জ্বলদর্চি

যেতে যেতে পথে-৯৮/ রোশেনারা খান

যেতে যেতে পথে
রোশেনারা খান

পর্ব ৯৮

মাসতুতো বোন ফোনে জানাল আজ ছোটমামি মারা গেলেন। একই পাড়ায় বাড়ি, ওদের বাড়িতে নাকি সবাই করোনায় আক্রান্ত। বিকেলে দুরের কবরস্থানে দাফন  হল। আসব না বলেও কিছু প্রতিবেশী ও ছেলে মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকেরা মিলে সব করেছেন। এসব শুনে কিছু ভাল লাগছে না। ছোট মামির কাছেই আমার সেলাইয়ে হাতে খড়ি। মামাবাড়ি এলে মামি সব জায়গা সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন।

     আম্ফানের মত নাকি আবার ঝড় আসছে। গতবারের ক্ষতিই মানুষ এখনো সামলে উঠতে পারেনি। এবার কী হবে? করোনা তো আছেই। মানসিক অবস্থা ঠিক নেই, তাই লিখতেও পারছি না। আমার আবার ঘুমে পেয়েছে, বিকেলে উঠতেই ইচ্ছে করে না। ভয় হচ্ছে,গত বছরের মত আরও ওয়েট না বেড়ে যায়। রাজীব ঘোষ অসুস্থ হয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি আছে। দুদিন চ্যাটে কথা হয়েছে।  তারপর আর যোগাযোগ করতে পারিনি।তবে অবস্থা যে ভাল নয়, সেটা বুঝতে পারছি।

     এখন করোনা ছাড়া খবর নেই। রোজ কত যে মানুষ মরছে, তার হিসেব নেই। আক্রান্ত মানুষ সুস্থ হতে হতে হঠাৎ করে মারা যাচ্ছে। গৃহবন্দি থেকেও অনেকের হয়ে যাচ্ছে। বাবলি আমাকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছে। আজ বলল, কোভিড আক্রান্তদের সাহায্যের জন্য ১০০ পাউণ্ড পাঠিয়েছে। ঠিক করেছি, কয়েকটি সংস্থাকে ভাগ করে দিয়ে দেব।ভাল করে চিনি জানি যাদের, তাদেরই দেব।

আমার শরীরটাও সমস্যা করছে, লকডাউন উঠলে একবার ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। সম্রাটের নেমপ্লেটটাও লাগাতে পারছি না। সকাল থেকে আজ  খুব জোরে বাতাস বইছে, ঝড়ের পূর্বাভাস। যাই হোক, লিখতে বসতে পারছি না। আজ একটা কবিতা সম্পূর্ণ করে গোপাকে পাঠালাম ভিডিও করার জন্য।ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত মেয়েটির  একাউন্টে  ৫,০০০/ টাকা পাঠালাম।চন্দ্রিমা ১,০০০/ টাকা পাঠিয়েছে। অনন্যার পরিচিত একজন ২,০০০/ টাকা পাঠাবেন বলেছেন। স্বপ্নাকেও কিছু টাকা পাঠাতে বলেছি। গতকাল ‘রেড ভলেন্টিইয়ার্সদের ২,০০০/ টাকা দিয়েছি কোভিড আক্রান্তদের সাহায্যের জন্য। আমার একার আর কতটুকু  সামর্থ্য? তবে ভাল কাজে সবাই মিলে উদ্যোগ নিলে ভাল রেজাল্টই আসে। রাতে বিছানায় শুয়ে এই সবই ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছি। সকালে বাতাসের গতি  কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাস ধিরে ধিরে ঝড় হয়ে ওঠে। সেই  সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি। ইতিমধ্যে খবর আসতে সুরু করেছে। ঘূর্ণি ঝড়ে পূর্ব মেদিনীপুরের অধিকাংশ জায়গা ডুবে গেছে। বাড়ি গাড়ি ভেসে গেছে। প্রচুর গাছ ভেঙ্গে পড়েছে। দুই ২৪ পরগনা ও হাওড়ার অবস্থা আরও খারাপ। এক করোনা তো আছেই তার ওপর এই ঝড়, মানুষ বাঁচবে কিভাবে?  

     আজ ঝড়ের তৃতীয় দিন। নিম্নচাপের মত বাতাস বইছে। ছাদের কিছু গাছ ঝড়ে মুড়িয়ে গেছে। এই ওয়েদারে মনে হচ্ছে আমিও ডিপ্রেশনে ডুবে যাচ্ছি। এত কাজের মধ্যে থেকেও কোথাও মন লাগছে না। অরিজিত স্ক্রিপ্টটা সামান্য চেঞ্জ করতে বলেছে। সে না হয় করে দেব, ও জুন মাসে শুটিং করতে চাইছে, কিন্তু এটা নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর্‌। বাবলির সঙ্গে রোজ কথা হলেও ওকে ফিল্ম বানানোর বিষয়ে কিছু জানাইনি। ওর কথামত কুইজ কেন্দ্রে ৫,০০০/ টাকা  সুভাষের হাতে দিয়েছি। শুনলাম এরা কভিডের জন্য ওর কাছে সাহায্য চেয়েছিল। স্টুডেন্ট হেলথ হোম এ  বিজয় পালের হাতে ৫০০/টাকা দিয়েছি। ব্লাড ক্যান্সারের  পেসেন্ট ঐশ্বর্যাকে সৌনক ৫০১/ টাকা পাঠিইয়েছে। চন্দ্রিমার থেকে শুনে অপরনিতা  ২,০০০/টাকা পাঠিয়েছে। মোটামুটি ১০,০০০/ টাকার মত পাঠাতে পেরেছি। জানি প্রয়োজনের তুলনায় এ টাকা  খুবই সামান্য। তবুও এই অচেনা অদেখা মেয়েটির জন্য কিছু তো করেছি। এটাই আমার সান্ত্বনা।

      বীরভূমের কৃষ্ণচন্দ্র কলেজের অধ্যাপিকা আইরিন মণ্ডল কথা প্রসঙ্গে  বলছিল, ‘আমাদের সমাজ মূক ও বধির। তা না হলে আপনার মত মানুষের সঠিক মূল্যায়ন হত’। আমি এসব নিয়ে ভাবি না। আমার কাজে বাধা না এলেই হল। এরমধ্যে আজ রাতে(২জুন) আমাদের মুখ্যমন্ত্রী যা ঘোষণা করলেন, তাতে  লকডাউন উঠেই গেল বলা যায়। গণ পরিবহণ ছাড়া সব কিছুতেই ছাড় দিয়েছেন। সময়ও বাড়িয়েছেন।

    সেজ দেওরের মেয়ের বিয়েতে যেতে পারলে ভাল হত। ওরা যেমন ব্যবহারই  করুক না কেন, আজ সম্রাট নেই বলে শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করে দিতে হবে, তা আমি ভাবি না। আমি বাড়ির বড়বৌ, আমার দায়িত্ব সম্পর্কগুলো গেঁথে রাখা। আমি সেটাই করার চেষ্টা করব। প্রায় রোজ রাতে যাদের হারিয়েছি তাঁরা আমার কাছে আসে, সেই পুরনো দিনের বাড়ি ঘর, লোকজন নিয়ে ভরা সংসার দেখি। ঘুম ভাঙ্গলেই সব মুছে যায়। কিন্তু রাতের দৃশ্যগুল সারাদিন মনের মধ্যে ঘুরপাক খায়।

     আজ(৭ জুন)আমাদের বসার ঘরে ‘ভ্যাকসিন’ শর্ট ফিল্মের শুটিং হল।বাকি টা বাইরে হবে। আশা করছি ১ দিনেই শেষ হয়ে যাবে। আমার জন্য এ লাইন নয়, সেটা আমি বুঝতে পারছি। বাড়িতে বসে নিজের মত লিখি, সেটা আমার কাছে অনেক সহজ কাজ। ডাবিঙের জন্য একদিন যেতে হবে।

    আজ সোশ্যাল মিডিয়াতে ‘ভ্যাকসিন’ রিলিজ হয়েছে ।আমার ডাবিংটা ঠিকমত হয়নি। বাকি সব ঠিক আছে। খুব ভাল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে আমাদের বার্তা না বুঝে সমালোচনাও করছেন। তবে সবটাই যে আমার পছন্দ মত  বা ইচ্ছে মত হয়েছে, তা কিন্তু নয়। আমি মুসলিম চরিত্রটির মেকআপ, পোশাক ও ভাষার কোন পরিবর্তন চাইনি, যা দিয়ে তাঁর ধর্ম পরিচয় ঘোষিত হয়।   অরিজিত এরকমটাই চাইছিল। আসলে ও কিছু করে দেখাতে চেয়েছিল।

      এই কয়েকদিনে আনন্দবাজার, সংবাদ প্রতিদিন, আজকাল এ আমার ‘ভ্যাক্সিনের’ খবর প্রকাশিত হয়েছে। এতটা সাড়া পাব, ভাবিনি। আনেকে আমাকে দিয়ে স্ক্রিপ্ট লেখাতে চাইছে। এসব কথা রাতে বিছানায় শুয়ে ভাবছিলাম। ভরবেলা উঠে দেখলাম, সুমন(আজহারউদ্দীন খানের ছোটছেলে) মেসেজ করেছে,’বাবা নেই’ (২৩/০৬/২১) সবে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।আমি গিয়ে দেখলাম, শরীরটা একেবারে ছোট হয়ে গেছে, রক্তশূন্য চেহারা। পাশের রুমে বানুমাসির সঙ্গে দেখাকরে ফিরে  এলাম। মাসি খুব কান্নাকাটি করছিলেন, খুবই স্বাভাবিক। সুমন  কোথায় দাফন করবে সেটা নিয়ে দোটানায় পড়ে ছিল। অমি ওকে পির নাসিরে দাফন করার পরামর্শ দিলাম। সাহদিলে ওর স্ত্রী ও মেয়ের কবর আছে। বহুবার কারা যেন ফলক ভেঙ্গে দিয়েছে। আমার সম্রাটের ঘরটাই নেই করে দিয়েছে। সুমন  আমার পরামর্শ মেনে পির নাসিরে কবর  কাটার জন্য বলল। করোনার কারণে বামপন্থি কিছু লোক ছাড়া তেমন কেউ আসেননি।

    দেশের বাড়িতে জমি ভাগাভাগি নিয়ে খুব ঝামেলা চলছে। আমাকে বারবার  ডাকছে। লোক মুখে শুনলাম যেহেতু জমি সবার নামে নামে হয়নি, বিক্রি করতে সব অংশীদারের সই লাগবে। তাই আমাকে ডাকছে। আমি কোনদিন এসব বিষয় আশয়ের ঝামেলা পছন্দ করিনা। আমাকে সেই ঝামেলাতেই রেখে গেলেন। একদিন  যেতেই হবে। দেওরদের সঙ্গে কথা বললে নানারকম কথা বলছে। ওদের আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারছি না। সেজদেওর মেয়ের বিয়েতে নিমন্ত্রন করেছিল,  একটা তো কিছু দিতেই হবে। এদিকে আসাদুল ওর দাদার বউভাতে যাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করে গেছে। দুটি গিফট কিনে রেখেছি।

    কয়েকদিনের চেষ্টায় আজ কাদম্বরীদেবীকে নিয়ে ‘নতুন বৌঠান’ লেখাটি শেষ করলাম। জ্বলদর্চিতে যাবে। সন্ধ্যাবেলা ধীমান ফোন করে আমার বইটির ভুমিকা পাঠাতে বললেন। চিন্তায় পড়ে গেলাম, কাকে দিয়ে ভুমিকা লেখাব? বরুন কবি নির্মাল্যকে বলতে বলল। নির্মাল্যকে বলতে ও বলল, ‘দিদি তুমি বললে না করা যায় না, আমার সেভাবে প্রকাশ নেই, তবে এটুকু বলতে পারি, আমি যে কজনকে  শ্রদ্ধা করি তুমি তাদের মধ্যে একজন’। বরুণ শুনে বলল, দিদি, আপনাকে বহু মানুষ শ্রদ্ধা করেন। এঁদের মধ্যে আপনার সরাসরি পরিচয় নেই, এমন মানুষও  আছেন। ধীমান প্রুফ পাঠিয়েছে, কারেকশন করে পাঠাতে হবে। বেশ ঝামেলার কাজ।PDF টা নির্মাল্যকে পাঠিয়ে দিলাম।
🍂
     ‘নতুন বৌঠান’ লেখাটি আজ জ্বলদর্চি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ভাল সংখ্যক পাঠক মতামত জানিয়েছেন। আমার ঠাকুর বাড়ির মহিলাদের নিয়ে লেখার সাহস কনদিন ছিল না। কবি মলয় মুখোপাধ্যাইয়ের উৎসাহে ‘ভারত বিচিত্রা’র জন্য ‘ঠাকুর বাড়ির পঞ্চনারী’ লিখেছিলাম। আবার কাদম্বরী দেবীকে নিয়ে লিখলাম। এইসব ভাবনার মধ্যে ল’ইয়ারের সঙ্গে কথা বলার কথা ভুলেই গিয়েছি।

      অনেকদিন পর আজ শ্বশুরবাড়ি গেছলাম। সেজ দেওরের মেয়ের বিয়েতে যেতে পারিনি তাই যাওয়া, রানীও আমার সঙ্গে গিয়েছিল। সেজদেওরের কাছেই খেলাম। ছোট দেওরও খাওয়াতে চেয়েছিল। মেজ জা ছোট জায়ের থেকে অনেক কথা জানলাম। আমার ওসবে কোন আগ্রহ নেই। জমিতেও কোন আগ্রহ ছিল না।জোর করে চাষ করছে যে, রাগটা তার ওপরেই। আসার সময় বলল, আনন্দপুর কোর্টে কাজ হবে। ডেট হলে জানাবে। রাত প্রায় ১১ টায় নির্মাল্য ফোন করে বলল, দিদি, কয়েকটা লেখা পড়লাম, ভীষণ ভাল লেখা। এর ভুমিকা যদি  আমার স্যার লিখে দিতেন, খুব ভাল হত। জিজ্ঞেস করে জানলাম ওর স্যার সুস্নাত জানা। আমাকে কথা বলতে বলল। উনি যদি না বলেন, তখন ও নিজে লিখে দেবে। সুস্নাত জানার সঙ্গে আলাপ আছে, তেমন যোগাযোগ নেই। আমার কাছে কন্ট্রাক্ট নাম্বার ছিল, পরদিন ফোনে ভুমিকা লিখে দেবার অনুরোধ করতে, এক কথায় রাজি হলেন।সেইসঙ্গে বললেন, আপনি  আমার থেকে বড়। তাই অনুরোধ নয়, হুকুম করবেন। কয়েকদিনের মধ্যে খুব সুন্দর করে ভূমিকাটি লিখে দিয়েছিলেন।

      আগামিকাল থেকে মেদিনীপুর, খড়গপুর ও গড়বেতার কিছু অংশে আবার লকডাউন ঘোষণা করায় আজ মানুষ ভিড় করে আলু, পেয়াজ, শাকসব্জি, মাছ মাংস বাজার থেকে একেবারে মুছে তুলে নিয়েছে। আমি কাউন্সিলরকে জিজ্ঞেস করলাম আগামিকাল গাড়ি নিয়ে বের হওয়া যাবে কি না। ও বলল, তেমন কোন অর্ডার আসেনি, প্রয়োজন হলে যেতেই পারেন। দেখা যাক, সকালে কী পরিস্থিতি দাঁড়ায়। এইমাত্র খবর পেলাম  শোভানারাদি আজ মারা গেছে। শৈশবের কত স্মৃতি মনে ভেসে উঠছে। মেয়েদের মধ্যে যত সম্ভাবনাই থাক না কেন, পরনির্ভর বা পুরুষনির্ভর হয়ে বেঁচে থাকার কারণে সব ধ্বংস হয়ে যায়। সারাজীবন অসুখী দাম্পত্য বয়ে নিয়ে বাঁচতে এবং মরতে হয়।

     শেষপর্যন্ত গাড়ি নিয়েই আসাদুলের দাদার বৌভাতে গেছলাম। মেয়ের পরিবার যথেষ্ট শিক্ষিত এবং মার্জিত রুচির। মেয়েটিকে দেখে ভাল লাগল।তবে  বৌমা হিসেবে কেমন হবে তা সেই সম্পর্কের মুখোমুখি না হলে বোঝা কঠিন।  আমিও তো অনেক কিছু ভেবে আত্মীয়তা করেছিলাম। কিছুই তো মেলেনি। যাই হোক আসাদুলের বাবা ছেলের শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন।কথা বলে ভাল লাগল।

   ফেসবুকে আজহার সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলির ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে পোষ্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে আমারও স্মৃতিচারণাও আছে। বিজয় পাল ভিডিও করে পাঠাতে বলেছিলেন। মৃত্যুর পর কারো ওপর রাগ-অভিমান থাকা উচিত নয়। আজকেই দুপুরে ইণ্ডি্যা নিউজ থেকে আমার মতামত নিল। নদীয়ার এক বৃদ্ধাশ্রমে এক বৃদ্ধের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হচ্ছিল। তাঁকে বস্তায় ভরে ফেলে আসার ষড়যন্ত্র চলছিল। খবর পেয়ে সাংবাদিকরা সেখানে গেলে ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলে তাঁদের মারধোর করা হয়। সমাজকর্মী হিসেবে আমার মতামত নেওয়া হল। এইসব শুনলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি, ‘শেষের সে দিন, বড়ই কঠিন’।আমাদের সংসারে সমাজে যে চিরাচরিত বন্ধন ছিল, তা ক্রমশ আলগা হয়ে যাচ্ছে। বৃদ্ধ  মানুষটির কোনও আপনজন মনে হয় পাশে নেই, থাকলে ওদের এরকম নির্যাতন করার সাহস হত না। আজকালকার সন্তানরা বর্তমান নিয়েই ব্যস্ত থাকে। অতীতও  ভুলে যায়, ভবিষ্যতের কথাও ভাবে না।ভাবে না একদিন তাদেরও এই সময়ের  মুখোমুখি হতে হবে। মা বাবা ঝিনুকের মত জীবনের সব রস নিংড়ে দিয়ে যে মুক্তোর জন্ম দিয়েছেনজেয়াজ তা অন্যের গলার মালা হয়ে শোভা পাচ্ছে। এরা একবারও জানার চেষ্টা করেনা এই মুক্তোর জন্মবৃত্তান্ত।

     জুলাই মাসের ৯ আজ, রাজীব ঘোষের পেজে গিয়ে জানতে পারলাম ওনাকে এখন ভেন্টিলেশনে  রাখা হয়েছে। ফরটিস হাসপাতালে প্রচুর টাকা বিল হয়ে গেছে। জমানো টাকা, লোনের টাকা আরও যা সোর্স ছিল সব টাকা শেষ। ওঁর বৌমা সাহায্য চেয়ে এই পোস্ট দিয়েছেন। ভাবতে অবাক লাগছে! কোথা থেকে কী হয়ে গেল? বাবলি শুনে বলল, সে কিছু টাকা পাঠাবে।

   প্রুফ দেখা প্রায় শেষের দিকে। ধীমান ১৩ জুলাই নেবে বলেছেন। আজও ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। সৌনককে চেষ্টা করতে বলেছি। ছবির  চোখে ব্যথা হচ্ছে, আমার মাথায় ব্যথা হচ্ছে। প্রচুর কাজের চাপ। রানীর বিয়ের  সময় এগিয়ে আসছে। কোথা থেকে টাকাপয়সা আসবে জানিনা। ওর বাবা বেশ চুপচাপ বসে আছে। এরকম মানুষ আগে কখনো দেখিনি। নিজের মেয়ের বিয়ে, অথচ ভাবখানা এমন যেন মেয়েটা আমার, ও কেউ নয়। যদি কোন খরচের দায়িত্ব না নেয়, তাহলে ওকে আমি আঁকেবারেই ‘কেউ না’ করে দেব।

      আজ সকালে উঠেই একটি দুঃসংবাদ পেলাম, অনন্যার বাবা মারা গেছেন। ওনার দেহ মেডিক্যালের স্টুডেন্টদের জন্য দান করা হয়েছে। ওর বাবা দেহদানের অঙ্গীকার করে গেছেন। অনন্যা যেতে পারছে না। ও খুবই অসুস্থ। অনেক চেষ্টার পর আজ ডাক্তারে কাছে আমার আর ছবির নাম লেখানো গেছে। ছবি আসতে পারেনি, আমিই চোখ দেখালাম। চোখের ছানি কাটাতে হবে, চোখ জ্বালার জন্য একটা ড্রপ দিয়েছেন। আলিয়া সংসদ ওদের পত্রিকার জন্য একটি লেখা চেয়েছেন, এখনো লেখা শুরু করতে পারিনি।

     আজ (১৬ জুলাই) ‘আজকাল’ সংবাদপত্রের জুগ্ম সম্পাদক রাজীব ঘোষ  মারা   লোক সর্বস্বান্ত হয়েও ওনাকে বাঁচাতে পারলেন না। আমার শহরেই বেশ কিছু তরুণ করোনায় মারা গেল, এই সবে জীবন সুরু করেছিল। শুরুতেই শেষ হয়ে গেল।

    মাঝে মাঝে লেখার চেষ্টা করছি, আজ অনেকটাই লিখলাম। এখন যে কোন খবর রেডিও টিভি, খবরেরকাগজ দেখার আগে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে। এইমাত্র দেখলাম, মেদিনীপুর পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রণব বসু মারা গেছেন। উনি এবং মৃগেন মাইতি খান সাহেবের স্কুলের সহপাঠী ছিলেন। তবে বিশেষ পরিচয় ছিলনা। কারণ খান সাহেব সায়েন্স নিয়ে পড়তেন, ওনারা পড়তেন আর্টস নিয়ে।

                                        ক্রমশ

জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করুন। 👇

Post a Comment

0 Comments