জ্বলদর্চি

বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস(৮ই মে)/দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে


বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস(৮ই মে)
দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

থ্যালাসেমিয়া হলো, একটি রক্ত সম্পর্ক জনিত রোগ, যা সন্তানেরা তার মা-বাবার থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পায়।

বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস হলো, একটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সেবা উদযাপনের দিন, যা প্রতি বছর ৮ই মে বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। 
বিশেষ করে এই দিনটি পালন করা হয় তাদের জন্য, যারা বছরের পর বছর ধরে এই রোগের শিকার, তাদের মনোবলকে সমর্থন ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে। এই দিনটি থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য উৎসর্গীকৃত, যারা একটি  উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্তব্যাধির সাথে লড়ায় করছেন। এই রোগে রুগীর রক্তে অক্সিজেন বহনকারী প্রোটিন স্বাভাবিকের চেয়ে কম। সহজ কথাই বলা যায়, শরীর প্রয়োজনীয় পরিমাণ হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে ব্যর্থ হয়, তায় রক্তের রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির দিন হিসেবে ৮ই মে দিনটিকে থ্যালাসেমিয়া দিবস হিসেবে পালন করা হয়। 

 অনেকে এই দিনে স্থানীয়, আন্তর্জাতিক সংস্থা, রোগী সমিতি, সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্যসেবা পেশাদাররা রোগী কেন্দ্রিক পদ্ধতিতে থ্যালাসেমিয়ার প্রসব পূর্ব প্রি-কাউন্সেলিং প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা বা চিকিৎসার গুরুত্ব প্রচার করতে একত্রিত হন।

বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবসের গুরুত্ব হিসেবে বলা যায় যে, এটি হলো একটি উত্তর অধিকার সূত্রে প্রাপ্ত রক্তের রোগ, যা মা এবং বাবা দুজনের থেকে অর্জিত হয়। জেনেটিক মিউটেশনের কারণে লোহিত রক্ত কণিকাকে প্রভাবিত করে, যার ফলে হিমোগ্লোবিনের আলফা এবং বিটা গ্লোবিনের চেনের অবক্ষয় ঘটে,এর ফলে লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন কম হয় এবং শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে রক্তের অক্সিজেন সরবরাহের অভাব ঘটে। 

ভারতে প্রায় ১লাখেরও বেশি মানুষ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এবং প্রায় ৪০লাখ  থ্যালাসেমিয়া বাহক।

 থ্যালাসেমিয়া বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫৬ হাজার গর্ভধারণকে প্রভাবিত করে, যার মধ্যে ৩০ হাজারটির থ্যালাসেমিয়া মেজর রয়েছে এবং রোগীদের বেশিরভাগই দরিদ্র্য বা অনুন্নত দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন। মেজর থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হতে পারে এবং এতে স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট,রক্ত সঞ্চালন এছাড়াও চিলেশন থেরাপি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে,তায় জন্মের পরে অবস্থার চিকিৎসা করার চেষ্টার পূর্বেই  জন্মগত ত্রুটির (থ্যালাসেমিয়া) চিকিৎসা করা হয় তাহলে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

🍂

প্রসবের আগে স্ক্রিনিং টেস্টের  মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার অবস্থা সনাক্ত করা যায়। স্থানীয় মানুষের মধ্যে স্ক্রিনিং টেস্টের সচেতনতা, থ্যালাসেমিয়ার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস একটি সুন্দর প্লাটফর্ম হতে পারে, যেখানে বেশ কয়েকটি বেসরকারি এবং সরকারি সংস্থা জেনেটিক স্ক্রীনিং কাউন্সিলিং এবং পূর্ব রোগ নির্ণয় সহ গর্ভবতী মহিলাদের জন্য জনশিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রচার করেন। এছাড়াও এই দিনে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের জন্য বিনামূল্যে রক্ত সঞ্চালন বা আর্থিক সহায়তা প্রদান সহ নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়।

১৯৯৪ সালে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস, থ্যালাসেমিয়া ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন (টি আই এফ) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং সংঘটিত হয়েছিল। থ্যালাসেমিয়া অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিত্ব করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রিস, ইতালি এবং সাইপ্রাস।

 এই দিনটি প্রথম পালিত হয়েছিল, মিস্টার প্যানোস অ্যাঙ্গেলজোসের ছেলে জর্জের স্মরণে, যিনি এই থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন। 

 
প্রত্যেকটা দিবসের একটি  থিম থাকে।আন্তর্জাতিক থ্যালাসেমিয়া দিবসের ২০২৩ সালের থিম ছিল, "থ্যালাসেমিয়া কেয়ার গ্যাপ দূর করার জন্য শিক্ষাকে শক্তিশালী করা", যা রোগে আক্রান্ত রোগীদের দক্ষতা এবং জ্ঞানের উন্নতির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। 
গত কয়েক বছরের থ্যালাসেমিয়ার থিম ছিল এইরকম যেমন,
২০২২ সালের থিম ছিল," যত্ন থ্যালাসেমিয়া জ্ঞান উন্নত করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সাথে এক হিসেবে কাজ করা"
 
২০২১ সালের থিম ছিল, "বিশ্বব্যাপী থ্যালাসেমিয়া সম্প্রদায় জুড়ে স্বাস্থ্য-বৈষম্য মোকাবিলা করা"। 

২০২০ সালের থিম ছিল, "থ্যালাসেমিয়ার জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা রোগীদের জন্য অভিনব থেরাপি গুলিকে সক্রিয় করে তোলার বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার সময়"। 

২০১৯ সালের থিম ছিল, "মানসম্পন্ন থ্যালাসেমিয়া স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা গুলিতে সার্বজনীন এক্সেস রোগীদের সাথে এবং তাদের জন্য সেতু নির্মাণ"।
২০১৮ সালের টিম ছিল, "থ্যালাসেমিয়া অতীত,বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ দেশের অনুশীলন অগ্রগতি ও রোগীদের অধিকারের ক্রমবর্ধমান স্বীকৃতি"

এই দিনটির তাৎপর্য হলো এই যে,জনগণ, স্বাস্থ্য সেবা কর্মী এবং নীতি নির্ধারকদের মধ্যে এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করে এবং এর প্রতিরোধ চিকিৎসা এছাড়াও ব্যবস্থাপনার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা প্রতিটি আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য উপলব্ধ করতে বেশ কয়েকটি সংস্থা এবং বিশ্বসম্প্রদায় একসঙ্গে কাজ করে।

উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এই ব্যাধিটির প্রতিরোধ সম্ভাবনা কতগুলো পদক্ষেপের মাধ্যমে, যেমন 
১. থ্যালাসেমিয়া জিনের উপস্থিতির জন্য মা-বাবার জেনেটিক পরীক্ষা।
২.প্রসব পূর্ব স্ক্রিনিং 
৩.ফ্রি ইমপ্লান্টেশন জেনেটিক রোগ নির্ণয় 
৪.থ্যালাসেমিয়ার সম্পর্কে জনসচেতনতা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

ভাবতে অবাক লাগে, বর্তমানেও বিশ্বে শিক্ষিত মানুষদের মধ্যেও বিবাহের আগে রক্তের পরীক্ষা না করে কুষ্টি বিচার করা হয়। আমরা যদি একটুখানি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে বিবাহের পূর্বে রক্তের পরীক্ষা গুলি করিয়ে নিই, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে একটি সুস্থ সবল বাচ্চার জন্ম দিতে সক্ষম হবেন মা-বাবারা।

Post a Comment

0 Comments