জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৪৭

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৪৭
সম্পাদক - মৌসুমী ঘোষ 
চিত্রগ্রাহক - মৃণাল ঘোষ

সম্পাদকীয়, 
মৃণাল আঙ্কেল একটা মন খারাপ করা ছোট্টো বাঁদরের ছবি তুলে পাঠিয়েছে। বাঁদরটার মন খারাপ কেন? ওকে কেউ রাখী পরায়নি তাই ওর মন খারাপ। আমি জানি তোমাদেরও অনেকেরই ভাই বোন নেই। তাই এখন স্কুলের বন্ধুরা একে অপরকে রাখী পরায়। মেঘনা সেই ছবি এঁকে পাঠিয়েছে। কিন্তু বাঁদরটা তো আর স্কুলে যায় না। দোলনচাঁপা আন্টির লেখা পড়ে জানতে পারবে ৮ সেপ্টেম্বর সাক্ষরতা দিবস। এসো ঐদিন বাঁদরটাকে স্কুলে ভর্তি করে দিই। তাহলে পরের বছর ওকে কেউ না কেউ রাখী পরাবে। ওরও আর মন খারাপ থাকবে না। বাঁদরদের স্কুলের কথা শুনে হাসছো? তবে গাছ কাটলে কিন্তু বাঁদরদের স্কুল সত্যি সত্যি উঠে যাবে। তাই মলয় জেঠু ঠিকই বলেছে 'কালিদাসের মতোই তুমি কাটছ গাছের ডাল'। শুধু কি গাছ? আমরা বন্য প্রাণীদেরও ছাড়  দিই না। তাদের ডিটেক্ট করার জন্য কলার ডিটেক্টর লাগাই। তাতে লাচুঙের হারিয়ে যাওয়া নেকড়ে খুঁজে পেতে সুবিধা হয় তবে এটাও মানুষের খবরদারি প্রকৃতির ওপর। তাই প্রমিতের আঁকা নির্মল প্রকৃতি ক্রমে ক্রমে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এদিকে চিন্ময় জেঠু একটা ভারী মজার গল্প বলেছে। জঙ্গল মহলের গল্প। সেখানে একটা পুচকে কাঠবেড়ালী ভয় পেয়ে গেছে।  কেন? তারজন্য পড়তে হবে গল্পটা। এসো আমরা সবাই মিলে জঙ্গল বাঁচাই। তবে জঙ্গলের বন্ধুরা নিয়মিত স্কুলে যাবে, খেলা করবে আর আমরাও নিশ্চিন্তে বাড়ি বসে জঙ্গল মহলের গল্প শুনতে পারব। কি ঠিই কিনা? ---মৌসুমী ঘোষ।
ধারাবাহিক উপন্যাস
লাচুঙের নেকড়ে
পর্ব ২৬

শ্রীকান্ত অধিকারী

ছাব্বিশ 

মিটিং এখানেও বসেছে। দুটো কারণ। দুটোই অত্যন্ত স্পর্শকাতর। প্রথমত যে নেকড়েটা পালিয়েছে সেটা এখন কত দূরে? তার গলায় যে কলার ডিটেক্টর রয়েছে সেটা কাজ করছে কিনা। যদি কাজ করে তবে তার অবস্থান অনুযায়ী তার কাছাকাছি কোনো এজেন্ট র‍য়েছে কি! বাকি যে নেকড়েগুলো রয়েছে তাদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকা লোকগুলোকে আরো সচেতন ও কড়া হতে হবে। 
দ্বিতীয়ত এই মুহুর্তে যে বিষয়টা ওদের ভাবিয়ে তুলেছে, যে দুজনকে ওরা নিয়ে এসেছে তাদের স্পেশাল কোয়ালিটি কি? তারা কি তাদের এই মহান আন্দোলনের অংশীদার হতে পারবে! তাদের নিয়ে কি কোনো কাজ হবে? 
এই বিষয়গুলো নিয়ে যখন জুং সহ আরো চারজন সহযোগী আলোচনায় ব্যস্ত তখন ওদিকে একটা ছোট ঘরে একজন বালক আর একজন লোক হাত পা বাঁধা বাজরাগাছের শুকনো খরের গাদার ওপর অবসন্ন তন্দ্রালু অবস্থায় ঝিমিয়ে পড়ে আছে।  
চারপাশ বড্ড শুনশান। মাঝে মাঝে তবু এক সোঁ সোঁ আর কাটা কাটা খড়খড় শব্দ ওদের কানে এসে লাগছে। অসহনীয়। আবার ঝিমিয়ে যাচ্ছে। 
কতক্ষণ এইভাবে ছিল ওরা জানে না। তবে পেটটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। একটু যন্ত্রণাও। এবার বালকটি পুরোপুরি চোখ খোলে। এ পাশ ও পাশ ঘুরে দেখতেই ককিয়ে ওঠে। শিরদাঁড়ার এল থ্রি থেকে ঘাড় অবদি ভীষণ ব্যথা। তবু আরো একবার সামনের দিকে তাকাতেই চমকে ওঠে। এক বিদঘুটে চেহেরার মহিলা ওর সামনে দাঁড়িয়ে। বেশভূষা যথেষ্ট নোংরা। দক্ষিণ পশ্চিমবঙ্গে আদিবাসী মহিলারা যেমন লুঙ্গির মত করে রঙিন কাপড় পরে, আর ওপরে আলাদা কাপড়। তফাৎ শুধু ওরা গায়ে আরো একটা কাপড়কে পিঠ আর বুকের মাঝে ঝুলিয়ে দিয়েছে, আর মাথায় আরো একটা রঙিন কাপড় বাঁধা। গলায় এক ধরণের ব্রোঞ্জের মালা। বেশ বেমানান লাগছিল। বালকটি ওর দিকে তাকাতেই দাঁত বের করে হাসে। হাতে ধরা কেটলি জাতীয় পাত্র এনে ওর সামনে অন্য একটা ছোট পাত্রে ধোঁয়াটে পানীয় অফার করে। 
পানীয় বলতে ও যেটুকু জেনেছে শস্য গেঁজিয়ে তৈরি করা হয় –চ্যাং, টংবা, রাকসি এবং কোডো কো জানর। এই পাহাড়ি এলাকায় এ সব চলে। কিন্তু তাকে কেন এই ভেট! 
  এমনিতে সারা রাত কোথায় কীভাবে ছিল ওর মনে নেই। তবে প্রথম দিকে খুব কষ্ট হয়েছিল অচেনা জঙ্গলের মাঝে এবড়ো খেবড়ো পাথরের ওপর আলতাবড়ি হেঁটে। তার ওপর বাঁশের চাপ! এখনো ঘাড় ঘোরাতে পারে না।  
ভয়ে ভয়ে আড় চোখে গতকালের সঙ্গী ছোটমামাকে খোঁজে। কিন্তু সামনের মহিলার ধমকে 
উঠে বসতে হয়। তখনই দেখে ছোট মামা ওর দিকে তাকিয়ে ইশারা করছে,-খেয়ে নে। দেখে মামার হাতেও একটা গেলাসের মত পাত্র। মহিলাটি ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। 
এবার বুঝেছে ওদের চোখে চোখে রাখার জন্য এই মহিলাটিকে বন্দোবস্ত করা হয়েছে। 
এতক্ষণ খেয়াল করেনি, হাত দুটো কখন কে খুলে দিলেও পা দুটো বাঁধা রয়েছে। নিজেকে ঘষটে ঘষটে ছোটমামার পাশে নিয়ে যাবার চেষ্টা করলে মামা ফিসফিস করে যেখানে যে অবস্থায় আছিস সেখানে সেই অবস্থায় থাকতে বলে। 
ছোটমামাও নট নড়ন চড়ন। সেই কাল সন্ধে থেকে ব্যাপারটার মাথা মুন্ডু কিছুই ধরতে পারে না। ওদের এভাবে কারা বগলদাবা করে কোথায় নিয়ে এলো? কেনই বা নিয়ে এলো। সে তো ইতিহাস ছাড়া কিছু পড়াতে পারে না। আর ওই পুচকে ছেলেটার দ্বারা কিছু হবে বলে মনে হয় না। সেই সেন্স আসা থেকে এদের মোটিভটা ধরতে পারে না। 
ছেলেটার ঐ ভাবে পা দুটো বাঁধা দেখে মন খারাপ হয়। এর জন্য নিজেই নিজেকে দায়ী করে।-কি দরকার ছিল ওভাবে বিকেলের দিকে পাহাড় জঙ্গল দেখতে হোম থেকে আনাড়ির মত শুধু দুজনে বেরিয়ে আসার। পরে না হয় অন্য কোনোদিন আসা যেত। 
এক লহমায় কালকের সব ঘটনা মনে পড়ে গেল। লাচুঙের মেঘে ডাকা পাহাড়ের তলে গভীর জঙ্গল। সেই অন্ধকার জঙ্গলের ভেতর নিঃশব্দে হেঁটে যাওয়া ভেড়ার পাল। তারপর সব চুপচাপ। তারপর … 
এতগুলো ভেড়া এখানে কেন? তখন কি জানত এমন হবে! মনে পড়ে গেল রামসির কথা। 
বড়মামা সিক্কিমে যে সব অ্যানিমালসের কথা বলেছিল, তার মধ্যে আর যায় হোক ভেড়ার কথা বলে নি। শুধু বলেছিল আগে ছিল এখন নেই। তার বদলে ইয়াক এসে ওদের দখল নিয়েছে। 
এর অবশ্য একটা কারণ আছে। কী কারণ বল দেখি রাম সিং। রামসির দুই মামাই ওকে রামসিং বলে ডাকে। শাদুলমামা মুচকি মুচকি হাসে।  
রামসিং পোদ্দার মাথা চুলকায়। 
---শোন। প্রায় সবই মাংসের জন্য বা অতিরিক্ত শীতে লোপাট হয়ে গেছিল প্রকৃতি থেকে। ইয়াকের মাংসের তুলনায় ভেড়ার মাংস সুস্বাদু। 
কিন্তু মামা আমি শুনেছি যে বেশীর ভাগ নেপালি বা লেপচারা ভেজিটেরিয়ান। তবে খেল কে? 
--হা হা হা। বেড়ে প্রশ্নটা করেছিস তো। কে বলে তোর মাথা ফাঁকা। সেখানেও একটা গোলমাল আছে। তবে তিব্বতীয়রা ভেজিটেরিয়ান হলেও ভোট নেপালি আর সিক্কিমের আদিবাসীদের চাইনিজ চিকেনে ওদের ভীষণ লোভ। তাছাড়া অন্যন্যা কিট পতঙ্গ সাপ...সাইলেন্ট ! কীসের যেন আওয়াজ ! 
শাদুল মামা খানিকক্ষণ চুপ করে যায়! অদূরে ঠিক ওদের বাম পাশে কোনো বাঁশের ঝোপ থেকে কোকিল পরিবারভুক্ত গ্রিন বিল্ড মালকোহা জাতীয় কোনো পাখি। আমাদের ওখানে শুধু বসন্ত বা গ্রীষ্মকালেও দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে এই জাতীয় পাখি শীত বর্ষা ছাড়া সব সময় দেখতে পাওয়া যায়। হ্যাঁ কি যেন বলছিলাম,--ভেজ ননভেজ।তার জন্য দায়ী অবশ্যই আমরা মানে বাঙালীরা। বাঙালীরা ননভেজ। ডিম মাছ মাংস ভাতের থালায় বা রাতে রুটির সঙ্গে চিকেন কষা না হলেই যেন নয়। 
--কিন্তু মামা, শুধু বাঙালি ছাড়াও সিক্কিমে প্রচুর নন বেঙ্গলি এমনকি নন ইণ্ডিয়ানও আসে। তারাও তো ওদের অভ্যাসের বদল করে দিতে পারে। 
--হ্যাঁ তা পারে। কিন্তু তুই কি জানিস ভারতবর্ষের ঘুরে বেরানোর গ্রাফে বাঙ্গালিরাই এক নম্বর। তবে নেপালি তিব্বতি কিছু খাবার বা স্যুপ এদের খুব প্রিয়। যেখানে চিকেন বা এই পশুর মাংস পোড়ানো বা এখন মডার্ন খাইবার পাশগুলোতে দেদার স্মোকি ফ্লেবারে বিকোচ্ছে।গোটা সিক্কিমে মোট ভেড়ার সংখ্যা অত্যধিক কমে গেছিল। ২০০০ সালে মাত্র ২০১৬।শাদুলমামা বলে। ভাবতে পারছিস! 
রামসি ভাবে। এও কি সম্ভব। তবে এগুলো কি! মাথায় বড় বড় শিং। দেখতে ছাগলের মত। পাহাড়ি ছাগল! 
--চ্যাংড়া! ছাগলের পাঁঠা। 
এলাচ আর ‘ফরগেট মি নটে’র ঝোঁপঝাড়ের মধ্যে কয়েকটা বুনো ছাগল পাথর থেকে খুঁটে খুঁটে  ঘাস খাচ্ছিল। 
আর কিছু দেখতে না পেলেও হঠাৎ পাহাড়ের পূর্ব দিকে আরো একটু উঁচুতে হলদে পাইন গাছের আড়ালে যেখানে কোনো আপেল গাছের বাগান বা এলাচ গাছের বন কিছুই ছিল না, সরু সরু পাতার ফাঁক দিয়ে কেমন যেন লুকিয়ে তার চোখে এলো একটা তীক্ষ্ণ আগুনের হলকা। প্রথমে সে চমকে উঠল। তারপর হঠাৎ বুকটা ছ্যাঁক করে এলো। এই জঙ্গলে আগুন লাগালো কে? না কি এমনি এমনি দাবানল জ্বলে উঠল। তাহলে তো সারা বন জুড়ে লকলকে আগুন হি হি করে ছড়িয়ে পড়বে। সে কি এই আগুন থেকে বাঁচতে পারবে? অনেকগুলো দুর্ভাবনা ওকে জাপ্টে ধরতে  থাকল। সেই দুপুর পেরিয়ে যখন সুর্য সবেমাত্র হেলেছে সঙ্গে সঙ্গে লুকিয়ে বেড়িয়ে পড়েছিল মামা ভাগ্নে দু’জন। তখন কি ভেবেছিল এমনটা হবে!
( ক্রমশ)
প্রমিত নস্কর
ষষ্ঠ শ্রেণী, রঘুনাথবাড়ি রামতারক উচ্চ বিদ‍্যালয়,পূর্ব মেদিনীপুর

মিথ্যে ছলা
মলয় সরকার

তোমরা কাটো বনস্পতি-
বুঝছ না তো কার যে ক্ষতি,
কালিদাসের মতই তুমি 
কাটছ গাছের ডাল;
কদিন পরেই ফুরিয়ে যাবে
তোমার বাঁচার কাল।

যে তোমাকে অন্ন যোগায়,
মন্দ মধুর হাওয়া,
কাপড় জোগায়,থাকার ঘরও
গ্রীষ্মকালে ছায়া,
তার গোড়াতেই মারছ কুড়াল-
খুন করছ মাকে;
কোথায় পাবে অম্লজান,
বাঁচার রসদ টাকে।

একটা কেটে বনস্পতি
দশটা লাগাও চারা,
ঠকছে কে আর এই মিথ্যেয়
কেবল তুমি ছাড়া?
একটা বড় বৃক্ষ জেনো 
হাজার চারার মত,
লোক ঠকানো মিথ্যে ছলায়
ভরবে নাকো ক্ষত।

🍂

জঙ্গল মহলের গল্প

কাউকে কখনও ভয় দেখিও না

চিন্ময় দাশ

যে দিকেই চোখ যায় টিলা, ডুংরি, চাটান। আর ঘন জঙ্গল। সেই বনের ভিতর, এখানে ওখানে ছড়ানো ছিটানো ছোট ছোট গ্রাম । 

তো, তারই একটা গ্রামে থাকতো এক দেহরি (পুরোহিত)। গাঁয়ে গাঁয়ে ঘুরে পূজাপাঠ করে বেড়ায় সে। আসলে, এ তল্লাটে আর কোন দেহরি নাই। ঐ একজনই ভরসা। আর, তাই নিয়ে ভারি গুমোর লোকটার। দেমাকে পা পড়ে না মাটিতে।

এক বছর ভারি গরম। বেলা না বাড়তেই, বাতাসে আগুনের হলকা। পাশেই সুবর্ণরেখা বয়ে চলেছে। কিন্তু ঐ নামেই নদী। ধু-ধু বালিতে ঢাকা। বালির সমুদ্র যেন। তার ভিতর দিয়ে, সরু ফিতের মতো, একটা জলের রেখা বয়ে যাচ্ছে এঁকে বেঁকে। 

টিলা-ডুংরি পার হয়ে যেতে হয় দেহরিকে। চড়াই-উৎরাই ভাঙতে হয়। হাঁস-ফাঁস গরমে ভারি হয়রাণ হতে হয় লোকটাকে।  

একদিন কাজে বেরিয়েছে দেহরি। বেলা এমন কিছু বাড়েনি। তাতেই আগুনের মতো তাত হয়েছে বাতাসে। আই-ঢাই অবস্থা। আসলে, বয়সও তো হয়েছে। তিন-কুড়ি ছুঁই-ছুঁই করছে। একটুতেই বুকে হাঁফ ধরে যায়।  

লোকটা ভাবল, একটু জিরিয়ে নিই। সামনে একটা মহুল গাছ দেখে, এগিয়ে গেল দেহরি। 

গাছের তলায় এসে, থমকে গেল। একটা কাঠবেড়ালি দখল করেছে জায়গাটা। লম্বা লেজখানা ছড়িয়ে আছে মাটিতে। আরাম করে ঘুম লাগিয়েছে পুঁচকেটা। 

দেখে ভারি রাগ হয়ে গেল দেহরির। ‘আমি গরমে হাঁপিয়ে মরে যাচ্ছি। আর এ ব্যাটা আরাম করে ঘুমাচ্ছে! আর, ঘুম বলে ঘুম! আস্ত একটা জলজ্যান্ত মানুষ এসে একেবারে তোর গায়ের উপর দাঁড়িয়েছে, সে হুঁশও নাই। দাঁড়া, দেখাচ্ছি মজা।‘

মহুল ঝরছে এখন। ভালুক বেরোচ্ছে খুব। তাই, ঝোলায় একটা শিঙা রাখে দেহুরি। শিঙাটা বের করল ঝোলা থেকে। মুখে মিটিমিটি হাসি। কাঠবেড়ালির দিকে ঝুঁকে, জোরসে লাগালো এক ফুঁ।

আর যায় কোথায়? তিড়িং করে এক লাফ। ছি্টকে উঠেছে পুঁচকেটা। তারপর? তার পর আর কী। থপ করে মাটিতে পড়েই, একেবারে ভোঁ-কাট্টা। 

খানিকটা ছুটে, দাঁড়িয়ে পড়ল কাঠবেড়ালি। আচমকা এমন বেমক্কা শব্দটা এলো কোত্থেকে? কোন দিন তো শুনিনি। পেছন ফিরে চেয়ে অবাক। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে একটা লোক। হাতে একটা রামসিঙা। কাঠবেড়ালির মনে পড়ল, মাঝে মাঝে এদিক দিয়ে যায় লোকটা।

হেসেই চলেছে মানুষটা। হাসি যেন থামতেই চায় না তার। আসলে, ভয় পেয়ে পুঁচকেটা যেভাবে লাফিয়ে উঠল, যেন আকাশ ছুঁয়ে ফেলবে ব্যাটা। তারপর পড়ে গেল একেবারে চিৎপটাং হয়ে। দেখে হাসিতে পেট ফেটে যাবার জোগাড় দেহরির। 

হাসি থামলে, খোশমেজাজে আবার চলতে শুরু করল লোকটা। বেচারা কাঠবেড়ালি কী আর করে। সেও ঢুকে পড়ল একটা ঝোপের ভিতর।

সেদিন কাজ সেরে বেরোতে একটু বেশিই দেরি হয়েছে দেহরির। বিকেলে একটু ঝড়বৃষ্টি হোল। তাতেই আটকে যেতে হয়েছিল।  যখন মাঝরাস্তায়, সূর্য ডুবে গেল ঝুপ করে। ঘন অন্ধকার নেমে এলো চার দিক জুড়ে। 

কী করা যায় এখন? ভারি ভাবনার কথা। এই ঘুরঘুট্টি অন্ধকার রাত। রাস্তার ঠাওর করা দায়। এক পাও এগোন যায় না। বাড়ি ফিরবে কী করে? দেহরির তো মাথায় হাত। কোথাও একটু ঠাঁই না জুটলে, হয় ভালুক ছিঁড়ে খাবে, নয় তো, চিঁড়েচ্যাপ্টা হতে হবে হাতির পায়ে। 

মাথায় একেবারে আকাশ ভেঙে পড়ল দেহরির। অসহায়ের মতো এদিক ওদিক চাইছে। 

হঠাসৎই কী আনন্দ, কী আনন্দ! দূরে একটা আলো দেখা যাচ্ছে। যদিও খুবই ছোট। তা হোকগে, আলো তো। আর, আলো মানে মানুষজন কেউ না কেউ আছে নিশ্চয়। ঘরবাড়িও থাকতে পারে। আর, তা যদি থাকে, তাহলে তো কথাই নাই। মাথা গুঁজবার একটু ঠাঁই জুটবে নিশ্চয়। 

মনে বেশ একটা পুলকের ভাব। আলো লক্ষ্য করে এগিয়ে চলল। কিছুক্ষণ চলবার পর, হুঁশ হোল তার। অমনি বুকটা ছাঁত করে উঠল। ব্যাপারটা কী? এতটা পথ চলে এসেছে, কিন্তু আলোটা কাছাকাছি হচ্ছে না। যেন সে যত এগোচ্ছে, আলো পিছিয়ে যাচ্ছে ততটাই! ব্যাপারখানা কী? 

ভয়ে বুক ঢিপঢিপ। এই অন্ধকার রাতে জিন-পরীর পাল্লায় পড়ে গেল নাকি? ভাবতেই হিম হয়ে এলো বুকের ভিতরটা। চিৎকার করে উঠতে গেল। অবাক কাণ্ড। আওয়াজ বেরোচ্ছে না গলা দিয়ে।

খানিক বাদে মনে হোল, না, যা ভেবেছে তা নয়। এবার যেন আলোটাই এগিয়ে আসছে এদিকে। তার সাথে একটা শব্দও ভেসে আসছে। অনেকটা একেবারে কান্নার মত একটা শব্দ। 

মনে খটকা লাগল লোকটার কান্না? না কি গুনগুন করে মন্ত্র আওড়াচ্ছে কেউ? 

আলোটা কেছে এসে পড়েছে অনেকখানি। পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে এবার। মারা গেছে কেউ একজন। চারজন লোক বয়ে নিয়ে আসছে তাকে। সামনে একটা লোক। বিড়বিড় করে মন্ত্র আওড়াচ্ছে নীচু গলায়। সুরটা একেবারে কান্নার মত।

ভীষণ ভয় হোল দেহরির। এই আঁধার রাতে মরা মানুষ দেখব? ঝটপট একটা গাছে চড়ে পড়ল সে। আর, বিপদটা হোল তাতেই।

লোকগুলো এসে থামবি তো থা্ম, থামল সেই গাছতলাতেই। দুটো লোক মিলে ঝুপ ঝুপ করে গর্ত খুঁড়তে লেগে গেল। 

দেহরির তো একেবারে কাহিল অবস্থা। হাত-পা শিথিল হয়ে আসছে। সেই গর্তে নিজেই না পড়ে যায়। গাছের ডাল জাপটে ধরে, বসে রইল কোন মতে। 

কাজ শেষ হোল একসময়। মরা মানুষটাকে গর্তে নামিয়ে, চলেও গেল লোকগুলো। একটা শুকনো ডালে আগুন জ্বেলে, পুঁতে দিয়ে গেল গর্তটার গায়ে। তার টিমটিমে আলোয় কেমন যেন ভুতুড়ে হয়ে উঠল জায়গাটা। 

একেবারে নীচেই একটা মরা মানুষ। এই নির্জন শুনশান রাত। কাকপাখিটিও জেগে নাই কোথাও। হিম বরফ হয়ে আসছে বুকের ভিতরটা। 

এভাবে সারা রাত কাটানো ভারি কঠিন কাজ। দেহরি ভাবল, যে ভাবেই হোক, সরে পড়তে হবে এখান থেকে।

চুপিসারে নামতে লাগল গাছ থেকে। একটু নামে, একবার চারদিকে তাকায় চোখ মেলে। আবার একটু নামে, আবার তাকায়। নীচে নেমে, চোখ গেল গর্তটার দিকে। 

লম্বা হয়ে শুয়ে আছে দেহটা। চোখ দুটো ড্যাবডেবে খোলা। তাকিয়ে আছে তারই দিকে। ডাকছেও যেন—আয়, আয় এদিকে। 

ভয়ে থরথর করে কাঁপছে দেহরি। পালিয়ে যাবে, সে শক্তিটুকুও নাই পায়ে। এবার হোল কী, গর্ত ছেড়ে উঠে এল দেহটা। যেন আঁকড়ে ধরবে তাকে। 

হায় ভগবান, এবার পালানো ছাড়া কোন পথ নাই। কিন্তু লাভ হোল না কোন। পায়ে সাড় নাই যেন। দু-তিন পা গেল কোন রকমে। তারপর ধপাস করে পড়ল আছাড় খেয়ে। আর কিচ্ছুটি মনে নাই। 

চোখের পাতা দুটো খুলল, রোদ এসে পড়ল যখন। সকাল হয়ে গেছে। আলোয় ঝলমল করছে চার দিক। মাটিতে গড়াগড়ি খেয়েছে, সারা শরীর ধুলোয় মাখা।

উঠে বসে, প্রথম তাকালো গর্তটার দিকে। অমনি আকাশ ভেঙে পড়ল যেন। কোথায় গর্ত, আর কোথায়ই বা মরা মানুষ! গর্ত তো দূরের কথা, একটা কোপ পড়েছে মাটিতে, তার চিহ্নটুকুও নাই। আগুনে পোড়া ডালটারও চিহ্ন নাই কোথাও। সব যেন উবে গিয়েছে কর্পূরের মত। ভারি অবাক হয়ে গেল দেহরি।

যাকগে সব। ভেবে মাথাটাকে গুলিয়ে ফেলে, লাভ নাই। পৈত্রিক প্রাণটা বেঁচেছে, এটাই কতো না কতো। ভালোয় ভালোয় ঘরে ফিরতে পারলে, বাঁচা যায়। দু’হাত জড়ো করে কপালে ঠেকিয়ে নিল একবার। 

পা বাড়াতে যাবে, সামনে সেই কাঠবেড়ালি। যেন মাটি ফুঁড়ে উদয় হোল পুঁচকেটা। লেজ উঁচানো। সামনের দুটি পা তুলে চেয়ে আছে লোকটার দিকে। 

দেহরি পা ফেলতে যাবে, অমনি কাঠবেড়ালি বলে উঠল—‘শোনগো, পুরুতঠাকুর! কাউকে কখনো ভয় দেখাতে নাই। বিশেষ করে যারা তোমার চেয়ে ছোট, তাদের তো কখনওই নয়। তাতে ভয় ঢুকে যাবে তোমার নিজের মনেই। ছোট জীবের এই কথাটা মনে রেখো। তাতে লাভই হবে আখেরে।' 

পা ফেলা হোল না। থ’ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো দেহরি। লেজ নাচাতে নাচাতে, একটা পাথরের আড়ালে চলে গেল কাঠবেড়ালিটা।

(ঝাড়্গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম থানায়, সুবর্ণরেখা নদীর কোলে, ভালিয়াচাটি গ্রামের লোধাপাড়া থেকে সংগৃহিত।) 

মেঘনা রানা। পঞ্চম শ্রেণী। কেশপুর গার্লস হাই স্কুল। পশ্চিম মেদিনীপুর


আমার রাখি বন্ধন উৎসব

অনন্যা দাস

সপ্তম শ্রেণি, কেশপুর গার্লস হাই স্কুল, পশ্চিম মেদিনীপুর

রাখি পূর্ণিমার দিনটি আমরা প্রত্যেক বছর উৎসাহের সঙ্গে পালন করি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম রাখি বন্ধন উৎসবের সূচনা করেছিলেন। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি ভারতবাসী সম্মলিত হয়ে এই দিনটি পালন করে বিশেষ মর্যাদায়। 

রাখি বন্ধনের দিনটি আমার কাছে খুবই বিশেষ দিন। এবছরের রাখি পূর্ণিমার দিনটিও আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ এই দিন আমার কেটে ছিল খুবই আনন্দের মাঝে। এই দিনে প্রতিটি দিনের মতো আমিও সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে টিউশন গিয়েছিলাম।  সেখানে কিছু বন্ধু বান্ধবীদের রাখি পরিয়েছিলাম। 

দাদা আর ছোট ভাইকে রাখি পরিয়ে বাড়িতে রাখি বন্ধন পালন করে স্কুলে এলাম। ভাই আর দাদাকে উপহার দিলাম। দাদার কাছ থেকেও পেলাম উপহার। 

এরপর নির্দিষ্ট সময় স্কুলে গিয়ে দেখলাম আজ আমার সব বন্ধুরা এসেছে। ঘন্টা পড়লে প্রার্থনা করার পর ক্লাসে এলাম। নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাস শুরু হলে  আমাদের ক্লাস টিচারকে রাখি পরিয়ে প্রণাম করলাম। এই দিনে ক্লাসে পড়াশোনা একটু কম‌ই হল। সব শিক্ষিকারা আমাদের রাখি পরে আনন্দ পেলেন। আমরাও সকলে ওনাদের কাছ থেকে চকোলেট পেয়ে খুব খুশি হলাম। 

এভাবে আমি প্রতিবছর রাখি বন্ধন উৎসব পালন করছি। প্রতি বছরই বন্ধুদের বানানো কিছু রাখি স্মৃতি হিসেবে থেকে যায়। আমার প্রিয় বন্ধুর বানানো স্পেশাল রাখিও এ বছর রেখে দেবো।  

আমাদের মৌসুমী দিদিমণি ভালোবেসে স্কুলে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলোকে ফ্রেমে বন্দি করেছেন বলে সবাই বাড়িতে আমাদের আনন্দ ভাগ করে নিতে পারলাম। এই ভাবেই কাটল আমার রাখি বন্ধনের বিশেষ দিন।


স্মরণীয় দিবস

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস

(৮ই সেপ্টেম্বর)

দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

১৯৬৬ সালের ২৬ শে অক্টোবর ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনে ১৪ তম অধিবেশনে ৮ ই সেপ্টেম্বর তারিখ টিকে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৬৭ সালে প্রথমবারের মতো এই দিবসটি উদযাপন করা হয়।

দিবসটির লক্ষ্য-ব্যক্তি, সম্প্রদায় ও সমাজের কাছে সাক্ষরতার গুরুত্ব তুলে ধরা। বর্তমানে জাতিসংঘের সমস্ত সদস্য রাষ্ট্র এই দিবসটি উদযাপন করে থাকে।

সাক্ষরতা কি? এই প্রসঙ্গে বলা যায়, কিছুকাল আগেও কোন মানুষ নিজের নাম পড়তে ও সই করতে পারলে তাকে স্বাক্ষর বলা হত, কিন্তু বর্তমানে তিনটি শর্তের উপরেই নির্ভর করে ব্যক্তিটি স্বাক্ষর কিনা মানা হয়। যেমন, ব্যক্তি নিজের ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য পড়তে ও লিখতে পারবে। দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ হিসাব, নিকাশ করতে পারবে। প্রাত্যহিক জীবনের প্রত্যেকটি কাজই হবে ব্যক্তির সাধারণ জীবনের  সংগে সম্পর্কিত। তবে বর্তমানে আরো একটি শর্ত সংযুক্ত হয়েছে সেটি হল, যেখানে সাক্ষরতা সরাসরি ব্যক্তির জীবনযাত্রা পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত হবে।

আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, এই দিবস উদযাপনের কোন যৌক্তিকতা আছে কি? উত্তরে বলি সাক্ষরতা দিবসের যৌক্তিকতা ও গুরুত্ব অনেকখানি,যেমন -পৃথিবীর প্রায় ৭৭৫ মিলিয়ন মানুষের নুন্যতম অক্ষর জ্ঞানেরও অভাব আছে। প্রাপ্তবয়স্ক প্রতি পাঁচজনের মধ্যে এখনো একজন শিক্ষিত নন এবং এর মধ্যে দুঃখের বিষয় দুই তৃতীয়াংশই নারী। বিশ্বের প্রায় ৬০.৭ মিলিয়ান শিশু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত এবং আরো অনেকে শিক্ষায় অনিয়মিত কিংবা মাঝপথে শিক্ষা থেকে দূরে সরে যায়।

সাক্ষরতা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবীয় অধিকার হিসেবে বিশ্বে গৃহীত হয়েছে। এটি ব্যক্তিগত ক্ষমতায়ন বা সামাজিক ও মানবীয় উন্নতির হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণযোগ্য। এমনকি শিক্ষার সুযোগের বিষয়টিও পুরোপুরিভাবে নির্ভর করে সাক্ষরতার ওপর। সাক্ষরতা মৌলিক শিক্ষার ভিত্তি হিসেবেও কাজ করে। দারিদ্র্যতা হ্রাস, শিশু মৃত্যু রোধ, উন্নয়ন এবং শান্তি সমৃদ্ধির জন্য সাক্ষরতার প্রয়োজন। মূল কথা, সবার জন্য শিক্ষা এই স্লোগানের বাস্তবায়ন করতে সাক্ষরতার প্রয়োজন ভীষণভাবে। একটি মানসম্মত মৌলিক শিক্ষা মানুষকে দক্ষতার সাথে তৈরি করতে সাহায্য করে।

সাক্ষরিত মা-বাবারা সন্তানকে বিদ্যালয়ে যেতে উৎসাহিত করে।

২০২১ সালে সাক্ষরতা দিবসের প্রধান লক্ষ্য ছিল, শিক্ষা ক্ষেত্রে ফারাক ঘুচিয়ে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

অন্যদিকে রাষ্ট্রসঙ্ঘের ২০৩০ Sustainable Development Goals এর অন্যতম প্রধান হাতিয়ার শিক্ষা। কাজেই শিক্ষাকে সাধারণ মানুষের মধ্যে আরো বেশি করে ছড়িয়ে দিতে হবে, তবে সমাজ তথা দেশ উন্নতি করতে পারবে। সবশেষে বলি, প্রথমেই মহিলাদের শিক্ষিত হতে হবে। একটি মা  শিক্ষিত মানেই তার সন্তানও শিক্ষিত হবে।

পাঠপ্রতিক্রিয়া

(১৪৬ তম ছোটোবেলা পড়ে কুহেলী দাশগুপ্ত যা লিখলেন)

ছোট্ট চাঁদপানা মুখের হাসির ছবিতে সেজে উঠেছে "জ্বলদর্চি ছোটবেলা" র ১৪৬ তম সংখ্যাটি। চিত্রগ্রাহক ঋপণ আর্য  দুটি শিশুর জল ছপ ছপ খেলার অপূর্ব ছবি তুলেছেন। মৌসুমী ঘোষ এর সম্পাদকীয় প্রতিবারের মতোই  প্রাণবন্ত । ছোটদের কাছে তাদের মনের  মতো করেই উপস্থাপন করে ও। বিক্রম  ও প্রজ্ঞান এর চন্দ্রাভিযানের গল্প সবার মুখে মুখে। ভারতবর্ষের বিভিন্ন  প্রান্তের বিজ্ঞানীদের  সমবেত প্রয়াস এই অভিযান।  তেমনি ছোট ,বড় সকলের সমবেত প্রচেষ্টায় "জ্বলদর্চি ছোটবেলা"এগিয়ে চলেছে ১৫০তম সংখ্যা উপস্থাপনের  দিকে। কে বলতে পারে! এই ছোটদের মধ্যেই  কেউ  হয়তো আগামীতে  মহাকাশ অভিযান প্রকল্পে সফল প্রয়াস রাখবে!

শ্রীকান্ত  অধিকারী  মহাশয়ের " লাচুঙের নেকড়ে " তে মন খারাপ  আর উত্তেজনা। রামসিং আর তার ছোট মামা শার্দুলকেশর নন্দী বেড়াতে বার হয়ে এখনও  ফিরে আসেনি। সকলের মনে নানা আশঙ্কা। ওদের খোঁজে গল্প  এগিয়ে চলেছে রহস্যের কিনারার পথে এগিয়ে।

নার্সারি টু এর চিরন্তন মিত্র দেশের পতাকা কে সম্মান  জানিয়ে মিষ্টি একটা ছবি এঁকেছে।  পতাকা ভারতমাতার শাড়ির  আঁচল । প্রতিটি শহীদ এই আঁচল জড়িয়ে অন্তিমের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। সন্দীপন রায় এর "চাঁদ মামা" ছড়াটির সাথে আমরাও ভাবছি কবে ইসরো মামা বাড়ি যাওয়ার  সিঁড়ি বানাবে? আমাদের  আকাশ ছোঁয়ার  ইচ্ছেগুলো ও সফল হবে তাতে।

 ফাল্গুনী পান্ডা র " আমরা ভালো নেই" গল্পে দূষণ মুক্ত  পরিবেশ সংরক্ষণের বার্তা রয়েছে। প্রতিদিনের  যান চলাচল আর কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া পৃথিবীর সকল প্রানীর জীবন ধারণের প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করে। শুধু  কি হাঁসজারু! মানুষের তৈরি প্রতিকূলতায় প্রানী জগত বিপন্ন। 

একাদশ শ্রেণির শান্তা বিশ্বাস একটা মিষ্টি মুখের ছবি এঁকেছে। 

 রাহুল পাত্রের " একলা ছাদে" পড়ে আমার ও ছাদে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে। খোলা ছাদে আকাশ দেখে মন ফুরফুরে হয়ে যায়। ওর বিশালতার কাছে মন খুলে ভাব প্রকাশ করতে ইচ্ছে হয়।

 দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে " জাতীয় ক্রীড়া দিবস" সম্পর্কে লিখেছেন। বিখ্যাত হকি খেলোয়াড় ধ্যান  চাঁদের জন্মদিন উপলক্ষে ২৯ শে আগস্ট এই বিশেষ দিনটি পালিত হয়।  শরীর ও মনের বিকাশে খেলাধূলার  প্রয়োজনীয়তা  অপরিসীম। পড়াশোনার  পাশাপাশি এই বিষয়ে ও সচেতন হতে হবে আমাদের।  লেখাটি তথ্য সমৃদ্ধ।  

 শিক্ষিকা অনামিকা তেওয়ারীর পাঠ প্রতিক্রিয়া পড়ে খুব ভালো লাগল।  ছোটবেলা ১৪৫ সংখ্যার  পাঠ প্রতিক্রিয়া টি খুব আন্তরিকতা পূর্ণ আলোচনা হয়েছে। প্রতি বছর ৫ই সেপ্টেম্বর  শ্রদ্ধেয় সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিনে শিক্ষক  দিবস পালিত হয়। শিক্ষক আমাদের  মানবিক বিকাশ  ও ভাবনার পথ আলোকিত করেন। সকল শিক্ষক , শিক্ষিকার  উদ্দেশ্যে প্রণাম জানাই।  "জ্বলদর্চি ছোটবেলা" এগিয়ে চলুক সকলের সম্মিলিত ভাবনার পথ ধরে। ধন্যবাদ সম্পাদক মহাশয়া। শুভেচ্ছা জানাই  সকলকে।





Post a Comment

0 Comments