জ্বলদর্চি

বাংলাদেশ দিবস (২৬ শে মার্চ)/দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

বাংলাদেশ দিবস (২৬ শে মার্চ)

দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

মানুষের জীবনে যেমন প্রত্যেকটা দিন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক সেরকম একটা দেশের জাতীয় দিবসও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেই দেশের কাছে। আজ ২৬শে মার্চ "বাংলাদেশের জাতীয় দিবস"।

প্রথম ১৯৭২ সালের২২শে জানুয়ারি প্রকাশ করা হয় যে, ২৬ শে মার্চ দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করা হবে।
১৯৭২ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে প্রতিবছর ২৬ শে মার্চ দিনটিতে 'বাংলাদেশ দিবস' নামে জাতীয় দিবস পালিত হয়। ১৯৭১সালের ২৫শে মার্চ রাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করেন। ২৫শে মার্চ রাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে  অবিসংবাদি বঙ্গবন্ধু নেতা শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে এক তার বার্তায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ২৬ শে মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে এম এ হান্নান চট্টগ্রামের কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের জনগণের উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের(অধুনা বাংলাদেশের) দেশের স্বাধীনতা লাভের জন্য দেশবাসীকে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান পত্র পাঠের মাধ্যমে। পরের দিন ২৭শে মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর জিয়াউর রহমান একই কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

🍂

এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার প্রেক্ষাপটটা ছিল এইরকম-১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ গভীর রাতে পশ্চিম পাকিস্তান সরকার, পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) নিরীহ জনগণের উপরে অন্যায়ভাবে অত্যাচার চালায়। বর্তমান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে গোলাবার্ষণ করা হয় এবং নারীদের উপর পাশবিক অত্যাচার চালানো হয়। শুধু তাই নয়, পরিকল্পিতভাবে অবাধে, নির্বিচারী হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। এরকম অবস্থায় বাঙালীদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়। তখন আর আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষায় না থেকে বাঙালিরা বাংলা ভাষার এবং বাংলাদেশের জন্য দেশ মাতৃকার যোগ্য সন্তানেরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে নেন। এর পরবর্তী সময়ে যখন আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার কথা ঘোষণা করা হয়, তখন পূর্ব পাকিস্তানের আপামর জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, এই সময় বাংলাদেশ ভারতবর্ষের সহযোগিতায় দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে পূর্ব পাকিস্তান, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীনতা লাভ করলে প্রতিষ্ঠিত হয় এক নতুন দেশ, বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস বেশ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে স্মরণ করা হয়। জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন হয়। এছাড়াও ৩১ বার তোপ ধ্বনির মধ্য দিয়ে দিনটির সূচনা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্ত শাসিত এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই দিন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়াও এই দিনটিকে উপলক্ষ করে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয় এবং রঙিন, রঙিন কাগজে রাস্তা রাঙিয়ে তোলা হয়। শুধু তাই নয়, জাতীয় স্টেডিয়ামে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ও ছাত্রছাত্রীরা সমাবেশ করেন। সেখানে কুচকাওয়াজ হয় এবং ডিসপ্লেতে শরীর চর্চা প্রদর্শন করা হয়। এছাড়াও এই দিনটিতে বিভিন্ন ধরনের পত্র পত্রিকায় "বাংলাদেশ জাতীয় দিবস" নিয়ে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মাল্টিমিডিয়া যেমন ,বেতার ও দূরদর্শনে এই দিনে বিশেষ, বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারিত করে থাকে।
২০২১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হওয়ায় সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত হয়।

স্বাধীনতার পুরস্কার বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসরকারি সম্মাননা পদক।১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের দিন এই পদক বা সম্মান প্রদান করা হয়। এই পুরস্কার জাতীয় জীবনে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে গৌরব উজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশের নাগরিক, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হয়ে থাকে।

Post a Comment

0 Comments