জ্বলদর্চি

ড. মধুপ দে (গবেষক, লেখক, শিক্ষা আধিকারিক, মেদিনীপুর)/ ভাস্করব্রত পতি

মেদিনীপুরের মানুষ রতন, পর্ব -- ৯৭
ড. মধুপ দে (গবেষক, লেখক, শিক্ষা আধিকারিক, মেদিনীপুর) 

ভাস্করব্রত পতি

গোপীবল্লভপুরের নয়াবসান গ্রাম। সুবর্ণরেখার পাড়ে শষ্য শ্যামলা গ্রামটিতে বসবাস। বন্যা এলেই গ্রামের বাড়িঘর ডুবে যেত জলে। নদীই ছিল প্রাণ প্রবাহিনী। তখন সুবর্ণরেখার ওপর কোনও ব্রিজ ছিল না। এক কিলোমিটার চওড়া বালির চর পায়ে হেঁটে নদীতে নৌকা পেরিয়ে পৌঁছাতে হত কুঠিঘাটে। সেখান থেকে বাস ধরে যেতে হত ঝাড়গ্রাম সহ অন্যত্র। এভাবেই সূবর্ণরেখাকে সাক্ষী রেখে জীবনের চড়াই উৎরাই পার হয়েছিলেন ড. মধুপ দে। আজ তিনি মেদিনীপুরের এক অন্যতম মানুষ, যে কিনা তাঁর লেখায় গবেষণায় এবং চর্চায় চর্চিত করেছেন মেদিনীপুরের ইতিহাস, ভূগোল, সংস্কৃতি এবং জনজীবনের কাহিনী। হয়ে উঠেছেন মেদিনীপুরের মানুষ রতন। 

জঙ্গলমহলের লোকযাত্রার সংগ্রহ ও সমীক্ষা ড. মধুপ দের আগে তেমন হয়নি। ও'ম্যালি সাহেবের মেদিনীপুর জেলা গেজেটিয়ারে 'চম্পাবতী' যাত্রাপালার উল্লেখ থাকা সত্তেও জঙ্গলমহলের লোকযাত্রার উপরে সংগ্রাহক ও সমীক্ষকদের দৃষ্টি পড়েনি কখনও। লোকনাটক নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু সংগ্রহ ও আলোচনা হলেও লোকযাত্রা নিয়ে বিশেষ কোনো কাজ হয়নি। ড. মধুপ দের মতে, 'লোকযাত্রা লোকনাটক নয়। গঠন, আঙ্গিক এবং অভিনয় উপস্থাপনার সমস্ত দিক থেকেই লোকযাত্রা লোকনাটক থেকে পৃথক। মৌখিক চিত্রনাট্যে গঠিত, নিরক্ষর লোকের স্মৃতিপটে লালিত পালিত ও সংরক্ষিত লোকযাত্রা প্রায় ছ সাত ঘণ্টার অভিনয় শিল্প। লোকাভিনয়ের এই আঙ্গিক কেবলমাত্র সুবর্ণরেখা নদীর অববাহিকা অঞ্চলেই দেখা যায়'।

একসময় শৈশবের সান্ধ্য বিনোদনের প্রধান মাধ্যম ছিল এই লোকযাত্রা। অনেকের বাল্য কৈশোরের অনেক রাত কেটেছে 'সীতাচুরি' লোকযাত্রার আসরে। ড. মধুপ দের কথায়, 'লোকযাত্রার অভিনেতারা দিনের বেলা গুদামে মাল নামানো ওঠানোর কাজ করে, ক্ষেতমজুরের কাজ করে, রাজমিস্ত্রি বা তার জোগানদারের কাজ করে, মন্দিরে বলির পাঁঠা কাটে কিংবা কাগজওয়ালা হয়ে কাগজ কিনে ঠোঙা বানায়। কিন্তু, সন্ধ্যার পরে তাঁরাই এক একজন স্মৃতিধর অভিনয় শিল্পী হয়ে যায়। অভিনয়ের চিত্রনাট্য ও সংলাপ ওস্তাদের মুখে শুনে প্রত্যেক অভিনেতা নিজ নিজ স্মৃতিতে ধারণ করে রাখেন এবং প্রতিদিন মহড়ার সময়ে তা বলার অভ্যাস করেন'।

মৌখিক মাধ্যমে সৃষ্ট এবং মৌখিক মাধ্যমে সংরক্ষিত লোকযাত্রাকে তার লোকধর্ম বজায় রেখে সংগ্রহ করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। তবুও বহু দিনের নিরলস প্রচেষ্টায় তিনি তা সংগ্রহ করেছেন অসীম ধৈর্য এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে। গোপীবল্লভপুরে অজিত দের সহযোগিতায় 'সীতাচুরি' এবং নয়াগ্রামে কাঁড়ঘসা গ্রামের হাউসি যুবক রবি মাঝির সহযোগিতায় 'চম্পাবতী' নামে দুটি লোকযাত্রার সম্পূর্ণ পালা অভিনয়কালীন অবস্থায় অবিকৃতভাবে সংগ্রহ করেছেন। যা আজ গবেষকদের কাছে অন্যতম আকর হয়ে উঠেছে। 

১৯৫১ এর ১১ ই নভেম্বর জন্ম। বাবা গিরীশচন্দ্র দে ছিলেন সেলাই পটু। সেলাইয়ের কাজ করেই উপার্জনের টাকায় চালাতেন সংসার। মা বিষ্ণুপ্রিয়া আগলে রাখতেন ছেলেকে। গ্রামের স্কুল নয়াবসান জনকল্যাণ বিদ্যাপীঠে পড়াশোনা করে চলে যান ঝাড়গ্রামে। সেখানে ১৯৬৯-১৯৭২ পর্যন্ত ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে গণিত বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৭২ নাগাদ ঝাড়গ্রাম জুড়ে চলছিল নকশাল আন্দোলন। মিহির রাণা, সন্তোষ রাণার নেতৃত্বে সেই আন্দোলন ছিল বেশ প্রভাব সৃষ্টিকারী। ফলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় মধুপ দের। সেসময় নানা ধরনের সামাজিক কাজকর্মের প্রতি উৎসাহিত হয়ে ওঠেন। জড়িয়ে পড়েন লোধা উন্নয়ন নিয়ে কাজকর্মে। ঠিক এই সময়ে তাঁর জীবনে উদয় হয় কাপগাড়ি সেবায়তন মহাবিদ্যালয়ের প্রিন্সিপ্যাল পাঁচকড়ি দে। জীবনের স্রোত ফের ধারাবাহিক গতিতে বয়ে চলবার গতি পায়, দিশা পায়। 
গবেষক হরিপদ ভৌমিকের সাথে ড. মধুপ দে

বেকার জীবন তখন। হাত খরচের টাকা জোগাড়ের জন্য টিউশনি পড়াতেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরির জন্য দরখাস্ত করেন। ইন্টারভিউ দিলেও ভাগ্যে জোটেনি চাকরি। পাঁচকড়ি দের আগ্রহে শুরু করেন বি এড পড়তে। ১৯৭৪-১৯৭৫ এ বি এড ডিগ্রি পড়েন এবং তখন একমাত্র ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া ছাত্র হয়েছিলেন। এটি শেষের পরেই স্কুল বোর্ডের একটা বিজ্ঞাপন বেরোয় ক্লার্ক নেওয়ার। যথারীতি আবেদন করে দেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তখন ডি আই ছিলেন রাখাল দাশগুপ্ত। ইন্টারভিউ তে তাঁকে নেওয়া হয়। ১৯৭৭৫ এর ২ রা জানুয়ারি যোগদান করেন ক্লার্কের কাজে। প্রথম চাকরির স্বাদ পেলেন সজিনা শাক বিক্রি করে খাতা কেনা ছেলেটি। প্রথম মাসের বেতন ছিল ২৯৩ টাকা ৭০ পয়সা। 

স্কুল বোর্ডে থাকতে থাকতে আলাপ হয় আমিরুল ইসলাম মুশার সাথে। আলাপ হল সত্যেন ষড়ঙ্গীর সাথেও। সেসময়ে প্রতিদিন আড্ডা বসতো 'ছাপালেখা' প্রেসে। যার কর্ণধার ছিলেন এই মুশা। তিনিই উৎসাহিত করেন একটা পত্রিকা প্রকাশের। পত্রিকা প্রকাশের দায়ভার তিনিই নেবেন জানান। যথারীতি চাঁদের আলোয় সুবর্ণরেখার বালিভূমিতে বসলেন সদানন্দ দাস, হিমাংশু কর, আশিষ দাস, সুভাষচন্দ্র সাউ, মনসারাম দত্ত, পশুপতি মিশ্ররা। জন্ম নিল গোপীবল্লভপুর থেকে প্রকাশিত প্রথম সাহিত্য পত্রিকা - 'সুবর্ণরেখা'। সম্পাদক নির্বাচিত হলেন তিনিই, মধুপ দে। পাইকা হরফে ১৯৭৫ থেকে শুরু হল সূবর্ণরেখার পথচলা। গঠিত হল গোপীবল্লভপুর সাংস্কৃতিক সংস্থা। সুবর্ণরেখার মূল লক্ষ্য ছিল স্থানীয় ইতিহাসকে গুরুত্ব দেওয়া। তাই ড. নির্মলেন্দু ভৌমিক ড. সুধীর করণ এই পত্রিকার প্রশংসা করেছেন বারে বারে। তবে ১৯৮৭ সালে সুবর্ণরেখার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। 

ক্লার্কের চাকরি করতে করতেই ১৯৭৯-১৯৮০ সালে ছুটলেন কলকাতা। একবছর চাকরি থেকে ছুটি নিলেন। আসলে তাঁর নেশায় ছিল যাত্রার ডায়লগ বলার গভীর ইচ্ছা। একসময় সদানন্দ দাসদের সাথে প্রচুর যাত্রা করেছেন। 'বিয়াল্লিশের বিপ্লব', 'অভিমন্যু বধ', 'আমি এক সৈনিক' ইত্যাদি। মেদিনীপুর শহরে এসেও বহু যাত্রা করতেন। কাজ করতেন এখানকার 'নাট্যশ্রী' দলে। যাইহোক যাত্রা করার শখ মেটাতে কলকাতা গিয়ে নিউ তরুণ অপেরাতে অভিনয় করলেন 'মা মাটি মানুষ', 'উল্কা' তে। ফের ফিরে এসে চাকরিতে যোগ দিলেন। 

কলকাতায় আরও একজনের সাথে আলাপ হল পাঁচকড়ি দের পর। জীবনের অন্যতম মাইলস্টোন। তিনি কাঁথির বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ জানা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর জন্য ভর্তি হলেন তাঁর সৌজন্যে। ৫৮ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাস করলেন অবশেষে। এবার ভর্তি হলেন পি এইচ ডি তে। ১৯৮১ সালে শুরু হল নতুন যাত্রাপথ। সেইসাথে এবছর ক্লার্কের চাকরি ছেড়ে যোগ দিলেন ঝাড়গ্রাম বাণীতীর্থ হাইস্কুলে বাংলা বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে। ১৯৮২ তে ড. নির্মলেন্দু ভৌমিক অনুমোদন করলেন তাঁর পি এইচ ডির সিনপসিস। বিষয় -- 'জঙ্গলমহলের লোককথা'।

আসলে ১৯৭৮ সালে জঙ্গলমহলে লোকসাহিত্য সংগ্রহ করার সময়ে লোকযাত্রার নানা দিক নূতন করে নজরে পড়েছিল মধুপ দের। ক্ষেত্রসমীক্ষায় পেয়েছেন, 'সীতাচুরি' ছাড়াও 'চম্পাবতী পালা' (যুগীযাত্রা) এবং 'ললিতাপালা' নামে আরো দুটি যাত্রাপালা যথা ক্রমে নয়াগ্রাম, কেশিয়াড়ি, দাঁতন অঞ্চলে প্রচলিত রয়েছে। সুবর্ণরেখা নদীর উভয় দিকের অববাহিকা অঞ্চলের এখানে ওখানে বিভিন্ন জনপদে এই পালাগুলির অনেক দলও ছড়িয়ে রয়েছে। 'সীতাচুরি' পালার স্বাভাবিক সম্প্রচারকেন্দ্র ছিল গোপীবল্লভপুর থানা এলাকা। 'চম্পাবতী' পালার স্বাভাবিক সম্প্রচারকেন্দ্র ছিল নয়াগ্রাম থানা এলাকা। আর 'ললিতাপালা'র সম্প্রচারকেন্দ্র ছিল কেশিয়াড়ি বেলদা দাঁতন অঞ্চল। সেইসব সংগ্রহ নিয়েই শুরু করেন পি এইচ ডি পাঠক্রম। 
সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে ড. মধুপ দে কে

এক বছরের মাথায় হাইস্কুলের চাকরি ছেড়ে আবার নতুন চাকরিতে যোগ দিলেন। পুরুলিয়ার নেতুড়িয়া চক্রে পান অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের চাকরি। ১৯৮২-১৯৮৫ পর্যন্ত এখানে থেকে বদলি হয়ে চলে আসেন মেদিনীপুর শহরে। আসলে মূল লক্ষ্য ছিল Phd সম্পন্ন করা। পুরুলিয়ার বাগমুণ্ডিতে তাঁর কাজের জন্য পেয়ে যান লালডিহির প্রহ্লাদ কুমার এবং রঘুনাথপুরের যুধিষ্ঠির মাঝিদের। তাঁদের সহযোগিতায় সংগ্রহ করেন অসংখ্য উপাদান। ১৯৮৫ তে গবেষণা পত্র জমা দেন। ১৯৯২ তে পেলেন ডক্টরেট ডিগ্রি। ২০০৭ সালে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক পদে আসীন হন। মোট চার বছর এই পদে ছিলেন। ২০১০-২০১১ পর্যন্ত পুরুলিয়া জেলায় ডি আই ( অ্যাকাডেমিক) পদে থেকে অবসর নেন। 

মেদিনীপুরে এসে শুরু হয়ে যায় আরও বেশি করে লোকগবেষণা করার কাজ। ২০০১ এ তাঁর গবেষণা লব্ধ 'জঙ্গলমহলের লোককথা' বই আকারে মেদিনীপুর বইমেলাতে প্রকাশিত হল। উদ্বোধন করেন দীপক সরকার। মেদিনীপুরের অন্যতম বৃহৎ রাজত্ব মেদিনীপুর মহালের রাজধানী কর্ণগড়ের প্রাচীন মহিমা অনুসন্ধান করেছেন ড. মধুপ দে। তাঁর জিজ্ঞাসা, 'কর্ণদুর্গ এবং কর্ণগড় কি এক? কর্ণগড় স্থাপনের আগে কারা রাজত্ব করত সেখানে? ভূমিজ রাজার পরে খেড়িয়া রাজারা কি রাজত্ব করতেন এখানে? কেমন করে প্রতিষ্ঠা হল কর্ণগড় রাজবংশ'? এইসব প্রশ্নের উত্তর তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছিলেন তিনি। একসময়ে এই রাজ্যের রাজারা ছিলেন বাংলার নবাবের বারোহাজারি মনসবদার। নবাবের বারো হাজার সৈন্য থাকত এখানে। সাতপুরুষে পুরুষশূন্য হওয়ায় এক বিধবা নারী রানি শিরোমণি বসেছিলেন সেই রাজ্যের সিংহাসনে। কিন্তু, কী এমন করেছিলেন সেই রানি যে বীরপুরুষ ইংরেজরা তাঁকে রাজদ্রোহী রূপে বন্দি করতে বাধ্য হয়েছিল? ব্রিটিশ ভারতের প্রথম রাজবন্দিনী সেই মহীয়সী রমণীর জীবনবৃত্তান্ত, তাঁর রণকৌশল, তাঁর পিছড়ে বর্গের মানুষের আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান, মা মহামায়ার মন্দির এবং শিবায়ন কাব্যের রচয়িতা রামেশ্বর ভট্টাচার্যের কথা নিয়ে লিখে ফেললেন 'রাজদ্রোহী রানি শিরোমণি' বই। এক অনালোকিত ও অনালোচিত মহিলার দুর্দান্ত জীবনকথা তুলে ধরে গর্বিত করলেন মেদিনীপুরের মাটিকে। 
ঝাড়গ্রামের ঐতিহ্যবাহী পরভা নাচ নিয়ে এক আলোচনা সভায় ড. মধুপ দে

'ঝাড়গাঁ' নামক এক আরণ্যক জনপদ কীভাবে ঝাড়গ্রাম শহরে পরিণত হল তা খুঁজে লিপিবদ্ধ করেছেন দুই মলাটের মধ্যে। লেখকের কথায়, 'আমাদের দেশে অধিকাংশ জনপদেরই ইতিহাস নেই। ইতিহাস জানার জন্য যে সমস্ত পাথুরে আকর বা তথ্যের প্রয়োজন, তা হয় হারিয়ে গেছে নতুবা অনাদরে হারিয়ে যেতে বসেছে। আর যেখানে ইতিহাস নেই, সেখানে জনশ্রুতিই ইতিহাসের পথ দেখায়। ঝাড়গ্রামের ইতিহাস খুঁজতে হয়েছে এই সমস্ত পথ ধরেই। আর তা করতে গিয়ে এমন সব তথ্য উঠে এসেছে যা জেনে শরীর রোমাঞ্চিত হয়। আজ থেকে একশো বছর আগে সন্ধ্যার পরে লোকে এখানে মশাল জ্বেলে স্টেশন থেকে বাড়ি ফিরত, সপ্তাহে একদিন হাট বসত সাবিত্রী মন্দিরের সামনে, পুরাতন ঝাড়গ্রাম ছাড়া আর কোথাও কোনো বসতি ছিল না, শহরময় ছোটো ছোটো জমিতে চাষাবাদ হত, ঝাড়গ্রাম শহরের মধ্যে লুকিয়ে আছে পঁচিশটা গ্রাম'। জঙ্গলমহলের মাটি প্রাচীন, তার সভ্যতা এবং সংস্কৃতিও অত্যন্ত প্রাচীন। জঙ্গলমহলের সেই প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস তার নিবিড় অরণ্যের প্রগাঢ় নির্জনতায় ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। সেই লুপ্তপ্রায় ইতিহাস অনুসন্ধানের জন্য নিবিড় ক্ষেত্র সমীক্ষা করেছেন তিনি। একটি জনপদ কীভাবে জেলা শহরে পরিণত হল, তার ইতিহাস খুঁজে লিপিবদ্ধ করেছেন তাঁর 'ঝাড়গ্রাম : এক আরণ্যক জনপদ' পুস্তকে। বিগত পাঁচশো বছর ধরে মেদিনীপুরে আগত মহান ব্যক্তিদের মধ্যে যাত্রাপথে অতিথি, কর্মসূত্রে অতিথি , রাজনৈতিক অতিথি, আমন্ত্রিত অতিথি, ভালোবেসে অতিথি, আশ্রিত অতিথি এবং স্মৃতিধন্য অতিথি এই সাত ভাগে ২৫ জনের কথা বিস্তারিত তথ্য সহ লিখেছেন 'মেদিনীপুরের অতিথি' বইতে। ঘরে বসে ঝাড়গ্রাম দর্শনের কিংবা হাতে নিয়ে ঝাড়গ্রাম ভ্রমণের জন্য লিখেছেন 'ঝাড়গ্রাম দর্পণ'। মোট ২৭ টি পুরাতাত্ত্বিক ঐতিহাসিক এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দর্শনীয় স্থানের ও যাত্রাপথের খুঁটিনাটি বিবরণ আছে এই বইতে। ৮০ খানা কবিতা নিয়ে লিখেছেন কবিতার বই 'অনন্ত নির্জনে'। 

এছাড়াও তিনি লিখেছেন চন্দ্ররেখাগড়ের রাজকাহিনী, সুবর্ণরেখার উপকথা, মাটির মানুষ বিদ্যাসাগর, ঝুমুর প্রসঙ্গ, প্রাথমিক শিক্ষার নবপর্যায় (২০০১), সর্বশিক্ষা অভিযান : কিছু ভাবনা (২০০১), বিদ্যালয় পরিদর্শনের ইতিকথা (২০০৫), গোপীবল্লভপুর, ঝাড়গ্রামের ইতিকথা ইত্যাদি। খুব শিগগিরই প্রকাশিত হবে 'প্রান্তরের দেবতা'।  পর্যন্ত এরকম মোট ১৭ টি বইয়ের লেখক হয়েছেন তিনি। 

না, আজ পর্যন্ত কোনো সরকারি পুরস্কার তাঁর জোটেনি।  তাতে কি? কর্মপ্রবণ মানসিকতা আর নিবিড় অনুসন্ধানকে পাথেয় করে অনবরত প্রকাশ করে চলেছেন মেদিনীপুরের নানা কাহিনী। যা প্রতি নিয়ত উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করে তুলছে মেদিনীপুরের ঐতিহ্য, অহঙ্কার আর খ্যাতি।

🍂


Post a Comment

0 Comments