চাঁদ ও খোকন
আয় রে খোকন, খেয়ে যা তুই ভাত,
একটু পরেই তো ঘুমিয়ে পড়বি সোনা,
রাত-উপোসী থাকবি না কি অবোধ,
কী চাই বল, রূপকথার মিঠে গল্প শোনা?
দেখ- আকাশে আজ নিটোল চাঁদ পুরো,
চাঁদকেও খাইয়ে দেব কষ্ট মাখা ভাত,
কালকে গোটা না আসুক, কম এলেও
স্বাদের লোভে নিজেই বাড়িয়ে দেবে হাত!
চাঁদ ও তিন জন
চাঁদ থেকে রূপো-ঝরা সাইকেলে নেমে আসে খোকার বাবা,
তাকে কাছে পেয়ে ভারি খুশি ছ' বছরের খোকন ও তার মা,
বাবাকে কাছে বসিয়ে কত গল্প করে, তিন জনে পুরো মিলে যায়;
মা বলে ফেলে- এবারও পুজোয় খোকনের হয়নি গো জামা।
মায়ের ছেঁড়া শাড়ি, সে দিকে নেই নজর, ছেলের জন্য বড় কষ্ট,
বাবা সব বোঝে, বুকটা মুচড়ে ওঠে তার, কিন্তু কী করা যায়!
কিচ্ছু করার উপায় নেই তার, চাঁদকে বলে- এদের সুখ দাও,
ছায়া-অতিথি'র মতো খোকাদের অভাব চাঁদকেও জ্বালায়।
🍂
নিঝুমপুরে চাঁদ
গ্রামের প্রাইমারি ইস্কুলেও খোকনের নাম কেটে দিতে পারে,
কত দিন যেতে পারে না, খালি পেটে দুর্বল দেহে যাবে কী করে?
দুঃখে বাঁধ মানে না মায়ের চোখের জল, বাবার স্বপ্ন ছিল কত....
ছেলে বিদ্বান হ'বে, এখন খেতেই পায় না তো কী ভাবে পড়ে?
এখন চাঁদ দূরে, এই সময় খোকার জীবনে শুধু খিদে আর কষ্ট,
তবু জ্যোৎস্নার সাইকেলে ঘোরাফেরা করে তার বাবা গ্রাম জুড়ে,
কোথায় কী উপায়ে কিছু সুবিধা হয়, ভেবে পায় না ছায়া-বাবা;
তাও মা ও ছেলে কী একটা ভরসা পায় যেন বুকের নিঝুমপুরে।
অক্ষরে অক্ষরে চাঁদ
জীবন পুরো রূপকথা নয় যেমন, সবটাই নয় তার মরূভূমি,
একেকবার চাঁদেরও খোকনের জন্য কিছু করার ইচ্ছে হয়,
কিছু করবে...রূপোর চাদর বিছিয়ে দেবে ওদের কুঁড়ে ঘরে!
তাতে লাভ? চোরডাকাত টের পেলে লুঠপাট চালাবে নিশ্চয়।
এই সব ভাবে চন্দ্র, কূলকিনারা পায় না খুঁজে কোনো রকমে,
শেষে এক মমতাময়ী শিক্ষিকাকে পাঠিয়ে দিল ওদের অন্দরে,
সোনার খোকনকে পড়ার বই কিনে দিলেন তিনি বেশ কয়েকটা,
0 Comments