সুমিত্রা ঘোষ
যদিও রাজচন্দ্র সাহসী ছিলেন, কিন্তু ভৈরব ডাকাত ও তার দলবলের সঙ্গে লড়াইয়ে হেরে যান। ডাকাতি প্রথা মতে হেরে যাওয়া রাজচন্দ্রকে হাঁড়িকাঠে রাখে বলি দেওয়ার জন্য। রানিমা অন্দরে থাকায় এতসব ঘটনা দেখেননি। রাজচন্দ্রকে বলি দিতে যখন ভৈরব ডাকাত উদ্যত তখন সে স্থানে রানিমা চলে আসে আর তখনই ডাকাত সর্দারের হাত থেকে খড়্গ মাটিতে পড়ে যায়। সর্দার তার ভুল বুঝতে পেরে কেঁদে রানিমাকে জানান যে মহাজনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সে এই পাপের পথ বেছে নিয়েছে। রানি আশ্বাস দেন যে শ্বশুরমশাই ও স্বামী রাজচন্দ্রকে বলে ডাকাত পরিবারের দারিদ্র দূর করবেন।
ভৈরব ডাকাতের কবলে পড়ে রাজচন্দ্র অজ্ঞান হয়ে যায়। ভৈরবের শ্রুশুষায় জ্ঞান ফিরে আসে। রাজচন্দ্র তাদের কাছ থেকে ডাকাতি ছাড়ার প্রতিশ্রুতি নেয় ও জানায় তাদের জীবন ধারণের জন্য চাষের জমি দেওয়া হবে। রাজচন্দ্র দাসদের কুলদেবতা জনার্দন রানিকে বিভিন্নরূপে দেখা দিয়েছেন কখনও কালীরূপে, কখনও রঘুবীর রূপে। ডাকাত মুক্ত হয়ে রাজচন্দ্র দাস স্ত্রীকে বলেন আগে কুলদেবতা জনার্দনকে প্রণাম কর। জ্ঞান ফিরে পাওয়ার মুহূর্তে রাজচন্দ্র সংস্কারবশে বশীভূত হয়ে রানিকে বলেন ডাকাতদল তোমায় স্পর্শ করেনি তো? রানি বলেন করেছে তো, আমাকে প্রণাম করেছে, পায়ের কাছে অস্ত্র রেখে প্রতিজ্ঞা করেছে আর ডাকাতি করবে না।
🍂ইতিমধ্যে প্রীতরাম দাস জানবাজারের বাড়িতে বসে খবর পেয়েছেন ছেলে-বৌ ডাকাত-এর কবলে পড়েছে। তিনি লেঠেল নিয়ে ভৈরব ডাকাতের ডেরায় উপস্থিত হয়ে দেখলেন ছেলে বৌমা সুস্থ আছে। রানি কালীমায়ের কাছে প্রার্থনা করে ডাকাতের হাত থেকে স্বামীকে মুক্ত করেছেন। প্রীতরাম দাস ভাবেন মা লক্ষ্মীর কৃপার সব বিপদ কেটেছে। তিনি ছোট বৌমাকে (রানিকে) সাক্ষাৎ লক্ষ্মীস্বরূপ মনে করতেন। প্রীতরাম ছেলেকে বলেন মা লক্ষ্মীকে নিয়ে প্রাসাদে ফিরে যাও। তিনি রানিকে মা লক্ষ্মী বলে ডাকতেন। লেঠেলদের নিয়ে প্রীতরামও ফিরে যান। ফিরে যাওয়ার পূর্বে ছেলে বৌমাকে বলেন, ডাকাত দলের আক্রমণের কথা জানবাজারের বাড়িতে বলার দরকার নেই কারণ তাতে মায়াদেবী মনে কষ্ট পাবেন।
ক্রমশ
0 Comments