কয়েকটি রম্য কবিতা-২৩ / শুভশ্রী রায়
শিউলির শরৎ
শিউলি ফুল গাছের তলায় এই এতগুলো ছড়িয়ে,
মাস্টারমশাই বাড়ি ফেরার পথে ছাত্রদের পড়িয়ে
নিচু হয়ে বেশ ক'টা নিলেন তুলে, অপূর্ব এই ঘ্রাণ,
দূর শৈশবে ফিরে যাওয়ার জন্য কেঁদে উঠল প্রাণ,
ঢাকের বাদ্যি, অল্প আয়োজন, আন্তরিকতা বেশি
সব এখন স্মৃতি, হয়তো বা বরাবরের জন্য শেষই;
মা বাবা নেই, কাছের লোকেরাও অনেক দূর আজ,
তবু দেখো, থেকে গিয়েছে শরতের অমলিন সাজ!
এইটুকুই সুখ, ভাবতে ভালো লাগে, শিউলি থাকবে,
নরম তুলি স্নিগ্ধ ছবি শত-শত শরৎ জুড়ে আঁকবে।
রৌদ্রকুসুম
ঘটনা ছোটো, ওপর ওপর বিশেষ কিছুই ঘটেনি,
তাও যেটুকু ঘটেছিল, অনুপাতে তেমন রটেনি,
ভোলেনি অবশ্যই ভবী, সে কী অনায়াসে ভোলে?
তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে? জীবনতরী দোলে,
এক ফোঁটা ঘটনা, শুধু কয়েকটা রাত ঘুম হয়নি,
স্বস্তি নিয়ে হয়তো বা দিন সাতেক জীবন বয়নি,
অতি তুচ্ছ কান্ড , বোঝার মতন নয় তো বিশেষ,
কারণ, বিস্তার ও প্রভাব নিয়ে নয় হিসেবনিকেশ,
ব্যাপার? শুনেছি নতুন ফুলের মুখ ছুঁয়েছে রোদ,
জানার দরকার নেই কুসুমের হ'চ্ছে কেমন বোধ!
চাঁদের রেখা
চন্দ্ররেখা জলের বুকে টলোমল
দুধসাদা সম্মোহনই অপূর্ব সম্বল,
মুগ্ধ জলে-জ্যোৎস্নায় খেলা কত!
নৌকো সহ মাঝি পুরো সম্মোহিত,
একা একা বইছে দাঁড়, চাঁদ লক্ষ্য
জানার নয় পাটনী সে কেমন দক্ষ,
চন্দ্রপথ জাদুময় খানিক তো চেনে,
ভুলত্রুটি হ'লে চন্দ্রমাই নেবে টেনে!
ভাঙা ছড়া ও সোহম
পাঁচ বছরের সোহম কোনো এক সকালে করেছিল অর্ধেক পড়া,
ব্যাস, মৌ পিসিও তার জন্য লিখেছিল মাত্র আধখানা ছড়া!
ভাঙা ছড়াখানি দেখে সোহম শুরু করে দিয়েছিল মহা কান্নাকাটি,
বাধ্য হয়ে তার মা মৌকে বললেন - শিগগিরি তোমার ছড়াকে পড়াও গয়নাগাঁটি!
মৌ অমনি বসে গেল ছড়া শেষ করতে, লেগেছিল তা প্রায় এক ঘন্টা,
গোটা ছড়া ও পাঁচ ছ'টা লজেন্স পেয়ে শান্ত হয়েছিল শিশুর মনটা;
সেই দিন বুঝেছিল মৌ, শিশুর জন্য ছড়া শুরু করে ফেলে রাখতে নেই,
অসম্পূর্ণ রেখে দিলে, তার কান্নার চোটে সকলের কান ফাটবেই!
0 Comments