জ্বলদর্চি

কর্ষণ অযোগ্য জেনেও জেগে ওঠে ভূমি ও ভূমা /সৌমেন রায়

কর্ষণ অযোগ্য জেনেও জেগে ওঠে ভূমি ও ভূমা

সৌমেন রায় 

হৃদয়সম্মত সতর্কীকরণ দেওয়াই বিধেয়। আমি কবিতা প্রায় কিছুই বুঝি না। কবিতা ভাব প্রকাশের একটি ভাষা। সেই ভাষা রপ্ত করতে যে পরিমাণ অনুশীলন প্রয়োজন তা আমার নেই। তবুও কোন কোন শব্দ, কোন কোন লাইন আলতো করে, অস্পষ্ট ভাবে ছুঁয়ে যায় হৃদয়। সেই আলো আঁধারের জায়গা থেকে দুটো কথা বলার চেষ্টা। যারা কবিতা বোঝেন তাদের জন্য এ লেখা না।
সংগ্রহ করতে পারেন 👇
ঋত্বিক ত্রিপাঠীর কবিতায় জগৎ পরিভ্রমণ ও কাব‍্য মীমাংসার রূপ ও স্বরূপ
কবি তার প্রথম কবিতাতেই বলেছেন, ‘আমাদের আত্মস্বরূপ দু হাতে ঢাকা’। তবু আত্ম-অনুসন্ধান চলে নিরন্তর সমকালের মধ্যে, আত্মজনের মধ্যে, সমর্পণ এর মধ্যে, ভালোবাসার মধ্যে।  এ কাব্যগ্রন্থ সেই নিরন্তর অনুসন্ধিৎসার শব্দরাজি। জীবনের খোঁজ তো বড়ই কঠিন তাই অমোঘ উচ্চারণ, ‘জীবন কখনো মিলবে না জেনেও যাত্রা’। ‘আশ্চর্য নততলের আনন্দ ভৈরবীতে মজে আছি’ বলেও তিনি আবার সতর্ক করে দেন সমকালকে। কবি তো বটেই সকলকেই কোন না কোন সময় ব্যাকুল হতে হয় পৃথিবী শুশ্রূষার জন্য । কারণ ‘আমরা চেয়েছি বলেই তো দেশ’। 'ছিন্নমতি'-তে তিনি আবার দেখিয়ে দেন স্তুতি কিভাবে মাথা ঘুরিয়ে দেয়।  ‘ক্রমে সরে যায় বন্ধুবর্গ, তাদের হাসি অর্থবহ’। আবার স্তুতি অভিমান থেকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকে এক শাশ্বত ছবি। ‘একদিন পরস্পর দাঁড়াবে কাদামাখা কৃষকযুবা, আঁশগন্ধের শ্রীমতী ‘। নিজ জীবনের নততল খুঁজতে খুঁজতে কখনো মিলে যায়  ‘অলৌকিক নির্বাক রামধনু। ‘স্মিত হাসির অঙ্কুরিত বীজ সন্ধিমূলে বসন্ত বিলাপ ‘ এর পর আত্মসমর্পণ হোক বা আত্মনির্মাণ ঘটে ‘ ‘পবিত্র ছাপাখানা'য়। সেখানেই লুকিয়ে আছে ‘ আলোকবর্তিকা, শেষ নিঃশ্বাস’। 
কাব্যে বারবার ফিরে আসে বিজ্ঞান চেতনা যা মুগ্ধ করে, বিস্মিত করে। ‘যে দিকে তাকাই আলোয় আলো হয়ে আছে’। স্বাধীন গ্রহাণুদের সরলরেখায় যোগ করে আলো  ফুরোয় না, সরলরেখাও না। অনন্তের মধ্যে গতিময় সে। জীবনের পাললিক শিলায় আত্মজ্ঞান জাগে, স্তরে স্তরে জীবাশ্ম একই সাথে শয়তান ও ঈশ্বরের। অসামান্য উপলব্ধি, সকলের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ঈশ্বর ও শয়তান। ‘রত্ন খনিজ জৈব রস’ , সত্যি আমাদের স্নায়ু, আবেগ, ভালবাসা সবই তো জৈব রসের খেলা। ‘মহাকাশ-উত্তর কথা’ কবিতায় ব্রহ্মাণ্ড রহস্যের কথা অবলীলায় কাব্যে বলেছেন তিনি। ‘নক্ষত্রের দাউ দাউ তরঙ্গের প্রভায় অপার্থিব অভিসার’। মহাকাশে শত তরঙ্গ, শত শক্তির ব্যতিচার অপবর্তন। এসেছে চন্দ্রশেখর সীমা, ফসিল, কৃষ্ণ বিবর,  ঘনীভূত পদার্থ, মাধ্যাকর্ষণ এর মত বিজ্ঞান চেতনা। প্রতিশ্রুতি সরণশূন্য প্রতিশ্রুতি প্রায়শই থাকে সরণ শূন্য। নিষিদ্ধ চারণভূমিতে লিন্ড মানের 10% সূত্র আসে। আবার বিপ্রতীপ এ  দেখছেন ‘আসলে বৈপরীতেই বন্ধুত্ব নিবিড়, আত্মশুদ্ধি। সত্যি বিপরীত আধান,  বিপরীত মেরু আকর্ষণ করে পরস্পরকে। বৈপরীত্য দান করে নিশ্চিত এক প্রেক্ষাপট, যাতে প্রস্ফুটিত হয় পরস্পর। বাস্তুতন্ত্রের উপর ঘুরে  বেড়ায় চিল, সর্বোচ্চ খাদক। আসে ‘নিজস্ব সালোকসংশ্লেষের কথা। বিজ্ঞান সাহিত্যের অপূর্ব সমন্বয় মোহিত করে পাঠককে।

বিজ্ঞান হোক বা সাহিত্য সবই অনুসন্ধান, কোথাও আত্ম কোথাও প্রকৃতি। অনুসন্ধান চলে নিরন্তর। মেলে কি কিছু ? সেই তো ‘স্বনামধন্য সংসারেই থাকে নশ্বরতার প্রখর রোদ।‘ কর্ষণ অযোগ্য জেনেও জেগে ওঠে ভূমি ও ভূমা।

কীলক লিপিতে ভূমি ও ভূমা
ঋত্বিক ত্রিপাঠী
সিগনেট প্রেস
প্রচ্ছদ দেবাশীষ সাহা
২৫০ টাকা

🍂

Post a Comment

0 Comments