জ্বলদর্চি

দুয়ারে জেনোসাইড /বাসুদেব গুপ্ত /পর্ব ২

দুয়ারে জেনোসাইড
 বাসুদেব গুপ্ত
পর্ব ২ 

পাবলিক খায় না মাথায় দেয়

সুদাম ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে কিছুক্ষণ। লাথি মেরে বুঝিয়ে দিয়েছে এ রাজা সে রাজা নয়। এ রাজা সন্ন্যাসী রাজা। এ রাজা যমরাজ। 

কয়েক সেকেন্ড পরেই হঠাৎ প্রবল চিৎকার।   প্রাণসংশয় হয়েছে এমন বিকট আওয়াজ ওঠে সুদামের গলায়। 

আরও পড়ুন 👇

-এই শালা আমার বাড়ীর সামনে এত লোকের ভীড় কেন?  
ওর অট্টালিকার বাইরে বেশ একটা জমায়েত। প্রায় চল্লিশ জন মেয়ে বৌ। তাদের মধ্যে হয়েছে ঘোমটা টানা , বোরখা পরা, আবার কোমরে আঁচল কষা ষিডিউল কাষ্ট সব। চুপ করে দাঁড়িয়ে। হাতে একটা করে, না ঝাঁটা নয়, একটা করে গোল পাকানো কাগজ। 
সুদাম সর্দারকে দেখে ওরা ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে ঘিরে ফেলে। আর অবাক হয়ে সুদাম দেখে তার মুখোমুখি চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে লিলি।  

-আরে দিদিগণ সকাল সকাল কি ব্যাপার। সবাই একসাথে? সুদাম একটু থমকে গেলেও ব্যাপারটা শালটে দেবার একটা প্ল্যান ওর মাথায় পাকিয়ে ওঠে। ফোনটা বেজে ওঠে। কারো সাথে তাড়াতাড়ি কথা সারে। 
-আমাদের জমি ফেরত চাই। আমাদের চাষ জমি ফিরিয়ে দাও। চাষের জমিতে মাছের ভেড়ি করতে দেবো না দেবো না। 
-তোমাদের কে পাঠিয়েছে?  লাল পার্টি? না মনে হচ্ছে না। এই তো ভারতীর বরকে লাল পার্টি ভোটের বেলায় বোম মারলো।  তবে কি সবুজ পারটি? না পাগল নাকি ? সবুজ পারটি লিলির দিদিকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল না, পুলিশের কাছে এই তো জবানবন্দী দিয়েছে। টিভিতে দেখলাম। তো ওরাই তো শত্রু। ওদের ছেড়ে আমার বাড়ী কেন? হলুদ করি বলে? দেশপ্রেমী বলে? আমাদের রাষ্ট্র যাতে আরো শক্তিশালী হোক তার জন্য আমাদের সমিতি কাজ করে। আর ওদের তাতে রাগ। যা যা ওদের গিয়ে জিগা।  কত দলিল জমা আছে ওদের সিন্দুকে, একবার দেখ। তারপর আসিস আমার কাছে। আমি হচ্ছি ভারতমাতার সন্তান। যা করবো ভারতমাতার জন্য। যা ওদের বাড়ী যা হাল্লা করতে। 
সেমসাইড হয়। বোঝাপড়া আছে, কিছু যাবে আসবে না।

🍂

-ভারতমাতা মোটা হচ্ছে আর আমাদের পেটে খাবার নাই। 
কে একজন পিছন থেকে আলটপকা চেঁচিয়ে ওঠে। সবাই তাকে থামাতে আমিনা বলে একটি মেয়ে এগিয়ে এসে বলে, ওদের বাড়ীও যাবো। আগে আপনার সিন্দুকটা তো খুলি। ওর ইসপেশাল লক সিস্টেম তো আমার মানুষটার হাতে বানানো আমি কি জানি না। 
-এই সকাল বেলাতেই কুমাংস খেয়ে এসেছ মা? আমি যে গন্ধ পাচ্ছি। 
এক লাফে দশ পা পেছিয়ে  আসে সুদাম। 
-আমার জাত কেন খেতে চাও মা? তোমাদের জন্য পাকিস্তান দিলাম, বাংলা দেশ দিলাম, তাতেও খাঁই মিটল না। 
বলেই সটান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে স্যালুট করে সুদাম। বলে 
-ভারত মাতার জয় হোক। বন্দে মাতরম। আমাদের অনুপ্রেরণা.. বলতেই জনতা জবাব দেয়

— পেরণা চাই না। জমি চাই। আমাদের জমি ফেরত চাই। 

কিছুক্ষণ ভারত মাতা আর জমি চাই চলতে চলতে আবার নতুন নাটক।  একদল লোক হঠাৎ সিনে ঢুকে পড়ে। জনা বিশেক লোক এসে জমা হয়। তাদের মুখে গামছা বাঁধা। টিশার্ট জিনস । স্নিকার। চোখে গাঢ় কালো চশমা। তারা কোথা থেকে নিয়ে আসে পেট্রোলের জেরিক্যান, কয়েকটা   সাইকেল, টোটো আর অটোর টায়ার জ্বালিয়ে দেয় আর স্লোগান তোলে 
— বিদেশী শক্তি নিপাত যাক। দেশদ্রোহীদের শত্রু চাই। 

হঠাৎ একটা ফট্টাস  করে আওয়াজ হয়। দেখা যায় লিলি বুক চেপে শুয়ে আছে, হাতের ফাঁক দিয়ে ঝরছে গন্গা পদ্মা যমুনা। কে একজন আর্ত চীৎকার করে ওঠে, 
• ঠোক দিয়া। মর গয়া। হায় রাম এ কি হল।   লিলির ভাই। 
সুদাম   লিলির শায়িত শরীরের দিকে কিছুক্ষণ লোলুপ চোখে তাকায়। তারপর একটু হতাশ ভন্গিতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নামিয়ে ঘরের দিকে পা বাড়ায়। পিছনে গামছামুখে জনতা যেমন জল্দি আসে তেমনি জল্দি ভ্যানিশ। লিলির ভাই পাশে বসে হা হা করে কাঁদতে থাকে। একটু পরে একটা পুলিশ ভ্যান এসে তাকে তুলে নিয়ে যায়। লিলির শরীর কোন একসময় কেউ তোলে, কিন্তু না পাঠক না সুদাম কারো কাছেই সেটা কি আর প্রাসঙ্গিক? 

— সবুজরে, খুব ঠিক সময়  একশ্যান স্কোয়াডকে পাঠিয়েছিলি যা হোক। আর একটু হলেই  ঐ ভুখা জনতা আমাকে চ্যাংদোলা করত। 
-তুই হলি সুদাম সর্দার, দিল্লী পর্যন্ত তোর  ডালপালা, তোকে  কে কি করবে। যাই হোক ভালো ভালোয় কেটে গেছে। খুব ঝড় ঝাপটা যাচ্ছে। ইলেকশান মানেই সারাদিন একদম খুরের ওপর খাড়া। চল না একদিন রাতে আবার বসা যাক। হ্যাঁ জমি নিয়েও কথা হবে। তোর নাচের দলের তো এক আর্টিস্ট চলে গেল। দেখ আবার কাউকে পাওয়া যায় কিনা। 
শ্রীদামকে ফোন করে সব জানাতে সে বলে, 
—ভুলিওনা তুমি জন্ম হইতেই বলিপ্রদত্ত। এদের বুঝিয়ে দেওয়াটা দরকার মাঝে মাঝে।   
সুদাম এবার একটু হাঁফ ছাড়েন বেশ শব্দ করে।  নেয়াপাতি ভুঁড়িটা  সে শব্দে নেচে ওঠে।

—বেশ বলেছিস। তোরা বেশ মহাপুরুষদের বাণী ঠিকঠাক লাগাতে পারিস । ঈশ্বরের কৃপা হোক, সবুজবাবুর গদগদ গলা। 
সুদাম কপালে হাত তোলে। তারপর বলে,
—বুঝিস  যখন তাহলে মিডিয়াতে খিস্তি দিস কেন। ছিদাম আর তুই তো মানিকজোড়। চান্স পেলেই হলো, আমাদের চোদ্দ পুরুষের শ্রাদ্ধ। 
—সুদাম রে,  পেলেয়ার বল পেয়ে গোলে   শট না করে বাইরে বার করে দিলে কি আর সাপোটার জুটবে? আর  এখন তো তোদের গোলকিপার তোদের  রেফারি, বলও তোরা খেলার মাঝে পাল্টে দিস। এবারে তোরা  ম্যানেজ কর।

— ছাড় ও কথা। তাহলে বসছি তো? আর শ্রীদাম থাকবে তো ?
—অবশ্যই। এখন আর রাশিয়ার দিকে পা বাড়াচ্ছেন না দাদা, যদি যুদ্ধে পাঠিয়ে দেয়। বলে দেব আসবে। একটা ভালো ব্যবস্থা চাই, নইলে এই জমি ফেরত চাই এর গলাগুলো  চেপে দেওয়া যাবে না। শালা মনে হয় টিপে শেষ করে দি।

Post a Comment

0 Comments