জঙ্গল মহলের গল্প
কাউকে কখনও ভয় দেখিও না
চিন্ময় দাশ
যে দিকেই চোখ যায় টিলা, ডুংরি, চাটান। আর ঘন জঙ্গল। সেই বনের ভিতর, এখানে ওখানে ছড়ানো ছিটানো ছোট ছোট গ্রাম ।
তো, তারই একটা গ্রামে থাকতো এক দেহরি (পুরোহিত)। গাঁয়ে গাঁয়ে ঘুরে পূজাপাঠ করে বেড়ায় সে। আসলে, এ তল্লাটে আর কোন দেহরি নাই। ঐ একজনই ভরসা। আর, তাই নিয়ে ভারি গুমোর লোকটার। দেমাকে পা পড়ে না মাটিতে।
এক বছর ভারি গরম। বেলা না বাড়তেই, বাতাসে আগুনের হলকা। পাশেই সুবর্ণরেখা বয়ে চলেছে। কিন্তু ঐ নামেই নদী। ধু-ধু বালিতে ঢাকা। বালির সমুদ্র যেন। তার ভিতর দিয়ে, সরু ফিতের মতো, একটা জলের রেখা বয়ে যাচ্ছে এঁকে বেঁকে।
টিলা-ডুংরি পার হয়ে যেতে হয় দেহরিকে। চড়াই-উৎরাই ভাঙতে হয়। হাঁস-ফাঁস গরমে ভারি হয়রাণ হতে হয় লোকটাকে।
একদিন কাজে বেরিয়েছে দেহরি। বেলা এমন কিছু বাড়েনি। তাতেই আগুনের মতো তাত হয়েছে বাতাসে। আই-ঢাই অবস্থা। আসলে, বয়সও তো হয়েছে। তিন-কুড়ি ছুঁই-ছুঁই করছে। একটুতেই বুকে হাঁফ ধরে যায়।
লোকটা ভাবল, একটু জিরিয়ে নিই। সামনে একটা মহুল গাছ দেখে, এগিয়ে গেল দেহরি।
গাছের তলায় এসে, থমকে গেল। একটা কাঠবেড়ালি দখল করেছে জায়গাটা। লম্বা লেজখানা ছড়িয়ে আছে মাটিতে। আরাম করে ঘুম লাগিয়েছে পুঁচকেটা।
দেখে ভারি রাগ হয়ে গেল দেহরির। ‘আমি গরমে হাঁপিয়ে মরে যাচ্ছি। আর এ ব্যাটা আরাম করে ঘুমাচ্ছে! আর, ঘুম বলে ঘুম! আস্ত একটা জলজ্যান্ত মানুষ এসে একেবারে তোর গায়ের উপর দাঁড়িয়েছে, সে হুঁশও নাই। দাঁড়া, দেখাচ্ছি মজা।‘
মহুল ঝরছে এখন। ভালুক বেরোচ্ছে খুব। তাই, ঝোলায় একটা শিঙা রাখে দেহুরি। শিঙাটা বের করল ঝোলা থেকে। মুখে মিটিমিটি হাসি। কাঠবেড়ালির দিকে ঝুঁকে, জোরসে লাগালো এক ফুঁ।
আর যায় কোথায়? তিড়িং করে এক লাফ। ছি্টকে উঠেছে পুঁচকেটা। তারপর? তার পর আর কী। থপ করে মাটিতে পড়েই, একেবারে ভোঁ-কাট্টা।
খানিকটা ছুটে, দাঁড়িয়ে পড়ল কাঠবেড়ালি। আচমকা এমন বেমক্কা শব্দটা এলো কোত্থেকে? কোন দিন তো শুনিনি। পেছন ফিরে চেয়ে অবাক। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে একটা লোক। হাতে একটা রামসিঙা। কাঠবেড়ালির মনে পড়ল, মাঝে মাঝে এদিক দিয়ে যায় লোকটা।
হেসেই চলেছে মানুষটা। হাসি যেন থামতেই চায় না তার। আসলে, ভয় পেয়ে পুঁচকেটা যেভাবে লাফিয়ে উঠল, যেন আকাশ ছুঁয়ে ফেলবে ব্যাটা। তারপর পড়ে গেল একেবারে চিৎপটাং হয়ে। দেখে হাসিতে পেট ফেটে যাবার জোগাড় দেহরির।
হাসি থামলে, খোশমেজাজে আবার চলতে শুরু করল লোকটা। বেচারা কাঠবেড়ালি কী আর করে। সেও ঢুকে পড়ল একটা ঝোপের ভিতর।
সেদিন কাজ সেরে বেরোতে একটু বেশিই দেরি হয়েছে দেহরির। বিকেলে একটু ঝড়বৃষ্টি হোল। তাতেই আটকে যেতে হয়েছিল। যখন মাঝরাস্তায়, সূর্য ডুবে গেল ঝুপ করে। ঘন অন্ধকার নেমে এলো চার দিক জুড়ে।
কী করা যায় এখন? ভারি ভাবনার কথা। এই ঘুরঘুট্টি অন্ধকার রাত। রাস্তার ঠাওর করা দায়। এক পাও এগোন যায় না। বাড়ি ফিরবে কী করে? দেহরির তো মাথায় হাত। কোথাও একটু ঠাঁই না জুটলে, হয় ভালুক ছিঁড়ে খাবে, নয় তো, চিঁড়েচ্যাপ্টা হতে হবে হাতির পায়ে।
মাথায় একেবারে আকাশ ভেঙে পড়ল দেহরির। অসহায়ের মতো এদিক ওদিক চাইছে।
হঠাসৎই কী আনন্দ, কী আনন্দ! দূরে একটা আলো দেখা যাচ্ছে। যদিও খুবই ছোট। তা হোকগে, আলো তো। আর, আলো মানে মানুষজন কেউ না কেউ আছে নিশ্চয়। ঘরবাড়িও থাকতে পারে। আর, তা যদি থাকে, তাহলে তো কথাই নাই। মাথা গুঁজবার একটু ঠাঁই জুটবে নিশ্চয়।
মনে বেশ একটা পুলকের ভাব। আলো লক্ষ্য করে এগিয়ে চলল। কিছুক্ষণ চলবার পর, হুঁশ হোল তার। অমনি বুকটা ছাঁত করে উঠল। ব্যাপারটা কী? এতটা পথ চলে এসেছে, কিন্তু আলোটা কাছাকাছি হচ্ছে না। যেন সে যত এগোচ্ছে, আলো পিছিয়ে যাচ্ছে ততটাই! ব্যাপারখানা কী?
ভয়ে বুক ঢিপঢিপ। এই অন্ধকার রাতে জিন-পরীর পাল্লায় পড়ে গেল নাকি? ভাবতেই হিম হয়ে এলো বুকের ভিতরটা। চিৎকার করে উঠতে গেল। অবাক কাণ্ড। আওয়াজ বেরোচ্ছে না গলা দিয়ে।
খানিক বাদে মনে হোল, না, যা ভেবেছে তা নয়। এবার যেন আলোটাই এগিয়ে আসছে এদিকে। তার সাথে একটা শব্দও ভেসে আসছে। অনেকটা একেবারে কান্নার মত একটা শব্দ।
মনে খটকা লাগল লোকটার কান্না? না কি গুনগুন করে মন্ত্র আওড়াচ্ছে কেউ?
আলোটা কেছে এসে পড়েছে অনেকখানি। পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে এবার। মারা গেছে কেউ একজন। চারজন লোক বয়ে নিয়ে আসছে তাকে। সামনে একটা লোক। বিড়বিড় করে মন্ত্র আওড়াচ্ছে নীচু গলায়। সুরটা একেবারে কান্নার মত।
ভীষণ ভয় হোল দেহরির। এই আঁধার রাতে মরা মানুষ দেখব? ঝটপট একটা গাছে চড়ে পড়ল সে। আর, বিপদটা হোল তাতেই।
লোকগুলো এসে থামবি তো থা্ম, থামল সেই গাছতলাতেই। দুটো লোক মিলে ঝুপ ঝুপ করে গর্ত খুঁড়তে লেগে গেল।
দেহরির তো একেবারে কাহিল অবস্থা। হাত-পা শিথিল হয়ে আসছে। সেই গর্তে নিজেই না পড়ে যায়। গাছের ডাল জাপটে ধরে, বসে রইল কোন মতে।
কাজ শেষ হোল একসময়। মরা মানুষটাকে গর্তে নামিয়ে, চলেও গেল লোকগুলো। একটা শুকনো ডালে আগুন জ্বেলে, পুঁতে দিয়ে গেল গর্তটার গায়ে। তার টিমটিমে আলোয় কেমন যেন ভুতুড়ে হয়ে উঠল জায়গাটা।
একেবারে নীচেই একটা মরা মানুষ। এই নির্জন শুনশান রাত। কাকপাখিটিও জেগে নাই কোথাও। হিম বরফ হয়ে আসছে বুকের ভিতরটা।
এভাবে সারা রাত কাটানো ভারি কঠিন কাজ। দেহরি ভাবল, যে ভাবেই হোক, সরে পড়তে হবে এখান থেকে।
চুপিসারে নামতে লাগল গাছ থেকে। একটু নামে, একবার চারদিকে তাকায় চোখ মেলে। আবার একটু নামে, আবার তাকায়। নীচে নেমে, চোখ গেল গর্তটার দিকে।
লম্বা হয়ে শুয়ে আছে দেহটা। চোখ দুটো ড্যাবডেবে খোলা। তাকিয়ে আছে তারই দিকে। ডাকছেও যেন—আয়, আয় এদিকে।
ভয়ে থরথর করে কাঁপছে দেহরি। পালিয়ে যাবে, সে শক্তিটুকুও নাই পায়ে। এবার হোল কী, গর্ত ছেড়ে উঠে এল দেহটা। যেন আঁকড়ে ধরবে তাকে।
হায় ভগবান, এবার পালানো ছাড়া কোন পথ নাই। কিন্তু লাভ হোল না কোন। পায়ে সাড় নাই যেন। দু-তিন পা গেল কোন রকমে। তারপর ধপাস করে পড়ল আছাড় খেয়ে। আর কিচ্ছুটি মনে নাই।
চোখের পাতা দুটো খুলল, রোদ এসে পড়ল যখন। সকাল হয়ে গেছে। আলোয় ঝলমল করছে চার দিক। মাটিতে গড়াগড়ি খেয়েছে, সারা শরীর ধুলোয় মাখা।
উঠে বসে, প্রথম তাকালো গর্তটার দিকে। অমনি আকাশ ভেঙে পড়ল যেন। কোথায় গর্ত, আর কোথায়ই বা মরা মানুষ! গর্ত তো দূরের কথা, একটা কোপ পড়েছে মাটিতে, তার চিহ্নটুকুও নাই। আগুনে পোড়া ডালটারও চিহ্ন নাই কোথাও। সব যেন উবে গিয়েছে কর্পূরের মত। ভারি অবাক হয়ে গেল দেহরি।
যাকগে সব। ভেবে মাথাটাকে গুলিয়ে ফেলে, লাভ নাই। পৈত্রিক প্রাণটা বেঁচেছে, এটাই কতো না কতো। ভালোয় ভালোয় ঘরে ফিরতে পারলে, বাঁচা যায়। দু’হাত জড়ো করে কপালে ঠেকিয়ে নিল একবার।
পা বাড়াতে যাবে, সামনে সেই কাঠবেড়ালি। যেন মাটি ফুঁড়ে উদয় হোল পুঁচকেটা। লেজ উঁচানো। সামনের দুটি পা তুলে চেয়ে আছে লোকটার দিকে।
দেহরি পা ফেলতে যাবে, অমনি কাঠবেড়ালি বলে উঠল—‘শোনগো, পুরুতঠাকুর! কাউকে কখনো ভয় দেখাতে নাই। বিশেষ করে যারা তোমার চেয়ে ছোট, তাদের তো কখনওই নয়। তাতে ভয় ঢুকে যাবে তোমার নিজের মনেই। ছোট জীবের এই কথাটা মনে রেখো। তাতে লাভই হবে আখেরে।'
পা ফেলা হোল না। থ’ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো দেহরি। লেজ নাচাতে নাচাতে, একটা পাথরের আড়ালে চলে গেল কাঠবেড়ালিটা।
(ঝাড়্গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম থানায়, সুবর্ণরেখা নদীর কোলে, ভালিয়াচাটি গ্রামের লোধাপাড়া থেকে সংগৃহিত।)
মেঘনা রানা। পঞ্চম শ্রেণী। কেশপুর গার্লস হাই স্কুল। পশ্চিম মেদিনীপুর
আমার রাখি বন্ধন উৎসব
অনন্যা দাস
সপ্তম শ্রেণি, কেশপুর গার্লস হাই স্কুল, পশ্চিম মেদিনীপুর
রাখি পূর্ণিমার দিনটি আমরা প্রত্যেক বছর উৎসাহের সঙ্গে পালন করি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম রাখি বন্ধন উৎসবের সূচনা করেছিলেন। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি ভারতবাসী সম্মলিত হয়ে এই দিনটি পালন করে বিশেষ মর্যাদায়।
রাখি বন্ধনের দিনটি আমার কাছে খুবই বিশেষ দিন। এবছরের রাখি পূর্ণিমার দিনটিও আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ এই দিন আমার কেটে ছিল খুবই আনন্দের মাঝে। এই দিনে প্রতিটি দিনের মতো আমিও সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে টিউশন গিয়েছিলাম। সেখানে কিছু বন্ধু বান্ধবীদের রাখি পরিয়েছিলাম।
দাদা আর ছোট ভাইকে রাখি পরিয়ে বাড়িতে রাখি বন্ধন পালন করে স্কুলে এলাম। ভাই আর দাদাকে উপহার দিলাম। দাদার কাছ থেকেও পেলাম উপহার।
এরপর নির্দিষ্ট সময় স্কুলে গিয়ে দেখলাম আজ আমার সব বন্ধুরা এসেছে। ঘন্টা পড়লে প্রার্থনা করার পর ক্লাসে এলাম। নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাস শুরু হলে আমাদের ক্লাস টিচারকে রাখি পরিয়ে প্রণাম করলাম। এই দিনে ক্লাসে পড়াশোনা একটু কমই হল। সব শিক্ষিকারা আমাদের রাখি পরে আনন্দ পেলেন। আমরাও সকলে ওনাদের কাছ থেকে চকোলেট পেয়ে খুব খুশি হলাম।
এভাবে আমি প্রতিবছর রাখি বন্ধন উৎসব পালন করছি। প্রতি বছরই বন্ধুদের বানানো কিছু রাখি স্মৃতি হিসেবে থেকে যায়। আমার প্রিয় বন্ধুর বানানো স্পেশাল রাখিও এ বছর রেখে দেবো।
আমাদের মৌসুমী দিদিমণি ভালোবেসে স্কুলে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলোকে ফ্রেমে বন্দি করেছেন বলে সবাই বাড়িতে আমাদের আনন্দ ভাগ করে নিতে পারলাম। এই ভাবেই কাটল আমার রাখি বন্ধনের বিশেষ দিন।
স্মরণীয় দিবস
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস
(৮ই সেপ্টেম্বর)
দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে
১৯৬৬ সালের ২৬ শে অক্টোবর ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনে ১৪ তম অধিবেশনে ৮ ই সেপ্টেম্বর তারিখ টিকে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৬৭ সালে প্রথমবারের মতো এই দিবসটি উদযাপন করা হয়।
দিবসটির লক্ষ্য-ব্যক্তি, সম্প্রদায় ও সমাজের কাছে সাক্ষরতার গুরুত্ব তুলে ধরা। বর্তমানে জাতিসংঘের সমস্ত সদস্য রাষ্ট্র এই দিবসটি উদযাপন করে থাকে।
সাক্ষরতা কি? এই প্রসঙ্গে বলা যায়, কিছুকাল আগেও কোন মানুষ নিজের নাম পড়তে ও সই করতে পারলে তাকে স্বাক্ষর বলা হত, কিন্তু বর্তমানে তিনটি শর্তের উপরেই নির্ভর করে ব্যক্তিটি স্বাক্ষর কিনা মানা হয়। যেমন, ব্যক্তি নিজের ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য পড়তে ও লিখতে পারবে। দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ হিসাব, নিকাশ করতে পারবে। প্রাত্যহিক জীবনের প্রত্যেকটি কাজই হবে ব্যক্তির সাধারণ জীবনের সংগে সম্পর্কিত। তবে বর্তমানে আরো একটি শর্ত সংযুক্ত হয়েছে সেটি হল, যেখানে সাক্ষরতা সরাসরি ব্যক্তির জীবনযাত্রা পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত হবে।
আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, এই দিবস উদযাপনের কোন যৌক্তিকতা আছে কি? উত্তরে বলি সাক্ষরতা দিবসের যৌক্তিকতা ও গুরুত্ব অনেকখানি,যেমন -পৃথিবীর প্রায় ৭৭৫ মিলিয়ন মানুষের নুন্যতম অক্ষর জ্ঞানেরও অভাব আছে। প্রাপ্তবয়স্ক প্রতি পাঁচজনের মধ্যে এখনো একজন শিক্ষিত নন এবং এর মধ্যে দুঃখের বিষয় দুই তৃতীয়াংশই নারী। বিশ্বের প্রায় ৬০.৭ মিলিয়ান শিশু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত এবং আরো অনেকে শিক্ষায় অনিয়মিত কিংবা মাঝপথে শিক্ষা থেকে দূরে সরে যায়।
সাক্ষরতা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবীয় অধিকার হিসেবে বিশ্বে গৃহীত হয়েছে। এটি ব্যক্তিগত ক্ষমতায়ন বা সামাজিক ও মানবীয় উন্নতির হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণযোগ্য। এমনকি শিক্ষার সুযোগের বিষয়টিও পুরোপুরিভাবে নির্ভর করে সাক্ষরতার ওপর। সাক্ষরতা মৌলিক শিক্ষার ভিত্তি হিসেবেও কাজ করে। দারিদ্র্যতা হ্রাস, শিশু মৃত্যু রোধ, উন্নয়ন এবং শান্তি সমৃদ্ধির জন্য সাক্ষরতার প্রয়োজন। মূল কথা, সবার জন্য শিক্ষা এই স্লোগানের বাস্তবায়ন করতে সাক্ষরতার প্রয়োজন ভীষণভাবে। একটি মানসম্মত মৌলিক শিক্ষা মানুষকে দক্ষতার সাথে তৈরি করতে সাহায্য করে।
সাক্ষরিত মা-বাবারা সন্তানকে বিদ্যালয়ে যেতে উৎসাহিত করে।
২০২১ সালে সাক্ষরতা দিবসের প্রধান লক্ষ্য ছিল, শিক্ষা ক্ষেত্রে ফারাক ঘুচিয়ে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রসঙ্ঘের ২০৩০ Sustainable Development Goals এর অন্যতম প্রধান হাতিয়ার শিক্ষা। কাজেই শিক্ষাকে সাধারণ মানুষের মধ্যে আরো বেশি করে ছড়িয়ে দিতে হবে, তবে সমাজ তথা দেশ উন্নতি করতে পারবে। সবশেষে বলি, প্রথমেই মহিলাদের শিক্ষিত হতে হবে। একটি মা শিক্ষিত মানেই তার সন্তানও শিক্ষিত হবে।
পাঠপ্রতিক্রিয়া
(১৪৬ তম ছোটোবেলা পড়ে কুহেলী দাশগুপ্ত যা লিখলেন)
ছোট্ট চাঁদপানা মুখের হাসির ছবিতে সেজে উঠেছে "জ্বলদর্চি ছোটবেলা" র ১৪৬ তম সংখ্যাটি। চিত্রগ্রাহক ঋপণ আর্য দুটি শিশুর জল ছপ ছপ খেলার অপূর্ব ছবি তুলেছেন। মৌসুমী ঘোষ এর সম্পাদকীয় প্রতিবারের মতোই প্রাণবন্ত । ছোটদের কাছে তাদের মনের মতো করেই উপস্থাপন করে ও। বিক্রম ও প্রজ্ঞান এর চন্দ্রাভিযানের গল্প সবার মুখে মুখে। ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানীদের সমবেত প্রয়াস এই অভিযান। তেমনি ছোট ,বড় সকলের সমবেত প্রচেষ্টায় "জ্বলদর্চি ছোটবেলা"এগিয়ে চলেছে ১৫০তম সংখ্যা উপস্থাপনের দিকে। কে বলতে পারে! এই ছোটদের মধ্যেই কেউ হয়তো আগামীতে মহাকাশ অভিযান প্রকল্পে সফল প্রয়াস রাখবে!
শ্রীকান্ত অধিকারী মহাশয়ের " লাচুঙের নেকড়ে " তে মন খারাপ আর উত্তেজনা। রামসিং আর তার ছোট মামা শার্দুলকেশর নন্দী বেড়াতে বার হয়ে এখনও ফিরে আসেনি। সকলের মনে নানা আশঙ্কা। ওদের খোঁজে গল্প এগিয়ে চলেছে রহস্যের কিনারার পথে এগিয়ে।
নার্সারি টু এর চিরন্তন মিত্র দেশের পতাকা কে সম্মান জানিয়ে মিষ্টি একটা ছবি এঁকেছে। পতাকা ভারতমাতার শাড়ির আঁচল । প্রতিটি শহীদ এই আঁচল জড়িয়ে অন্তিমের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। সন্দীপন রায় এর "চাঁদ মামা" ছড়াটির সাথে আমরাও ভাবছি কবে ইসরো মামা বাড়ি যাওয়ার সিঁড়ি বানাবে? আমাদের আকাশ ছোঁয়ার ইচ্ছেগুলো ও সফল হবে তাতে।
ফাল্গুনী পান্ডা র " আমরা ভালো নেই" গল্পে দূষণ মুক্ত পরিবেশ সংরক্ষণের বার্তা রয়েছে। প্রতিদিনের যান চলাচল আর কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া পৃথিবীর সকল প্রানীর জীবন ধারণের প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করে। শুধু কি হাঁসজারু! মানুষের তৈরি প্রতিকূলতায় প্রানী জগত বিপন্ন।
একাদশ শ্রেণির শান্তা বিশ্বাস একটা মিষ্টি মুখের ছবি এঁকেছে।
রাহুল পাত্রের " একলা ছাদে" পড়ে আমার ও ছাদে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে। খোলা ছাদে আকাশ দেখে মন ফুরফুরে হয়ে যায়। ওর বিশালতার কাছে মন খুলে ভাব প্রকাশ করতে ইচ্ছে হয়।
দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে " জাতীয় ক্রীড়া দিবস" সম্পর্কে লিখেছেন। বিখ্যাত হকি খেলোয়াড় ধ্যান চাঁদের জন্মদিন উপলক্ষে ২৯ শে আগস্ট এই বিশেষ দিনটি পালিত হয়। শরীর ও মনের বিকাশে খেলাধূলার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। পড়াশোনার পাশাপাশি এই বিষয়ে ও সচেতন হতে হবে আমাদের। লেখাটি তথ্য সমৃদ্ধ।
শিক্ষিকা অনামিকা তেওয়ারীর পাঠ প্রতিক্রিয়া পড়ে খুব ভালো লাগল। ছোটবেলা ১৪৫ সংখ্যার পাঠ প্রতিক্রিয়া টি খুব আন্তরিকতা পূর্ণ আলোচনা হয়েছে। প্রতি বছর ৫ই সেপ্টেম্বর শ্রদ্ধেয় সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিনে শিক্ষক দিবস পালিত হয়। শিক্ষক আমাদের মানবিক বিকাশ ও ভাবনার পথ আলোকিত করেন। সকল শিক্ষক , শিক্ষিকার উদ্দেশ্যে প্রণাম জানাই। "জ্বলদর্চি ছোটবেলা" এগিয়ে চলুক সকলের সম্মিলিত ভাবনার পথ ধরে। ধন্যবাদ সম্পাদক মহাশয়া। শুভেচ্ছা জানাই সকলকে।
0 Comments