জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৫৫

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৫৫
চিত্রগ্রাহক - সুদীপ পাত্র
সম্পাদকীয়,
কঁকর কঁক - ডেকে ঘুম ভাঙালো সুদীপ আঙ্কেলের তোলা প্রচ্ছদের মোরগগুলো। ঘুম ভেঙেই বুঝতে পারলাম বেশ ঠান্ডা পড়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে খ্রীস্টমাস, পিকনিক, নিউ ইয়ারের কথা মনে হল। আমার মনের কথা আর মতো নে রইল না। বাসবদত্তা আন্টি বুঝতে পেরে শীতে আমেরিকায় হ্যালোইনের গল্প বলতে শুরু করে দিল। বিদেশ ভ্রমণ এখানেই শেষ নয়। বিনোদ আঙ্কেল জাপানের রাজকন্যের গল্প ছড়ায় বললেন। আমাদের দেশই বা কম কিসে? আমাদের আছেন বিদ্যাসাগর৷ তাঁর কথা কবিতায় বললেন জয়ন্ত জেঠু। তবু মনটা মাঝে মাঝেই দুগগা ঠাকুরের জন্য হু হু করে ওঠে। তাই তো অদ্রিজা দিদি আর তোমাদের বব্ধু রাজদীপ উমা মাকে নিয়ে কবিতা লিখে পাঠিয়েছে। কবিতা এবারের সংখ্যায় যতই থাক যারা গল্প শুনতে ভালোবাসো তারা যে সুকুমার জেঠুর কল্পবিজ্ঞানের উপন্যাসটা আগে পড়বে তা আমি জানি। পড়ে ফেলো আর লিখে ফেলো কেমন লাগছে ছোটোকাকুর কান্ডকারখানা। প্রেয়সা আর শেখ মুস্তাফিরকে অনেক ভালোবাসা। এবারের উৎসব সংখ্যাগুলির প্রচ্ছদ চিত্রটি এঁকেছেন শিল্পী পিসি। তাঁকে অজস্র ধন্যবাদ। এতদিনে তাঁর প্রচ্ছদের ছবি থেকে পদ্মের সৌরভ ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের ছোটোবেলার বন্ধুদের ঘরে ঘরে তা আমি জানি। এসো সেই সৌরভের গল্প আমরা আমাদের বন্ধুদেরও ঘরে ঘরে পৌঁছে দিই।  -- মৌসুমী ঘোষ।
ধারাবাহিক উপন্যাস
ছোটোকাকুর কান্ডকারখানা
সুকুমার রুজ

পর্ব ৫

আজ সকাল সাতটা নাগাদ 'হেলিপ্লেন' এসে নেমেছে সুমনদের বাড়ির কাছে স্কুলের মাঠে। সুমনের ছোটকাকু আগে থেকেই মাঠের ধারে গ্র্যাভিটার গাড়ি নিয়ে হাজির। প্লেন নামার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই পরিবেশ-বিজ্ঞানী স্যামুয়েল জনসন ও মহাকাশ-বিজ্ঞানী আইভ্যান ডিক্সন নেমে আসেন। ছোটকাকু এগিয়ে গিয়ে দু'জনের সঙ্গে করমর্দন করেন। তারপর গাড়িতে বসান। বাড়ি খুব বেশি দূরে নয়, হেঁটেই আসা যেতে পারে। কিন্তু  অতিথি বলে কথা। তাই খাতির করা দরকার। সুমন আর তিতলিও গেছে স্কুলের মাঠে। তিতলির হাতে বাবার পুরোনো নিক্কন ক্যামেরা আর সুমনের হাতে ওর দিদির মোবাইলফোন। দু'জনে ইচ্ছে মতো ফোটো তুলে যাচ্ছে। 
  সুমন আর তিতলিকে আগে থেকেই ছোটকাকু বলেছিল, স্কুলমাঠে ওঁরা নামার পরেই ওদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবে। সুমন-তিতলি রাজি হয়নি। বলেছে — না, ওখানে আমরা আলাপ করব না। আমাদের দু'একজন বন্ধুকেও আসতে বলেছি। তারা এলে একসঙ্গে আলাপ করিয়ে দিও। 
  স্কুলমাঠ থেকে গাড়িটা বাড়িতে পৌঁছতে বেশি দেরি হয়নি। কিন্তু সুমন আর তিতলি জোরে হেঁটে গাড়ি পৌঁছনোর আগেই বাড়ি পৌঁছে গেছে। ওরা পোশাক বদল করে তৈরি হয়ে নিচ্ছে। একে তো দু'জন বিদেশি মানুষ, তায় বিজ্ঞানী, ওদের সঙ্গে আলাপ করবে ভাবতেই ওদের কেমন একটা শিহরণ হচ্ছে। ইতিমধ্যে সুমনের আর তিতলির একজন করে প্রিয় বন্ধু বাড়িতে হাজির। 
  ওরা চারজন দুরু দুরু বুকে ড্রয়িং রুমে ঢোকে। দেখে, দু’জন বিদেশি মানুষ সোফায় বসে রয়েছেন। সাদা ধবধবে গায়ের রঙ। মাথার চুল আর ভ্রুগুলো সাদা। ঠোঁটগুলো গোলাপি আর দাঁতগুলো মুক্তোর মতো ঝকঝকে। 
  ওরা হেসে হেসে কথা বলছেন ছোটকাকুর সঙ্গে। সুমন-তিতলিরা ঘরে ঢুকতেই ছোটকাকু বলেন — এসো তোমরা! এই যে! এঁরা হলেন স্যামুয়েল জনসন আর আর আইভ্যান ডিক্সন। একজন পরিবেশ-বিজ্ঞানী আর একজন মহাকাশ-বিজ্ঞানী। ওঁরা ভারতে প্রথম এলেন।  
  সুমন একটু বেশি স্মার্ট। ও হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডসেক করতে গিয়ে তো অপ্রস্তুত। ওঁরা দু’জনেই হাতজোড় করে বাঙালী ঢঙে বলে উঠলেন — নমস্কার! আপনি নিশ্চয় মিস্টার রায়ের ভাইপো! আপনার কথা গাড়িতে বসে শুনেছি। মাঠে ছবি তুলছিলেন তো আপনারা দু'জনে!  
  সুমন ধাক্কাটা সামলিয়ে কোনক্রমে নিজের নাম বলতে পারে। ও ভাবতেই পারেনি, ওঁরা বাংলায় কথা বলবেন। ও মনে মনে অনেকবার মকশো করেছে, ইংরাজি ভাষায় কী বলবে।  
  যাই হোক, ও ভ্যাবাচ্যাকা ভাব কাটিয়ে প্রতি নমস্কার করে আর বলে — আমাকে আপনি নয়, তুমি বলবেন।
  এভাবে একে একে সুমন, তিতলি আর ওদের দুই বন্ধু, চারজনের সঙ্গেই ছোটকাকু আলাপ করিয়ে দেন। ওরা এরকম গুরুত্ব পেয়ে এত খুশি, তা আর বলার নয়। ছোটকাকু ওদেরকে বসতে বলে। সুমন ভাবতে থাকে, ওঁরা বাংলা ভাষা কী করে বলতে পারছেন! ওরা এত ভাল বাংলাভাষা শিখলেন কার কাছে! সুমন থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেলে — ছোটকাকু, ওঁরা এত সুন্দর বাংলাভাষা বলছেন কী করে?    
  কাকু কিছু বলার আগেই স্যামুয়েল জনসন বলে ওঠেন — ওটা একটা মাইক্রো চিপ-এর কারসাজি। আমাদের নেক্ টাইয়ে বসানো আছে অত্যাধুনিক ল্যাঙ্গুয়েজ কনভার্টার। তার মধ্যে আছে এই মাইক্রো চিপ। যখন যে ভাষায় কথা বলার দরকার, তখন সে ভাষার জন্য তৈরি বিশেষ চিপ লাগিয়ে নিতে হয়। এখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য বাংলা ভাষার চিপ লাগিয়ে নিয়েছি। ওই চিপ আমার ভাষাটাকে বাংলায় অনুবাদ করে দিচ্ছে।
  ছোটকাকু হেসে বলেন — ওই যন্ত্র 'You'-এর অনুবাদ করছে 'আপনি', 'তুমি' ওখানে ইন্সটল করা নেই। তাই তোমরা ওদের কাছে এত সম্মান পেয়ে যাচ্ছ।         
  ব্যাপারটা শুনে সুমন তো চনমনিয়ে ওঠে। আবেগ সামলাতে না পেরে ও বলেই ফেলে — আমি ইংরাজিতে ভালোভাবে কথা বলতে পারি না। ওরকম একটা যন্ত্র পেলে ...!   
  আইভ্যান ডিক্সন বলেন — বুঝতে পারছি, আপনাদেরও এমন যন্ত্র পেতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু আমাদের সঙ্গে তো অতিরিক্ত যন্ত্র নেই। আমরা এখান থেকে চলে যাওয়ার সময় আমাদের এ যন্ত্রদুটো আপনাদের দু'জনকে দিয়ে যাবো।
  এ কথা শুনে সুমন আবেগে বাতাসে হাত ছুঁড়ে বলতে যাচ্ছিল, 'ইয়া একাইনো...', ওঁরা কিছু মনে করবেন ভেবে নিজেকে সামলিয়ে নেয়।           
   ছোটকাকু আবার বলতে শুরু করেছে —  তোমরা নিশ্চয় জানো, এখনকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা গ্লোবাল ওয়ার্মিং। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী স্যামুয়েল জনসন গবেষণা করছেন দীর্ঘদিন ধরে। স্যামুয়েল একবার স্পেস সিটি যাওয়ার সময় অ্যাসেন্ডার বিমানে আমার সঙ্গী হয়েছিলেন, তখনই আলাপ। উনি ও ওঁর দলবল  গিয়েছিলেন বায়ুমন্ডলের ওজোন-স্তর মেরামত করতে। স্পেস সিটি থেকে কাজটা করার সুবিধা। স্পেস শাটল-এর চড়ে ওঁরা বায়ুমন্ডলের ওপরের স্তরে নেমে এসে, কাজকর্ম সেরে আবার ফিরে যেতেন স্পেস সিটিতে।  
  ছোটকাকু হঠাৎ আমাদের সকলের উদ্দেশে বলেন — ও! ভালো কথা, ওজোন-স্তর কাকে বলে, নিশ্চয় জানা আছে! বায়ুমন্ডলের উপরিভাগে ওজোন গ্যাসের ঘন স্তর থাকে। ওই স্তর পৃথিবীকে রক্ষা করে সূর্য থেকে আসা নানারকম ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে। অতিবেগুনি রশ্মি, অবলোহিত রশ্মি এরকম আরও অনেক ক্ষতিকারক রশ্মিকে আটকে দেয় ওই ওজোন-স্তর। নিশ্চয় তোমরা জানো এসব! আমিও যেমন ...! সুযোগ পেয়ে মাস্টারি করে ফেললাম।  
  যাক্ গে! তোমাদেরও আর একবার ঝালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তো, ওই উপকারী ওজোন-স্তরের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে আমাদের নিজেদের দোষেই। মহাকাশে প্রচুর মহাকাশযান পাঠানো তো অন্যতম কারণ বটেই। তাছাড়া বায়ুতে প্রচুর গ্রিন হাউস গ্যাস, মানে কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, ক্লোরোফ্লুরো কার্বন, মিথেন আরও কীসব গ্যাস প্রতিনিয়ত মিশছে গাড়ি, কলকারখানার ধোঁয়া, ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশনার এসব থেকে। তাতেই ওই ওজন-স্তর ফর্দাফাই। সে সব রিপেয়ার করতে গিয়েছিলেন ওই বিজ্ঞানী স্যামুয়েল ও অন্যান্যরা।   
  বিজ্ঞানী দু’জনের সঙ্গে আলাপ পর্ব শেষ হতে না হতেই সুমন আর তিতলির মা স্বর্ণিকা ট্রে-তে সরবতের গ্লাস সাজিয়ে হাজির। নতুন অতিথিদের সামনেই প্রথমে ট্রে ধরা হলো। ওরা গ্লাসে হাত দিয়েই হাত সরিয়ে নিল। বলল, এগুলো দেখছি ঠান্ডা। নিশ্চয় ফ্রিজে ছিল। আমরা খাব না।    
  স্বর্ণিকা বললেন — ও! ঠান্ডা খেলে বুঝি গলা বসে যায়! তাহলে না হয়...। 
  ওরা বলে ওঠে — না না, তার জন্য নয়! অন্য কারণে! 
  আমরা তো অবাক। ছোটকাকু দেখি মিটিমিটি হাসছে। কিছু বলছে না।    
  ওরা দু’জনে মুখ তাকাতাকি করে বলে ওঠে — আমরা ফ্রিজের জিনিস খাই না। এয়ার কন্ডিশনিং ঘরে ঢুকি না। জ্বালানি তেলে চলা গাড়িতেও চড়ি না। এটা আমাদের প্রতীকী প্রতিবাদ। মানুষকে বোঝানোর জন্য যে, এসবে পৃথিবীর পরিবেশের কী দারুণ ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের ওই প্রতিবাদ ও প্রচারে বেশ কয়েকটা দেশে এইসব যন্ত্র ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। সচেতন হয়েছে মানুষ।  
  ছোটকাকু এবার বলে ওঠে — আর কিছুদিনের মধ্যেই অবশ্য নিষেধাজ্ঞা উঠে গিয়ে অন্য নির্দেশ জারি হবে। বউদি! তোমাকেও সে নির্দেশ পালন করতে হবে কিন্তু।   
   স্বর্ণিকা আর কিছু না বলে চুপ করে যান। সুমনের মুখে তো সবসময় খই ফোটে। ও ধাঁ করে প্রশ্নটা করেই ফেলল —  কাকু, অন্য নির্দেশ জারি হবে কেন? আর কী নির্দেশ? 
  ওই বিজ্ঞানী দু’জন কিছু বলতে যাচ্ছিল মনে হলো। তার আগেই ছোটকাকু বলল — এ প্রশ্নের উত্তর এখন থাক। ব্যাপারটা বলতে সময় লাগবে। কাকুরা জার্নিতে ক্লান্ত। খেয়েদেয়ে বিশ্রাম নেওয়া হোক। বিকেলে অদ্ভুত এক যন্ত্রের ডিমনস্ট্রেশন সহ ওঁরাই দেবেন তোমার প্রশ্নের উত্তর।  
  তিতলি বলে ওঠে সেই ভালো। আমার কাছে এখন আইপডটা নেই। কথাগুলো রেকর্ড করতে পারবো না। রিয়ার কাছ থেকে ওটা আমি এখখুনি নিয়ে আসি গে।
ছবির ওপারে
 অদ্রিজা সাঁতরা

মা দুগ্গার আঁকবো ছবি
ঠিক করেছি আজ,
পড়াশুনো থাক না পড়ে
থাক পড়ে সব কাজ!

সঙ্গে আছে আঁকার খাতা
ছবির বইও আছে
রং পেনসিল, তুলি-কলম
গুছিয়ে বসি কাছে।

আদর মাখা মুখে হাসি
দীঘল টানা চোখ,
দশ হাতে দশ অস্ত্র দিয়ে 
অসুর নিধন হোক।

মনে ভাবি, আঁকব মাকে
ঠিক প্রতিমার মতো
আঁকতে গিয়ে তবু কিছুই
হয়না মনের মতো।

সাদা খাতায় আঁচড় কাটি
মুছি হাজার বার!
আকুল হয়ে শুধোই মাকে
পারবো না কি আর?

কান্না ভেজা ঝাপসা চোখে
হঠাৎ যেন দেখি,
স্নিগ্ধ, কোমল সে মুখখানি
ঠিক অবিকল -- একি!

রইল পড়ে সব আয়োজন,
মিথ্যে রঙের ধাঁধা--
দূর হল সব দ্বিধা আমার,
ভাঙল রে সব বাধা।

খাতার পাতায় ধরতে চেয়ে
হারিয়েছিলাম যাকে,
হৃদয় খুলে দেখতে পেলাম
জগৎ জোড়া মা-কে।

উমা
রাজদীপ দত্ত
দশম শ্রেণী
রিষড়া, হুগলী


কিশোরী নয়, উমা সে 
      দশভুজার রূপ, 
দশ হস্তে, দশ অস্ত্রে 
      দেখেছি মাতৃস্বরূপ। 

কখনও ঘোড়ায় - কখনও নৌকায় দেবীর আগমন,
মর্ত্যে এসে স্বয়ং দেবী 
      করেন অসুরদমন।

অপেক্ষার ক্লান্তি ঝরে,
      তিনশত ষাট দিনে।
পাঁচদিন থাকেন দেবী,
      এই ত্রিভুবনে।

ষষ্ঠীর ভোরে অকাল বোধন 
বাঙালির সব দুঃখ মোচন,
সপ্তমীতে কলাবউ স্নান 
 বিকেল হলেই ঘুরুঘুরু প্রাণ। 

পরদিনও ভারী মজা 
     কুমারী ও সন্ধি পূজা, 
বাকি রইল নবমীর হোম 
     বরণ শেষে উমার বিসর্জন।


এক যে আছেন বিদ্যাসাগর 
 জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় 


এক যে ছিলেন বিদ্যাসাগর ভীষণ রকম গোঁয়ার
ধাক্কা দিয়েই ভেঙেছিলেন অন্ধকারের খোঁয়াড়।

এক যে ছিলেন বিদ্যাসাগর বিদ্যাঠাসা মাথায়
বই লিখেছেন অনেকগুলো দিস্তা দিস্তা পাতায়।

হাতে দিলেন বঙ্গজনার বর্ণপরিচয় 
শিক্ষা শুরুর প্রথম সিঁড়ি সবারই প্রত্যয়।

বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তোমার এমন মন 
স্কুল করেছো জেলায় জেলায় আলোর প্রবহন।

এক যে ছিলেন বিদ্যাসাগর জ্ঞানের সাগর তিনি
তার জ্যোতিতে জ্বলে ওঠেন দেশমা গরবিনি।

এমন যে তার উদারতা পকেট উজাড় করে
দুঃখীজনা তাকিয়ে ছিলো স্বপ্নলাগা ঘোরে। 

এক যে আছেন বিদ্যাসাগর মনের কোঠায় জেগে
লেখাপড়ায় আজও আলো তোমার ছোঁয়া লেগে।

🍂
জাপান জল্পনা 
বিনোদ মন্ডল 


জাপানের রাজকনে নাম গোরি তোকি
চা পানের পরে খান পান হরীতকী। 

তার পিসি পেশাদার মৎস্যজীবী
দ্বীপ থেকে দ্বীপে হাঁকে মাছ কে নিবি? 

রাজা তাই খেপে লাল রাগে লজ্জায় 
রাজপাট ত্যাগ করে কাঁদে শয্যায়। 

জনগণ ভেবে ভেবে নাস্তানাবুদ 
গোরি তোকি মস্তকে পরায় মুকুট।

ভগ্নীর শোকে রাজা শিনা নিস আবে। 
প্রেসনোট প্রকাশেন নিরামিষ খাবে।

উৎসব মরশুমে অ্যামেরিকাতে
বাসবদত্তা কদম

প্রথম পর্ব

এখন যে সময়টায় আছি আমরা তাকে আমরা হেমন্ত পেরিয়ে শীতের পথে বলতেই পারি। একে পাতা ঝরার মরশুম বলেও চিনি। শীত আসার আগে এক অদ্ভুত সুন্দর সিরসিরে হাওয়া দেয়। ঝরা পাতায় ঢেকে যায় রাস্তা। একটু জোরে হাওয়া দিলেই আওয়াজ আসে ঝুর ঝুর আর পাতারা শুয়ে পড়ে রাস্তায়। আকাশটা ফকফকে নীল। আকাশের নীলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রোদ্দুর সোনালী। 
দেশজুড়ে কোথাও তার খানিক আগে বা পরে হেমন্ত আর শীত আসে। একে একে চলে আসে দুর্গাপুজো, দীপাবলি, জগদ্ধাত্রী পুজো। তারপর লাইন দিয়ে আছে ক্রিসমাস, নিউ ইয়ার। এর সঙ্গে আছে পিকনিক, বইমেলা, স্পোর্টস। মামা, মাসি, পিসি, দিদি, দাদা কারুর না কারুর বিয়ে। সাজ গোজ আর হৈ হৈ। কে না জানে গরমের থেকে ঠান্ডার সময় হৈ হৈ করতে বেশি ভালো লাগে! এর সঙ্গেই থাকে পরীক্ষার কাঁটা। এত সব সামলে পড়াশুনা করাটা সত্যিই বেশ চাপের। বিশেষ করে যাদের সামনে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক। কিন্তু তোমরা যে সব কটাই খুব ভালো ম্যানেজ করতে পারো তাও আমি জানি।  
সেবার ঠিক এরকম সময়ে আমরা অনেকদিন ধরে দেশের বাইরে। সালটা ২০১৮। বেশ অনেক মাস হয়ে গেছে আমাদের সেবারের আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের। পুজো আসছে ভাবলেই মনটা কেমন কেমন করে উঠছে। যদিও আমরা যেখানে থাকি সেই হিউস্টনে বেশ বড়ো দুর্গাপুজো হয়; সে বেশ বড় জায়গা। কিন্তু পুজো মানে যে হৈ হৈ, রাস্তা জুড়ে প্যান্ডেল। আলোর রোশনাই। সে সব কিছুই তো নেই। দেখে বোঝাই যায় না অন্যদিনের সঙ্গে দুর্গাপুজোর দিনগুলোর পার্থক্য। তারপর দুর্গাপুজোয় ছুটি থাকার প্রশ্নই নেই এবং  ভাবলাম এক দুবছর দুর্গাপুজো না দেখলে কি আর এমন হবে! প্রায় ভুলেই গেছি তখন, নীল আকাশ, সাদা মেঘ, নতুন শাড়ি জামার কথা। এরকমই একদিন কোথাও একটা যাচ্ছি, হয়ত বাজারে। দেখি রাস্তার পাশে এক জলার ধারে দেদার কাশফুল ফুটে আছে। অমনি সব মনখারাপগুলো রিওয়াইন্ড হলো।
সেদিনই ঠিক করে ফেললাম বেড়াতে যাবো। মনখারাপ সারাতে এর থেকে ভালো ওষুধ আমার জানা নেই।  
এই সময়টায় ওদেশেও একটার পর একটা উৎসব শুরু হয়ে যায়। 
সেপ্টেম্বরে ওদেশে বাচ্চাদের স্কুলে ছুটি থাকে বেশ লম্বা। সেসময় রোদের তাপ যায় বেড়ে। বেড়াবার আদর্শ সময়। 
গরমের দেশে রোদের তাপ বাড়লে আমরা ঘরে ঢুকি কিন্তু ঠান্ডার দেশে রোদ, আহা!
এর কিছুদিন পরেই হাড়ে কাঁপন ধরাতে চলে আসবে শীত বুড়ো। তাই এইবেলা বেরিয়ে পড়ো। আমাদের প্ল্যান করে, টিকিট কাটতে কাটতে হয়ে গেল অক্টোবরের শেষ। নভেম্বরের এক তারিখ বেরিয়ে পড়া ফাইনাল হলো।
অক্টোবরের শেষদিন একত্রিশে অক্টোবর ওদেশে হয় হ্যালোউইন। তার পরেরদিন পয়লা নভেম্বর অল সোলস ডে। ওখানকার বাসিন্দাদের বিশ্বাস অনুযায়ী তাঁরা সেইদিন পরিবারের মৃত মানুষদের কবরে ফুল বা মালা দিয়ে প্রার্থনা করেন তাদের মুক্তির জন্য। 
হ্যালোউইন কে যদিও সোলস ডে’র সঙ্গে খানিকটা জুড়ে দেওয়া হয় কিন্তু এর সূচনা হয়েছিল কৃষি উৎসব হিসেবে। অনেকটা বলা যায় আমাদের নবান্ন। তবে এখন এটা প্রায় একটা ভূতুড়ে উৎসব হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
এদেশেও বাজার দোকান সব ছেয়ে যায় বিভিন্ন ধরণের অদ্ভুতুড়ে পোশাকে। হ্যাঁ। অদ্ভুতুড়ে। বিশাল বিশাল কুমড়ো। ওরকম বিশাল বিশাল কুমড়ো আমি জম্মে দেখিনি। না! সে সব কুমড়ো মোটেও খাওয়া হয় না। কুমড়োর পেটের থেকে চেঁছে সেখানে বেশ বাটির মতো আকৃতি দেওয়া হয়। মাথাটা তো চৌকো করে কাটা হয়ই। আর কুমড়োর গায়ে খোদাই করা হয় সব ভয়ানক নাক, চোখ, মুখ। এবার ঐ কুমড়োর ভিতরে কেউ বড় মোমবাতি, কেউ ইলেকট্রিক লাইট লাগিয়ে দেয়। সন্ধে হতেই যখন সূয্যিমামা একটু একটু করে ঘুরতে থাকে পৃথিবীর অন্যদিকে আলো দেবে বলে। ব্যাস! অমনি বারান্দায় বারান্দায় কুমড়ো জ্বলে উঠলো। সে সব আলো জ্বলা কুমড়ো দেখলেই মনে হয় ভিরমি খাবো। 
এত এত কুমড়ো এভাবে নষ্ট করে কেন এরা? প্রচুর ফলে বুঝলাম। তবুও এমন অদ্ভুত প্রথার কারণ কী? 
শুনলাম আইরিশ রা আমেরিকায় এই প্রথা এনেছেন। কুমড়োকে এভাবে সাজিয়ে তাতে আলো জ্বালিয়ে রাখা তাদের বহু পুরনো আচার। সেভাবেই তারা সেটা পালন করতো আমেরিকাতে এসেও। ধীরে ধীরে সেটাই ছড়িয়ে গেল।    
এই হ্যালোউইনের বেশ কিছুদিন আগে থেকেই দোকানে দোকানে যেমনি ভূতুড়ে পোশাক তেমনি সব মুখোশ আমদানি হয়। ভূতের বাপের সাধ্যি নেই পোশাক দেখে বলে এ তাদের পোশাক না মানুষের। দোকানে দোকানে কি ভিড়! আমার খুব বিশ্বাস বেশ কিছু ভূত তাদের ছানাপোনাদের জন্য পোশাক কিনতে আসে। নাহলে কারা কেনে এত ভূতুড়ে সব পোশাক দোকানের শেলফ কে শেলফ খালি করে। 
তা সে যাই হোক, ও দেশের নিয়ম অনুযায়ী কেক, চকোলেট, ক্যান্ডি ইত্যাদি কিনে রাখা হয়েছে ভূত নাটকের কুশীলবদের জন্য। এটাই সেখানকার রীতি। ভূতেরা শুনলাম ওসব খেতে ভালবাসে। 
৩০ অক্টোবর, রাত প্রায় দশটা, বেল বাজলো। এত রাতে কে এলো? ট্রিক অর ট্রিটের দলের আসার কথা কাল রাতে। আরেকজন ততক্ষণে ঘুমিয়ে কাদা। ওদেশে এত রাতে কেউ আসে না। আর ফোন না করে, সময় না জানিয়ে কখনোই কেউ আসবে না। দরজা খুলতেই দেখি ও মা গো! এ যে সব পান্ত ভূতের জ্যান্ত ছানার দল! কি ভয়ানক যে তাদের চেহারা! সঙ্গে হাড় হিম করা হাসি। কালকে আসার কথা যাদের একদিন আগেই এসে গেছে! এরা কি তাহলে সত্যি ভূতের দল আমাদের দরজায়? যতই সাহসী ভাবার চেষ্টা করি নিজেকে, গলা দিয়ে  আওয়াজ বেরোয় না? মাথাটা কিরকম ঘুরে গেল!
(ক্রমশ)

Post a Comment

0 Comments