জ্বলদর্চি

উপহার /অমিত কুমার রায়

উপহার 
অমিত কুমার রায়

ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল।
বর্ষা ও মঙ্গল ওরা বিয়ে থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট।
মেঠো পথের ধার ধরে বিকেলে বাড়ি ফিরছিল।
বটতলা ছাড়া ঠেক নেবার ঠাঁই নেই।
 শম্পা প্রপাত তালে তালে।
দুজনের সাইকেল সেই 
ছাতার মতো বটগাছের তলায় রেখে দাঁড়িয়ে বেশ সময় ধরে।
বর্ষার ছাতার মধ্যে মঙ্গল, ওর ছাতা নেই!
আজকাল ছেলেরা নতুন স্টাইলে রাস্তা হাঁটে!
বৃষ্টিতে মাথায় রুমাল  তো
রোদ্দুরে পেন কলম!
মাঠে সবে ধানের চারা রোয়া চলছে,
দূরে মাঝে মাঝে বিদ‍্যুৎ চমক তো বাজের ধমক ;
বর্ষার শিহরিত অন্তর গুনগুন করে ওঠে।
"ঝরঝর বরিষে বারি ধারা"
আরে বৃষ্টিতেই তো রবি ঠাকুর গা গারে গা....
বর্ষা মঙ্গলের দিকে ভ্রুধনু বাঁকিয়ে বলল --- কোথায় নয়?
গ্রীষ্ম বর্ষা শরৎ হেমন্ত শীত বসন্তে?
মঙ্গল হাসিমুখেই বললে
আরে সে কথা বলতে,
"শতেক যুগের কবিদলে মিলি....."
বর্ষা বললে  দেড়শ বছর  আগের কবি "কল্পনা" তে 'বর্ষা মঙ্গল' দিয়ে ছিলেন উপহার।
মঙ্গল-- অবশ্যই,
মঙ্গল বর্ষার একদম কাছে।
বৃষ্টির জলেও যেন উষ্ণতা! 
না মেলায় মেলবন্ধন ঘটায়। একটি ছাতার তলায় দাঁড়িয়ে।
বর্ষা অন‍্যমনস্ক হয়ে বলে --
প্রকৃতি উজাড় করে দুহাত ভরে দেয় আর আমরা দূষণ ছড়িয়ে মাকে কলুষিত করছি।
মঙ্গল বললে ---আমাদের যুবশক্তিকেই জাগতে হবে,
বর্ষা বললে-- দেরি নয়  এখনই হাল ধরতে হবে,
মঙ্গল বললে-- কৃষকদের জাগতে হবে জাগাতে হবে 
কীটনাশক প্রয়োগের সঠিক ব‍্যবহার আজও শিখল না।
বর্ষা বললে দ‍্যাখ্ মঙ্গল ক‍্যামন প্রতারণা উপহার পাচ্ছি!
প্লাস্টিকের ব‍্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা হলো অথচ!
বহাল তবিয়তে বাজারে ক‍্যারি ব‍্যাগ!
আসল উৎস স্থলে কেউ হাত বাড়ায় না,
সিগারেট বিড়ি মদ গাঁজা চলছেই!
কেউ উৎস তে হাত বাড়ায় না;
আমরা নরম মাটি আঁচড়াতে ভালোবাসি,
মঙ্গল মুচকি হেসে বললে
আমরা পাহাড় ভেঙে রাস্তা ইমারত গড়ছি সেও তো কঠিন পাথর আঁচড়ে রে
প্রকৃতির দেওয়া উপহার তার 
অপব্যবহার এখন আমাদের সভ‍্যতার সংকট!
বর্ষা বললে-- বিশ্বেরকবি রবি সভ‍্যতার সংকট এ সে ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন 
মঙ্গল বললে মাটির নিচে অমৃতবারি তারও অপহরণ হচ্ছে ;
জলের জন্য যুদ্ধ হবেই 
জলের অপচয়ের জন্য 
ডিপটিউবয়েল, সাবমার্শাল জোঁকের মতো রক্তের তুল‍্য জলকে শোষণ করছে মানুষ!
বর্ষা  এযেন মা সন্তানকে লালন পালন করে বড়ো করে 
মাকেই নাশ করে সেই কুসন্তান!....
তসলিমাকে যারা "বিতর্কিত" লেখিকা বলে 
তারা নিজরাই জানেনা
কি এর অর্থ
 ঠিক তেমনি 
যারা দূষণের নামে বেসাতি করে 
তাদের হাত থেকে মুক্তি ছিনিয়ে নিতে হবে কারণ কেউ
মুক্তি দেয় না,
মুক্তি আদায় করে নিতে শিখতে হয়।
মঙ্গল বললে ---বর্ষা 
বড়োই আবহওয়া গম্ভীর করে ফেলছি,
বর্ষা বললে ---আজ অনেকদিনের পরে বৃষ্টি এল!
আমার বাগানে অনেক চারা গাছ রয়েছে তুই বসাস যদি দেব মঙ্গল 
মঙ্গল বললে   উপহার! দিলে নেববৈকি!!
বর্ষা বললে উঁ, তোকে শিশু উপহার দেবো ;
মঙ্গল বিস্মিত হয়ে বলে --- শিশু 
বর্ষা বাঁধ ভাঙা বন‍্যার মতো হা হা করে হেসে বললে
না রে না মানব শিশু নয় শিশু চারা গাছ রে!
মঙ্গল নিজের বুকে হাত চেপে বললে
যাক তা হলে অবশ্যই চারা গাছ দিলে বসাবো।
কিন্তু বসাব কোথায়?......
বর্ষা  কেন রাস্তার পাশে নদীর তীরে?
মঙ্গল কোন নদীর পারে?
বর্ষা  বিদ‍্যাধরী, মুণ্ডেশ্বরী 
মঙ্গল সে তো তুই রে বর্ষা!
বর্ষা  তাই!  বলে ছাতা বন্ধ করল,
তবুও তখন ওরা ভিজে গেছে, 
ভিজে গেছে নিবিড়তার সারল্য প্রেমে,
ভিজে গেছে বৃষ্টির উপহারে,
ভিজে গেছে স্পন্দিত ছন্দে,
ভিজে গেছে যৌবনের মাটির গন্ধে।...

🍂

Post a Comment

0 Comments