পর্ব-২
সুদীপ সেন
আমরা সবাই দৌড়চ্ছি, চোখ বন্ধ করে দৌড়চ্ছি। আরও চাই আরও চাই, কারও চাহিদার শেষ নেই। অর্থ – সম্পত্তি – ভোগবিলাস – বিনোদন – সামাজিক প্রতিষ্ঠা ও প্রতিপত্তির ক্রমান্বয়ে উন্নতি লাভের জন্য বিরামহীন দৌড়ের শেষে কোথায় পৌঁছাতে চাই সেটাও নির্দিষ্ট করে জানার ফুরসৎ নেই। দৌড়নোর সময় আমরা এতটাই আত্মমগ্ন যে আমাদের পায়ের তলায় কত শত প্রানী - উদ্ভিদ বিনা দোষে ধ্বংস হয়ে এই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, আমাদের চারপাশের বাস্তুতন্ত্র কি নিদারুন ভাবে দুমড়ে মুচড়ে দুরমুশ হয়ে যাচ্ছে সেদিকে এক মুহূর্তের জন্য খেয়াল করার অবসর আমাদের নেই।
আমরা নিজেদের স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের ধরনধারন পালটাচ্ছি এবং নিত্যনতুন ধরনের শারীরিক এবং মানসিক সমস্যাকে আবাহন করে আনছি, বর্তমানের দ্রুতগতির আধুনিক সমাজে এটা কিছুটা অনিবার্য হলেও নিঃসন্দেহে আত্মহননের পথেও আমরা হুড়মুড়িয়ে এগিয়ে চলেছি। প্রকৃতিকে ধ্বংস করে নিজেরা মরতে চাইলে মরি কিন্তু অন্যান্য অবলা প্রাণীদের আমরা কেন বিনা কারনে আমাদের কু-অভ্যাসের জন্য মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেব ?
আমরা যাদের ‘গরু’ বলি, আমরা তো সবাই জানি যে ওরা গরু, ওদের ভালো মন্দ বোঝার মত বুদ্ধি নেই বা আমাদের মত দুটো হাত নেই প্লাস্টিকের প্যাকেট খোলার জন্য। তা সত্ত্বেও অনেকেই বাড়ির পুজার বাসি ফুল - বেলপাতা প্লাস্টিকের পাতলা কারিব্যাগে ভরে একটা গিট দিয়ে রাস্তায় বা ময়লা ফেলার জায়গায় ফেলছি। মফস্বল বা ছোটখাটো টাউন অঞ্চলে অনেক গরুই এখন পেট ভরে খাবার পায় না আর তাই খাবার মত কিছু দেখলেই, সে ময়লা ফেলার ভ্যাট থেকে হলেও, খেতে শুরু করে। গরু তো আমাদের ফেলে দেয়া বাসি ফুল – বেলপাতা ভরা প্লাস্টিকের প্যাকেট রাস্তার পাশে পেলো, পেটে খুব খিদে, প্লাস্টিকের প্যাকেটের ভিতরে খাবার দেখাও যাচ্ছে কিন্তু প্যাকেট খুলতে তো গরু জানে না। ফলে শেষমেশ প্লাস্টিকের প্যাকেট সমেত ফুল – বেলপাতা গরু খেয়ে পেট ভরায়। কিন্তু প্লাস্টিক তো গরুর ( আমাদেরও না ) খাবার নয়, ওকে আমরা প্লাস্টিক খেতে বাধ্য করলাম। দিনের পর দিন, বারবার এইভাবে প্লাস্টিক খেতে থাকলে গরুরা কি কি অজানা রোগে ভুগতে শুরু করবে ( বা মরে যাবে কিনা ? ) বা ওইসব রোগগ্রস্ত গরুর দুধ খেয়ে আমাদের কি কি নতুন অসুখ হবে আমরা কি তা নিয়ে একটুও ভাবি ! প্লাস্টিকের প্যাকেটের বদলে, পুরনো খবরের কাগজে মুড়ে বাসি ফুল – বেলপাতা ফেলা কি খুব কঠিন ? আমরা প্রত্যেকে যদি আমাদের বাড়ির দৈনন্দিন কাজের মধ্যে এই সামান্য পরিবর্তনটুকু নিয়মিত করার অভ্যাস করি তাহলে পরিবেশ এবং বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষনে কিছুটা তো অবদান রাখতে পারি আর এই কাজটা যদি আমাদের গ্রাম, শহর, জেলা, রাজ্য বা দেশজুড়ে সবাই শুরু করে তাহলে এক বিরাট সংখ্যক গরুকে খাদ্যদূষণ থেকে বাঁচানো সম্ভব ( আর এতে আমাদের টাকা বা সময় খরচ করতেও হচ্ছে না )। বিন্দু বিন্দু জলেই সিন্ধু সৃষ্টি হবে।
"প্রকৃতি - পরিবেশ বাঁচলে মানুষ বাঁচবে, মানুষ বাঁচলে তবেই বাকি সবকিছু কাজে লাগবে"।
0 Comments