কীলক লিপিতে ভূমি ও ভূমা-র মাধ্যমে এক বোধের অরণ্যে
বাসুদেব গুপ্ত
কীলক লিপিতে, ভূমি ও ভূমা বইটি পেয়েছিলাম বইমেলায়, ভীড়ে। লাইনে দাঁড়িয়ে সামনে পিছনে অনেক সফল মাথা, হাতে তাদের ভারী ভারী সমগ্র, প্রথাগত বইয়ের বাজার করে তৃপ্ত ক্লান্ত মধ্যবিত্ত মেট্রো চড়ে ফিরবে ঘরে, সাজাবে আলমারি। কাউন্টারে লোকটি বিব্রত, ফুড কর্নারে বিধ্বস্ত পেটের মতো নেটও গোলমেলে। আমার হাতে ছোট্ট হালকা বই, পাখির মত, নেহাতই কবিতার। লাইনে দাঁড়িয়ে বইটা দেখি, দেখি নাম, দেখি প্রচ্ছদ। হাল্কা বইটা ধীরে ধীরে ভারী হতে থাকে। বইয়ের নামের পিছনে লুকানো এক কালযন্ত্র। তার কাঁটা ঘুরতে থাকে, কবেকার ধূসর নগরে আগুনে পুড়ছে মাটিতে খোদাই করা বাক্য, তার অজানা ব্যঞ্জনা, আর প্রতিটি অক্ষর কেন পেরেকের মত তীক্ষ্ণ অথচ মরচের অবধারিত অধিকারে আত্মসমর্পিত।
পাতা উল্টোলাম। বুঝলাম পসরা সাজানো মল নয়, আমি প্রবেশ করছি এক অন্যালোকিত অরণ্যে। যেখানে রেডউড ও পলাশ, ওক ও তৃণরাজি আশ্চর্য এক জটলায় বাঁধা। ভূমির প্রতিটি চরণে ভূমার চরণচিহ্ন। কখন বইটি কিনলাম, ক্যাশ না কার্ড না জিপে এসব আর মনে নেই, কারণ আমার হাতে দিয়েছো যে মহাভার। পিরামিড শ্রমিকের তো একটি একটি কবিতা নিয়ে উঠতে থাকলাম আর নির্মাণ হতে থাকল কালহীন মুহূর্তহীন এক বোধ।
সংগ্রহ করতে পারেন 👇
কবিতাগুলি ছড়া নয়, চিৎকার নয়, প্রচার নয় বা চালাকি নয়। হারকিউলিয়ান স্ক্রোলের মত অদৃশ্য ছায়ার উপকূলে এক শ্রমণ কবির পরিশ্রমের সৃষ্টি, তাতে বিধৃত এক অপার্থিব মননের কৃষ্ট ফসল। এই কবিতার প্রতিটি প্যারা যেন এক নতুন উপত্যকার জন্ম দেয়। প্রতিটি শব্দ এক মহাদ্রুমের বীজ বহন করে।
কবিতার বিচার করা আমার সাধ্য নয়। তবে প্রশান্তির মধ্যে কেমন লুকিয়ে থাকে অপার বেদনা, জীবন ও যাপনের রহস্যের বাতায়নে বসে থাকা এক কবি, তাঁর কালো তিলে বহন করেন ভূমার নিভৃত শব্দগুঞ্জন,
পাঠক হিসেবে একটি একটি করে সোপান পেরোই, একটি একটি করে দরজা খোলে এই বই।
এই বই মাথার পাশে রাখার। রোজ পড়ার। রোজ ভাবার। আমি রেখেছি। বাংলা ভাষা নতুন ভঙ্গিমা পেয়েছে এই প্রকাশে। শ্রী ঋত্বিক ত্রিপাঠীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।
🍂
0 Comments