যেতে যেতে পথে
রোশেনারা খান
পর্ব ৯৭
অনেক আগেই পিন্টু আর পারমিতা অনুমতি নিয়ে রেখেছে। তাই আজ সঙ্কল্প ফাউন্ডেসনের সঙ্গে লোধাদের গ্রাম লোধাশুলি যাব বলে তৈরি হয়ে বসে আছি। ওরা বেশ দেরি করে ৯ টার সময় আমাকে গাড়িতে নিল। শহর থেকে খুব একটা বেশি দুরে নয়। গিয়ে দেখলাম লোধা অধ্যুষিত গ্রামটিতে ছোট ছোট মাটিরঘর, টালির ছাউনি দেওয়া। সেরকমই একটি ঘরে বসতে নিয়ে গেলে দেখি ডঃ সন্ধ্যা ধাড়া আগে থেকেই অপেক্ষা করছেন। আলাপ হল, বেশ মিশুকে।ওঁর আর একটা পরিচয়, উনি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ কাঞ্চন ধাড়ার স্ত্রী। তিনিও আসবেন। সন্ধ্যা এবং আমি প্রথম এবং প্রধান বক্তা। আমাদের নিয়ে গিয়ে বসানো হল।গোপাল সাহা এসেছেন। স্থানীয়া ২/১ জনকে নিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হল। একটি টালির বাড়ির চালাতে টেবিল-চেয়ার পেতে মঞ্চ সাজানো হয়েছে। সামনে মহিলা ও শিশুদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বাকি অতিথিরাও এসে পড়েছেন।আমাদের বক্তব্য শেষ হতেই চুপি চুপি মঞ্চ থেকে নেমে স্থানীয় মানুষের কাছে কিছু খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা করলাম। দুটি লোধা বালিকা অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে, কথা বলে জানলাম, ওরা পড়াশোনায় খুব আগ্রহী। এখন বিয়ে করতে চায় না।ওদের মধ্যে মেধা রয়েছে, প্রতিভাও রয়েছে। হিন্দি গানের সঙ্গে খুব সুন্দর নাচল।
যাইহোক ৪ টের মধ্যে বাড়ি পৌঁছে গেলাম। যখন মঞ্চে বক্তব্য রাখছিলাম সেই সময় কলকাতা থেকে ভারতীদির ফোন এসেছিল। ধরতে পারিনি। অনেকক্ষণ থেকে দেখছি ফোনে একটা মেসেজ বার বার ভেসে উঠছে, ‘আপনার চিঠি পড়লাম’।বুঝলাম এই কথা জানাতেই কলকাতা থেকে ভারতীদি ফোন করেছিলেন। সকালে কাগজ দেখার সময় পায়নি, এখন খুলে দেখালাম গত পরশু মেল করা চিঠিটি আজ আনন্দবাজেরে সবার প্রথমে প্রকাশিত হয়েছে।
আমি রানীরবাবা, খোকন (F R Khan)ও মৌসুমি, বোনঝি মিলি ও জামাই ফয়েজ সাহবাজদের বাড়ি গিয়ে রানী সাহবাজের বিয়ের ডেট করে এলাম.২৯ অক্টোবর ডেট হয়েছে, তবে সবটাই নির্ভর করছে করোনা পরস্থিতির ওপর। পরিস্থিতি খারাপ হলে ডিসেম্বরের শেষে হবে। তখনো যদি পরিস্থিতি না বদলায়, তাহলে কোনও আয়োজন না করে বিয়ে পড়িয়ে নিয়ে চলে যাবে।অনুষ্ঠান করে বিয় হলে ৫০ থেকে ৭০ জন বরযাত্রী আসবে।সাহবাজের বাবা ‘আড্ডা রেস্টুরেন্ট’ বুক করে রাখতে বলছেন। দেখি, একদিন যাব।
ছবির চোখে মাইক্রো সার্জারি হয়েছে।আজ ওর ভাবি জামাই সাহবাজ শাশুড়িমাকে দেখতে এসেছিল। আমি আজ সেকেন্ড ভ্যাকসিন নিলাম।চন্দ্রিমা ওর মা শিবানীদিকে স্পন্দন নার্সিংহোমে ভ্যাকসিন দেয়াল। ওখানে টাকা লাগছে।আমি আগে নিয়ে নিয়েছি বলে আমার সঙ্গে ঝগড়া করল। ফয়জলের স্কুলে আর একটি বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়ার কথা ছিল, সেটাও ক্যানসেল করলাম। এই মুহূর্তে আক্রান্তের সংখ্যা সব দেশকে ছাড়িয়ে ভারতবিশ্বের শীর্ষস্থান দখল করেছে।
কয়েকদিন আগে ফারহা খাতুন নামে একটি মেয়ের সঙ্গে ফোনে আলাপ হয়েছে, এই জেলারই মেয়ে। নেশায় একজন ফিল্ম মেকার। ওর দুটি ফিল্ম জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। ওর সঙ্গে আজ কিছু কথা বলার ছিল। কিন্তু ওর রুমমেট কোভিডে আক্রান্ত হওয়াতে তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে। আজও সাহাবাজ শাশুড়িমায়ের খবর নিতে এসেছিল।
লেখাটা আজকাল এর রাজীব ঘোষকে আজ মেল করলাম। রাজীব প্রাপ্তি স্বীকার করেছেন। প্রথমে ফারহাকে মেল করেছিলাম। ওর খুব ভাল লেগেছে। বলল, আপনার লেখা পড়েই বোঝা যাচ্ছে আপনার অভিজ্ঞতা কতখানি। বেশ কয়েকদিন আগে আনন্দবাজার ফারহাকে নিয়ে লেখা প্রকাশ করেছে। তাই আমি সম্পূর্ণ অন্যভাবে লিখেছি। ৩ দিন পরে রাজীবকে ফোন করে লেখাটির বিষয়ে জানতে চাইলে বললেন। যাবে, কবে যাবে জিজ্ঞেস করতে বললেন, কালই যেতে পারে।পরের দিনই রাজীব ফারহার দুখানা ছবিসহ লেখাটি খুব সুন্দর করে বের করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করতে প্রচুর লাইক কমেন্ট আসতে শুরু করেছে। ফারহার পোস্টেও প্রচুর লাইক কমেন্ট এসেছে। একটা কথা বলা হয়নি, ফারহার বেলদাতে বাড়ি। সুদীপ খাঁড়া আর ফারহা একই কলেজে পড়াশোনা করেছে।
পাঁচখুরির B Ad কলেজে আজ বর্ষ বরণের অনুষ্ঠানে গেছলাম। পাশের গ্রামের একটি মাঠে খোলা আকাশের নিচে একেবারে প্রকৃতির কোলে খুব সুন্দর অনুষ্ঠান হল। সকালে গাড়ি এসেছিল, আমি ছাড়াও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটির বাণী বাবু, বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের একজন ও চন্দ্রকোনা কলেজের দুজন অধ্যাপক। গ্রামের মানুষরাও অংশগ্রহণ করে ছিলেন। আমাদের উপহারের সঙ্গে একহাঁড়ি করে রসগোল্লা দেওয়া হয়েছিল। অরিজিৎ সিনহা(শিক্ষক)চলতি মাসের ২৫ তারিখে ওর প্রোগ্রামে যাওয়ার কথা আগেই বলে রেখেছে। আজ আরও একবার মনে করিয়ে দিল। তবে যেতে পারব কিনা জানিনা।
তানিকে শেষপর্যন্ত ফ্লাইটেই ফিরতে হল, আমার ভাগ্না নাজিম (ননদের ছেলে)ওখানে চাকরি করে, ভাগ্যিস ওর সঙ্গে যোগাযোগটা ছিল,ও এয়ারপোর্টে নিয়ে এসে কোভিড টেস্ট করে বেশি টাকা দিয়ে রিপোর্ট নিয়ে টিকিট কেটে ফ্লাইটে উঠিয়ে দেয়। বাড়ি থেকে গাড়ি গিয়ে দমদম এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে আসে।এই পরিস্থিতির সুযোগে কোভিড টেস্টের রিপোর্টের জন্য ৩,২০০/ টাকা, আর টিকিটের জন্য ১০,০০০/ টাকা নিয়েছে। ওকে বাড়িতে আলাদাভাবে রেখেছি।
সকালে ধীমানকে আমার ছবি ও পরিচিতি পাথিয়েছিলাম, বিকেলে উনি ছবি ও পরিচিতি সহ দুইদিকের প্রছদের ছবি পাঠিয়েছেন। ভালই হয়েছে।বইয়ের নাম উনিই ঠিক করেছেন, ‘আবর্ত’।আজ সন্ধ্যায় বাসবি ফোন করেছিল,অনেক্ক্ষণ নানা বিষয়ে কথা হল।প্রদীপ বাবুর উরবি প্রকাশন একজন কিনে নিয়েছেন। আমি তাঁর নাম্বারটা পাঠাতে বললাম। প্রদীপবাবু একটা টাকাও দেননি। শুধু কিছু বই দিয়েছেন। বাসবি ও টাকা পায়নি, উপরন্তু ওনার বাড়ির লোক খুব বাজে ব্যবহার করেছেন।সততা জিনিসটা এখন আতস্কাচ দিয়ে খুঁজতে হচ্ছে। থাক ওসব কথা, এখন নতুন বই নিয়ে ভাবছি।
সূর্যাস্তের হাটে অনুষ্ঠিত বৈশাখী উৎসব।
ডেক্সটপ সমস্যা করছে, একটা বড় লেখা একবার ৯ পৃষ্ঠা দেখা যাচ্ছে, কখনো ১১ পৃষ্ঠা দেখা যাচ্ছে। মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার জোগাড়। এদিকে মেয়ে রোজ ফোন করে যা জানাচ্ছে, তেই বোঝা যাচ্ছে আমাদের দেশের কী ভয়ঙ্কর অবস্থা।আজ সকালে বামপন্থী নেতা সীতারাম ইয়েচুরির বড় ছেলে(৩৫)কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। কবি শঙ্খ ঘোষও কোভিডে চলে গেলেন। এবার কোভিড আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছে।মেয়ে কাজেরলোক আসা বন্ধ করে দিতে বলছে।
আজ অরিজিতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সূর্যাস্তের হাট গেছলাম।আপাতত আর কোথাও যাবনা। মেদিনীপুর শহরের বেশকিছু ওয়ার্ডে নতুন করে কোভিড ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে ভ্যাকসিন, অক্সিজেন কোনটাই পাওয়া জাচ্ছে না। সেকেন্ড ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে। বাবলি ছবি ও রানী তানিকেও ভ্যাকসিন নিয়ে নিতে বলছে। দেখি, কী করা যায়।চন্দ্রিমা তো আমার কাছে আসতে পারছেনা বলে রাগে ফুঁসছে, কিন্তু আমার কিছু করার নেই।
আত্মকথাটা ধারাবাহিক ভাবে লিখে যেতে হবে, বন্ধ করা চলবে না। ঋত্বিকের পত্রিকাতেই দেব ভেবেছি। বই বের করার সময় প্রকাশক না পেলে নিজের টাকা দিয়েই করব। আজ চন্দ্রিমাকে আসতে বলেছিলাম, ও এসেছিল। ওকে কষ্ট দিতে চাইনা বলেই ডেকেছিলাম। মেয়েটা পাগলের মত ভালবাসে। এরপর ১২.১৩ মে ইদের সাড়ি দিতে আসবে বলে গেছে। করোনাও বাড়ছে,সেইসঙ্গে বাড়ছে ভ্যাক্সিন নেওয়ার ভিড়। আজ(২৯ এপ্রিল) কবি শঙ্খ ঘষের স্ত্রী মারা গেছন।মেদিনীপুরেও আজ একজন পরিচিত বাচিক শিল্পী মারা গেছেন। পরিস্থিতি অ সবকিছুর ওপর এতটাই তিব্র ভাবে প্রভাব ফেলেছে যে লিখতে বস্লেও করোনা আর ভোট ছাড়া অন্য কোনও বিষয় মাথায় আসছে না। তাই আত্মকাহিনীটাই লিখে চলেছি।
আজ এপ্রিলের শেষ দিন। আগামীকাল শ্রমিক দিবস। ২ মে ভোটের রেজাল্ট আউট হবে।যে দলই জিতুক না কেন, দাঙ্গা হাঙ্গামা না হলেই হল। আগামিকাল থেকে আবার লকডাউন শরু হবে। বাজার খোলা থাকবে সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত, বিকেল ৩ টে থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত। বিজয়মিছিল করা যাবে না। সপিংমল, সিনেমা হল, ইত্যাদি সমস্ত জমায়েত বন্ধ থাকবে। তাই আজ কিছু টাকা তুলে নিয়ে এলাম। বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে মাছ,সব্জি যায়, দরকার পড়লে কিনে নেব।
ভোটের রেজাল্ট স্বস্তি দিয়েছে, তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে। রাজ্যে বিজেপিকে ঠেকাতে মানুষ জেনে বুঝেই তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে। বিকল্প কোন পথ ছিলনা বলে। আমার মত অনেকেই সস্তির নিশ্বাস ফেলছেন। তবে নন্দিগ্রামে মমতা ব্যানারজি পরাজিত হয়েছেন। খবরে দেখছি ছোটখাটো গণ্ডগোল শুরু হয়েছে।আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানারজি শপথ নেওয়ার সময় বলেছেন, এসব হিংসা, মারামারি কঠোর হাতে দমন করবেন। বিশ্বাস হয়না, কি জানি? শেষে হয়ত বলবেন ‘বাচ্চা ছেলেরা করে ফেলেছে’। আর বিজেপি তো আহত বাঘিনী হয়ে উঠেছে। ওরা জিতলে আরও অত্যাচার বাড়ত, অত্যাচারের বেশিরভাগ শিকার হত মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুস। তবে বিজেপি আর তৃণমুলের মধ্যে মার, পাল্টা মার চলছেই।
গতকাল ‘ভারত বিচিত্রা’য়, প্রকাশিত ‘ঠাকুর বাড়ির পঞ্চনারী’ প্রবন্ধটি সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করেছিলাম। ভাল সাড়া পেয়েছি। এখন লেখা নিয়েই আমার মরাবাঁচা। ছবি আজ গাড়িতে করে চোখ দেখাতে এসেছিল, ডাক্তার আবার ডেট দিয়েছে। আজ এক অতি পরিচিত ডাক্তার যা বললেন, শুনে তো আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হওয়ার জোগাড়। এখন সব হাসপাতালেই কোভিড আক্রান্তদের ভর্তি নিচ্ছে এবং সব ডাক্তারদেরই তাঁদের চিকিৎসা করতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার না থাকায় পেসেন্ত দেখে চিকিৎসার সিধান্ত নিতে হচ্ছে। যে পেসেন্তের সুস্থ হওয়ে ওঠা খুব জরুরি, বয়স কম, সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে, তাদেরই বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আমার পরিচিত একজনের কোভিড পজেটিভ। ছবি চলে গেলে আমাদের আর বাইরের যোগাযোগ থাকবে না। কাজের মেয়ে গুড়িয়া আজ আসেনি। বাবলি ওকে আসতে নিষেধ করে দিতে বলেছে। গতবছর রহিমাকে প্রায় চারমাস সবেতন ছুটি দিয়েছিলাম।তবে রানী আমি দুজন মানুষ যে ভাবে হোক চালিয়ে নেব। পোষা খরগোশটা খাচ্ছে না। ওর আবার কি হল জানি না।
আজ রবীন্দ্রজয়ন্তী, অনেকে বাড়িতেই বিশ্বকবির জন্মদিন পালন করছেন। আজ মাতৃদিবসও(৯ মে),মায়ের আবার আলাদা দিন হয় নাকি? মা তো সব সময়ের, সব দিনের। মায়ের ছবি পোস্ট করে সেটাই লিখলাম।দুপুরে আজকাল এ একটা লেখা পাঠিয়ে জানতে চাইলাম পৌঁছেচে কি না। লেখা পৌঁছেছে, যাবে কিনা কাল জানাবেন। না গেলে লোকাল পত্রিকায় দিয়ে দেব। বিকেলে অনন্যা মেসেজ করে যে খবর জানাল,তা শুনে পায়ের তলার মাটি ধ্বসে গেল যেন।সুদীপের শিশু সন্তানটি (পুত্র) মারা গেছে। এবিষয়ে কিছু লেখার মত মনের অবস্থা নেই। সন্তান হারানোর ব্যথা কী যন্ত্রণাদায়ক তা যে হারায়, সে বোঝে।পরদিন সুদীপকে ফোন করতে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘দিদি ভাল কাজের এই ফল পেলাম’?
🍂
গতকাল শিক্ষাবিদ হোসেনুর রহমান মারা গেছেন। উনি আমাকে নামে চিন্তেন।আকটি টিভি প্রোগ্রাম দেখে স্টুডিওতে ফোন করে আমার যুক্তি ও বক্তব্যের প্রশংসা করেছিলেন।এদিকে সৌনক লাহিড়ী মারা গেছেন কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মেদিনীপুরের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। কলকাতা, তথা পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা খুবই সঙ্গিন। আমাদের এলাকায় তেমন কিছু শুনছি না। কিন্তু অন্যান্য আ এলাকায় প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মারাও যাচ্ছে।
আগামীকাল ইদ, আমার আর কী? রানীরই রান্না বান্নায় উৎসাহ দেখছি। আমি একটি ইদের ওপর লেখা তৈরি করে মুর্শিদাবাদের ঝিঙ্গেফুল পত্রিকায় পাঠালাম। আর একটি লেখা তৈরি করে জ্বলদর্চি পত্রিকায় পাঠালাম। সঙ্গে আজহারুল পাঠানের তোলা কয়েকটি ইদের ছবি। দুটি লেখাই আজ সন্ধ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। রাজীবের সঙ্গে কথা বলে মনে হল, আমার লেখাটি পছন্দ হয়নি। কী আর করা যাবে? সব লেখায় পছন্দ হবে, তার কোন মানে নেই। পরদিন ভোর তিনটের সময় ফোন খুলে দেখি রাজীব মেসেজ পাঠিয়েছেন, আমার লেখাটি কাল বের হবে। এটাই আমার ইদের উপহার। চন্দ্রিমা ও সৌনকে একটা আজকাল কিনে পাঠাতে বললাম। এরমধ্যে হলদিয়া খেকে রাজেস শাসমল লেখাটি What’s App এ পাঠিয়েছে। ওটাই সেয়ার করলাম।বেলা করে চন্দ্রিমা আজকালটি পাঠিয়েছিল। তবুও বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠছে।আজ এত বড় উৎসব, আমার ঘরে কোনও আয়োজন নেই, খুশি নেই। একটা সময় ছিল, ইদে, বকরিদে ছেলে মেয়ে জামাই সবাই আসত, খান সাহেব বলতেন, ‘আজ তোমার সোনার হাট পরিপূর্ণ’। সেই হাট কবেই ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছ। রয়ে গেছে তার ব্যথাভরা স্মৃতি।
চিত্র পরিচালক ফারহা খাতুন।
দুপুরে এক বোনঝি ফোন করে জানাল, নাজুদি(খুঁড়তুতো দিদি) করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আছে। গতকাল মাসতুতো বোন আজরা বলছিল, দাদাভাই (মাসতুতো ভাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে খুব কষ্ট পাচ্ছে। আজ গুড়িয়া এসে শুধু বাগান পরিস্কার করেছে। ওপরে আসতে দিইনি। ওঁকে কাজে আসতে নিষেধ করে দিইয়েছি । পরদিন সকালে ফোন অন করে এমন একটি খবর পেলাম যে সে বিষয়ে আমার কিছুই জানা ছিল না।কলকাতা থেকে শর্মিলার দেওয়া পোস্টে জানলাম, অঞ্জন ব্যানারজি করোনায় মারা গাছেন। সারাদিন এই খবরটা তাড়িয়া নিয়্বে বেড়াল।কত স্মৃতি মনের পর্দায় ভেসে উঠছে। ওর সঙ্গে বহুদিনের পরিচয়। তখন ‘২৪ ঘণ্টা’ চ্যানেলের জন্ম হয়নি। ও তখন আকাশ বাংলা চ্যানেলে ‘গরমাগরম’ নামে একটি টকসো সঞ্চালনা করতেন। ওই অনুষ্ঠানেই আমার সঙ্গে ওঁর পরিচয়। তারপর আকাধিক প্রোগ্রামে ওঁর সঙ্গে থেকেছি। কখনো আগে থেকে জানিয়ে প্রোগ্রাম চলাকালে আমাকে ফোনে ধরেছেন। তারপর ২৪ ঘণ্টা থেকে অনলাইন আনন্দবাজারে সম্পাদক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে আমার লেখা চেয়েছে। এসব কথা আগেই বলেছি। আমরা বিভিন্ন উৎসবে সুভেচ্ছা বিনিময় করতাম। এবারই প্রথম ইদের শুভাচ্ছা জানাননি। এতে আমি অবাকই হয়েছিলাম। তখন তো জানতাম না, উনি কোভিডে আক্রান্ত। পরে ওনার দাদা মুখ্যমন্ত্রীর সচিব আলাপন ব্যানারজি একটি স্মৃতিচারণায় ভাইয়ের সম্বন্ধে লিখেছিলেন, অঞ্জন ভ্যাকসিন নেয়নি, ভোটের সময় ট্রেনে যাতায়াত করেছেন। এই অবহেলাই মাত্র ৫৬ বছর বয়সে জীবনটা চলে গেল। আজ রাজীব জানাল, শীর্ষ নেই। ঘুমের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। কী হচ্ছে এসব! এই তো কিছুদিন আগে এই মৃত্যু নিয়ে আমার সঙ্গে কত মজা করলেন।
ক্রমশ
0 Comments