ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৪৪
সম্পাদকীয়,
কাল বাদ পরশু ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস। আমি জানি তোমরা স্কুলে স্কুলে পাড়ায় ক্লাবে ক্লাবে ভোর হতে না হতে নাচ গান আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ করে এই দিনটি উদযাপন করবে। সারা দেশ সেজে উঠবে জাতীয় পতাকায়। দোলনচাঁপা আন্টি খুব সুন্দর করে এই দিনটির কথা আজ তোমাদের বলেছে। স্বাধীন হবার আনন্দে এসো তোমাদের বন্ধু রেনেসাঁর ছড়াটি পড়ে নেচে নিই। নাচ কি স্বাধীন হবার আনন্দে নাকি? নাচ বৃষ্টি পড়ার আনন্দে, মেঘ দেখে নাচের জন্য মন কেমন করে তাই তো তনুজা আন্টি এতো সুন্দর একটা ছড়া পাঠালো তোমাদের জন্য। বৃষ্টি হবার আনন্দে স্বাধীনতা দিবসের কথা ভুলে গেছি তা কিন্তু নয়। বিপ্লব জেঠুর গল্পটি পড়ে স্বাধীনতা দিবস, বন্দেমাতরম গান, পতাকা উত্তোলন, কত কত ছোটোবেলার কথা মনে পড়ে গেল। সেই আনন্দে ঘাসের উপর লাফিয়ে নিলাম মৃণাল আঙ্কেলের ছবিটার ছোটোবন্ধুর মতো। ঘাসের ওপর লাফাতে গিয়ে ওর কি হয়েছে জানো? ওর সুন্দর গোলাপী জামাটায় চোরকাঁটা আটকে গেছে। ও হ্যাঁ, শ্রীকান্ত আঙ্কেলের লাচুঙের নেকড়ে পড়ে জানলাম লেপচা যুবকেরা লাল জামা খুব ভালোবাসে। কত কি জানতে পারছি শ্রীকান্ত আঙ্কেলের উপন্যাস পড়ে তাই না? অনুভব আর শুভঙ্করের আঁকা দেখে শ্রীছন্দা পিসির মতো পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখে জানিও কেমন লাগলো। আর নিজেরাও পতাকা উত্তোলনের ছবি এঁকে পাঠিও। বন্দেমাতরম। - মৌসুমী ঘোষ।
ছোট্ট গল্প
স্বাধীনতার খেয়াল
বিপ্লব চক্রবর্তী
স্বাধীনতা পেয়েছিলাম আমরা ভারতবাসীরা। সেই দিনটাতে স্কুলে কলেজে ক্লাবে জনপদে তেরঙ্গা জাতীয় পতাকা ওড়ে পত্পত্ করে। ছয়বন্ধুর খুব ইচ্ছে ওরাও আলাদা করে স্বাধীনতার দিনে জাতীয় পতাকাকে স্যালুট করবে।
সোমা আর ফিরোজা এবার ক্লাস ফাইবে উঠেছে। ফিরোজা পরাণবালা প্রাইমারী স্কুলে ক্লাশফোর পড়েছে। সোমা ক্লাশ ফোর পড়েছে নিউ কাঁকপুল প্রাইমারী স্কুলে। এখন ওরা দুজনেই বাণীপীঠ গার্লস হাইস্কুলে একসঙ্গে ক্লাস ফাইবে পড়ে।
বয়েস সেকেন্ডারি স্কুলে ক্লাশ সেভেনে পড়ে ইমরান লতিফ শম্ভু্ আর তপন। এই চারজন গভীর বন্ধু। ওরা চারজন ছুটির দিন বিকেলবেলা সাইকেল চালিয়ে সংহতি পার্কে যায়, মিলেনিয়াম পার্কে যায়। কোনো কোনো দিন ওরা চারজন জিরাট রোড ধরে সাইকেল চালিয়ে হিজলি গ্রামেও যায়। গ্রামের রাস্তায় সাইকেল চালাতে চালাতে ওরা মাঠ দেখে। মাঠে মাঠে পাটগাছ। ওরা দেখে দেখে অবাক হয়। বর্ষার জলে গায়ে গায়ে লম্বা হয়ে পাটগাছগুলো আকাশ ধরতে চাইছে। ওরা চারজন হলেও আসলে ওরা ছয় জন। ছয়জন মিলে ঠিক করেছে স্বাধীনতার দিনে ওরা জাতীয় পতাকা ওড়াবে। জাতীয় পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে জন্মভূমি ভারতবর্ষকে ওরা সামরিক কায়দায় অভিবাদন জানাবে। তারজন্য কিছু খরচ তুলতে হবে। ইমরানকে দলপতি নির্বাচন করা হল। ছয়জন টিফিনের খরচ বাঁচানো টাকাটা এক এক করে ইমরানের হাতে দিল।
ছয়জনের বাকি দুজন হল সোমা আর ফিরোজা। সোমা হল শম্ভুর বোন। ইমরানের বোন ফিরোজা। এই ছয়জনের কাছ থেকে নব্বই টাকা চাঁদা উঠলো। ছোটনকাকু স্বাধীনতা দিবস পালন করবে শুনে ডেকে একশো টাকা চাঁদা দিল। চাঁদার টাকা দিয়ে ওরা প্রথমে সুন্দর একটা জাতীয় পতাকা কিনল। ওড়াবার জায়গাটা সাজাবার জন্য রঙিনকাগজের সঙ্গে পতাকা টাঙানোর দড়িও কিনলো। ওদের উদ্যোগের কথা শুনে অনেকগুলো চকোলেট গিফট করলো সোফিয়ার মাস্টার মশাই। মোতালেব চাচা পতাকা ওড়াবার জন্য সুন্দর একটা বাঁশ, বাগান থেকে কেটে দিল। বাঁশের গিঁট গুলো চেঁচে মাথায় একটা আংটাও লাগিয়ে দিল। ইমরানদের বাড়ির সামনে একটা ছোট্ট বাগান আছে। সিদ্ধান্ত নিল রাস্তার পাশে ওই বাগানের মধ্যেই জাতীয় পতাকা তোলা হবে।
স্বাধীনতা দিবসে ওরা ছয়জন নিজেদের স্কুলে গেল জাতীয় পতাকাকে সম্মান জানাতে।
স্কুলে অনুষ্ঠান শেষ হল সকাল দশটার মধ্যে। তারপর সবাই চলে এল ইমরানদের বাড়ি। ইমরানের বাবা মোতালেব চাচা সকাল বেলাতেই বাঁশ পুঁতে জায়গাটা তৈরি করে রেখেছিল। এই ছয়জনের উৎসাহ দেখে প্রতিবেশীরাও এক এক করে ভিড় জমালেন। আশেপাশের অনেক শিশুরা চলে এল। ছয়জনের অনুষ্ঠানটা একশো মানুষের অনুষ্ঠান হয়ে উঠল। এইরকম আনন্দের মধ্যে হঠাৎ ওদের একটা ভুল ধরা পড়ে গেল। পতাকা কাকে দিয়ে উত্তোলন করানো হবে সেটাই সিদ্ধান্ত করেনি ওরা। ছয়জন শেষমুহূর্তে ভাবছে এই ভুল শোধরাবে কি ভাবে।
আনোয়ার ভাই সকালে ঝুড়ি কোদাল নিয়ে মজুরের কাজে বেরিয়েছিল। আজ আর কাজ পায় নি। বাড়ি ফিরে আসার পথে ইমরানদের বাড়ির সামনে সকলের সঙ্গে এসে দাঁড়িয়ে দেখছিল। সোমা কাউকে কিছু না বলে দৌড়ে গিয়ে আনোয়ারের হাত ধরে বলল, -" আনোয়ার দাদা আমাদের পতাকাটা তুমি তুলে দাও না"! আনোয়ার ভাই শুনে কেমন ঘাবড়ে গেল। মুহূর্তের মধ্যে ওদের বাকি পাঁচজন এসেও আনোয়ার ভাইকে অনুরোধ করলো। ওদের দেখাদেখি উপস্থিত সকলে একইভাবে আনোয়ার ভাইকে অনুরোধ করতে থাকলো। রাজি হয়ে গেল আনোয়ার ইসলাম। ঝুড়ি কোদাল নামিয়ে রেখে গুটি গুটি পায়ে পতাকার সামনে গেল। শম্ভু বাঁশে বাঁধা দড়িটা খুলে আনোয়ারের হাতে দিল। তপন নির্দিষ্ট দড়িটা দেখিয়ে দিল যেটা টানতে হবে। আনোয়ার ইসলাম কলের পুতুলের মতো দড়িটা ধরে টানতেই জাতীয় পতাকা পত্পত্ করে আকাশে উড়লো। সবাই একসঙ্গে হাততালি দিয়ে বলে উঠলো বন্দেমাতরম! তপন আর লতিফ একসঙ্গে গান ধরলো -- ভারত আমার ভারতবর্ষ স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো!
কেমন যেন
তনুজা চক্রবর্তী
ভরসা করে
ফরসা আকাশ দেখেই পথে নামা,
সইবে কেন ?
নামল হঠাৎ ভিজিয়ে দিতে জামা।
কী আর করা
স্বভাবটা তার এমনি বরাবর
ধরায় সে যে
ইচ্ছে কুটুম পায়'ও সমাদর।
অবুঝ সাথী
মানেনা সময় শোনেনা কারো কথা
দুঃখ পেলে
অবাধে ঝরায় জমিয়ে রাখা ব্যথা।
সবাই বলে
বৃষ্টি স্বজন বন্ধু অতিশয়
তবে সে কেন?
করলো এমন কাজটা ভালো নয়!
জামাটা দিল
ভিজিয়ে আমার না বলে জল ঢেলে!
দেবে তো বকা
একাকী আমায় মায়ের কাছে গেলে।
আকাশটাকে
ভরসা করেই করছি আফসোস
বুঝবে না 'মা'
এবার আমার ছিলনা কোনো দোষ।
নবম শ্রেণী, প্রফুল্ল নগর বিদ্যামন্দির, উত্তর ২৪ পরগণা
একটি ছড়া
রেনেসাঁ গঙ্গোপাধ্যায়
নবম শ্রেণি
স্যাকরেড হার্ট স্কুল
আদ্রা, পুরুলিয়া
একটি ছড়া তোমায় দিলাম
একটি দিলাম তাকে
একটি ছড়া হারিয়ে গেছে
কোন সে পথের বাঁকে।
একটি ছড়া ব্যাঙ্কে জমাই
বাড়বে সুদে মূলে
একটি ছড়া আমার সাথে
রোজ যাবে ইস্কুলে।
সঙ্গে যদি না নিয়ে যাই
মুখ হবে মেঘভার
এই যে এখন লিখছি আমি
সে তারই আবদার।
ধারাবাহিক উপন্যাস
লাচুঙের নেকড়ে
শ্রীকান্ত অধিকারী
পর্ব-তেইশ
ততক্ষণে কতকগুলো হিকপ (মুরগি ছানা)বেরিয়ে পড়েছে। এমন কি অদূরে পাশ দিয়ে বয়ে চলা এক ঝোড়া দিয়ে হিক রোম (মা মুরগি) উড়ে উড়ে এপার ওপার করছে।একবার নয় অনেক বার। সে কি বাচ্চাদের পারাপার শেখাচ্ছে! এই ঝোড়াটার কাছাকাছিই ওই দুটো আড়াল দেয়া ঘর। জঙ্গলের খুব কাছে। পাহাড়ও খুব কাছে। শুধু চার চালা দু’চালা কিংবা পাথুরে ঘরগুলোর থেকে আলাদা। মানুষ জনও কাওকে যেতে দেখা গেল না। দু একটা কুজু অর্থাৎ কুকুর এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করলেও ওদিকে পা করে না। মুরগিগুলোও সেদিকে যায় না। যেন মনে হয় ওরা জানে ওই আড়ালে থাকা ঘরগুলোর ভেতর কী বা কারা আছে।
লেপচা যুবকেরা লাল রং খুব পছন্দ করে। তাই চারজনের কেউ না কেউ লাল রঙের পোশাক পরেছে। কেউ পুরু গেঞ্জি তো কেউ প্যান্ট। এদের চেহেরাও পোশাক আশাকে বোঝায় যায় শহরের সঙ্গে এদের দস্তুর মত যোগাযোগ আছে। কানে দু’জনের রিংও আছে। এমনিতে ওদের পুরুষেরা যে পোশাক সেই থাকরা পরে তাতে ছোড়া কোমরে বাঁধা থাকে। কিন্তু ওরা স্যুট প্যান্ট পরেও ওই ছোড়া কোমরে বেঁধে রেখেছে। কারও কারও গলায় অদ্ভুত রকমের রঙিন পাথর ও বন শূয়রের হাড়ের ল্যাক (মালা)। কেউ কেউ আবার থ্যাকটুক নামে এক ধরণের গোলাকার রঙ বেরঙের টুপি পরেছে।
বেশ উত্তেজিত ভাবেই কিছুটা হেঁটে যেখানে জোরে জোরে গান ভেসে আসছিল সেই ঘরে ঢুকে গেল ওরা। আবার কিছুক্ষণেই বেরিয়ে এসে একটু উঁচু জায়গায় সিঁড়ি বেয়ে একটা পাথর বাঁধানো ঘরে ঢুকে পড়ল। এই ঘরের দরজার মাথায় একটা জ্যামিতিক চিত্র আঁকা। যেমন প্রথম বন্ধনি শুরু আর শেষ। মাঝে একটা উলম্ব দাঁড়ি। তার দু’পাশে দুটো বিন্দু। নীচে লেপচাতে লেখা –‘লাসো মুং পুনা লি রুম্ফাট’।-আবাস রক্ষার জন্য ঈশ্বরের পূজা কর।
ওরা ঢোকার আগে প্রত্যেকেই একবার করে ছুঁল এবং প্রণামের ঢঙে মাথা নত করল। পিছনে সেই ঝাঁকড়া চুলের কুজুটা(কুকুর)কোনো শব্দ না করে ওদের সঙ্গেই ঢুকে পড়ল।
দেখতে দেখতে পাহাড়ের চূড়া সোনা হয়ে জ্বলে উঠল। এখন লু-ক্রোঙ।সকাল হয়েছে। এখানে এখন বৃষ্টি নেই। ফেব্রুয়ারির দিকে বেশি বৃষ্টি হয়। জঙ্গলের দিকটায় চেরি ফুল ফুটেছে। সেদিকে কারও খেয়াল নেই।
সেই উঁচু ঘরটায় কতকগুলো টেবিল চেয়ার পাতা। একদিকে কাঠের তাকের মত সাজানো কতকগুলো পানীয় বোতল। কয়েকটা ফুলের গোছা ভরা বাঁশের ফুলদানি। তাতে বেশ কয়েকটা রডোডেনড্রন জাতীয় ফুল আর কিছু অর্কিড। সঙ্গে এলাচ গাছের পাতা।
ওদের দেখে ঘরের মধ্যে থাকা মহিলাটা যে একটা ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছিল সে দ্রুত উঠে দাঁড়াল। যুবকদের মধ্যে একজন শুয়োরের দাঁতের সঙ্গে রঙিন পাথর আর হাতির দাঁত ঝোলানো ল্যাক(lyak) পরেছে সে একটা পেন ড্রাইভ এগিয়ে দিল মহিলাটির দিকে।
ঠিক আছে জুং। লেপচাতেই কথা বলে।
ওরা বসে রইল । মহিলাটি পেন ড্রাইভ ল্যাপটপের সঙ্গে সংযোগ করে দিতেই একটার পর একটা মানুষের মুখ ভেসে উঠল। প্রত্যেকের নীচে পরিচয় দেওয়া রয়েছে। ল্যাপটপ খুলতেই ঐ যুবকগুলো হুমড়ি খেয়ে দেখতে লাগল ঐ ছবিগুলোকে। এক সময় মহিলাটি বিরক্ত প্রকাশ করে জানাল,-বেশ কিছ পুরোনো ছবি এর মধ্যে রয়েছে। মহিলাটি বার বার মাথা নেড়ে জানাল এদের দিয়ে হবে না।–‘ এক্সপ্রিয়েন্স হোল্ডার চায়। ওনলি বেঙ্গলি।’
ছেলেগুলোও কোনো কথা বলল না। তবে হ্যাংলার মত দাঁড়িয়ে রইল।
ঐ ছবিগুলো সরিয়ে দিয়ে অন্য কয়েকটা ছবি বের করল ডিসপ্লেতে।-চারটি মানচিত্র। রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক মানচিত্র। তিনটি পুরোনো হলেও একটি সদ্য আঁকা। প্রথমটি সিক্কিমের একেবারে আদিকালের,যখন পূর্ব ভুটান ও সিক্কিমের মধ্যে ভৌগোলিক ভেদ ছিল না। অর্থাৎ চতুর্দশ শতকে ভুটিয়া-তিব্বত থেকে সিক্কিম বাসীরা এই হিমালয়, বিশেষ করে কিম-চুম-ঝঙ –বু’র (কাঞ্চনজঙ্ঘা) বন জঙ্গলময় পাহাড়ি পাদদেশে কিংবা আপার হিমালয়ের খাঁজে খাঁজে এসে বসবাস করতে থাকে। আরো পরে ১৬৪২ খৃষ্টাব্দ নাগাদ প্রথম চোগিয়াল ফুন্সটগ নামগ্যায়েল যখন সিকিম রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করেন, সেই ছবি।সেই সময়ের সিক্কিমবাসীর দেশের পরিসীমার মানচিত্র।
দুই- সিকিম যখন বৃটেনের ডি ফ্যাক্টো প্রটেক্টরেটে পরিণত হয়েছিল। যেবার প্রায় প্রতি বছরের মত নেপালের গোর্খারা সিক্কিম আক্রমণ করে এবং ব্রিটিশ সেনাবাহিনী গোর্খাদের প্রতিহত করে। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির সেই অ্যাংলো সিকিম চুক্তি অর্থাৎ ১৮১৪ সালের ব্রিটিশ নির্ধারিত সিক্কিমের সীমান্তের মানচিত্র। সিক্কিমের ভৌগোলিক মানচিত্র। এই চুক্তির পর থেকেই সিক্কিমের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ভারতবর্ষ নেয়।
তিন- ঊনিশশো পঁচাত্তর সালের ঐতিহাসিক সিক্কিম অন্তর্ভূক্তি। বর্তমানে ভারতবর্ষের অঙ্গ রাজ্য হিসেবে যুক্ত হওয়ার পর সিক্কিমের অবস্থান। সন ১৯৭৫।
-মামেত দো দাওক কম- খুব খুব যন্ত্রণাদায়ক! জুঙ যেন ক্ষেপে গেল,- আমরা কি আমাদের রক্ষা করতে পারতাম না? উই শুড সেফ মাই মাদারল্যাণ্ড!
মহিলাটি ভয়ঙ্করভাবে ওর দিকে তাকাল।–আমরা ভোট দিয়েছিলাম। আমরা ভয় পেয়ে ছিলাম। তখন ইন্ডিয়া না থাকলে গোরালের মত চারদিকে খেয়ে ফেলত।
-কিন্তু এখন! জুং কথাটা বলেই চেপে যায়।
কিছুক্ষণ চুপ। তারপর আবার ল্যাপটপের ডিসপ্লের দিকে মন দিল।
আর চার নম্বরটা ডিসপ্লেতে ফুটে উঠতেই যুবকের দল উল্লসিত হয়ে উঠল। চোখগুলো চকচক করে ওঠে। সোল্লাসে গর্জে উঠল-জয় সিক্কিম! জয় আদিবাসী লেপচা! জয় রাজা ফুন্টসুগ নামগ্যাল! জয় চোগিয়াল! (ক্রমশ)
স্মরণীয় দিবস
স্বাধীনতা দিবস
(১৫ই অগাস্ট)
কলমে - দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে
'স্বাধীনতা' শব্দটার মধ্যেই যেন এক আবেগ জড়িয়ে আছে।
১৫ই অগাস্ট ২০২৩ সাল ভারতবর্ষের স্বাধীনতা দিবসের ৭৬ তম বর্ষ। ২০০ বছর ধরে ইংরেজদের কাছে পরাধীন থেকে ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভারতবর্ষ ব্রিটিশদের দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করেছিল।
আমাদের দেশের বহু মহান মানুষ স্বাধীনতা লাভের জন্য তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। আজ তাঁদের জন্যই আমরা ভারতের স্বাধীন নাগরিক।
দেশের যে বীর সন্তানদের জন্য আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে তাঁদের নাম গুনে শেষ করা যাবে না, তাঁদের মধ্যে কয়েকজন হলেন, ঝাঁসির রানী লক্ষ্মী বাঈ,নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, গান্ধীজি, ভগত সিং, ক্ষুদিরাম, মাতঙ্গিনী হাজরা, সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল, বাল গঙ্গাধর তিলক, জহরলাল নেহেরু ও বাবা সাব আম্বেদকর প্রমূখ, এছাড়াও হাজারো হাজারো ভারত মায়ের বীর সন্তান সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে লড়ায় করে ভারতের স্বাধীনতা নিয়ে এসেছে।
ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভের ইতিহাসের পটভূমি একটু জেনে নিই।
১৯৪৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কালে একদিকে যেমন ব্রিটিশ অর্থব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়ে, অন্যদিকে ভারতবর্ষের অগণিত মানুষেরা স্বাধীনতা লাভের জন্য লড়ায় করে যাচ্ছে। সেই সময়ে ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পারে যে, ভারতবর্ষের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে সামাল দেওয়ার ক্ষমতা ব্রিটিশ সৈন্যদলের আর নেই। চতুর্দিক থেকে চাপের মধ্যে থেকে তারা সিদ্ধান্ত নেয়, ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর। তারা ঠিক করে ১৯৪৮ এর জুন মাসে ভারতীয়দের উপর শাসন ব্যবস্থা তুলে দেবে। কিন্তু চতুর্দিকে দাঙ্গা-হাঙ্গামার কারণে ভারতের স্বাধীনতার সময়কে এগিয়ে নিয়ে আসে ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট দিনটিতে ।
১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট দিল্লির লাল কেল্লায় ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। সেই থেকে ১৫ই অগাস্ট দিনটিকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। জাতীয় সংগীত গেয়ে এবং পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দেশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়।
এই দিন স্কুল, কলেজ, যে কোন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি অফিস এছাড়াও সাধারণ মানুষের বাড়িতে- বাড়িতে এমনকি মানুষের হাতে -হাতে 'তেরঙ্গা' দেখতে পাওয়া যায়। ভারতবর্ষের প্রায় সকল জায়গাতেই স্বাধীনতা দিবসটি মহোৎসব হিসেবে পালন করা হয়।
স্বাধীন ভারতের প্রতীক এই তেরঙ্গাটির(ভারতের জাতীয় পতাকা)একটি অর্থ আছে। স্বাধীনতা দিবস পালনের সঙ্গে সঙ্গে এই তেরঙ্গাটিও যেন আমাদের হৃদয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে।
জাতীয় পতাকাতে গেরুয়া, সাদা ও সবুজ এই তিনটে রং এবং মধ্যে অশোক চক্র চিহ্নিত আছে।
গেরুয়া রং- যাকে ত্যাগের প্রতীক হিসেবে মানা হয়। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ত্যাগ ও বৈরাগ্য কে আমরা দেখতে পাই।
সাদা রং-যাকে সততা ও শান্তির প্রতীক মানা হয়।
সবুজ রং- যাকে শ্যামলীমা অর্থাৎ প্রাণের প্রতীক মানা হয়।
অশোক চক্র-অনুশাসন ও গতিশীলতার প্রতীক, যা কখনোই থেমে থাকে না।
এবারের স্বাধীনতা দিবসের থিমটি হল- 'জাতি প্রথম সর্বদাই প্রথম'।
স্বাধীনতার দিনটিকে জানতে হলে সেই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা আগে জানতে হবে এবং জানতে হবে ভারতের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের কথা।
পাঠ প্রতিক্রিয়া
( ১৪৩ তম ছোটোবেলা পড়ে শ্রীছন্দা বোস যা লিখলেন)
এবারকার জ্বলদর্চির ১৪৩ সংখ্যার ঋপন আর্যের পাঠানো যে ছবিটি দেখলাম
তাতে মনে হোল যেন এক দেব
শিশু মর্তে নেমে এসেছে, এত
নিষ্পাপ মিষ্টি হাসি। ভালো
লাগলো। এনার পাঠানো ছবি
অনেকবার দেখেছি ছবিগুলির মধ্যে একটা বেশ
নিষ্পাপ ও সরলতার বহিঃপ্রকাশ পাওয়া যায়।
ধারাবাহিক উপন্যাস লাচুঙের
নেকড়ে পর্ব ২২ এ শ্রীকান্ত অধিকারী সুন্দর অরণ্যের কাহিনী উপহার দিয়ে চলেছেন। পাহাড়ের সাথে অরণ্য যুক্ত হলে এক অনন্য রূপ ধারণ করে। এই ধারাবাহিক উপন্যাসটিতে বারে বারে এক অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে নিয়ে এসেছেন যা মনকে আকৃষ্ট করে।
মেঘ আচ্ছাদিত পাহাড়ের শোভা, আর নীচ দিয়ে ভেড়া ও ইয়াকের বিচরণ।
পাহাড়ের মাঝে মাঝে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে বানানো মানুষের
ঘর, সবটুকুই অভিনব।
নেপালিরা এমনিতে খুবই
বিশ্বস্ত হয়ে থাকে তবে বিশ্বাসভঙ্গ হলেই তারা একটু
আক্রমণাত্বক হয়ে ওঠে।
কোমরে ছোট ছোড়া সবসময়
গোঁজা থাকে যাকে বলা হয়
গুপ্তি। ওদের জীবনধারা একটু স্বতন্ত্র ধরনের
শর্মিষ্ঠা বসুর 'অন্য মানুষ' লেখার মধ্যে শিক্ষনীয় বিষয়
খুঁজে পাওয়া গেল। গল্পটির
বিবরণের মধ্যে বেশ থমথমে
ভাবের পরিবেশ এনেছেন।
এই ভয় নিয়ে একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে,
তা হোল যে কোনো ধরনের
ভীতি বা ঝুঁকির মুখে পালানো
বা ঘুরে দাড়ানোর জন্য আমাদের শরীরে বা মনে প্রস্তুতি থাকা দরকার, যা নাকি অবনীবাবুর আগে ছিল
না পরে তিনি বুঝতে পেরে
বদলে গেলেন, বড়বাবুর সামনেও মুখ ফুটে প্রতিবাদ করার সাহস যোগাতে পারলেন। ভালো লাগলো
গল্পটি।
দোলনচাঁপা তেওয়ারী দের লেখাস্মরণীয় দিবসগুলি প্রতি সপ্তাহে খুবই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে। অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও তাৎপর্যময়।
আগামী ৯ ই আগস্ট হোল হিরশিমা দিবস। কত লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ নিশ্চিন্ত
গিয়েছিলো সেদিন। লেখিকার
তুলিতে সব কিছুই পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে বিস্তারিত
ফুটে উঠেছে। এর সাথে আমি কিছু সংযোজন করি,---- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অজুহাত দেয়
যে তারা নাকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দেখতে চেয়েছিল মজার ব্যাপার হোল
গোটা বিশ্ব জানতো যে যুদ্ধ প্রায় শেষই হয়ে গেছে। এখন
বিধ্বস্ত ও বন্ধুহীন জাপানের
পক্ষে এমনিতেই আর যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা নেই।
আসল কারণ ছিল যুক্তরাষ্ট্র তাদের নতুন আবিষ্কৃত মারণ অস্ত্রটির কার্যকারিতা পরীক্ষা ও প্রদর্শন করতে চাইছিলো।
এছাড়া মার্কিনরা সোভিয়েতকেও ভয় দেখাতে
চাইছিলো। তবে আমার প্ৰশ্ন হোল যখন জাপান শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করলোই তাহলে
একটু আগে করলে হয়ত এতো নৃশংস ভাবে প্রাণহানি
হোতো না। এটা আমার ধারণা।
যাক এত জটিলতা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন নেই,
এই জঘন্য হত্যাকান্ড আর তারপরেও হিবাকুশাদের যন্ত্রনা ভাবলে মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে।
মানসী গাঙ্গুলির ' পরীর দেশে' কবিতায় চাঁদের দেশে পৌঁছে '
আমাদের সেই চন্দ্রযান - ৩ এর কথা মনে করিয়ে দিল।
এইতো মহাকাশযানটি আজ কালের মধ্যে চাঁদে পা রাখতে
চলেছে তোমার স্বপ্ন যে মিলে যাচ্ছে।
যাহোক কবিতাটি বেশ মজার।
ঋতব্রত সিংহ মহাপাত্রের 'আমার স্বপ্ন' কবিতাতে মানুষ এবং সকল পশুপাখির প্রতি ভালোবাসার ছন্দটি খুব ভালো লাগলো। এমনিভাবেই
তোমার মধ্যে সকল প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা ঘিরে থাকুক
আশীর্বাদ করি।
অনিন্দিতা কর গুপ্তের আঁকা
ছবিটিতো বেশ হয়েছে।
রঙগুলি কী সুন্দর দাওয়া হয়েছে। বাড়িটির পাশ আবার নদী চলে গিয়েছে।
আমার তো সেখানে যেতে ইচ্ছে করছে, এতো মনোরম
দৃশ্য।
অভিষিক্তা দাসের সরস্বতীর ছবিটি খুব সুন্দর হয়েছে, বীণা
হাতে পদ্মের ওপর বসে কী দারুণ হয়েছে।
সবশেষে সব্যসাচী ধরের পাঠ প্রতিক্রিয়া অভিনব লাগলো।
ভাষার কায়দাটি বেশ ভালো।
আর মৌসুমীদির সম্পাদকীয়র তো তুলনা নেই।
ছোটদের জন্য সেইভাবে মিশে
গল্পচ্ছলে কথা বলতে পারাটা
একটা আর্ট। আর সেইভাবে লেখা কিন্তু সহজ নয়। দিদি কী সুন্দর ভাবে সহজ ভাবে তা লেখাতে ফুটিয়ে তোলেন খুব ভালো লাগে।
জ্বলদর্চি আরও সুন্দর ভাবে
ফুলে ফলে ভরে উঠুক তার
শুভকামনা করি।
0 Comments