জ্বলদর্চি

কালের অতল তলে কলোরাডো/ পর্ব-২২/চিত্রা ভট্টাচার্য্য

সবুজে সবুজ পাহাড়। লসগাটোস।

কালের অতল তলে কলোরাডো 
পর্ব-২২

চিত্রা ভট্টাচার্য্য

বিদেশে থাকা দিন গুলোর রোজ নামচার পাতা উল্টে চলেছি। এ যেন বহুযুগের ওপার থেকে সেই দগদগে ঘায়ের মত যন্ত্রণা দায়ক ব্যথার অনুভূতি  হঠাৎ হাওয়ায় ভেসেএসে মনের মাঝে আলোড়ন তুলেছে । ঘুম ভাঙা চোখ মেলে স্বপ্নের বিচিত্র খেয়ালী জগৎ থেকে বর্তমানের সিঁড়িতে এসে দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে তাকাই। সময় যে নদীর স্রোতের মত দ্রূত বয়ে চলেছে। সেই তিন বছর আগে ,আমার পরিচিত স্বজন বন্ধুদের --হয়তো সবারই একরকম। ঘর বন্দি থেকে এক ঘেঁয়ে হাঁপিয়ে ওঠা ক্লান্ত দৈনন্দিন জীবন। তবে বিদেশের মাটিতে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ঘরবন্দি হয়ে থেকে ও আমার দিন কাটে একটু অন্যরকম। পৃথিবীর আদি সৃষ্টি প্রাচীনত্বের মাঝে ,হাজার হাজার বছর আগে জেগে ওঠা এই পাহাড় ,তার উপত্যকায় ঐবুড়ো ঝাঁকড়া মাথার ওকে দের ছায়ার মায়ায় ,সাত রঙের মেলায় সেজে ওঠা রামধণু আঁকা প্রসারিত নীলিমায় নীল আকাশের তলে। 

এখানে নিত‍্য নতুন রান্নার অত শত বালাই নেই ,খাওয়া আর ঘুমোনো। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কলোরাডো বেড়ানোর আনন্দ ঘন দিন গুলোর স্মৃতি চারণ করতে ও ভালো লাগেনা। অবসর সময় কালি কলম হাতে সাদা পাতায় মনের মত অক্ষর সাজিয়ে মালা গেঁথে যাই। কখোনো ক্যামেরা বন্দি ছবি এডিট করি , নয়তো ,গল্পের বইয়ের পাতা উল্টানো--,সেই যে নীলকন্ঠ পাখি কে খোঁজার গল্প; পড়ে পড়ে শেষ হয়ে ও শেষ হতে চায় না। মুঠো ফোনের মৃদু ছোঁয়ার স্পর্শে  ইউ টিউব থেকে কখোনো একের পর এক গান বাজতে থাকে। আজ আর সুরের হাওয়ায় হৃদয় উতল করে না। দূর থেকে ভেসে বেড়ায় সব হারানোর বেদনার উষ্ণ পরশ। আপন খেয়ালে কলোরাডো নদী তরতরিয়ে শুধুই বয়ে যায়। পৃথিবীর থেমে থাকায় নদীর কি যায় আসে ? ওর ছলাৎ ছল চলার গতি কিছুতেই থামেনা।  
বাসস্থান

উদাসী বৈশাখী বাতাসে পাহাড়ের মাথা থেকে দূরের নীলিমা নিমেষ হারা চোখে অপলক চেয়ে থাকে। এ দেখা অন্তহীন কোথাও দাড়ি টানা নেই। ঘন সবুজে ভরা রেডউডের বন দিগদিগন্ত জুড়ে সবুজে সবুজ।    কখোনো সে পান্নারাঙা কখোনো বা শ্যাওলা সবুজ । ধরণীর স্নেহাঞ্চলের ওপর সকালের নরম রোদ গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে এক অবুঝ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। হলদে রঙের প্রজাপতিরা পাখায় কাঁপন তুলে  চিত্ত সুখে ঘুরে বেড়ায় ডাল থেকে ডালে। তাদের অবাধ বিচরণ। কখোনো আবার কোথা থেকে সূর্য কে চাপা দিয়ে স্লেট রঙের কালচে ধারার মেঘ ছাই মাখা নিস্তেজ কুয়াশারা দল বেঁধে হাজির হয়েছে দূর দূরান্ত থেকে নদী নালা সমুদ্দুর পাহাড় পর্বত সোজা ডিঙিয়ে ঠিক আমার দোর গোড়ায় । মেঘ বৃষ্টি রোদ আর ছায়া মিলে এক মন মাতানো খেলায় মেতেছে। দুষ্টু মিষ্টি মেঘেরা নীলাভ কালো ওড়নায় মুখ টি ঢেকে লম্বা বিনুনি দুলিয়ে দিয়ে কিশোরীর সাজে পেতলের ঘুঙুর বাঁধা ছোট্ট ছোট্ট পায়ে নাচের তালে ঝুম ঝুম শব্দের ছন্দে হাত নেড়ে ডেকে নিয়ে যায় নীল সবুজের সোহাগ ভরা মিলনের অরন‍্যে। আমি ও সম্মোহিতের মত চলতে থাকি। 

শুধু সবুজ পাতায় ভরা রেড উড আর হরেক রকম নাম না জানা পাইনের বন। আমার সময় কেমন করে কিভাবে কেটে যায় নিজেই সে খবর ভুলে যাই। কোথায় এক বেদনা ভরা শূন‍্যতায় পৃথিবী ময় আশা নিরাশার দোলাচল। অসহায় মানুষ ঘুরছে অনিশ্চয়তার বৈপ্লবিক দ্বিধাগ্রস্তের আবর্তে। শুধু ভাবী কালের টলো মলো খেয়া নৌকায় ভেসে চলেছি যেখানে জীবন মৃত্যুর অহর্নিশি লুকোচুরি খেলা চলছে। জানিনা কবে কোথায় কেমন করে শেষ হবে এমন করে আলো আঁধারিতে পথ চলার অমিমাংসিত জীবন বেদ। 

বিশ্ব সংসারের সমাজ চলেছে মুখোশের আড়ালে এক নতুন ধারাবাহিকতায়। দেখতে দেখতে আজ পাঁচ মাস পূর্ণ হয়ে গেল ,আমার এ দেশে থাকার মেয়াদ এবারের মত শেষ ,কাল ফেরার টিকিট। কিন্তু যাবো কি করে ? ঘরে ফেরার হাতছানিতে মন অসহায়ের মত কাঁদে। স্তব্ধ অনড় পৃথিবীর চাকা ঘোরে না ,প্লেন বন্ধ। এর মাঝে জরুরী এক বিশেষ দরকারে রাস্তায় বেরিয়েছিলাম  সান্হোসের ডোমেস্টিক এয়ারপোর্টে র পাশ দিয়ে আসার সময় দেখলাম ,আমার নতুন নামে ডাকা ''যান্ত্রিক বিহঙ্গেরা '' তার বিশাল বপু টি নিয়ে দল বেঁধে সারি বদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। অচল এয়ারপোর্টের প্রতিটি রানওয়ে জুড়ে স্ট্যাচুর মত।খুব খারাপ লাগছিল ,পৃথিবীর সবচেয়ে তীব্র গতি আজ কোন পাপের ফলে এমন স্থবির?   

অবশ মন তখন হাওয়ার মত দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে নিজের দেশে ভারতবর্ষের প্রিয় শহর কলকাতা পেরিয়ে হুগলী নদীর তীরে যেখানে আমার সাধের ঘর বেঁধেছি। তার দক্ষিণ খোলা বারান্দার দেওয়াল বেঁয়ে ফুলে ভরা সুগন্ধি মাধবী লতার আঁকাবাঁকা শরীরে তিন তলার রেলিং জড়িয়ে ধরে দোল খাওয়া ,ঝুরঝুর করে ঝরে পড়া উঠোন ময় শিউলীর আত্ম নিবেদন। বাউন্ডারী ওয়ালের কোল ঘেঁষে বিস্তর ডালপালা মেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তরতাজা আমের গাছ টি , ছাল ওঠা ভাঙ্গা রাস্তা ,অলি গলির চেনা মুখ গুলো, গাড়ির হর্ন ধোঁয়া। জমে থাকা জলে মশার ডিপো ,ডেঙ্গু ম্যালেরিয়া সমৃদ্ধ আমার শহর --সব যেন আমায় ডেকে বলে আয় ফিরে আয়। 
নির্মল আকাশ।

এখানে নির্ঝঞ্ঝাট শান্তিপ্রিয় জীবন ,এতো যত্ন এত নিখুঁত নিটোল পরিস্থিতি তবু মন কাঁদে নিজের পরিচিত জগতে-- নিজ নিকেতনে ফেরার আশায়। সব ভালোর পরেও মাঝে মাঝেই  গুমরে মরি চোখ ভিজে ওঠে ,কি জানি এবারে কার পালা ? কভিডের লোলুপ দৃষ্টির শিকার কে হবে ? কাকে কেড়ে নিতে আসছে সে ?, কেমন আছে আমার প্রতিবেশী রা সবাই ? সারাদিন অজস্র ব্যস্ততায় কাটালেও মনে হয় কিছুই তো হলোনা করা।     

  আজই কলকাতা থেকে খবর পেলাম ছোট বেলার এক বন্ধু কে অসময়ে কোভিড কেড়ে নিল। স্বজন হারানো মৃতের তালিকা ক্রমশ লম্বা হয়ে উঠছে চেনা অচেনা মানুষের ভীড়ে। সেখানে ধনী দরিদ্র ,ডাক্তার ,নার্স স্বাস্থ্য কর্মী ,স্বেচ্ছাসেবী, রক্ষক ভক্ষক সবাই আছে মৃত্যু মিছিলে। কাছের জনদের দৃষ্টির অগোচরে তাঁরা চলেছে পঞ্চভূতে বিলীন হতে। ব্রতীন ,অতনু সান্ত্বনা দেয়,এতো মন খারাপ করলে চলবে না। প্রতিদিন দুঃসংবাদ ফেসবুকের পাতা ,হোয়াটসআপ ভরে শুধু চির শান্তির দেশে বিদায়ের ছবি। অজানা আতঙ্ক গ্রাস করেছে আমাকে।

হ্যারি সাহেব ভিডিও কল করে বললেন , কন্যে অনেক দিন তোমার গলার আওয়াজ নেই কেন ? আমার মুড অফ। এমনি কোনো কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু হ্যারির দাদু নাছোড়। পালানোর উপায় নেই। ভিডিও কল চলছে , আকস্মিক আমাকে দেখেই যেন কুইজের প্রশ্ন মনে এলো  '' করোনা ভাইরাসের উৎস কোথায় বলো ?''  বিশ্ব সংস্থা হু এর দাবী।ওরা আর্জি জানিয়েছে করোনা ভাইরাসের উৎস কোথায় ? এ ব্যাপারে কোনো তথ্য থাকলে সব দেশ কে তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছে। আমি বলি শুনেছি তো চীন ! যদিও সঠিক কোনো তথ্য জানিনা। 

 সম্প্রতি নিউজ পেপারে দেখেছিলাম ,আমেরিকার শক্তি মন্ত্রকের একটি তদন্ত রিপোর্ট সেখানে প্রকাশ পেয়েছে।এবং সেখানে দাবী করা হয়েছে যে চীনের উহানের গবেষণা গারের থেকেই  দুর্ঘটনা বশত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। হ্যারি সাহেব বলেন একদম ঠিক, এই নিয়ে আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা ফেডেরাল ব্যুরো অফ ইনভেষ্টিগেশন ও জানিয়েছে যে চীনের উহানের ল্যাব থেকেই করোনা ছড়িয়েছে। কিন্তু এতো ধূর্ত পাজী ঐ দেশ টি যে আসল সত্য সে  কিছুতেই শিকার করতে চাইছে না। বরং  চীন তা আগের মতই বারবার অস্বীকার করে চলেছে। পৃথিবী জুড়ে মৃতের সংখ্যা ঝপ ঝপিয়ে  লক্ষ লক্ষ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তবু ঐ স্বেচ্ছাচারী আত্মসুখী দেশ টির কোনো হেলদোল নেই। এতোক্ষণে  ব্রতীন এসে যোগ দিলো আমাদের ভিডিও কনফারেন্সে। ও বলে তুমি সম্পূর্ণ ঠিক বলেছো --- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ট্রেডস আডেনাম গেব্রিয়েসাস বলেছেন অতিমারির উৎস নিয়ে যদি কোনো তথ্য থাকে ,তা হু এবং আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী মহল কে জানানো হোক। কী ভাবে ভাইরাস ছড়ালো ,এ ব্যাপারে জানা জরুরী বলে মনে করছে হু। এ বিষয়ে সঠিক তথ্য পেলে আগামী দিনে করোনার টীকা আবিষ্কার করে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এর মধ্যেই আবার নতুন আর এক বিপদের খবর পেলাম। আম্ফান ঝড় বিধ্বংসী রূপ নিয়ে দেখা দিয়েছে কলকাতায়।   

 মনে আছে ,২০২০ সালের ২০মের সে রাত ! লস্গাটসে তখন রাত গভীর প্রায় বারোটা।বাড়ির থেকে ফোন এলো পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়েছিল সাঙ্ঘাতিক ভয়াবহ আম্ফান ঘূর্ণি ঝড়। গুগুল নেট বলছে, ,ঘন্টায় প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার বেগে সামনে যা পাচ্ছে লন্ডভন্ড করে উড়িয়ে নিয়ে চলেছে। কলকাতায় ঝড়ের গতি ১৩৩কিমি।  তাণ্ডবলীলায় পথের ধারের  বিশাল বিশাল বট পাঁকুড় অশ্বত্থের সাথে  ,শিরিষ সেগুন মেহগিনি গাছ  শিকড় সমেত উপড়ে পড়ছে ঘর বাড়ি দালান ভাঙছে। আমার বাগানের পেঁপে মাধবীলতা আরো সব গাছ গুলো নাকি পপাত ধরণী তলে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমাদের চিন্তা সবেধন নীলমনি প্রিয় আম গাছ টি কে নিয়ে।পারবে কি সে এই বিশাল ঝড়ের বেগ সামলাতে ? দিনভর ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি ,অতিভারী বর্ষণ ও গঙ্গায় জলোচ্ছাসের ত্রহ্যস্পর্শে  কলকাতা সহ অন্যান্য রাজ্য গুলো বিধ্বস্ত ঝড়ের দাপটে। দূর থেকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিধ্বংসী লীলায় সর্ব হারার দলের মর্ম স্পর্শী করুণ চীৎকারের রব যেন কানের কাছে দামামা বাজিয়ে যায়। যেন বহুদূর থেকে ভেসে আসছে প্রিয়  পরিচিত জনের , অসহায় মৃত্যুপথ যাত্রী র বুকফাঁটা কান্নার রব ।কালিফোর্নিয়া। আজেলিয়া।

প্রবল দুঃশ্চিন্তা নিয়ে সারারাত ছটফট করছিলাম ,তারপর কখন ঘুমে চোখ জড়িয়ে এসেছিল। ভোর হলো পাখির ডাকে। এখানে  নানা রঙের নানা রকম পাখির সাথে অজস্র ম্যাগপাইয়ের মেলা। সামনের আপেল গাছ টা ওদের ভারী পছন্দের ,আর পাথরের খাঁজে খোঁজে ঠোঁট ডুবিয়ে পোঁকা মাঁকড় খুঁজতে ওদের নিরন্তর প্রচেষ্টা। দেখি সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকে। সামনের ড্রাইভ ওয়ে তে মর্নিং ওয়াক সেরে চায়ের কাপ হাতে জমিয়ে বসেছি। সে সময়ে ইয়ামের কান্না ভেজা গলার আওয়াজে কোনো সর্বনাশের খবরের জন্য মন কে প্রস্তুত করলাম। ইয়াম কেঁদেই চলেছে। ওর মুখ দিয়ে আর কথা বেরোয় না। আমি ব্রতীন কে গাড়ি বার করতে বলে ঠিক ৫মিনিটে নিজে তৈরী হয়ে নিলাম। চলেছি ইয়ামের কাছে।  
মাধবী লতা।  ভদ্রেশ্বর।

পাভ্লো ইয়ামের ভাই হস্পিটালাইজড। ইতালিতে গিয়েছিলো এক মাস ব্যাপী মুখোশ কার্নিভালে যোগ দিতে এবং সেখানে ব্যবসা সংক্রান্ত কিছু কাজে আটকে গেলেও গত মাসে ফিরেছে লকডাউনের সাথেই। সুস্থই ছিল কিন্তু গত দুসপ্তাহ ধরে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হস্পিটালে ভর্তি। পাভ্লোর গার্ল ফ্রেন্ড জিনি এই খবরটা ইয়ামকে গতকাল  দিয়েছে। জিনি বা কি করবে ? ওযে এতদিন অসুস্থ হয়ে ঘরে লুকিয়ে ছিল। কারোর সাথে দেখা করেনি ,নিজে মেডিকেল স্টুডেন্ট বলে নিজেই নিজেকে সামলেছে। কিন্তু জিনির   বাবা অসুস্থ নিউইয়র্কে থাকে ,খবর এসেছে অবস্থা খুব খারাপ। জিনি সেখানে যাবে কেমন করে ?  জিনির মতে  কী দরকার ছিল ইতালীতে এখন এই সময় মুখোশ কার্ণিভালের ? কত সংক্রমণ হলো কত লোক মারা গেলো। চীনের পরেই ইউরোপের দেশ গুলোতে ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাসের বীজাণু।  কোনো মাক্স কোনো সানিটাইজারে  কত টুকু আটকাবে এই রোগের মরণ কামর।  

  কিন্তু ইয়ামের চোখের জল বাঁধ মানছে না। ও কাঁদতে কাঁদতেই এক গল্প শুরু করে। তখন সবে মাত্র  ও চার বছরের  শিশুকন্যা। যাকে ফেলে তার নিজের মা  চলে গেল অন্য কোনো মিষ্টারের সাথে। ইয়ামের বাবা মিষ্টার ব্রাইস  স্টেপ মা শেলিনা  ও বোন  রীয়ানের কাছে নিয়ে এলো ইয়াম কে। সেই থেকে  মা শেলিনার ভালোবাসা ও যত্নের কথা অনর্গল বলে চলে ইয়াম । হরিণের মত চঞ্চল প্রিয় বোনের কথায় ইয়মের চোখ দুটো জলে ভরে ওঠে।  ব্লাড ক্যান্সারের শিকার  রীয়ানের  বিবর্ণ মুখের  নির্বাক চোখের দৃষ্টি মনে পড়লে নিজেকে স্থির রাখতে পারে না ইয়াম ।  বোনের ট্রিটমেন্টের জন্য প্রচুর টাকা রোজগার করতে হবে তাই বাড়ির জন্য মন খারাপ হলে ও ছুটি নেওয়া যাবে না বরং টাকাটা সময় মত  মার  হাতে পৌঁছনো দরকার। ওদের পারিবারিক মন খারাপ করা এক ছবি স্পষ্ট দেখতে পেলাম এবং পরদেশী মেয়েটির এতো সুন্দর অনুভবী মন আমায় স্পর্শ করলো।  (ক্রমশঃ)

Post a Comment

0 Comments