জ্বলদর্চি

দূর দেশের লোক গল্প— বাংলাদেশ (এশিয়া)গঙ্গাফড়িং আর ব্যাঙের বন্ধুত্ব /চিন্ময় দাশ

চিত্র- শুভম দাস
দূর দেশের লোক গল্প— বাংলাদেশ (এশিয়া)
গঙ্গাফড়িং আর ব্যাঙের বন্ধুত্ব
চিন্ময় দাশ 

গঙ্গাফড়িং আর ব্যাঙ—দুজনের মধ্যে ভারি বন্ধুত্ব। যখনই দ্যাখো, দুজনে একসাথে আছে। আলাদা যেন দেখাই যায় না।
একদিন ব্যাঙ গঙ্গাফড়িংকে বলল—বন্ধু, আগামীকাল আমার বাড়িতে এসো। তোমার নেমন্তন্ন। আমার বউ বলে দিয়েছে। বিশেষ বিশেষ পদ রান্না হবে। রাতের খাওয়াটা কাল আমার বাড়িতে খাবে তুমি। একসাথে মজা করে খাওয়া যাবে।
পরের দিন। সন্ধ্যে হতে, গঙ্গাফড়িং এসে হাজির ব্যাঙের বাড়িতে। এটা ওটা নিয়ে কিছুক্ষণ গল্প-সল্প হোল দুজনে। তারপর ব্যাঙের বউ এসে বলল—কীগো, গল্প করেই রাত কাবার করে দেবে না কি? এবার ওঠো। খেতে বসো তোমরা। 
দুই বন্ধু উঠে পড়ল। খেতে বসবার আগে, ব্যাঙ গেল বেসিনে। সামনের পা দুটো ধুয়ে নিল। গঙ্গাফড়িংকে ডাকল—এসো বন্ধু, তুমিও ধুয়ে নাও।
গঙ্গাফড়িংও সামনের দুটো পা ধুতে লাগল বেসিনে। অমনি কিচির-কিচির শব্দ। শব্দটা হোল বেশ জোরেই।
--ভাই, ফড়িং, দয়া করে তোমার কিচির-কিচির শব্দটা থামাও। বড্ড বিরক্তিকর। বিশেষ করে খাওয়ার সময় কোন শব্দ আমি সহ্য করতে পারি না। ব্যাঙ প্রায় ধমকের গলায় বলে উঠল।
🍂

বেসিন থেকে সরে এসে খেতে বসল গঙ্গাফড়িং। কিন্তু ঝামেলা হল, যখনই সামনের দু’পা তুলে খেতে যায়, অমনি কিচির-কিচির শব্দ।   
গঙ্গাফড়িং চেষ্টা করছে। কিন্তু থামাতে পারছে না। ব্যাঙ বলল—এটা কিন্তু ভাই, একেবারে অসহ্য। আমি খেতেই পারছি না। দয়া করে এটা বন্ধ করো তুমি।
গঙ্গাফড়িংয়ের তো একেবারে ঝকমারি অবস্থা। যেই সামনের পা দুটো উঁচিয়ে খাবার মুখে তুলতে যায়, অমনি সেই শব্দ। করে কী বেচারা? 
এদিকে শব্দ হলেই, ব্যাঙের বিরক্তি—দোহাই তোমার, বন্ধু। একটু চুপ করো খেতে দাও আমাকে।
শব্দ আটকাতে গিয়ে, খাওয়াই হোল না গঙ্গাফড়িংয়ের। বেরোবার সময় ব্যাঙকে বলল—কাল তুমি এসো আমার বাড়ি। একসাথে খাবো দুই বন্ধুতে। নেমন্তন্ন রইল।
পরের দিন ব্যাঙ এসেছে বন্ধুর বাড়ি। গল্প-সল্পের পর, গঙ্গাফড়িং বলল—আর দেরি করে লাভ নাই। খেয়ে নেওয়া যাক।
বলে, সে বেসিনে গিয়ে সামনের দুটো পা ধুয়ে এল। ব্যাঙকে বলল—যাও, বন্ধু। ধোয়ার কাজটা সেরে এসো।  
ব্যাঙ গিয়ে সামনের দুটো পা ধুয়ে ফিরে এল। খেতে বসতে যাবে, গঙ্গাফড়িং বলল—বন্ধু, তুমি আর একবার বেসিনে যাও। তোমার পা দুটো যা ধ্যাবড়া! থপথপিয়ে এলে, তাতে আবার পা দুটো নোংরা হয়ে গেল।
ব্যাঙ একটু ভড়কে গেল এ কথা শুনে। আবার বেসিনে গেল। পা দুটো ধুয়ে নিল ভালো করে। থপথপ করে হেঁটে এল খাবারের থালার কাছে।
গঙ্গাফড়িংয়ের আবার একই কথা—ভেজা পায়ে হেঁটে এলে নোংরার উপর দিয়ে। পা দুটো তো আরও নোংরা হয়ে গেল। একগাদা নোংরা নিয়ে খাবারে হাত দিও না।
ভয়াণক রেগে গেল ব্যাঙ। বলল—আসলে বন্ধু, আমি বুঝতে পেরেছি, তুমি আমাকে একসাথে বসে খেতে দিতে চাও না। এ কথা তুমি ভালো করেই জানো, জলের বেসিন থেকে খাবারের জায়গায় পৌঁছতে গেলে, সামনের পা দুটো আমাকে মাটিতে ফেলতেই হবে। তাতে যদি পায়ে নোংরা লেগে যায়, আমার কিছু করবার আছে কি?
--রাগ কোর না ভাই। এই ঝামেলাটা তুমিই শুরু করেছ। কেন না, তুমি ভালো করেই জানো, আমার সামনের পা দুটো নাড়াচাড়া করলেই, কিচির-কিচির শব্দ হবেই। আটকাবার কোন উপায় নাই আমার। 
গঙ্গাফড়িংএর কথাগুলো শুনল ব্যাঙ। কিন্তু কোন উত্তর দিল না। বাড়ির পথে ফিরে চলল।
দিন তিনেক কেউ কারও সাথে দেখা করল না। কিন্তু দুজনেরই মন খারাপ। চারদিনের দিন, দেখা হয়ে গেল দুই বন্ধুর। ব্যাঙ বলল—তোমাকেই খুঁজছিলাম, বন্ধু!
গঙ্গাফড়িং বলল—কিছু বলবে আমাকে?
ব্যাঙ বলল—মন ভালো নাই, বন্ধু। 
--কেন? মন খারাপের কারণ কী?
--আসলে হয়েছে কী, আমার বউ খুব বকাবকি করেছে আমাকে। ব্যাঙ বলল—বউ বলেছে, এভাবে ঝগড়াঝাটি করবে যদি, নেমন্তন্ন করবার দরকারটা কী? ওটা বাদ দিলেই তো, দুই বন্ধুর কোন ঝামেলা থাকে না।
গঙ্গাফড়িং ভারি খুশি এ কথা শুনে—খুব ভালো কথা বলেছে তোমার বউ। নেমন্তন্নে দরকার নাই আমাদের। দুজনের বন্ধুত্বটা বেঁচে থাকুক।
সেদিন থেকে আর কখনওই বিবাদ হয়নি দুই বন্ধুর মধ্যে। আনন্দ ফূর্তিতে দিন কেটে যায় দুজনের।
-------------------------------------------------------------

Post a Comment

0 Comments