যেতে যেতে পথে
রোশেনারা খান
পর্ব ১০৭
আজ বিনোদের বইয়ের ভূমিকাটা শেষ করে মেল করলাম। অসুস্থ শরীর, সময় কম, তার মধ্যেই লিখে পাঠালাম। কেমন হয়েছে জানি না। এরই মধ্যে রানীর পরীক্ষার জন্য দু’খানা রুমালে কাজ করে দিয়েছি। মেয়েটা পারছে না। বাবলিদের আসতে আর কয়েকটা দিন বাকি। গাড়িটা ঠিক করতে হবে।ছবি আর গুড়িয়া মিলে ঘরদোর পরিস্কার করছে। ধারাবাহিকের মাত্র একটি পর্ব রেডি আছে। ওটা তো লিখতেই হবে।
বাবলিরা আমাদের সময় রাত ১১টাতে বাড়ি থেকে হিথরো পৌঁছেছে। ওরা আসছে, ভাল লাগছে, কিন্তু আমার চাঁদের হাট পূর্ণ হবে কি? সে হাট তো কবে ভেঙ্গে গেছে। সেই ভাঙ্গা হাটে যতই পসরা সাজিয়ে বসে থাকি না কেন, সে হাট আর জমবে না। বালিশের ওপর মাথা রেখে শুয়ে এসব ভাবছিলাম। বালিশটা ভিজে গেছে, ঘামে না চোখের জলে, জানি না। এমন তো কত রাত আসে যায়।
সকালে রাজাবাজার গেলাম মাছের জন্য, এখানে না এলে বাবলির পছন্দের মাছ পাব না। বাবলিদের ফ্লাইট ১ ঘণ্টা দেরিতে দমদমে ল্যান্ড করেছে। আমি ফ্লাক্সে চা আর কিছু বিস্কুট পাঠিয়ে ছিলাম। এয়ারপোর্ট থেকে সকাল ৭ টায় রওনা হয়ে ওরা ১০টার পর এসে পৌঁছাল। জারা আমার থেকে লম্বা হয়ে গেছে। ওর জন্য চিকেন, আর ওদের জন্য পার্সেবাটার ঝাল, ডাল, কাঁকরোল ভাজা(জারা পছন্দ করে),আলু পটলের ডালনা, শুশুনিশাক ভাজা আর গাছের আম।
সারাদিন বুকের মধ্যে কান্না চেপে রেখে একাজ সেকাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। মাইক্রোওয়েভ ওভেন সারাতে মেকানিক এসেছিল, কিন্তু একটা ওভেনও ঠিক করা গেল না। নতুন কিনতে হবে। প্রতি মাসেই বাজেটের বাইরে মোটা টাকা খরচ হচ্ছে।
আজ সকালে একটা লেখা শেষ করেছি। ওরা সবাই তখন গভীর ঘুমে। গতকাল বাজার থেকে মোচা, কচু, কুচোচিংড়িও এনেছি। আজ কি রান্না হবে ওরা ঘুম থেকে উঠে ঠিক করবে। দীপ তো বাজারে যাবেই। একটু বেলাতে গিয়ে মাছ আর কিছু সব্জি নিয়ে এল। রাতে বাইরে থেকে খাবার(বিরিয়ানি)এল। সকালে দীপ বাড়ি গেল। রানী, মুস্কান এসেছে। অনেকেই দেখা করতে আসছে। সুতপা, সুদীপ ,সৌনক, স্বপ্না, চন্দ্রিমা। ওর মামা,মাসি মামিরা।
বাল্যবিবাহ কীভাবে প্রতিরোধ সম্ভব, সে বিষয়ে বলছি।
বাবলিদের কলকাতার নিউটাউনের ফ্ল্যাটটা শাহ্বাজকে বিক্রি করে দিচ্ছে। কেনা দামেই। ওরা নতুন ফ্ল্যাটের চাবিও হাতে নেয়নি। সরাসরি শাহ্বাজের হাতে চাবি তুলে দিয়েছে। ওরা চেয়েছিল নিজেদেরর মধ্যে কাউকে দিতে। তাই একজন ৭০ লাখ দিতে চেয়েছিলেন। রানীর কথা ভেবে তাঁদের দিচ্ছে না। আমাকে ‘পাওয়ার আফ অ্যাটর্নি’ নিয়োগ করে যাওয়ার জন্য কোর্ট ছোটাছুটি করেই ছুটি ফুরিয়ে যাবে মনে হচ্ছে।এর মধ্যে একদিন শাহবাজ বাবলি দীপের সঙ্গে কলকাতা গিয়ে ফ্ল্যাট দেখে পছন্দ করে এসেছে। পছন্দ না হওয়ার কারন ছিল না।
অসিত দাসকে আমার টিকিট ক্যান্সেল করতে বলা হয়েছে। টিকিটের দাম ফেরৎ দেবে কিনা জানিনা। হয়ত সামনের বছর টিকিট নিতে বলবে। ওসব পরে ভাবব, ফ্ল্যাটের ব্যপারটা কি হয় দেখি। চন্দ্রিমার মা, শিবানীদি অসুস্থ হয়ে স্পন্দনে ভর্তি আছেন, বাবলি আমি সময় করে দেখে এসেছি। আজ রাতে রানীর শ্বশুর বাড়িতে আমাদের সবার নিমন্ত্রণ ছিল।
বন্ধুত্ব (দোস্তানা) দিবসে।
গতকাল বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা স্বাতী ব্যানার্জী ফোন করেছিলেন। আগামি শনিবার ওঁর স্কুলে যাওয়ার অনুরোধ করল, রাজি হয়ে গেলাম, ওইদিন ঘরেবাইরে কোথাও বিশেষ কোনও কাজ নেই। সরকার থেকে নির্দেশ এসেছে, প্রতিটি স্কুলে ‘কন্যাশ্রী’ ক্লাব গড়ে তুলতে হবে। এই বিষয়ে ছাড়াও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কিভাবে করা সম্ভব, তা ছাত্রীদের বোঝাতে হবে।চাপে পড়ে সব কাজই হচ্ছে কিন্তু আমার লেখাটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি না। আজ বাবলিরা কাঁথি গেল। এই ফাঁকে লেখাটা এগিয়ে নিতে হবে।
আজ ‘যেতে যেতে পথে’র ৩২ পর্ব শেষ করলাম। সবসময় লিখতেও ভাল লাগছে না। মন ভীষণ খারাপ, বাবলিরা আজ চলে গেল। আজ কলকাতায় থাকবে, আগামিকাল সকালে ফ্লাইট। কয়েকটা দিনের জন্য আসা। কাজে কাজে বাইরেই কেটে গেল। মায়ের পাশে দুদণ্ড বসে কথা বলারও সময় পেল না। হৃৎপিণ্ডটা যেন কেউ ছিড়ে নিয়ে চলে গেল। এখন কাজের নেশায় ডুবে থাকা ছাড়া আমার বাঁচার কোনও পথ নদু। কাজেরও অভাব নেই, একটার পর একটা স্কুল থেকে ডাক আসছে। আগামিকাল বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ, ১৩ আগস্ট সরস্বতী বিদ্যামন্দিরে। এছাড়াও ১৫ তারিখের মধ্যে আরও ২টি প্রোগ্রাম রয়েছে। এই প্রোগ্রামগুলোতে যাওয়া কমিয়ে দিতে হবে।
আজ বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠের ছাত্রীরা আমার কথা মন দিয়ে শুনেছে। প্রশ্ন করেছে, অটোগ্রাফ নিয়েছে। কন্যাশ্রী নিয়ে একটি ছাত্রী গান শোনাল, দুটি ছাত্রী কবিতা আবৃত্তি করল। আমিও ওদের একটি ছোট্ট কবিতা শোনালাম। আগামিকাল আছে মৃত্যুঞ্জয়ের ‘বন্ধুত্ব দিবস’ পালন। অনেক করে বলেছে, না গেলে দুঃখ পাবে। কাল বাবলিরা ফিরে আসবে।
সকালে বন্ধুত্ব দিবসে গিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য রেখেছি। ফিরে এসে রান্না করলাম।বাবলিরা দুপুরে এসেছে, দীপ ওদের পৌঁছে দিয়ে লাঞ্চ করে ওই গাড়িতেই কাঁথি ফিরে গেছে। আগামীকাল কলকাতা যাবে ওদের কৈখালির ফ্ল্যাটটা বোন ভগ্নীপতির নামে রেজিস্ট্রি করে দিতে। পরের দিন কলকাতা থেকে দীপ মেদিনীপুর চলে এসেছে। এখানে অনেক কাজ। আজ ১১টার দিকে শাহবাজের সঙ্গে কোর্টে যেতে হয়েছিল। আজ বেলা ফোন করেছিল, ও মালদা হাসপাতালে জয়েন করেছে। সুখবর, ওকে নিয়ে আর ভাবতে হবে না।
(১৩ আগস্ট) ‘সরস্বতী বিদ্যামন্দির’ গেছিলাম, বাল্যবিবাহ কীভাবে প্রতিরোধ করতে যায়, বাল্যবিবাহের কুফল, ইত্যাদি বিষয়ে প্রায় ১ ঘণ্টা বক্তব্য রেখে ছিলাম। ছাত্রীদের সঙ্গে এবিষয়ে কথা বলেছি। প্রধান শিক্ষিকা মালা মজুমদার কয়েকটি ঘটনার কথা শোনালেন। জ্বলদর্চির সম্পাদক ঋত্বিক ত্রিপাঠী বর্তমানে এই স্কুলে শিক্ষকতা করেন।
আজ আমাদের ৭৬তম স্বাধীনতা দিবস। সকাল থেকেই চারিদিক থেকে দেশাত্ববোধক গান শোনা যাচ্ছে।আমারও একটি স্কুলে আমন্ত্রণ ছিল, শরীর, মন কোনটায় ভাল নেই, তাই জানিয়ে দিয়েছি যেতে পারবনা। আজও স্বাধীনতা কী? বুঝে উঠতে পারিনি। আমরা মেয়েরা তো কারো না কারো আজ্ঞাবাহী বা ইচ্ছাধীন। মানুষ যদি স্বাধীনতা না পেয়ে থাকে, তবে দেশ স্বাধীন হয়ে কী লাভ হল? যাইহোক, নাজিম (ভাগ্না)এসেছিল দলিলের কপি দিতে। ডাঃ আসাদুল এসেছিল ওদের গ্রামের মেলার মিষ্টি নিয়ে। এভাবেই কেটে গেল আমার স্বাধীনতা দিবস।
বিকেলে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ফোনে নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, আমাদের কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবস ২৫ আগস্ট। আপনাকে গেস্ট হিসেবে পেতে চাই। আপনি সম্মতি দিলে কার্ডে নাম ছাপাতে দেব। তার আগে ২১ আগস্ট অন্য একটি প্রোগ্রাম আছে। সেটা নিয়েই ভাবছিলাম। তবে এবিষয়ে ডঃ মাইতি আগেই আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তাই সম্মতি দেওয়ার জন্য ভাব্বার প্রয়োজন হয় নি।
রানী আমার কাছেই আছে। আজ বিকেলে ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছলাম।এমনিতে ঠিক আছে, থাইরয়েড টেস্ট করে রিপোর্টটা পাঠাতে বললেন। এদিকে ওর শাশুড়িমা ওষুধ খেতে নিষেধ করছে, বাড়ি চলে যেতে বলছে। আগস্ট মাস শেষ হয়ে আসছে। সেপ্টেম্বর কেমন কাটবে, কে জানে। আমার যা কপাল, দেখেশুনে সামনে পা বাড়াতে হবে। কথা বলতে হবে খুব সাবধানে।
আগামিকাল মেদিনীপুর ল’কলেজে ইয়াসিন খানের ‘নাব্যস্রোত’ পত্রিকার অনুষ্ঠান আছে। এই অনুষ্ঠানের বিষয়ে রোজই প্রায় ইয়াসিনের সঙ্গে কথা হচ্ছে। তবুও কেন জানিনা আজ বলল, আমার স্যার আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। সুধীররঞ্জনবাবুও অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা বললেন। সকাল থেকে যে নিম্ন চাপের বৃষ্টি সুরু হয়েছে, তা থামার নাম নেই। কাল কী হবে জানি না।
প্রাক্তনিদের রক্তদান শিবিরের উদ্বোধনে।
যাক, সকাল থেকে ওয়েদার ভাল। টোটো বলে রেখেছিলাম, তাই ঠিক সময়েই ল’কলেজে নাব্যস্রোত ও কাঁসাই বাগুই পত্রিকার সাহিত্যানুস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি।অনেক কবি সাহিত্যিক এসেছেন, আনেকদিন পর অন্নপূর্ণাদি মুকুলরঞ্জন রায়ের মত প্রথিতযশা মানুষদের সঙ্গে দেখা হল, কথা হল। অন্নপূর্ণাদিকে সম্বর্ধনা দেওয়া হল।পরিচিত অনেকেই কবিতা পাঠ করলেন। লাঞ্চের পর বাড়ি ফিরলাম। সন্ধ্যাবেলা চন্দ্রিমা আর শিবানীদি এসেছিলেন পুজোর সাড়ি দিতে।শিবানীদির শরীর খুব ভেঙ্গে গেছে।
মেডিক্যেল কলেজ থেকে ডঃ মাইতি আর ডঃ মহুয়া গেস্টকার্ড দিতে এসেছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যে অনেক কথা হল। আমার বক্ত্যব্যের বিষয় রেখেছেন, ‘যে হাত দোলনা দোলায় সে হাত দেশ শাসনও করে’’ শিরোনামটি ইংলিশের বাংলা অনুবাদ। আমি বললাম, ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’ দুজনেই বলে উঠলেন, ‘এটাই পারফেক্ট, আমাদের মাথায় আসেনি। এইজন্যই তো আপনি লেখিকা’।
আজ আনন্দবাজারের কড়চাতে ছোট্ট করে কাঁসাই কবিতা উৎসবের খবর প্রকাশিত হয়েছে। শুধু সৌমেন খান(পৌরপিতা), সুধীরবাবু ও আমার নাম উল্লেখ করেছে। এখন আগামিকালের অনুষ্ঠান নিয়ে ভাবছি। যদিও আমার বক্তব্যের বিষয় জানা।
আজ একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা। গাড়ি নিতে আসেছিল। একটা কথা বলা হয়নি, ডঃ মাইতি স্বপ্না ঘড়াইয়ের স্বামী। স্বপ্নাও এখানে আমন্ত্রিত, আমরা দুজন ছাড়াও মঞ্চে ছিলেন বিধায়ক, বেশ কয়েকজন ডাক্তার, মেডিকেল কলেজের সুপার, অধ্যক্ষ, ও মাননীয় জেলাশাসক আয়েশা রানী। বরণ করার পর জেলাশাসক ও আমরা কয়েকজন প্রদীপ প্রজ্বলন করলাম। উনি ছোট্ট বক্তব্য রেখে চলে গেলেন।এর পর আমি ও স্বপ্না বক্তব্য রাখলাম। অন্যান্যরাও বললেন। তারপর প্রাইজ দেওয়া শুরু হল। এরপর ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। লাঞ্চেরও ব্যবস্থা ছিল। লাঞ্চের পর আমাদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়।
গতকাল অধ্যক্ষর সঙ্গে দেখা করে আসা হয়নি তাই আজ ফোন করলাম। ওনার সঙ্গে প্রথম আলাপ পৌরসভার ইফতার পার্টিতে। ফোন পেয়ে উনি আমার বক্তব্যের খুবই প্রশংসা করে বললেন, ‘ভবিষ্যতে অন্য প্রোগ্রামে ডাকলে আসতে হবে কিন্তু’। সন্ধ্যাবেলা লক্ষ্য করলাম, তন্ময়বাবু What’s App গ্রুপে একটা ফর্ম পাঠিয়েছেন। তখুনি ফোন করতে উনি বললেন, ৬ তারিখে পাঠিয়েছিলাম অনেকেই লক্ষ্য করেননি। ৩১ আগস্টের মধ্যে ওটা পাঠাতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে রানীকে পাঠিয়ে বললাম, কাউকে দিয়ে একটা প্রিন্ট আউট করে পাঠাতে।
আজ ফর্মটি ফিলাপ করতে গিয়ে না জেনে ভুল করলাম। সেই ভুল কারেকশন করতে দুপুর হয়ে গেল। ওটা স্পিডপোস্টে পাঠাতে পোস্ট অফিস গেলাম। বাড়ি ফিরতেই ছবি বলল, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তোমার একটা চিঠি এসেছে। খামটা হাতে নিয়ে খুলে দেখলাম আমাকে ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। আমি বিশ্বয়ে হতবাক! আমাকে এত ওপরের তলার মানুষ চেনেন, জানেন? স্বপ্নাকে প্রথমে বললাম, ও শুনে বলল, ‘দিদি এ যে কত বড় প্রাপ্তি, কতখানি সম্মানের আপনি তা ধারণা করতে পারছেন না। আমি সেদিন যাব আপনার সাথে’। খুব কাছের ২/১ জনকে ছাড়া কাউকে জানালাম না। সবাই যে খুশি হবেন না, তা জানি। এই পুরস্কার বিদ্যাসাগরের জন্মদিন ২৬ সেপ্টেম্বর দেওয়া হয়। এবার ওইদিন অন্য প্রোগ্রাম থাকায় বাইশে সেপ্টেম্বর দেওয়া হবে। প্রসূন পড়িয়া বলল, দিদি এটা আপনার পাওনা ছিল। মৃত্যুঞ্জয় ,সুদীপ, সৌনক, চন্দ্রিমা ভীষণই খুশি। খুশি আমার মেয়ে জামাই নাতনিও। আমার সঙ্গে যে আরও ৩ জন এই পুরস্কার পাবেন, তাঁরা হলেন কথাকার অমর মিত্র, অভিনেতা ও নাট্যকার গৌতম চট্টোপাধ্যায় এবং সাহিত্যিক ও ভাষাবিদ বেদী। আমি ভাবছি যারা সব চেয়ে বেশি খুশি হতেন, তাঁরা তো আজ কাছে নেই। রাতে অনুভবের বাবা ফোন করেছিলেন, আগামিকাল আসতে বললাম।অনুভব একদিকে বিশেষ প্রতিভার(আবৃত্তি) অধিকারী অপর দিকে এক বিরল রোগের শিকার। এই রোগের চিকিৎসা খুবই ব্যায়বহুল।অনেকেই সাহায্যের হাত বারিয়ে দিলেও তা অপ্রতুল।তাই বাধ্য হচ্ছেন হাত পাততে।
আজও গিয়েছিলাম বাস স্ট্যান্ডে পৌরসভার বৃদ্ধাবাসে। কিছু শুকনো খাবার আর তেল,সাবান ইত্যাদি নিয়ে। এখানে প্রায় সবাই ভদ্র বাড়ির বাবা মা। এঁরা কেউ সন্তান দ্বারা বিতাড়িত, নয় প্রতারিত। আশ্রমের খরচ চলে পৌরসভার টাকায়। এখানে আরও একটি থাকার ব্যবস্থা আছে, যার নাম আশ্রয়। কেউ যদি শহরে কাজে এসে বা পরীক্ষা দিতে এসে শেষ বাস না ধরতে পারে তারা এখনে রাত্রিবাসের সুযোগ পায়। এই ব্যবস্থাটা বেশ ভাল লাগল।
ডঃ সুচন্দ দাসকে ডঃ গর্গের appointment নিতে বললাম।আজ দুপুরে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার জয়ন্তকুমার নন্দী ফোনে আলাপ করলেন। আবার তাপমাত্রা বাড়ছে, বাধ্য হয়ে আমার শোবার ঘরের এসিটা ঠাণ্ডা হচ্ছিল না, মেকানিক ডেকে ঠিক করতে হল। বাড়ির যেহেতু সবটাই আমাকে দেখতে হয়,তাই খুচরো কাজগুলো জমিয়ে রেখে একদিন বাইরে বেরিয়ে করার চেষ্টা করি। আজও বেরিয়ে কিছু কাজ করলাম। এদিকে অসিত দাস কবে টিকিটের টাকা ফেরত দেবেন জানিনা। আজ ফোন করতে, বললেন ‘আপনার পাসপোর্ট কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দেব, টিকিটের টাকা ফেরত দিতে সময় লাগবে। আপনি টিকিট নিলে পেয়ে যাবেজা। কিন্তু আমি তো এব্ছর যাচ্ছি না।
মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবসে।
রানীর বি এড এর ফ্যাইনাল পরীক্ষা। শ্বশুরবাড়ি থেকে এখানে চলে এসেছে। ও একা নয় ওর দুজন বন্ধুও আসেছে, আমাদের বাড়ি থেকে পরীক্ষা দেবে। ওরা কলেজের হস্টেলে থাকত। টিফিনের সময় রানীকে হস্টেলে নিয়ে গিয়ে খাওয়া তো। ওদের মায়েরাও রানীর জন্য খাবার পাঠাতেন। বিশেষ করে পিঠে,আচার ইত্যাদি।
অলিগঞ্জ ঋষি রাজনারায়ন বসু বালিকা বিদ্যালয় থেকে প্রাক্তনি সূর্যশিখা ফোন করে বললেন, ‘প্রাক্তনিরা স্কুলে ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প করবেন, আমাকে ওঁরা গেস্ট হিসেবে চাইছেন।আমি সম্মতি দিলেই কার্ড ছাপাবে। আসলে প্রায় সমস্ত প্রাক্তনিই আমার খুবিই পরিচিত। ঘনিষ্ঠও বলা যায়। ওদের আবদার রাখতেই হবে। এদিকে, আজ আবার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় চিঠি পাঠিয়েছে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে্র সময় বদলানো হয়েছে। ১১ টা ৩০ এর পরিবর্তে বিকেল ৩ টেতে হবে।।
২১ সেপ্টেম্বর মেদিনীপুর কুইজ কেন্দ্রের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ আছে। চেষ্টা করেও আমার পুরস্কার প্রাপ্তির খবরটা লুকনো থাকল না। সৌনক ওদের গ্রুপে দিয়ে দিয়েছে। সেখান থেকে আমার আর এক শুভাকাঙ্ক্ষী গৌতমবাবু(শিক্ষারত্ন পুরস্কার প্রাপ্ত) সোশাল মিডিয়াতে পোস্ট করে দিয়েছেন। এর পর ঝাঁকে ঝাঁকে কমেন্টস আসতে শুরু করেছে।
(ক্রমশ)
0 Comments