিকে গড়াচ্ছে তার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে।
দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে অসাধারণ একটা কাজ করে যাচ্ছেন এই ম্যাগাজিনের জন্য। এত সুন্দর করে তিনি সাম্প্রতিক বিষয়ের উপর লেখা উপহার দিচ্ছেন যা ছোট বড় সকলের কাজে লাগবে। এবারের বিষয় কার্গিলের যুদ্ধ। ২৪ বছর আগে ঘটে যাওয়া ভারত পাকিস্তানের মধ্যে এই যুদ্ধে ৫২৭ জন ভারতীয়
সৈন্য শহীদ হন। এই মর্মন্তুদ স্মৃতি ও তার আগের বেশ কিছু ঐতিহাসিক ঘটনাকে দোলনচাঁপা নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন। "ছোটোবেলা" আপনার দ্বারা সমৃদ্ধ হচ্ছে।
সবশেষে সবিতা বিশ্বাসের ১৪১ সংখ্যার পাঠ প্রতিক্রিয়াও বড় সুন্দর।
এগিয়ে চলুক এভাবেই মৌসুমী ঘোষের উদ্যোগী সৃজনশীলতার
জ্বলদর্চি ছোটোবেলা।
0 Comments