জ্বলদর্চি

বাগদি চরিত ( ঊনষষ্টিতম পর্ব)/ শ্রীজিৎ জানা

শিল্পী- আরাধ্যা জানা

বাগদি চরিত  ( ঊনষষ্টিতম পর্ব) 

শ্রীজিৎ জানা

পড়ন্ত বিকেলের আলোয় বড্ড মায়া জড়িয়ে থাকে। এই চরাচর ছেড়ে মনে হয় তারও যেতে ইচ্ছে করে না।প্রতিদিন আলোর জন্ম হয়। নতুন এক আলো। এক রঙ,এক উজ্জলতা তবু যেন সে ভিন্ন। ভোরে তার উদয়, অপরাহ্নে তার অস্ত যাওয়া। জীবন চক্রের মতোই আলোকচক্র। মধ্যবর্তী যাপনকাল জুড়ে শুধুই মায়া রচনা। ভীষণ দৃঢ় এই মায়াগ্রন্থির বন্ধন। কিছুতেই ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা যায় না। অথবা বেরিয়ে এলেও সেই গ্রন্থির দাগ, সেই সুতোর স্পর্শ থেকে যায় আমৃত্যু। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে হামেশাই দাঁড়ায় বালিপোতার বাঁধে। বেশ ভাল লাগে খগেন মাস্টারের। এখানে কাঁসাই নদীটা বেশ চওড়া। দুদিকের ঘাট সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো। মোটরসাইকেল থামিয়ে নদীমুখো হয়ে বসে। এদিনও সে বসেছিল। আর কাঁসাইয়ের জলের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। দেখে জলে কাঁচা হলুদ বেটে কারা যেন গুলে দিয়েছে। কত কথা তার মাথায় ভীড় করছে এখন। লোখা সেই রাতে তাকে কত কথাই তো বলল। কেন সে কিছু বলতে পারল না। নিজেই সে কী নিজেকে প্রবঞ্চনা করছে! মাধুর থেকে সে তো মন সরিয়ে নিতে পারেনি আজও। এখন তো আর কোন বাধা নেই। এখন তো মাধুর কাছে দাঁড়াতে পারে। আরেকবার তার হাত দুটো ধরতে পারে। কোন বাধা তার পায়ে শিকল পরিয়ে দিচ্ছে। নাকি আবারও প্রত্যাখ্যানের ভয় তাকে এমন নির্বাক করে রেখেছে। অথচ মনের ভিতর তীব্রভাবে জীবন্ত হয়ে থাকে মাধুর অস্তিত্ব। লোখার সেই রাতের কথাটা খগেন মাস্টারের কানে বার বার প্রতিধ্বনি তোলে।
—মেস্টার! তুমি লিখাপড়ায়,গ্যানবুদ্ধিয়ে ভাল হতে পার কুন্তু অভিনয়ে মোটেই ভাল নয়। তমার ডবল পাট আমি ধরে ফোলেচি বহুদিন থিকে। কেন নিজেকে নিজেই উপাসী করে রাখঠ? কেনে কষ্ট দাওঠ? লাজ- লোজ্জা কিসের? তমরা যেদি লোকলজ্জার ভয়ে পিছি যাও থাইলে মোদের মত মুখ্যুসুখ্যুরা কী করে সাহস দেখাবে বল দিখি!
—ইখিনে সাহসের পশ্ন নয় রে। পশ্ন হল সম্মানের। মোদের জাতের ভাতের অভাব থাকবে, টাকার অভাব থাকবে, ঘর- জমিনের অভাব থাকবে কিন্তু মান - ইজ্জতের অভাব থাকলে চোলবেনি।
— মান ইজ্জত লিয়ে কী ধুয়ে খাবে?  অই মান মান করেই আজীবন ত বেগদা জাত লোকের বাগালি খেটে গেল। নিজের অধিকার বুিজতে চাইল নি। আজ তুমি সেটাই করঠ মেস্টার। পেটে খিদা মুখে লাজ করে মহান সাজতে যেও নি। উরকম ত ঝোন্টা করে বেরায়। তুমিও কী হবে অর মত?
—তার মানে তোর কথা মত আমি এখন মাধুর দায়িত্ব লেই। আর গেরামের লোক বোলু মেস্টার একটা সুযোগসন্ধানী। 
— একটা কম বয়েসী বিধবার দায়িত্ব লিতে গিয়ে যেদি অই অপবাদ লিতে হয়, তায় কী তুমি পিছি যাবে? থাইলে ত তমাকে লিয়ে আমরা যে গর্ব কোরি সেসব ত মিথ্যা হয়ে যাবে গ, মেস্টার। থাইলে ত তুমি বেগদাছ্যানা হতে পাল্লে কুথায়! যেই জাতকে লিয়ে তুমি এত অহংকার কর, যেই জাতের ঐতিহ্য লিয়ে গলা ফাটাও, তাদের মান কী এরকম একটা সামান্য জিনিসের উবরে টিকে আছে! একে মান বলেনি গ, মেস্টার। মোদের বেগদা জাত মেইয়ার মা আগে বাঁচায়। সেই মানটা আগে বাঁচাও তুমি। লিখপড়া শিখে যে মান তুমি বুজেচ,মোর বোড়েদ্দা বুজেচে তাকে মান বলে নি।
—লোক যে মোর গায়ে থুতু দিবে। মাস্টার হয়ে লোককে কী শিক্ষা দুব।
— এই শিক্ষাই দাও মেস্টার মানের চেযে মনুষ্যত্ব বোড়ো।
– যেদি মাধু ভাবে আমি তাকে দয়া কোরিঠি, তখন!
— তখন এই লোখা বগদি দাঁড়াবে তমাদের দুজনের সামনে। সত্যি বোলতে কী মেস্টার, কেন তমাকে এত সাধিঠি জান? তাতে মোদের সাথ্য আছে। তুমি গঙ্গাতলার বট গাছটার মত। তোমার ছায়ায় বসে সবাই পেরান জুড়াই। তার ডালপালায় যেমন কত পাখি বাসা বাঁধে তেমনি তমার দৌলতে অনেকের ঘরে শান্তি বজায় থাকে।। কাউকে সে ফিরায় নি। আর সে নিজেও ফুরায় নি। হাসি মুখে সব বিলি দেয়। তুমিও সেরকম মেস্টার।কারণ কী জান মাটির গভীরে গাঁথা তার শিকড় আর ঝুরি গুলান। মাটি তার বাঁচার শক্তি। তমার বাঁচার শক্তি মাধু। তাকে ছাড়া তুমি ফঁপরা গাছ। সেই মাটিয়ে গেঁথে থাকলে তুমি ভাল থাকবে। আর তুমি ভাল থাকলে এই ঢোল ভাল থাকবে। মোদের জাতটাও ভালর দিকে এগাবে। এইজন্নে যেদি মোকে সাথ্যপর ভেবে থাক তাতে মোর কুনু দুখ্যু নাই। সুদু একটাই অনুরোধ এবার আর পিছি যেও নি মেস্টার। 
সেই রাতের পর আকাশপাতাল ভেবেছে মাস্টার। লোখা তার অন্তরের কথাগুলোই বলেছে সেদিন। মনের গতি জলের মতো। জল অন্ধ,মনও তাই। জলের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মাস্টারের মন কাঁসাইয়ের জল হয়ে ওঠে। সেই জলস্রোতের এখন ঠিকানা মাধু।

লোখা বসে থাকার পাত্র নয়। ছোটবেলায় দেখা কিষ্টযাত্রার কোন দৃশ্য এখনো সে ভুলেনি। রাধা- কৃষ্ণের মিলনে দুতীর ভূমিকা কম নয়। সে এখন দুতীর ভূমিকায় নেমেছে। লোখা ভাবে এ যেন মা কালীর নির্দেশ। মাধু আর মাস্টারের মিলন তার হাত দিয়েই ঘটাতে চায় ঈশ্বর। পরের দিন সকালে দিগার পাড়ার দিকে যায় লোখা। কোন একটা অছিলায় মাধুর সঙ্গে সে কথা বলবে। তার মনের ভাব আগেভাগে বুঝতে চায় লোখা। আসলে তার মনেও চাপা একটা দ্বিধাদ্বন্দে চলে। যদি সত্যিই আবার মাধু ফিরিয়ে দেয় মাস্টারকে। যদি কোন আঘাত দিয়ে ফেলে! তবে তো সব শেষ হয়ে যাবে। আর তার জন্য দায়ী থাকবে তো শুধু সে। পাড়ায় গিয়ে জানতে পারে মাধু নদী বাঁধের দিকে গেছে। লোখা ভাবে উপরওয়ালা বোধহয় সদয় রয়েছে আজ। হনহনিয়ে ছুটে যায় নদী বাঁধের দিকে। দেখে দিগার পাড়ার ঘাটের ধারে অর্জুন গাছের তলায় বসে আছে মাধু। লোখা তার সামনে দাঁড়ায়। বলে,
— কি রে এখিনেএকা বসে আছু কেনে? কোচা ছেনাটা কুথায়?
চমকে পিছন ফিরে তাকায় মাধু। আঁচলটাকে ভাল করে গায়ে জড়িয়ে নেয়। বলে,
— তুমি! ভাবলম কে না কে! ছ্যানাটা ঘুমাচ্চে।  লদীয়ে চান কোরবো বলে এসচি। ঠান্ডা বাতাস দিচ্চে বলে বসে গেছি। জলও ত নাই দেখিঠি লদীয়ে।
— সুকার সময় অইরকম হাঁটু ডুবানি জল-ই ত থাকে। তা কেমন আছু তুই?
— কেমন আর থাকব বল! ভাঙা কপাল লিয়ে জন্মিচি যখন দুভ্যোগ ত পুয়াতে হবেই মোকে।
—দ্যাক্ মোকে ত তুই জানু, আমি একটু মুখ ফাটকা গোছের। অত সাজিগুছি বোলতে পারিনি। তোকে একটা কথা বোলবো?
— কী কথা গ? আবার কী শুনাবে মোকে?
— খারাব কিছু নয় রে। তবে যাকে লিয়ে বোলবো সে কুন্তু ইসবের কিছু জানে নি। তাকে খারাব ভাবিসিনি।
বুকের ভিতরটা ঢিপঢিপ করতে থাকে মাধুর। নিঃশ্বাসের গতি যেন বেড়ে যায় তার। বিস্ময়ে তাকায় লোখার দিকে। সেই চাহুনি দেখে লোখা কিছুটা দমকে যায়। কিন্তু পরক্ষণেই জেদি হয়ে ওঠে। আজ যাই ঘটুক তাকে বলতেই হবে।
—তোকে আমি জানি সেই ছোট থিকে। আমরা এক সঙেই ত বড় হইচি। তাই তোকে নিজের বোনের মত ভাবি বোলেই, বোলিঠি– তুই আবার সংসার কর মাধু।  তোর জন্নে আজও সে একা হোয়ে আছে। তুই তাকে কত আঘাত দিয়েচু কুন্তু সে তোর ভাল চেইচে সবদিন। খোঁজখপর রেখেচে লুকিয়ে। এই যে এত ঝামেলা হল বাপের ঘরে তোর থাকা লিয়ে,অ্যার সমাধানও করেচে সে। যে ঝোন্টাকে সে কুনুদিন পছন্দ করেনি তার কাছেও নত হইচে তোর জন্যে কেউ জানেনি সেকথা আমি ছাড়া। তুই তাকে এবারে ফিরি দিইসিনি রে।এই যে তোর কাছকে এসচি,এত কথা বোলচি,যেদি সে জানতে পারে তবে মোর সঙে চির জম্মের মত সম্পক্ক শেষ করে দিবে। তা দেউ, ভয় নাই। কুন্তু লোকটার দুখ্যু দেখা যাই নি রে মাধু। হয়তো ভাবুঠু এই সময় এরকম কথা বলা মোকে সাজেনি। কুন্তু তোর জীবনে এই অঘটন যেদি উপরবালার বিচারে হয় তবে সামনের ভবিষ্যত তার বিচারেই হবে। তুই মুখ ফিরি লিইসিনি বোনটি।
পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে শুনে যায় লোখার কথা। কোন উত্তর করে না। লোখা দেখে শুকনো চোখের ভিতর থেকে অবিরল ধারা ঝরে চলেছে। লোখা স্থির থাকতে পারে না। ছলছল চোখে পাগলের মতো সেও হাঁটা দেয় ঘরের দিকে।

সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ। চৈত্রে এমন আবহাওয়া মানে রোদের আঁচ থেকে একটু হলেও রেহাই পাওয়া। তবে বেলা বাড়লে রোদ হয়তো স্বমহিমায় ফিরতে পারে। তখন আর রক্ষে থাকবে না। ঢোলের মেয়ে বউরা দল বেঁধে চলেছে রাখাল মাড়। আজ জল ঢালা। পঞ্জিকা মতে নীলষষ্ঠী। ভোর থেকেই ভীড় লেগে যায় মন্দিরে। সবাই বেশ জমকালো সাজে সেজে চলেছে বাবার থানে। খগেন মাস্টার একাই বসেছিল কালিতলায়। একটু পরেই  সুজিত সিংহের আসার কথা। সুজিত সিংহ বাগদি জাতি উন্নয়ন পর্ষদের জেলা সভাপতি। সামনেই ঢোলে একটা সভা করার কথা চলছে। সেই বিষয়ে আলোচনার জন্য আসবে। হঠাৎ মাস্টার লক্ষ্য করে মাধু আসছে কালিতলার দিকেই। চোখাচোখি হওয়ার ভয়ে আসুদ গাছের আড়ালে গিয়ে বসে। আর নিজের মনের সাথে নিজেই কথা বলে,
— কেন আমি লুকি যাচ্চি! এই সময় তো কথা বলতেই পারি অর সঙে। অন্যকিছু না বলে, উ কেমন আছে সেটাও ত জিগ্যাস কোত্তে পারি। আমি কী সত্যিই ভুল করিঠি?
এই সাতপাঁচ ভাবনার মাঝেই মাস্টারের সামনে এসে দাঁড়ায় মাধু। সামনে আসতেই তড়াক করে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ায়। উদভ্রান্ত দৃষ্টি নিয়ে তাকায় মাধুর দিকে। সে কি স্বপ্ন দেখছে! এই কি তার কিশোরবেলার প্রেম! তার ইহজন্ম - পরজন্ম! অথচ যার দিকে তাকিয়ে আছে তার দৃষ্টিতে কোন অস্থিরতা নেই। উচাটন নেই। আশ্চর্য শান্ত,স্থির কিন্তু মর্মভেদী। খগেন মাস্টারের মুখ দিয়ে কোন কথাই বেরোচ্ছে না। নড়তে পারছে না যেন সে। কতক্ষন পরস্পরের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল জানে না। হঠাৎ মাধু নীরবতা ভেঙে বলে,
– তমার কাছে যাচ্ছিলম। জানি, তমার সামে দাঁড়ানার মুখ নাই আমার। তুমি নিশ্চই মনে মনে ঘিনা কর মোকে। তাতে মোর কুনু দুখ্যু নাই। কুন্তু তুমি আর মোর পাপের বজা বাড়াও নি। আমি অপয়া গ। মোর জন্নে একটা জীবন গেছে। আর কুনু জীবন যেন মোর পড়া কপালের জন্নে না যায়।
খগেন মাস্টার হতবাক হয়ে যায় শুনতে শুনতে। কি বলবে ভেবে কুল পায় না। কিন্তু আর চুপ করে থাকতেও পারে না,
— কি সব বোলচু আমি ত কিছুই বুজতে পাচ্চি নি। কেন শুনাচ্চু মোকে এসব কথা।
মাধু কোনকিছু শুনতে চায় না। সে বলে চলে,
— যার এগবার ঘর ভেঙেচে,তাকে আর ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখতে নাই। তাবাদে তমার নখের যোগ্য মাধু নয়। সেদিন তাই জন্নে হাত ছাড়ি লিয়েছিলম। তুমি অনেক বড় হও। মোদের জাতের জন্নে আরও কিছু কর। সেটাই আমি চাই।
— তোর চাওয়ার সঙে মোর কি এসে যায়। তাবাদে তুই চাউ বলেই কি মোকে কোত্তে হবে!
— তা কেন! কেনই তুমি মোর কথা শুনবে!
— তাহলে কেন এসচু মোর কাছে। পুরান ঘা'টাকে আবার খুঁচি তুলতে এসচু।
— তুমি যা বল,আজগে সব সয়ে লুব। মা কালী সাক্ষী কুনু দোষ তমাকে দুব নি। শুদু একটা ভিক্ষা চাইতে এসচি তমার কাছে।
— মোর কাছে কেন? কিছুই ত নাই আমার।
— মোর ছেনাটাকে তমার মত করে একটু মানুষ করে দিও। উ ছাড়া মোর আর কিছু নাই জীবনে।
– মোকে তুই কি পেইচু বল দিখি। তুই কী মোকে একটা কাঠের পুতুল ভাবু! নাকি একটা পাষাণ!মোর কি মন বলে কিছু নাই।
— অই মনটা আছে বলেই ত আজকে বেহায়ার মত তমার কাছে এসে হাত পেতেচি।
— সেদিনের তোর মত যেদি খালি হাতে তোকে ফিরি দেই আজগে,তবে…
— তবে মিথ্যা হই যাবে অই মন্দিরের ভিতরের মা কালী। মোদের ঢোলের জাগ্গত ফলহারিনী মা।
—কেন মোকে এভাবে দুব্বল করে দেউঠু তুই বোলতে পারু?
— সে উত্তর জানে অই মা- ই। আর কি জান,অই যে দুধের বালক মোর, অর শরীরটা অর বাপের।কুন্তু শরীরের ভিতরে যে মন,সেটা আমার। আর সেই মনে সবদিন ছিল, আছে, থাকবে একটাই মানুষ…।

গ্রীষ্মের সকাল তখন ভিজে যাচ্ছে নোনা জলে। দুটি চোখ অপলক চেয়ে আছে পরস্পরের দিকে। সেই চাউনিতে রচিত হচ্ছে যেন জন্মজন্মান্তরের বন্ধন। তার কোন মিলন নেই। তার কোন বিচ্ছেদ নেই। সাক্ষী থাকছে কালিতলার প্রাচীন আসুদ বৃক্ষ। হঠাৎ নদীর দিকে থেকে চিৎকার ভেসে আসে। বাগদি পাড়ার মেইয়া আর পুরুষের দল ছুটে যাচ্ছে নদীর দিকে। ভীমতলার বোরো বাঁধ ভেঙে গেছে। বদ্ধ জলরাশি হঠাৎ করে পেয়েছে মুক্তির স্বাদ। জলস্রোত মরাসুখা নদীকে ভরভরন্ত করে দিয়ে যাবে। যেখানে যত আবর্জনা, যত বাধা, সব ভাসিয়ে নিয়ে যাবে খরস্রোত। বদলে বাগদিদের কোঁচড়ে  দিয়ে যাবে তার গর্ভের রুপালি শস্য।
মাধুও চলে যাচ্ছে। তার চলন ভঙ্গিমায় যেন শিলাবতীর জলস্রোতের গতি। চোখ ফেরাতে পারে নাখগেন মাস্টার। শিলাইয়ের দিক থেকেও মুখ ফিরিয়ে কোনদিন বাঁচতে পারেনা তার পাড়ের ঢোল আর ঢোলের বাগদিরা! শিলাই তো তাদের ঘরের মেয়ে। মা ফলহারিনী তো তাদের ঘরের মেয়ে।মাধুও তো ঢোলের মেইছেনা। বড্ড দুখিনী মেইছেনাটা। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে খগেন মাস্টার। শিলাইয়ের মত মাধুও যে তার হাতে দিয়ে গেল শস্যের ভার।

🍂

Post a Comment

0 Comments