সুমিত্রা ঘোষ
দিনাজপুরের জমিদারি তখনও দেবোত্তর হয়নি অথচ রানি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ভবিষ্যতে সম্পত্তির অপব্যবহার বন্ধ করবার জন্য রোগশয্যায় শায়িত রানি দুই কন্যাকে দিনাজপুরের জমিদারি দেবোত্তর করবার জন্য সইসাবুদ যা যা করবার তা করতে বললেন। জগদম্বা সম্মত হলেও পদ্মমণি সই করলেন না। (এ সম্পর্কেও মতান্তর আছে) জীবন-মৃত্যুর শেষ সীমানায় পৌঁছে রানির একটাই চিন্তা তাঁকে বিষণ্ণ করে তুলেছিল।
শরীর ত্যাগের কিছু পূর্বে রানি রাসমণিকে কালীঘাটে আদি গঙ্গার তীরের বাড়িতে এনে রাখা হয়েছিল। তখনকার দিনে এমন নিয়ম ছিল। রানি রাসমণির শাশুড়ি মাতা মায়াদেবীকেও গঙ্গার তীরে এনে রাখা হয়েছিল। সেই সময় সর্বত্র চোর ডাকাতের তাণ্ডব ছিল। কম বয়সী মেয়েরা গঙ্গার তীরে মুমূর্ষু স্বামীর পাশে থাকলে তাদের নানাভাবে অত্যাচার করত ডাকাতের দল; এমন অনেক কাহিনী ইতিহাস হয়ে আছে। রানি রাসমণিকে খুব যত্নসহকারে গঙ্গাতীরে রাখা হয়েছিল। চারিদিকে আলো ও পাহাড়াদারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, সেবা কাজের কোনো অভাব হয়নি, মেয়ে-জামাই-নাতি-আত্মীয়স্বজন পরিবৃত হয়ে রানি জীবনের বাকী কয়দিন কাটিয়েছেন। শেষে রানি নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন জগদম্বার শ্রীচরণে। যা করার, তিনিই করবেন। জীবনের শেষ খেদোক্তি রানির কণ্ঠে ঝড়ে পড়ল-'পদ্ম যে সই দিল না কী হবে মা', সেই সময় মা তাঁর ভক্তকে নিয়ে যেতে এসেছেন চারিদিকে আলোয় আলোময় হয়ে উঠেছে। এ আলো মায়ের অপার্থিব আলো। এ আলো সবার ভাগ্যে জোটে না। রানি চিরকালের জন্য স্তব্ধ হলেন। তখন কী প্রশান্ত ছবি। মায়ের কোলে রানি তখন মহাসমাধিতে
চিরনিদ্রায়। সময়টা ছিল ১৮৬১, ১৮ ফেব্রুয়ারি দেবোত্তর দানপত্রে সই করলেন, একটাই চিন্তা তাঁকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল মায়ের যেন কোনও অভাব না হয়। সোমবার মাঝে গেল। মঙ্গলবার ( মায়ের বার) গভীর রাত্রে রানি রাসমণি শরীর ত্যাগ করে দেবলোকে গমন করলেন।

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন, ধরাধামে মায়ের পূজা প্রচারের জন্য রানি এসেছিলেন। তার মত অচলা ভক্তি কমই দেখা যায়। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, জগদম্বার অষ্টসখীর এক সখী হচ্ছেন আমাদের সকলের রানি রাসমণি। রানি রাসমণি কেবলমাত্র আধ্যাত্মিক জগতের খ্যাতনামা নারী ছিলেন না। সে যুগে তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে সমাজ সংস্কারের কাজেও হাত লাগিয়েছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে, হিন্দু কলেজ স্থাপনে, ন্যাশনাল লাইব্রেরি গড়ার পেছনে, বাল্যবিবাহ রোধে, সতীদাহ রোধে রানি রাসমণি যেমন ভূমিকা নিয়েছিলেন, ঠিক তেমনই দক্ষিণেশ্বর মন্দির প্রতিষ্ঠা করে পৃথিবীর ইতিহসে আধ্যাত্মিকতাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন।
বর্তমানে দক্ষিণেশ্বর মন্দির আন্তর্জাতিক তীর্থক্ষেত্র রূপে পরিগণিত। এখানে মায়ের ভক্তমণ্ডলী স্বাধীন ভাবে আসা-যাওয়া করেন, নেই কোন জাতপাতের ভেদাভেদ, নেই ধনী- দরিদ্র, শিক্ষিত বা অশিক্ষিতের বৈষম্য ।এখানে আগত মানুষেরা মা ভবতারিণীকে দর্শন করে কৃতার্থ হন। এটাই হল শ্রীরামকৃষ্ণের দর্শন আর রানি রাসমনির অবদান। সর্বধর্ম সমন্বয়ের পীঠস্থান দক্ষিণেশ্বর মন্দির।
কৃষ্ণভক্ত হরেকৃষ্ণ দাসের কন্যা রানি রাসমণি স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে দক্ষিণেশ্বরে প্রতিষ্ঠা করলেন মহান শক্তিপীঠ, এই শক্তিপীঠ আজ স্বদেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও পরমতীর্থ ক্ষেত্র ও শান্তির আশ্রয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। রানির স্বপ্নাদিষ্ট মন্দির আজ অবতার বরিষ্ঠ শ্রীরামকৃষ্ণদেব, তাঁর লীলা সঙ্গিনী সারদা মা এবং অসংখ্য ভক্তের স্পর্শে স্বর্গের অমরাবতী হয়ে উঠেছে।
দিনাজপুরের জমিদারি তখনও দেবোত্তর হয়নি অথচ রানি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ভবিষ্যতে সম্পত্তির অপব্যবহার বন্ধ করবার জন্য রোগশয্যায় শায়িত রানি দুই কন্যাকে দিনাজপুরের জমিদারি দেবোত্তর করবার জন্য সইসাবুদ যা যা করবার তা করতে বললেন। জগদম্বা সম্মত হলেও পদ্মমণি সই করলেন না। (এ সম্পর্কেও মতান্তর আছে) জীবন-মৃত্যুর শেষ সীমানায় পৌঁছে রানির একটাই চিন্তা তাঁকে বিষণ্ণ করে তুলেছিল।
শরীর ত্যাগের কিছু পূর্বে রানি রাসমণিকে কালীঘাটে আদি গঙ্গার তীরের বাড়িতে এনে রাখা হয়েছিল। তখনকার দিনে এমন নিয়ম ছিল। রানি রাসমণির শাশুড়ি মাতা মায়াদেবীকেও গঙ্গার তীরে এনে রাখা হয়েছিল। সেই সময় সর্বত্র চোর ডাকাতের তাণ্ডব ছিল। কম বয়সী মেয়েরা গঙ্গার তীরে মুমূর্ষু স্বামীর পাশে থাকলে তাদের নানাভাবে অত্যাচার করত ডাকাতের দল; এমন অনেক কাহিনী ইতিহাস হয়ে আছে। রানি রাসমণিকে খুব যত্নসহকারে গঙ্গাতীরে রাখা হয়েছিল। চারিদিকে আলো ও পাহাড়াদারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, সেবা কাজের কোনো অভাব হয়নি, মেয়ে-জামাই-নাতি-আত্মীয়স্বজন পরিবৃত হয়ে রানি জীবনের বাকী কয়দিন কাটিয়েছেন। শেষে রানি নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন জগদম্বার শ্রীচরণে। যা করার, তিনিই করবেন। জীবনের শেষ খেদোক্তি রানির কণ্ঠে ঝড়ে পড়ল-'পদ্ম যে সই দিল না কী হবে মা', সেই সময় মা তাঁর ভক্তকে নিয়ে যেতে এসেছেন চারিদিকে আলোয় আলোময় হয়ে উঠেছে। এ আলো মায়ের অপার্থিব আলো। এ আলো সবার ভাগ্যে জোটে না। রানি চিরকালের জন্য স্তব্ধ হলেন। তখন কী প্রশান্ত ছবি। মায়ের কোলে রানি তখন মহাসমাধিতে
চিরনিদ্রায়। সময়টা ছিল ১৮৬১, ১৮ ফেব্রুয়ারি দেবোত্তর দানপত্রে সই করলেন, একটাই চিন্তা তাঁকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল মায়ের যেন কোনও অভাব না হয়। সোমবার মাঝে গেল। মঙ্গলবার ( মায়ের বার) গভীর রাত্রে রানি রাসমণি শরীর ত্যাগ করে দেবলোকে গমন করলেন।
🍂
বর্তমানে দক্ষিণেশ্বর মন্দির আন্তর্জাতিক তীর্থক্ষেত্র রূপে পরিগণিত। এখানে মায়ের ভক্তমণ্ডলী স্বাধীন ভাবে আসা-যাওয়া করেন, নেই কোন জাতপাতের ভেদাভেদ, নেই ধনী- দরিদ্র, শিক্ষিত বা অশিক্ষিতের বৈষম্য ।এখানে আগত মানুষেরা মা ভবতারিণীকে দর্শন করে কৃতার্থ হন। এটাই হল শ্রীরামকৃষ্ণের দর্শন আর রানি রাসমনির অবদান। সর্বধর্ম সমন্বয়ের পীঠস্থান দক্ষিণেশ্বর মন্দির।
কৃষ্ণভক্ত হরেকৃষ্ণ দাসের কন্যা রানি রাসমণি স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে দক্ষিণেশ্বরে প্রতিষ্ঠা করলেন মহান শক্তিপীঠ, এই শক্তিপীঠ আজ স্বদেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও পরমতীর্থ ক্ষেত্র ও শান্তির আশ্রয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। রানির স্বপ্নাদিষ্ট মন্দির আজ অবতার বরিষ্ঠ শ্রীরামকৃষ্ণদেব, তাঁর লীলা সঙ্গিনী সারদা মা এবং অসংখ্য ভক্তের স্পর্শে স্বর্গের অমরাবতী হয়ে উঠেছে।
0 Comments