বাগদি চরিত (ঊনত্রিংশতি পর্ব)
শ্রীজিৎ জানা
পলাশীর প্রান্তরে অস্তমিত হল স্বাধীন ভারতের রক্তিম সূর্য। ব্রিটিশ শাসনের শুরু হল জয় যাত্রা। স্বাধীনতা হারানোর পশ্চাতে কাঁটার মতো বুকে বিঁধতে থাকল কয়েকজন মানুষের স্বার্থপরতা আর বেইমানির কদর্য ইতিবৃত্ত। নবাব হলেন মীরকাশিম। বিনিময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বর্ধমান, চট্টগ্রাম সহ মেদিনীপুরে কর আদায়ের ছাড়পত্র পেলেন। এরপর রবার্ট ক্লাইভ দ্বিতীয় বার ভারতে আসার পর দিল্লীর মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা বিহার ওড়িশার দেওয়ানী লাভ করল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি । রাজস্ব আদায়ের নামে বাংলার বুকে কোম্পানী অত্যাচারের বুলডোজার চালাতে থাকে। আদায়কৃত অর্থ তারা সেই সময় নিজস্ব দেশে বাণিজ্যিক পুঁজিতে রুপান্তরিত করে পাঠানোর ছক কষে। ইংল্যান্ডে তখন শিল্প বিপ্লবের রমরমা। সমস্ত রাজস্ব রপ্তানির নামে কাঁচামাল কিনে তারা পাঠিয়ে দিচ্ছিল নিজেদের দেশে। একইসাথে জমিদারী ব্যবস্থার কফিনে শেষ পেরেকটি পোঁতবার গূঢ় চক্রান্তে তারা হয়ে উঠেছিল মরিয়া।
পরাধীন ভারতের বাঁকুড়া,মেদিনীপুর মানভূম,ধলভূম,সিংভূম প্রভৃতি জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চল জঙ্গলমহল নামে পরিচিত ছিল। ওইসব অঞ্চলে বাগদি,কুর্মি,মাঝি,কোড়া,লোধা,শবর,কুর্মালি,মুন্ডারি প্রভৃতি অন্ত্যজ জাতি–উপজাতির মানুষের বসবাস। তারা বেশিরভাগ জমিদারদের পাইক,বরকন্দাজের কাজ করত। বিনিময়ে তাদেরকে যে নিষ্কর জমি দেওয়া হত তাকে বলা হত পাইকান অথবা চারকান জমি। বেতনের বদলে তারা এই জমি ভোগ দখল করত। কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ওই নিষ্কর জমি জোরপূর্বক কেড়ে নেয়। সেইসঙ্গে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আওতায় সূর্যাস্ত আইন চালু করে জমিদারী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটাতে চায়। জমির উপর অন্যায়ভাবে অতিরিক্ত কর চাপায়।আইন মোতাবেক সূর্যাস্তের মধ্যে কোম্পানিকে খাজনা না দিতে পারায় একে একে জমিদার তাদের জমিদারী হারাতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে অনেক জমিদাররা কোম্পানিকে খাজনা মেটানোর অছিলায় প্রজাদের উপর কর আদায়ে জোরজবরি শুরু করে। তবে একটা বিষয় অনেক ক্ষেত্রেই চোখতোলা করে রাখা হয়েছে,তা হল জঙ্গলমহল এলাকায় তৎকালীন নীলচাষ ও নীলচাষীদের দুরবস্থার কথা। নীলকর সাহেবদের বুটের তলায় জঙ্গলমহলের মূর্খ গরীবগুর্বো অন্ত্যজ মানুষগুলো কিভাবে পিষ্ট হয়েছে তার হৃদয়বিদারক গাথা ইতিহাস সযত্নেই এড়িয়েছে। এখনো জঙ্গলমহল অঞ্চলে ইতিউতি টিকে থাকা নীলকুঠির ধ্বংসস্তুপ আর চিমনির ধ্বংসাবশেষের গায়ে কান পাতলে সেদিনের অসহায় মানুষগুলোর আর্তক্রন্দন হয়তো কানে বাজবে।
শুধু নীলচাষীদের উপর নয়,সাধারণ চাষাভুষো এমনকি পাইকান জমির মালিকদের উপর নেমে আসে কর আদায়ের জোরজুলুম। পাইকান চাষীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কর হিসেবে নগদ অর্থের বদলে জমির ফসল জমিদারকে দিত। কিন্তু অত্যধিক করের ঠেলায় তারাও আনাজপত্র দেওয়া বন্ধ করে দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে স্থানীয় রাজা জমিদারদের বিরুদ্ধে যেমন অসন্তোষ দেখা যায়। একইসাথে কোম্পানির বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে এলাকার খেটে-খাওয়া মানুষজন। তারা সংঘবদ্ধ হতে থাকে। সাঁওতাল,বাগদি,লোধা,শবর,ভূমিজ প্রভূতি অন্ত্যজ শ্রেণীর মানুষরা ক্ষোভে ফুঁসতে থাকে। তাদের মুখের গ্রাস কেড়ে নিতে চাইছে যারা তাদের কোন ক্ষমা নেই। এই জঙ্গল,এই পাথুরে মাটি,তাকেই তারা চষে ফসল ফলায়। এই মাটিতে তাদের অধিকার। সেই অধিকারকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। এই আগুনে প্রত্যয় ওইসমস্ত ভূখা মানুষগুলোকে তীব্র লড়াই সংগ্রামের মুখোমুখি হতে সাহস জোগায়। তাদের অস্ত্র বলতে লাঠি,বল্লম,তীর-ধনুক,দা,হাঁসুয়া। শাল কাঠের মতো শক্ত পেশী আর কালো পাথরের মতো তাদের চওড়া বুকের বল। একসাথে জোট বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়ার যূথবদ্ধ মনোবৃত্তি। স্বাধীনচেতা অনেক জমিদার তাদের জমিদারী ছাড়তে নারাজ ছিলেন। ফলে ওইসমস্ত জমিদারেরা বিদ্রোহীদের পক্ষ নেন। ইতিহাস যাকে চুয়াড় বিদ্রোহ আখ্যা দিয়েছেন। চুয়াড় বিদ্রোহের প্রথম আগুন জ্বলে ওঠে ঘাটশিলায়। যার নেতৃত্ব দেন ধলভূমগড়ের জমিদার জগন্নাথ বল। প্রায় পঞ্চাশ হাজার চুয়াগ এই বিদ্রোহে জমিদারের পক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
🍂
কিন্তু চুয়াড় কারা? কেনইবা তাদের চুয়াড় বলা হবে? কারণ তারা অসভ্য,বর্বর জাতি। তারা নিম্নবর্গীয়,অচ্ছুৎ, অন্ত্যজ। কারা তাদের চুয়াড় নামে আখ্যায়িত করলেন? ব্রিটিশরা নাকি এদেশীয় সভ্য বাবুরা? নাকি ইতিহাস লিখিয়েরা দেগে দিলেন তাদের চুয়াড় বলে! আর যারা বেইমানি করে নিজের দেশকে বিক্রি করে দিল বেনিয়া দের হাতে তাদের জন্য শুধু বরাদ্দ হল 'বিশ্বাসঘাত' নামক ছোট্ট একটি শব্দ। যারা নিজেদের অধিকার রক্ষার দাবীতে, নির্যাতনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠল, পরাধীন দেশের বুকে প্রথম বিদ্রোহের দামামা বাজাতে মরণপণ করল,তাদের কপালে জুটল চুয়াড় শিরোপা। হায়রে, ইতিহাসের শব্দচয়ন মানসিকতা! আসলে কালে কালোত্তরে এমনটাই তো ঘটে গেছে,ঘটে চলেছে ওইসকল নীচু জাতি বলে দেগে দেওয়া মানুষদের সাথে। মনে নেই একলব্যের কথা! নীচু জাতের ছেলে কখনো কি পারে দ্রোণাচার্যের শিষ্য হতে! পারে কখনো সে রাজপুত্রেদের সমকক্ষ হয়ে উঠতে। এমন ঘটলে তো মাথা কাটা যাবে উচ্চবংশের। অতএব মহান দ্রোণাচার্য রাজ আনুকুল্যের লোভে কেটে নিলেন একলব্যের বুড়ো আঙুল। ধিক্ এমন গুরুকে! ধিক্ এমন গুরুদক্ষিণা চাওয়ার নীচ মনোবাসনাকে! হতভাগ্য একলব্যের ব্যথার ইতিহাস আজও বুকে করে বয়ে বেড়ায় আদিবাসী -সাঁওতাল জাতি। আজও তারা তীর ছুঁড়তে কক্ষনে মধ্যমা- তর্জনি ব্যতীত বুড়ো আঙুল ব্যবহার করে না। মনে নেই মহাভারতের জতুগৃহের কথা। সেদিন কারা পুড়েছিল সেই দ্রাক্ষা নির্মিত জতুগৃহে। ক্ষত্রিয়ের আশ্রয় পেতে চেয়েছিল নিষাদ রমনী তার পাঁচপুত্র নিয়ে। স্বার্থপর কুচক্রী পান্ডবরা জানার পরেও কেন তাদের ঠাঁই দিল সেখানে! কেন তাদের চলে যেতে বলল না সেদিন! আসলে ওই অসহায় নীচু জাতির মা সহ তার পাঁচ পুত্রের প্রাণের বিনিময়ে নিজেদেরকে সুরক্ষিত করতে চেয়েছিল পান্ডবরা।এমন নিষ্ঠুর মানসিবকতার পান্ডবকুল তবু যুগে যুগে পূজার পাত্র। কারণ তারা ক্ষত্রিয়। রাজরক্ত তাদের শরীরে প্রবহমান। নিষাদ জাতের মূল্য কোথায়।
চুয়াড় বিদ্রোহ বললেই রাণী শিরোমণির নামে মুখর হয়ে ওঠেন ইতিহাস। একাই এড়েছিলেন? শুধুমাত্র নেতা ও নেতৃত্বের জোরেই যেন যুদ্ধ জেতা সম্ভব। ইতিহাস কখনো হাত খুলে লিখেছেন হারু দিগার, চৈতন্য দিগার আর গোবর্ধন গিগপতির কথা? কারণ তারা ছিল দস্যু। দুর্বৃত্ত বাগদি জাতি। আর সিং রাজারা ছিলেন সদগোপ। তবে সেই সদগোপ জাতির আধিপত্য বিস্তারের সূচনাতেই তো ছিল বিশ্বাসঘাতকতার কদর্য ইতিবৃত্ত। কজন খোঁজ রেখেছি সেই অতীতকথা। একথা যদিও ইতিহাসেরই বদান্যতায় জানতে পেরেছে সকলে। সেই ষোড়শ শতকে জঙ্গলমহল অঞ্চলের রাজা ছিলেন সুরথ সিং। তিনি আদিবাসী খেড়িয়া উপজাতি ভূক্ত সর্দার ছিলেন। তাঁর রাজত্ব নাকি বহিদূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বর্তমানের শালবনি,মেদিনীপুর,খড়্গপুর পেরিয়ে নারায়ণগড় অব্দি ছিল তাঁর রাজ্যের সীমানা। রাজা সুরথ সিংয়ের রাজ্যে আরো অনেকগুলি গড়ের সর্দার ছিলেন। যাঁদের গড়সর্দার বলা হত। রাজার প্রধান গড়ের সর্দার লক্ষণ সিংহ, বলরামপুর এবং নারায়ণগড়ের সর্দারদের সঙ্গে চক্রান্ত করে কৌশলে সুরথ সিংকে হত্যা করেন। আর সমস্ত রাজ্য তিন অংশীদারের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন। লোকশ্রুতি থেকে জানতে পারা যায়,সুরথ সিংয়ের সাত রানী সহমরণে যাবার সময় লক্ষণ সিংকে অভিশাপ দেন যে,তার সপ্তম পুরুষ নির্বংশ হবে। বিধাতার কি নিষ্ঠুর পরিহাস লক্ষণ সিংহের সপ্তম পুরুষ হলেন কর্ণগড় রাজ্যের রাজা অজিত সিংহ। তাঁর দুই রাণী- রাণী ভবানী এবং রাণী শিরোমণি। অজিত সিংহ অপুত্রক অবস্থায় মারা যান। তখন রাজ্য পরিচালনার ভার কাঁধে তুলে নেন রাণী শিরোমণি।
ইতিমধ্যেই পইকান চাষীদের বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছিল চারিদিকে। মুঘল শাসনের অন্তিম কালে জঙ্গলমহল এলাকার উপর তাদের কোন কর্তৃত্ব ছিলই না বলা যায়। এইসব অঞ্চলের জমিদারেরা স্বাধীনভাবে জমিদারী চালাতেন। জঙ্গলাকীর্ণ পাথুরে এলাকায় নামমাত্র চাষবাস হত। অন্ত্যজ শ্রেণীর মানুষেরা পশুপালন ও শিকার করে বেড়াত। ওইসমস্ত স্বাধীন জমিদারদের নিজস্ব পাইক, লেঠেল সৈন্যদল থাকত। এক জমিদারের সাথে অন্য জমিদারের লড়াইয়ের ঘটনা ঘটত হামেশাই। এলাকা দখলের লড়াইয়ে কোন কোন জমিদার কাজে লাগত জঙ্গলমহলের সর্দারদের। এই অঞ্চলে তৎকালীন সময়ে জমিদারি এলাকায় বেশ কয়েকজন যোদ্ধা সর্দার স্বতন্ত্রভাবে জঙ্গলের ভিতর বাঁশের গড় নির্মান করে থাকত। তাদের কাজই ছিল লুঠতরাজ। তবে এই লুঠ সহজভাবে অন্যায় হিসেবে চিহ্নিত হলেও তা আসলে গরীবগুর্বোদের অধিকার আদায়ের একমাত্র হাতিয়ার ছিল। এক একজন সর্দারের অধীনে কয়েকশো লেঠেল থাকত। গেরিলা যুদ্ধে তারা ছিল পারদর্শী। এমনি একজন বাগদি জাতির সর্দার হলেন গোবর্ধন দিগপতি। বগড়ির বনাঞ্চলে ছিল যার আধিপত্য। কর্ণগড়ের রাজা অজিত সিংহের মৃত্যুর পর রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই সুযোগে গোবর্ধন দিগপতি কর্ণগড় আক্রমণ করে রাণী শিরোমণিকে রাজ্যচ্যুত করেন। রাণী শিরোমণির ক্ষেত্রে গোবর্ধন দিগপতির মোকাবিলা করা আদৌ সম্ভব ছিল না। কর্ণগড়ের সঙ্গে নাড়াজোলের রাজ পরিবারের আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। কর্ণগড়ের রাজা যশোবন্ত সিংহের মাতুল পুত্র ছিলেন ত্রিলোচন খান। রাণী শিরোমণি খান রাজা ত্রিলোচন খানের সঙ্গে গোপনে আঁতাত করেন এবং তাঁর সহায়তায় গোবর্ধন দিগপতিকে দমন করেন।
বিদ্রোহের দ্বিতীয় পর্বে শুধু জঙ্গলমহলের অন্ত্যজ মানুষ নয়,পাইকান চাষীরা নয়,ব্রিটিশদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে অনেক জমিদারও সোচ্চার হন। গোবর্ধন দিগপতি তখন তাঁর চারশ জন বাহিনী নিয়ে হুগলী জেলায় আক্রমণ চালাচ্ছিল। ব্রিটিশরা তাকে দমন করতে উঠেপড়ে লাগলে গোবর্ধন দিগপতি রাণী শিরোমণির আশ্রয় গ্রহন করেন। কারণ শিরোমণি তখন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে গোপনে সমর্থন করছিলেন।রাণীর কর্ণগড় থেকেই গোবর্ধন দিগপতি বিদ্রোহকে নেতৃত্ব দিতে থাকে। পরবর্তীকালে রাণী ব্রিটিশদের হাতে বন্দী হলে গোবর্ধন দিগপতি বগড়ির ঘন জঙ্গলে আত্মগোপন করেন। চুয়াড় বিদ্রোহের পরেই বগড়ি, গড়বেতা,চন্দ্রকোণা অঞ্চলে নায়েক বিদ্রোহ শুরু হয়। নায়েক বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন বগড়ির রাজা ছত্র সিং এবং তার নায়েক অচল সিং।
এই বিদ্রোহে গোবর্ধন ততখানি সক্রিয় ছিল না বলেই জানা যায়। এক্ষেত্রে লোকবল হ্রাস এবং বয়স বৃদ্ধি একটা কারণ ভাবা যেতে পারে। তবে ব্রিটিশদের প্রতি তার ঘৃণা তখনো এতটুকুও কমেনি। জনশ্রুতি রয়েছে গোবর্ধন দিগপতি লয়কালি হাঙ্গামা বা লায়েক বিদ্রোহে ব্রিটিশদের মুখ দর্শন করবের না বলে জঙ্গলে গুহার ভিতরে আত্মগোপন করেন। বাগদি সর্দারের মৃত্যুর ঘটনা আজও অজানা। অনেকে বলেন তিনি সমাধি নেন। অনেকের মতে তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে।
বাগদি সর্দার গোবর্ধন দিগপতি দস্যু নয়,তিনি বিপ্লবী। চুয়াড় বিদ্রোহের নেতা। কেউ বলেন তাঁর জন্সস্থল গড়বেতা এলাকা আবার কারো মতে তাঁর জন্মস্থান দাসপুর থানার ধান্যখাল গ্রাম। বিদ্রোহ পর্বে লুঠপাট করে আনা সম্পদ, সামগ্রী তিনি বিলিয়ে দিতেন ভূখা মানুষগুলোর মধ্যে। জনহিতকর কাজের নজির আজও বগড়ি অঞ্চলের দুটি দিগপতি পুষ্করিণী প্রমাণ করে। গোবর্ধন যে এলাকার অসহায় মানুষের ত্রাতা ছিলেন,তাঁকে যে ঈশ্বরের দূত ভাবত, তার প্রমাণ আমলাশোলের বুড়ো দিগপতির মন্দির। আজও মানুষ সেখানে পূজাররজন্য ভীড় করে। বৈষ্ণব জাতি বুড়ো দিগপতি মন্দিরের পূজক। তাঁদের পা ধোয়া জলে অভিষেক করার রীতি আজও প্রচলিত। অথচ তাঁর বীরত্বের কথা, ধর্মপরায়ণতার কথা,জনসেবার কথা ইতিহাসের পৃষ্ঠায় অবহেলিত থেকে গেছে। খগেন মাস্টার লোখাকে সেই বিপ্লবী গোবর্ধন দিগপতি,হারু দিগার,চৈতন্য দিগারদের কথা বলতে চায়।
শুধু কি ষোড়শ – সপ্তদশ শতকের বিপ্লবে বাগদিদের বীরত্বের, ঊনিশ শতকের চেঁচুয়া বিপ্লবে বাগদিদের অবদান নেই? সেখানে কাদের বেইমানি ছিল? কারা রাজসাক্ষী দিয়েছিল? কোনো বাগদির নাম যুক্ত? একথা হয়তো কখনোই সমীচীন হবেনা জাতিগত পরিচয় তুলে স্বাধীনতা আন্দোলনের মহান বিপ্লবীদের অবদানকে বিভাজিত করা। কিন্তু খগেন মাস্টারদের মতো, লোখা মালেদের মতো বাগদীদের জ্বালাটা সেখানেই সমাজ যখন নীচু জাত বলে দেগে দেয়। লাঠি ধরবে হারু দিগার, মাথা ফাটবে চৈতন্য দিগারের আর শহীদের মর্যাদা পাবে উচ্চবংশজাতকরা – ইতিহাসের এই দ্বিচারিতাকে ধিক্। চেঁচুয়া বিপ্লবে শহীদ যাঁরা হয়েছেন তাঁরা সবাই মহানায়ক। সেদিনের কাঁসাই নদীর পাড়ে যেকজন শহীদ হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অশ্বিনী দোলই ছিল,নিতাই প্যোড়া ছিল। খগেন মাস্টার সবার সাথে তাঁদের জন্য একটু বেশিই গর্ব অনুভব করে।
1 Comments
💫👌
ReplyDelete