জ্বলদর্চি

যেতে যেতে পথে/ পর্ব ৮৯ /রোশেনারা খান

যেতে যেতে পথে  
পর্ব ৮৯ 

রোশেনারা খান

বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠের ছাত্রীরা কার্ড দিতে এসেছিল।বলল,ম্যাডাম আমাদের স্পোর্টস আছে, ওইদিন বড়দি অনেক করে আপনাকে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। আপনি অবশ্যই আসবেন।পরে স্বাতীর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে।স্পোর্টসে গিয়ে অলিম্পিয়ান সুস্মিতা সিংহ রায়ের সঙ্গে আলাপ হল।খুব মিশুকে মেয়ে। অনেকের সঙ্গে দেখা হল, কথা হল, ‘যেমন খুশি সাজো’র জাজমেন্ট করলাম, অনেকের হাতে পুরস্কারও তুলে দিলাম। ভালই কাটল সময়টা। সুস্মিতাকে একদিন বাড়িতে আসতে বললাম। আমি অবশ্য আগেই চলে আসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু স্বাতী (প্রধান শিক্ষিকা)কিছুতেই আসতে দিল না।

    আজ খুড়তুতো বোনের মেয়ে অনি ফোন করেছিল। বাবা মা দুজনেই ক্যান্সারে মারা গেছেন।বাবা এগ্রিকালচার ডিপারমেন্টে বড় অফিসার ছিলেন। ওর মা আমার থেকে ৮ মাসের ছোট। মাঝখানে অনেক ঘটনা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে।বর্তমানে ও প্রেগন্যান্ট, মনখারাপ লাগছিল তাই আমাকে ফোন করেছে। জানিনা কী কারণে কারও সঙ্গে ওর যোগাযোগ নেই বলে বলছে। আমার এসব ব্যপারে কৌতূহল কম, কেউ নিজের থেকে বললে আলাদা কথা।

    দিন দুই আগে সিঁড়ি থেকে পড়ে পা মুচকে গেছে। চন্দ্রিমা কিছুতেই   শুনলনা, এক্সরে করাতে নিয়ে গেছল। ফেরার পথে সাহাবাজের জন্য আংটি কিনলাম। সোয়েটারটাও শেষ করেছি। জন্মদিনে দিতে পারিনি, তাই আজ একবার আসতে বলেছিলাম। সোয়েটার আংটি দুটিই ভাল ফিট করেছে, ওর পছন্দও হয়েছে।  

       আজ ১৫ জানুয়ারি, আমার সম্রাটের জন্মদিন। কিন্তু উনি এতটাই অসুস্থ ও রুগ্ন হয়ে পড়েছেন যে বলার নয়। চেহারাটা কালো পোড়া কাঠ হয়ে গেছে। তবুও চন্দ্রিমা নতুন সার্ট নিয়ে এসে প্রায় জোর করেই পরাল। কেক ও মিষ্টি নিয়ে এসেছে। শিবানীদি পায়েস, পাটিসাপটা বানিয়ে পাঠিয়েছেন। ঝর্ণা এসেছিল ওনাকে  দেখতে। কেক কাটা হল, আমি পায়েস খাইয়ে দিলাম। চন্দ্রিমা ছবি তুলল।সৌনক রাতের দিকে ফুল মিষ্টি নিয়ে এসেছিল। সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচুর মানুষ শুভেচ্ছা  জানিয়েছেন।
ওনার শরীর কিন্তু ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। কিছুই খাচ্ছেন না। কী যে করি? মন  একদম ভাল নেই। তার ওপর লেখার চাপ। মলয়বাবু আজই ‘ভারত বিচিত্রা’তে  লেখা পাঠাতে বললেন। এদিকে সুমন ঘোষের ধারাবাহিক লেখাটা লিখতে হচ্ছে। চোখের সামনে মানুষটা তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে, আমি কিছুই করতে পারছি না। আমি মরতেও পারছিনা, আমি মরে গেলে ওঁর কী হবে?  মেয়ের সঙ্গেও কোন আলোচনা করতে পারছি না। ওরা কষ্ট পাক, এ আমি চাইনা। শুধুমাত্র ডঃ দাসের সঙ্গেই আলোচনা করতে পারি। একবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারলে হত। কিন্তু উনি কিছুতেই রাজি হচ্ছেন না। ১৪ ফেব্রুয়ারি এগিয়ে আসছে। কাজটা ঠিক মত হবে তো?

     ডায়ালিসিস হল, কিন্তু শরীর মন সেই আগের মতই রয়েছে। সারাক্ষণ ভুল বকে চলেছেন। সন্ধ্যাবেলা চন্দ্রিমা আমি ঠিক করলাম, ব্লাড টেস্ট করাব। সেইমত যিনি বাড়ি থেকে ব্লাড নিয়ে যান, তাঁকে খবর দেওয়া হল। হাঁটাচলা করতে পারলেও জানব অনেক ভাল আছেন। না পারার জন্যই আমি কোথাও বেরতে পারছি না। একটা দিনও বইমেলা যেতে পারিনি।রান্নাঘরের চিমনিটা নষ্ট হয়ে গ্যাছে, কিনতে যেতে পারছি না। অনলাইনেই অর্ডার দেব ভাবছি।

     নার্সিংহোমে গিয়ে শুনলাম, খড়গপুরের যে সঞ্জয় গোলদারের ডায়ালিসিস হত তিনি খুব অসুস্থ, আর এন টেগোরে নিয়ে গ্যাছে।ওনার স্ত্রী রীতাকে ফোন করে  জানলাম, গতরাতে অবস্থা খুব খারাপ হওয়াতে আর এন টেগোরে নিয়ে যাচ্ছে। রাতে ফোন করে জানলাম, ওখানেই এডমিট করেছে। কবে জন্ডিস হয়েছিল, বুঝতে  পারেননি।তাই চিকিৎসাও হয়নি। সে কারণে লিভার নষ্ট হয়ে গ্যাছে। আরও অনেক সমস্যা ধরা পড়েছে। কী যে করবে রীতা? মাথার ওপর তেমন কেউ নেই।
🍂

      ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন। প্রতি বছর মেদিনীপুর শহরে ১০ মাইল দৌড় প্রতিযোগিতা হয়। এবারও হচ্ছে। সারদা কল্যাণ ভাণ্ডারে আজ পোর্টস ও পুরস্কার বিতরণের অনুষ্ঠান  রয়েছে। দিদিরা আমাকে প্রধান  অতিথি করেছেন। বিমল গাড়ি নিয়ে এসেছিল। পৌঁছে দেখি দেশ-বিদেশের অনেক অতিথি এসেছেন, ছাত্রছাত্রীও প্রচুর। স্বপ্নাদি(খড়গপুর IIT র অধ্যাপিকা) বরণ করলেন, রেখাদি( মেদিনীপুর মহিলা কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপিকা ও এই সংস্থার সম্পাদিকা) আমার হাতে উপহার তুলে দিলেন। আমি প্রদীপ জ্বালালাম, স্বামী বিবেকানন্দ ও নেতাজীর ছবিতে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করে পতাকা উত্তোলন করলাম। অনুষ্ঠানের সূচনার পর পোর্টস শুরু হল। এরপর ‘যেমন খুশি সাজো’র বিচারক মণ্ডলীতে থাকলাম, ছোট্ট বক্তব্য রাখলাম এবং সবশেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিলাম।

    আজ সাহবাজের বাবা ফোনে জানালেন,১৪ ফেব্রুয়ারি অসুবিধা আছে, ওঁদের বড় বৌমার ছুটি নেই। ১৭ বা ১৮ ত্তারিখ হলে ভাল হয়। আমি বলেছি সোমবার উরুস আছে, রবিবার হোক। রানীর বাবাকে বলা নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।বাবা হিসেবে ওর উপস্থিত থাকাটা উচিত। কিন্তু ওর বড় বড় লেকচার, সহ্য হয়না। যে কোন দায়িত্ব পালন করবে না, সে বাবার কী প্রয়োজন? ওর আচরণের জন্য সাহবাজও চাইছে না। দেখা যাক কী হয়।

    অলিম্পিয়ান সুস্মিতা এসেছিল আজ। আমাকে একটা কোনকিছুতে যোগ দেওয়ার কথা বলছিল। এই মুহূর্তে আমি ওনাকেই সবটুকু মনোযোগ দিতে চাই। ওনার সঙ্গেই কাটাতে চাই। যে টুকু না করলেই নয়, সেটুকুই করছি। আজ প্রজাতন্ত্র দিবস, উনি শুয়ে শুয়ে টিভিতে কুচকাওয়াজ দেখছেন। এখন ওনার বলতে গেলে সারাদিনই অক্সিজেন লাগছে। ওনার সত্যিই শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, না এটা একটা ফোবিয়া, বুঝতে পারছি না। পা ফোলাটা বিকেলের দিকে সামান্য কমেছে। এটা সেটা খেয়ে ফেলছেন।আর বলছেন, ‘আমি দু’তিন দিনেই শেষ হয়ে যাব। বাবলির সঙ্গে আর দেখাও হবে না’। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বললাম, উনি একবর নিয়ে  যেতে বলছেন। যদিও খান সাহেব মোটেও রাজি হচ্ছেন না। বলছেন, ‘ডাক্তারের  কাছে গেলেই নার্সিংহোমে এডমিট করে নেবেন। আমি যাব না। আমার যা হবে  বাড়িতেই হবে’। কোনমতে রাজি করিয়ে শুক্রবার যাওয়া ঠিক করলাম। মনিকেও বললাম, ও শুক্রবার ছুটি নিয়ে সঙ্গে যাবে। কিন্তু  সোমবার সন্ধ্যায় এমন বাড়াবাড়ি শুরু হল যে, মঙ্গলবার সকালেই নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। মনি যেতে পারবে না। তাই ঝর্ণাকে বলতে ও ‘মেদিনীপুর ছাত্র সমাজ’ এর কৌশিক কচ নামে একটি ছেলেকে সঙ্গে যাওয়ার জন্য বলে দিল। এ্যাম্বুলেন্স বলে রাখলাম।

     সকালেই রওনা হলাম, অক্সিজেন চলছে। তবুও মাঝে মাঝে ছটফট করছেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। হঠাৎ খুব ঘামতে শুরু করলেন। বললেন, তুমি কেন  আমাকে নিয়ে যাচ্ছ? আমার খুব শরীর খারাপ লাগছে। তখন সবে  উলবেড়িয়া পার হয়েছি। হিসেব করে দেখলাম, এখান থেকে ডাক্তারের ক্লিনিকে পৌঁছাতে ১ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগবে। তারপর ডাক্তার দেখবেন এবং নার্সিংহোমে পাঠাবেন। অনেকটাই সময় লাগবে। এতটা সময় হাতে আছে বলে মনে হচ্ছে না। ড্রাইভারকে বললাম, কাছাকাছি কোনো হাসপাতাল বা নার্সিংহোম থাকলে নিয়ে চলুন। ‘সঞ্জীবন’  হাসপাতালে এলাম। ডাক্তার এসে এম্বুলেন্সেই ওনাকে দেখে বললেন, BP খুবই হাই। যে কোনো মুহূর্তে হার্টফেল হতে পারে। এখানে ICU তে এডমিট করলাম। অনেকগুলো টেস্ট, এক্সরে, ইসিজি হল। ইতিমধ্যে ঝর্ণা খবর্ পেয়ে ওর পরিচিত মুজিবরকে আমার কথা বলে। মুজিবর বলেন যোগেশ বাবুকে।ইনি হাস্পাতালের সঙ্গে যুক্ত। খুবই ভাল মানুষ, আমার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে ভরসা দেন এবং হাসপাতালে এসে দেখা করেন। পরিচয় করিয়ে দেন ডিরেকটারের সঙ্গে। আমার পরিচয় পেয়ে ওনারা খুবই যত্ন সহকারে এবং আন্তরিকতার সঙ্গে খান সাহেবের প্রতি নজর রাখেন। আমাকে ভেতরে যেতেও দেন।বলেন, আপনি যখন খুশি,  যতবার খুশি, ভেতরে এসে ওনাকে দেখে যেতে পারেন, কিন্তু রাতে থাকতে দেওয়া যাবে না। আমাদের গেস্ট হাউস আছে। আপনি ওখানে থাকতে পারেন। কৌশিককে সঙ্গে নিয়ে গেস্ট হাউস দেখতে গেলাম। এক তো হাসপাতাল কম্পাউণ্ডের বাইরে, তাছাড়া অ্যাটাচট ওয়াসরুম নেই। তাই শেষপর্যন্ত বাড়ি ফেরার সিধান্ত নিলাম। বলে এলাম, উনি খোঁজ করলে বলবেন, আমি গেস্ট হাউসে আছি। উনি তখন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলেন।

    আমি রাতটুকু কাটিয়েই ৬ টা দশের ট্রেন ধরে উলবেড়িয়া, ট্রেন চেঞ্জ করে আবার ফুলেশ্বর, ওখান থেকে টোটো ধরে সঞ্জীবন হাসপাতাল। এসেই শুনি উনি আমার খোঁজ করতে একজন নার্স  বলে দিয়েছেন, আমি বাড়ি চলে গিয়েছি। আমি যেতেই তাঁর প্রশ্ন, কেন আমাকে নার্সিংহোমে ভর্তি করেছ? আমার এতবড় বাড়ি থাকতে আমি এখানে কেন থাকব? যা হবার বাড়িতে হবে। তুমি আমাকে একা রেখে কেন চলে গেছলে? আমি তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, কোন পরিস্থিতিতে আমি ওনাকে এখানে এডমিট করতে বাধ্য হয়েছি। এখনে একবার ডায়ালিসিস হয়েছে, আজ আবার হবে। আমি বাধ্য হলাম ওনাদের বলতে, যে আগামিকাল বন্ড সই করে ওনাকে নিয়ে চলে যাব। ডাক্তার বললেন, ‘বুকে ইনফেক্সন হয়েগেছে, হার্টের অবস্থাও ভাল নয়, কার্বনডাই অক্সাইড জমে গেছে। আমরা বের করার ব্যবস্থা করেছি’। চাইছিলেন আগামিকাল আর একবার ডায়ালিসিস করে কেমন থাকেন  দেখে, রিলিজ করবেন। কিন্তু উনি কিছুতেই থাকবেন না। আমাকে যাতা বলছেন।

    আজ সরস্বতী পুজো, এখানেও পুজো হচ্ছে। চন্দ্রিমা বাড়িতে পুজো সেরে এখানে এসেছে। কিছু পরে আসাদুল এসেছে। এরকম পরিস্থিতিতে  কত মানুষ থাকে। এখানে মাথা ঠাণ্ডা রেখে সব সিধান্ত নিজেকেই নিতে হচ্ছে। সন্ধ্যায় মনি এলে আমরা বাড়ি ফিরে এলাম। পরদিন আবার এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আমি আসাদুল সঞ্জীবন গেলাম। মনি রাতে ছিল। দুপুরে বাড়ি ফিরলাম।  আজ বৃহস্পতিবার, নিয়ে গেছলাম মঙ্গলবার। উনি ভাল নেই, শ্বাসকষ্ট হচ্ছেই। ডাক্তারের কথা শুনে আর  দু’দিন থাকলে মনে হয় ভাল হত। বাবলিদের এখনপর্যন্ত কিছু জানাইনি।
    আজ শুক্রবার স্যাম্পু-সাবান দিয়ে স্নান করিয়ে দিলাম।স্যাম্পু দিতে একটু বিরক্ত বোধ করছিলেন। রানী অ্যালাভেরা নখে লাগিয়ে হাতের পায়ের নখ কেটে দিয়েছে। ব্যালকনিতে রোদে বসে বসে ঘুমাচ্ছিলেন। দুপুরে ভাত খেলেন না। রাতে খেতে বসে বমি করে দিলেন। বিছানায় শুইয়ে দিলাম। রাতে বিস্কুট ভিজিয়ে চামচ দিয়ে খাওয়ালাম। বাওয়াল পাশ, ইউরিন পাশ বন্ধ হয়ে গেছে। তবুও বার বার টয়লেটে যেতে চাইছেন। ভোর ৪ টের সময় যখন টয়লেট থেকে ধরে ধরে নিয়ে আসছি, বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘নাসিমাকে ডাক না’। আমি ভাবলাম কাজেরমেয়ে হলেও মানুষ তো। তাই ঘুম থেকে ডেকে তুলিনি। নিজেই ধরে ধরে নিয়ে এসে  শোয়ালাম। উত্তর দিকে পাশ ফিরে শুলেন, গায়ে ভাল করে চাপা দিয়ে আমিও কালঘুম ঘুমিয়ে পড়লাম। আজ ডায়ালিসিসে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তাই টোটো এসে হর্ন দিচ্ছে। শব্দে ধড়মড় করে উঠে বসেছি। শুনতে পাচ্ছি নাসিমা বলছে, দিদিরা ঘুম থেকে এখনো ওঠেনি, আজকে যাবে না। ঘড়ির দিকে তাকিয়া দেখি ৭ বাজছে। নার্সিংহোমে ফোন করে জানিয়ে দিলাম উনি আজ যাবেন না। যাতে অন্য পেসেন্টকে ওই বেড দিতে পারে। 

    সকাল থেকে স্বাভাবিক কাজকর্ম করছি। নাসিমা ঝাঁট দিচ্ছিল, ওকে বললাম, ‘চেয়ার টেনে শব্দ করিস না। তোর জামাইবাবু সারারাত ঘুমাননি্‌, ভোরবেলা  ঘুমিয়েছেন, ঘুম ভেঙ্গে যাবে’। খেয়াল করিনি যে অনেক বেলা হয়ে গ্যাছে। এখনো উঠছেন না দেখে পাশে বসে নাড়া দিতে গিয়ে দেখি শরীর ঠাণ্ডা।পাশ ফিরিয়ে  ডাকি, কোনও সাড়া নেই। বুকে কান দিয়ে কোনও আওয়াজ পেলাম না। রানীকে ডাকলাম। পাড়ার একজন কোয়াক ডাক্তারকে রানী ডেকে নিয়ে আসে। সে বলে, ‘ঘণ্টা ৩/৪ আগে হার্টফেল করেছেন’।আমি কাঁদছি,  কিন্তু কী প্রশান্তি মুখখানিতে ছড়িয়ে আছে। চোখ বন্ধ, ঠোঁট বন্ধ, যেন ঠোঁট টিপে হাসছেন।মুখে চোখে কোনও বিকৃতি নেই।  আমাকে ছুটি দিয়ে খুব শান্তি পেয়েছেন। আমাকে নিয়েই তো তাঁর যত চিন্তা ছিল। তা বলে, আমাকে না বলে চলে গেলেন?  আমি কী করে বাঁচব?   

                                      ক্রমশ

Post a Comment

0 Comments