জ্বলদর্চি

দূরদেশের লোক গল্প—দক্ষিণ আফ্রিকা/সিংহ আর শেয়ালের বুদ্ধির খেলা /চিন্ময় দাশ

চিত্র- শুভম দাস 

দূরদেশের লোক গল্প—দক্ষিণ আফ্রিকা
সিংহ আর শেয়ালের বুদ্ধির খেলা
চিন্ময় দাশ

এক সিংহ বেরিয়েছে শিকারের খোঁজে। রাস্তায় এক শেয়ালের সাথে দেখা। শেয়ালকে দেখতে পেয়ে, সিংহের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। অনেক মেহনত করে শিকার ধরতে হয়। তার পর সেই ঘামে ভেজা শরীরে, শিকারকে টেনে টেনে বাসায় নিয়ে যাওয়া, বেশ হয়রানির কাজ। আজ এই হতভাগাকে দিয়ে কাজটা করিয়ে নেব। 
সিংহ বলল—কী হে, পণ্ডিত! শিকারে বেরিয়েছ তো?
শেয়াল বলল— আজ্ঞে হ্যাঁ, রাজামশাই।
--বাঃ, বেশ কথা। এসো, দুজনে মিলেমিশে কাজটা করি।
শেয়ালের মাথায় কিছু ঢুকল না। বলল—সেটা কী রকম? 
সিংহ জবাব দিল—ছোট্ট শরীর তোমার। তোমাকে ছোটাদৌড়া করতে হবে না। তুমি এইখানটাতে বসে থাকো। আমি যাচ্ছি শিকারে। তবে বাপু, একটা কথা। শিকার ছোট হলে, সেটা তুমি নেবে। বড় হলে আমি। 
সিংহ শিকারে বেরিয়ে গেল। ফিরে এলো যখন, একটা কৃষ্ণসার হরিণ তার মুখে। দেখে ভারি লোভ হোল শেয়ালের। কিন্তু এটা যে তার কপালে জুটবে না, সেটা বুঝতে দেরি হোল না। 
সিংহ বলল—তাহলে পণ্ডিত। এক কাজ করো তুমি। আমার গুহায় যাও। সেখানে আমার বউ-বাচ্চারা অপেক্ষা করে বসে আছে। বাচ্চা তিনটেকে ডেকে নিয়ে এসো। তারা এটাকে বাসায় নিয়ে যাবে। আমি আবার শিকারে বেরোচ্ছি। 
--ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি। বলেই শেয়াল বেরিয়ে গেল। বাড়ি যাচ্ছে, আর ভাবছে, রাজামশাই মহা মুর্খ। পণ্ডিতকে বোকা ভেবেছে। আমার নিজের বাচ্চারাই হাঁ করে বসে আছে। আমি যাব তার বাচ্চাদের ডাকতে।  
বয়ে গেছে শেয়ালের সিংহের গুহায় যেতে। সোজা নিজের বাসায় গিয়ে হাজির। বাচ্চাগুলোকে সাথে নিয়ে এসে, চটপট হরিণটাকে টেনে নিয়ে বাসায় চলে এলো।
শেয়ালের বাসা বলতে একটা খাড়া পাহাড়ের মাথায়। ওপর থেকে একটা দড়ি ঝুলিয়ে, ওঠানামা করে তারা। আস্ত একটা হরিণ দেখে, শেয়ালির আনন্দ ধরে না। তারপর শুরু হয়ে গেল পাঁচজনে মিলে মহা ভোজ!
ছোটাছুটি করেও, সেদিন আর কোন শিকার জোটেনি সিংহের। বাড়ি ফিরে জানল, বাচ্চাগুলোকে ডেকে নিয়ে যাবে কী, শেয়াল আদৌ তার গুহাতেই আসেনি। এদিকে বউ-বাচ্চা খিদেয় মরছে।
মাথায় যেন আগুন জ্বলে গেল সিংহের। সোজা শেয়ালের বাড়িতে এসে হাজির হোল সে। কিন্তু উঁচুতে উঠবে কী করে? হাঁটতে হাঁটতে নদীর ধারে গিয়ে বসে থাকল সিংহ। 
খাওয়া-দাওয়া সেরে পেট টইটুম্বুর। শেয়াল চলল নদীতে জল খেতে। বাঘ এজন্যই আগেভাগে এসে বসে আছে। সবে জলে মুখ নামিয়েছে, সিংহকে চোখে পড়ে গেল শেয়ালের। আর যায় কোথায়? রইল পড়ে নদী। রইল পড়ে জল। ছিটকে উঠে লম্বা এক লাফ। মূহুর্তে হাওয়া হয়ে গেল শেয়াল।
সিংহ হাল ছাড়বার পাত্র নয়। সেও পিছু নিয়েছে। যখন প্রায় ধরে ফেলেছে, সিংহ গরগর করে উঠল—আজ মজা দেখাব তোকে। এমন শিক্ষা দেব, ধূর্তামি ঘুচে যাবে তোর। 
ঠিক এসময়েই একটা বুড়ো গাছের তলায় একটা খোঁদল দেখতে পেয়ে, তার ভিতর ঢুকে পড়েছে শেয়াল। কিন্তু সিংহ নাছোড়বান্দা। শেয়ালের লেজটা ধরে ফেলেছে খপ করে। 
আঁতকে উঠেছে বটে, শেয়াল মহা ধুরন্ধর। বলল—রাজামশাই মহা বোকা। / লেজ ভেবে শেকড়ে ধোঁকা।
চমকে উঠে সিংহ বলল—বলছিসটা কী তুই?
শেয়াল মস্করা করে বলল—যা করেছেন, তাই বললাম। বিশ্বাস না হয়, একটা ধারালো পাথর কুড়িয়ে এনে, কেটে ফেলুন। লেজ হলে তো রক্ত বের হবে।
সেটা অবশ্য ঠিক কথা। এই ভেবে, মুঠো আলগা করে, সিংহ চলল পাথর কুড়াতে। 
🍂

অমনি টুক করে বেরিয়ে আবার দৌড় শেয়ালের। পাথর নিয়ে ফিরে এসে, সিংহ দেখল পাখি উড়ে গেছে।
তখনকার মতো হাল ছেড়ে দিল সিংহ। তবে রাগটাকে পুষে রাখল মাথায়। তক্কে তক্কে থাকল, কবে বাগে পাওয়া যায় ব্যাটাকে। 
একদিন সিংহ ঠিক পেয়ে গেল শেয়ালকে। সরু পাহাড়ি রাস্তা। শিকারে বেরিয়েছে শেয়াল। খানিক এসেছে একেবারে সিংহের মুখোমুখি। একদিক খাদ, একদিকে খাড়া পাহাড়। সরে পড়বার উপায়টি নাই। ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। আজ আর রেহাই নাই। ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে হবে আজ। 
কিন্তু হাল ছাড়লে চলবে না। শেয়াল ফিসফিস করে বলল—একটা খবর দিতে যাচ্ছিলাম আপনাকে। ভালোই হোল, দেখা পেয়ে গেলাম। 
--তুই আবার কী খবর দিবি হতভাগা? সিংহ জানতে চাইল। 
শেয়াল বলল— পাহাড়ের ওদিকে একপাল বুনো শুয়োর দেখে এলাম। আহা, কী নাদুস-নুদুস চেহারা সব! কিন্তু আমি একা তো কিছু করতে পারব না। তাই আপনার খোঁজে যাচ্ছিলাম। 
শুনে তো জিভে লালা ঝরতে লেগেছে সিংহের। বলল—চল তো দেখি। 
শেয়াল বলল—সে কী? খামোখা আপনি ছোটাছুটি করতে যাবেন কেন? আমি এ পথ দিয়ে যাচ্ছি। ব্যাটাদের তাড়া করে, একেবারে আপনার এই সামনেটায় এনে দিচ্ছি। আপনি এখানটাতেই দাঁড়িয়ে থাকুন খানিক।
সিংহ দাঁড়িয়েই রইল, শেয়াল সরে পড়ল সেদিনের মত।
একদিন রাতে একটা সভা ডেকেছে সিংহ। কী করে ধূর্ত শেয়ালটাকে পাকড়াও করা যায়, সেই আলোচনা হবে। শেয়াল জানতে পেরে গেছে সভার সংবাদ। সে উশখুশ করতে পাগল। যে করেই হোক, সভাটায় উপস্থিত থাকতে হবে। কী ফন্দী আঁটা হয়, সেটা জেনে নিতে হবে।
শেয়ালের কানে এলো, এদিকে রাজা মশাই একটা ফন্দি করেছেন, শেয়াল যাতে কোন মতেই সভায় না থাকতে পারে। বলা হয়েছে—মাথায় শিং নাই এমন কেউ সভায় থাকতে পারবে না।
শেয়ালের তো মাথা বন বন করে ঘুরতে লাগল। এবার আর রেহাই নাই। সবাই মিলে কিছু একটা ফন্দি বের করবে। আর শেয়াল মারা পড়বে।
কিন্তু ভেবে ভেবে ঠিক একটা বুদ্ধি বের করে ফেলল শেয়াল। সেদিনই রাতে সভা বসবে। বড়সড় একটা জাকারাণ্ডা গাছের তলায় গিয়ে হাজির হোল শেয়াল। গাছটার ডালে ইয়াব্বড় একটা মৌচাক। শেয়ালকে দেখে, উপর থেকে মৌমাছিদের রানি বলল—কী খবর, পণ্ডিত? আমার এখানে কী মনে করে? 
শেয়াল বলল—ভারি বিপদে পড়েছি, দিদি। অকালে মারা পড়তে হবে। এদিকে ঘরে বউ-বাচ্চা। তাদের কথা ভেবে, মাথা ঘুরছে বনবন করে। 
রানি বলল--বিপদটা কী, সেটা বলো তো, শুনি।
সভার কথা, শিং না থাকার ফরমান—সব খুলে বলল শেয়াল। শেষে বলল—তোমার চাক থেকে খানিকটা মোম দেবে আমাকে?
রানি অবাক হয়ে বলল—সে না হয় দিলাম। কিন্তু মোম দিয়ে কী করবে তুমি? 
শেয়াল খানিকটা আশা পেয়ে বলল—দিয়েই দ্যাখো না তুমি। বনের রাজাকে কী খেল দেখাই আমি।
মোম পেয়ে দুটো শিং বানাল শেয়াল। নিজের শরীরের সাথে জুৎসই হোল কি না, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নিল ভালো করে। তারপর সোজা সভায় গিয়ে হাজির। 
শেয়ালকে সিংহের চোখে পড়ল বটে, কিন্তু এমন অদ্ভূত চেহারা দেখে চিনতে পারল না, কে এটা? সভার একেবারে শেষের দিকে, একটা আগুন জ্বালা হয়েছে কাঠকুটো দিয়ে। আরাম হবে ভেবে, আগুনের কাছ ঘেঁষে বসেছে শেয়াল।
এদিকে আগুনের তাত লেগে শিংয়ের মোম গলতে শুরু করেছে। তখন খেয়াল হোল সিংহের। সে আসন থেকে উঠে এসেছে শেয়ালকে পাকড়াও করবে বলে। এদিকে মোমও গড়িয়ে নেমেছে শেয়ালের গাল বেয়ে। বুঝতে কিছু বাকি রইল না তার। এক লাফে সরে পড়ল শেয়াল। 
দৌড়ে পালাচ্ছে শেয়াল। সিং হও দৌড় লাগিয়েছে পেছন পেছন। সেদিন সিংহ ছাড়বার পাত্র নয়। সেও ছুটছে পিছু পিছু। 
যখন প্রায় এসে পড়েছে, কে আছো বাঁচাও আমাকে, বাঁচাও—চিৎকার কানে এল সিংহের। তাকিয়ে দেখে, মাথার ওপর ঝুঁকে পড়া একটা পাথরের চাঁইকে সামনের দু পা দিয়ে ঠেকিয়ে রেখেছে শেয়াল। 
সিংহকে দেখতে পেয়ে, শেয়াল চেঁচিয়ে বলল—বাঁচান রাজামশাই। আর পারছি না। এক্ষুনি খসে পড়বে পাথরটা। থেঁতলে মারা পড়ব। 
সিংহ থমকে গেল দৃশ্যটা দেখে। এখন যদি ঝাঁপিয়ে পড়ি, দুজনেই চাপা পড়ে যাব। তার চেয়ে একটা বুদ্ধি করা যাক। 
ঠেকা দেওয়ার মত একটা গাছের ডাল খোঁজ করতে চলল সিংহ। সেই দেখে, মুচকি হেসে সরে পড়ল শেয়াল।
কতদিন আর এমন নাস্তানাবুদ হওয়া যায়? একদিন হাল ছেড়ে দিল সিংহ। আবার ভাবসাব হয়ে গেল দুজনের। একসাথে শিকারে যায় তারা। গল্পগুজনও হয় দুজনের। 
 একদিন একটা ষাঁড় শিকার হয়েছে। দেখে তো চোখ বড় বড় হয়ে গেল শেয়ালের। আহা, কী নধর চেহারা। মাংসও কত না সুস্বাদু হবে। 
সিংহ বলল—আমি বড় বড় টুকরো করে ফেলছি। তুমি একটা একটা করে দুই বাড়িতে পৌঁছে দিতে থাকো। শেষে যে যার ঘরে ফিরে, বউ-বচ্চাদের সাথে বসে মজা করে খাওয়া যাবে। 
প্রথমে ষাঁড়ের কলজেটা উপড়ে, শেয়ালকে ধরিয়ে বাঘ বলল-- ষাঁড়ের কলজে আর বউয়ের ভারি প্রিয়। এটা গুহায় পৌঁছে দিইয়ে এসো। 
জিনিষটা দেখে তো শেয়ালের চোখ চকচক করে উঠেছে। এ জিনিষ কোনদিন তাদের কপালে জোটে না। বাঘ সিংহরা শিকার করে। তারা খেয়েদেয়ে যা ফেলে রেখে যায়, তাতেই পেট ভরাতে হয়। আজ দারুণ মওকা জুটেছে কপালে।
গুহার নামটাই ভুলে গেল শেয়াল। সোজা নিজের বাসাতেই গিয়ে হাজির হোল কলজে নিয়ে। 
ফিরে এলে, বাঘ বলল—যাও, এই পাঁজরাগুলো নিয়ে বাড়ি চলে যাও। সেখানে তোমার বউ-বচ্চারা বসে আছে।
পাঁজরা নিয়ে সোজা বাঘের গুহায় হাজির। শেয়াল বলল—এই নিন, রানিমা। মাংস দিলেন রাজামশাই। 
সিংহী বেরিয়ে এসে তাকাল মাংসের দিকে। তারপর খিঁচিয়ে উঠল—বেরিয়ে যা, হতভাগা। নিয়ে যা তোদের মাংস। এই হাড়-পাঁজরা কোনদিন আমরা খাই না।
মেজাজ খারাপ হয়ে গেল শেয়ালেরও। সে করল কী, সেই পাঁজরা দিয়ে ঢাঁই করে জোর এক ঘা বসিয়ে দিল রানিমার মুখে। মাংস পড়ে রইল। হেলতে দুলতে ফিরে চলল সিংহের কাছে। 
এবার বড়সড় একটা মাংসের টুকরো ধরিয়ে দিয়ে, সিংহ বলল—আমার বাড়িতে দিয়ে আয় এটা। 
শেয়াল সেটা নিজের বাড়িতে নিয়ে চলল। কতক্ষণ এভাবে চলার পর, যে যার বাড়িতে ফিরে গেল ভোজে বসবে বলে। 
সিংহ গুহার মুখে পৌঁছেছে, ভিতর থেকে কান্না কানে গেল তার। তার বউ বাচ্চা সবাই বসে কাঁদছে। বউ বলল—আমাদের মারধোর করতে তোমার চ্যালাকে পাঠিয়েছিলে তুমি? তাছাড়া, এই হাড়-পাঁজরা আমি মুখে তুলেছি কোনদিন?
সব দেখে আর শুনে, আগুন চড়ে গেল সিংহের মাথায়। রইল পড়ে খাওয়া। সোজা শেয়ালের বাসায় এসে হাজির হোল সিংহ। 
শেয়ালও জানে, কিছু একটা হবেই। অত সহজে মেনে নেবে না সিংহ। সে নজর রাখছিল উপর থেকে। দেখেই বলল—এখন কী মনে করে রাজামশাই? 
সিংহ গর্জন করে উঠতে গিয়েও থেমে গেল। মেজাজ বা রাগ দেখালে, শয়তানটাকে বাগে পাওয়া যাবে না। মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করতে হবে। বলল—খুব জরুরী একটা কথা আছে। বলেই চলে যাবো। খাওয়া হয়নি এখনও। একটু নীচে এসো তো, পণ্ডিত।
রাজার গলায় রাগ নাই। মেজাজ ঠাণ্ডা। বুদ্ধিমান শেয়ালের বুঝতে বাকি রইল না কিছুই। সে গলায় কাকুতি মিনতি মাখিয়ে বলল—আপনিই বরং উপরে চলে আসুন। একদিন না হয় আমাদের সাথে বসে একটু খেলেন। খেয়ে দিয়ে পেট ঠাণ্ডা করে, যা বলার বলবেন। 
এ তো ভারি মঙ্গলের কথা। একসাথে সবগুলোকে পাওয়া যাবে। আজ সমূলে নির্বংশ করে ছাড়ব ব্যাটাকে। এই ভেবে বাঘ বলল—তোমার ঐ ওপরে যাবো কী করে আমি?
--এটা একটা কথা হোল, রাজামশাই? শেয়াল বলল—আমরা যেভাবে যাওয়া আসা করি, আপনিও করবেন। সিঁড়ি নামিয়ে দিচ্ছি আমি। সেটা বেয়ে উঠে আসুন। 
তার বউ ছিল পিছনে। ভয়ে সিঁটিয়ে উঠে, শেয়ালকে বলল—মাথা খারাপ হয়ে গেল না কি তোমার? সাক্ষাৎ যমকে ওপরে ডাকছো তুমি? আমাদের সবাইকে চিবিয়ে খাবে যে এক্ষুনি। 
বউয়ের দিকে তাকিয়ে, চোখ মটকে শেয়াল বলল—কী সৌভাগ্য আমাদের আজকে, বউ। স্বয়ং মহারাজ আজ আমাদের বাড়িতে এসেছেন। বাড়িতে একটু যত্ন-আত্যি না করলে, মুখ দেখানো যাবে অন্যদের কাছে?
শক্তপোক্ত একটা দড়ি নামিয়ে দিল শেয়াল। সিং হ বলল—দেখিস, দড়ি ছিঁড়ে যাবে না তো? আমার চেহারা একটু বড় কি না।
--চিন্তা করবেন না রাজামশাই। বাড়ির সবচেয়ে শক্ত দড়িটাই দিয়েছি। নিশ্চিন্তে উঠে পড়ুন। 
সিং হ উঠতে লাগল দড়ির সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে। শেয়ালী তো কাঁপছে থরথর করে। কী ভয়াণক কাণ্ডটাই না হবে এখুনি। 
সিংহ প্রায় উঠে এসেছে। তার সামনের একটা থাবা পাহাড় ধরবে এবার। শেয়াল বলল—হাত বাড়িয়ে দিন, রাজামশাই। আমি ধরে নিচ্ছি।
সিংহও একটা থাবা উঁচিয়ে ধরেছে। অমনি শেয়াল বলে উঠল—এ…ই…য…যা! সর্বনাশ হয়ে গেল যে!
আসলে শেয়াল করেছে কী। যেই না সিংহ একটা থাবা উপরে তুলেছে, হাতের মুঠো আলগা করে দড়িটা ছেড়ে দিয়েছে সে। 
সাথে সাথে ধপাস করে একটা শব্দ। শিরদাঁড়া ভেঙে, পাথরের মেঝেয় আছড়ে পড়ল সিং হ। পড়ল তো পড়লই। আর উঠলেন না বেচারা রাজামশাই। 
শেয়াল বলল—দেখলে, গিন্নি। শত্রু নিপাত তো হোলই। এখন হপ্তাখানিক পেটের চিন্তা রইল না আর আমাদের। রাজার মাংস খেয়ে, বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াব আমরা।

সংগ্রহ করতে পারেন। হোয়াটসঅ্যাপ -৯৭৩২৫৩৪৪৮৪

Post a Comment

0 Comments