জ্বলদর্চি

এলোমেলো -৫ /মলয় জানা

এলোমেলো -৫
মলয় জানা

গোপাল বড় সুবোধ বালক,
রাখাল কেবল খেলে,
লিখেছিলেন বিদ্যাসাগর 
কোন সে আদ্যিকালে।
গোপাল চলে পাঠশালাতে
পিঠে বইয়ের বোঝা, 
রাখাল ও সব ধার ধারে না,
পড়ার ছলে ঘর পালিয়ে,
আমের বনে, জামের বনে,
কখনো কারো উঠোন কোনে, 
দল জুটিয়ে দেদার মজা, 
শাসন বাঁধন উড়িয়ে দিয়ে
নিজের মতো চলে।
বাপ মায়েরা ছেলেকে বলে,
"গোপাল হতে হবে"।
গোপাল বড় সুবোধ বালক
গোপাল হতে হবে।

রবি ঠাকুর ছোটোবেলায় 
গোপাল গাথা পড়েছিলেন।
রাখালকেও বুঝেছিলেন।
জলের শব্দ শুনেছিলেন।
পাতা নড়তেও দেখেছিলেন।
রাখালই ভালো ভেবেছিলেন।

গোপাল ভালো নিজের তরে,
জ্ঞানে গিজ গিজ বড় মাথা 
সে কি ভাববে পরের কথা?
কারো মাথায় গাছ পড়েছে,
রাখাল ছোটে।
গোপাল তখন
জ্ঞান সাগরে হাবুডুবু, 
শ্রেণি পারের গলি খোঁজে। 

রবিবাবুর বায়না ছিল
শরতবাবুর কাছে,
একটি মেয়ের গল্প লিখতে হবে।
লিখেছিলেন শরতবাবু?
কে জানে সে কথা।
রবি কিন্তু পড়েছিলেন
ইন্দ্রনাথের কথা।
ইন্দ্র যদি গোপাল হোত?
গোমড়া মুখে বই পড়ত?
কেবলাকান্ত শ্রীকান্তটা 
মাঠেই মারা যেত।

ইন্দ্রকথা ছেড়েই দিলাম,
গোরা যদি গোপাল হোত?
কিশোর যদি গোপাল হোত?
ফটিক যদি গোপাল হোত?
নন্দিনীকেও 
বই বিছিয়ে পড়তে হোত?
কেমন হতেন রবিবাবু?
বুঝেওছিলেন নিজেই তিনি,
রাখালটা তাই প্রিয় ছিল।

ঠান্ডা মাথায় ভাব বসে,
ক্ষুদিরামটা গোপাল হলে?
কিংবা ধর সুভাষ বোস?
অথবা ধর বিনয় বাদল?
সবাই যদি গোপাল হোত??
গোরা হাতের প্যাদানিটা
আজো পিঠে ঠিক পড়ত।
গোপাল ভাবে নিজের কথা,
বউটি সুখে ঘর করবে 
ছেলেটিও স্কুলে যাবে।
ওর ছেলেটা?? 
সেটা তো ওর!!
গোপাল কেন ভাবতে যাবে??
ওদের কথা রাখাল ভাবে
আমি ও তাই রাখাল হব।

আমিও তাই রাখাল হব,
তোমায় চেয়ে রাখাল হব,
ভালোবেসে রাখাল হব।
তুমি থাকবে কোন সে গাঁয়ে,
নামটিও তার জানব না
আমি থাকব আমার মতো
দূরে থেকেই ভালোবাসব,
ভালোবেসেই রাখাল হব।

ভাবছ এসব কেমন কথা,
পড়াশোনায় রাখাল আছে,
প্রেমের রাখাল কেমনতরো?
রাখাল সাথে রাখালসখার
বড্ডো বেশি মিল খুজে পাই,
রাখালসখা কেষ্টঠাকুর,
যাবেন যখন মথুরাতে,
বৃন্দাবনে রাধারাণীর
সে কী কান্না সবাই জানে।
রাখালসখা সিক্ত পথে,
বাঁশি হাতে একলা পথে,
বাঁশিটিতেও সুর তোলে নি,
রাধা বড় কোমল হ্দয়,
বাঁশিটাও তাই সুর তোলে নি।

তোমার থেকে অনেক দূরে,
অনেক  অনেক অনেক দূরে
একা একাই ভালোবাসব,
ভালোবেসে রাখাল হবো।।

ধরো আছি পাহাড় চূড়ে,
এবং সেটা বর্ষাকাল।
পুস্কর মেঘ আসতে পারে,
আমি কিন্তু ডাকব না।
আমার ছায়া তোমার পথে
একটুকুও ফেলব না।।

মেঘের কথা এলো যখন
খুলেই বলি দু চার কথা।
কালিদাস খুব বড় কবি
কিন্তু তাহার অনেক ত্রুটি।
বিয়ের আসর বাসর রাত,
এসব যদি বাদ ও দি,
মেঘের হাতে খবর দেওয়া, 
এটা মহৎ ভুল হয়েছে।।
ধুলো ধোঁয়ায় জমাট মেঘ 
মনের কথা বোঝেই না তো!!!
তবুও যক্ষ তাকে দিয়েই
প্রিয়ার কাছে খবর পাঠায়।।
যক্ষ মুখে শুনে শুনে
মেঘ বাবাজী বুঝতে পারে 
তাকে দেখেই নারীর বুকে 
দ্রিদিম দ্রিদিম বাজনা বাজে।
মিলন ব্যাকুল নারীর হৃদয়,
মিলন রসে ভিজতে থাকে,
বুকে জমাট বিরহভার,
মিলন আশায়,  কাটে না কাল!
সেই থেকে মেঘ সুযোগ পেলেই,
আকাশ জুড়ে সেজেগুজে,
ঝিলিক আলোয় দেখিয়ে দেয়, 
তাহার তরে তোমার বেদন।।

তোমায় ব্যথা দেব না গো!
মেঘ এলে তাই বলে দেব,
দেবার কোন খবর নেই, 
আমি তো আর যক্ষ নই!
আমি নিছক রাখাল বালক,
ভালোবাসার মানুষীকে
ভালোবেসে রাখাল বালক।।


Post a Comment

0 Comments