বার্লিন ডায়েরি --২৭ পর্ব
চিত্রা ভট্টাচার্য্য
(প্রাগ সাম্রাজ্যর পরবর্তী অংশ )
সেদিন দিনশেষের শেষ খেয়ায় সিঁদুরে গোধুলীতে অস্তগামী সূর্য মিলিয়ে গেল তার শেষ আলোক শিখা টুকুর রেশ নিয়ে ,নীলদিগন্তে ধূসর সন্ধ্যা গড়িয়ে নামলো। এই শহরের পথ পরিক্রমায় ওরা মশগুল তবুও কল্পনার তুলিতে ভেসে ওঠে কালের যাত্রায় হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের এক নিপুন পটচিত্র। ছায়াছবির মত ক্রমাগত পর্দায় দেখা দিয়ে দ্রুত মিলিয়ে যায়। শ্রীময়ীর এ জীবনে পাওয়ার যেন শেষ নেই আর ''হঠাৎ হাওয়ায় ভেসে আসা ধন '' সে পরম প্রাপ্তির আনন্দ যে কত সুন্দর ! কত মনোগ্রাহী তার স্পর্শ যে অনুভবে করেছে তার মত ধনী বা কে আছে ? প্রথম দিনের বিচিত্রময় অভিজ্ঞতা রাতে ডায়েরির পাতায় সাজাতে বসে শ্রী লেখে ,জীবনটা যেন এক অজানা বইয়ের পাতা। ঘন্টায় মিনিটে পরিবর্তনের স্রোতে ভেসে চলায় পরের পাতায় কি লেখা আছে ? কেউ তা জানেনা।
এ শহরে বেড়ানোর সবচেয়ে মজা ওল্ডপ্লাজায় পৌঁছে পায়ে হাঁটা পথে শহর ঘোরা যায়। হাঁপিয়ে গেলে পায়ে ব্যথা করলে সামনে যে প্লাজা অর্থাৎ খোলাচত্বর টি পাবে সেখানে বসে একটু জিরিয়ে নিয়ে আবার চলো। এস্ট্রোনোমিকাল ঘড়ি দেখে ওরা চার্লস ব্রিজের ওপর দাঁড়ালো। নীচে বয়ে চলেছে শান্ত সলিলা ভাল্টাভা। ছোট্ট ছোট্ট ঢেউ তুলে নদীর বুকে ভেঁপু বাজিয়ে আপন নির্দিষ্ট ঠিকানায় ভাসছে সেলরবোট-- সাদাপালের সওদাগরী নৌকা। অদ্রিজা সকালের মায়াময় প্রকৃতির অপরূপ সাজ আর ইতিহাসের গল্পে মোড়া প্রাগের ভাল্টাভার উচ্ছল জলধীর বুকে সারি দিয়ে ভাসমান বোটগুলোর তরতরিয়ে এগিয়ে যাওয়া মুগ্ধ হয়ে দেখছিলো। তখন পাশেই মাতৃভাষায় স্পষ্ট উচ্চারণের আলাপ শুনে শ্রী ও ঋষভ চমকে তাকায়। রিপ্লিকা মূর্তি সহ সাজানো চার্লস ব্রিজ
এই সুদূর বিদেশে বাঙালি ! খুব স্বাভাবিক ভাবেই আলাপ পরিচয় জমে উঠেছিল কলকাতার বালিগঞ্জ প্লেসের বছর চল্লিশের অন্বেষণ মিত্রর সাথে। এখন প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক প্রায় দীর্ঘ চৌদ্দ বছর ধরে আছেন। কলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে পরিচিত দুই প্রফেসর বন্ধু কনফারেন্সে যোগদিতে এসেছিলো এবং কিছুক্ষনের মধ্যেই ওরা অস্ট্রিয়ায় উড়ে যাবেন। হাতের ঘন্টা দুয়েক সময় কাটাতে প্রাগের চার্লস ব্রিজের ওপর বেড়াতে এসে আলোচনায় মেতে ছিল।
অন্বেষণ কলকাতার ছেলে। স্বাভাবিক ভাবেই আলাপ জমে উঠতে শ্ৰীময়ীর ওকে ভীষণ চেনা লেগেছিল । বারবার মনের পাতায় ভেসে ওঠে ছোট বেলার বন্ধু অঞ্জনার মুখচ্ছবি। এবং শ্রী বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলো যখন জানলো ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে অঞ্জনারই পুত্র অন্বেষণ। অঞ্জনার সাথে শ্ৰীময়ীর বন্ধুত্ব সেই ছোট্ট থেকে স্কুল কলেজের বইয়ের পাতায় মুখ গুজে ,কৈশোর যৌবনের হাসিকান্না মিশিয়ে একসাথে চলা। তারপর ৩২ বছর আগে রোড এক্সিডেন্টে অঞ্জনা চিরতরে তারার দেশে মিলিয়ে গেলে সাত বছরের অন্বেষণ মুর্শিদাবাদে দাদির যত্নে বড়ো হতে থাকে এবং ট্রান্সফারের চাকরিতে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে শ্রী কে ও চলে যেতে হয় কর্নাটকে। কিন্তু ভুলতে চাইলে ও ছোটবেলার মধুময় দীর্ঘ স্মৃতি কখোনো ভোলা যায় না। এতদিন পর এভাবে এই বিদেশে আবার অন্বেষণের মাধ্যমে অঞ্জনার স্মৃতি উজ্জ্বল হবে , শ্রী তা স্বপ্নেও ভাবেনি।
প্রাগের স্থাপত্য শিল্প
এমন হঠাৎ পাওয়ার আনন্দে শ্রীময়ী চেয়েছে কিছুটা সময় অন্বেষণ যেন ওদের সাথেই থাকে,এবং এতোদিন পর মার স্মৃতির পরশ পেয়ে ওর খুশি ও আকাশ ছোঁয়া। ছুটির দিন টি শ্রীময়ীদের ভ্রমণসঙ্গী হয়ে প্রিয় শহর প্রাগের পথে ঘুরতে অন্বেষণ ভারী আনন্দ বোধকরে। এবং আলাপ প্রগাঢ় হলে চার্লস ব্রিজের রেলিঙের এক কোণের ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে গভীর আগ্রহে ইতিহাসবিদ এই প্রাগ শহর ও বিখ্যাত ব্রিজটির গড়ে ওঠার মর্মস্পর্শী কাহিনী শোনাতে থাকলে শ্রীময়ীর লেখার রিক্ত ঝুলিটি ওর নিজের অজান্তেই ঐতিহাসিক সত্যে ভরে উঠতে লাগলো।
অষ্টম শতকে সেমিসল বংশের প্রতিষ্ঠাতা ডিউক সেমিসল ও তাঁর স্ত্রীর স্বপ্ন ছিল ভাল্টাভা নদীর তীরে পৃথিবীর মধ্যে এক অতুলনীয় সৌন্দর্যময় অন্যতম শ্রেষ্ঠ সোনালী শহর গড়ে তুলবেন। সেই প্রাচীন যুগে প্রেমিক যুগল ডাচেস লিবুশে স্ত্রীর প্রতি অগাধ প্রেমে ও নির্ভরতায় ভাল্টাভা নদীর তীরে ভেসে আসা কালো পাথরের ভগ্নাংশের ওপর দাঁড়িয়ে একসাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন যে একটি অসামান্য আধুনিক শহর,যার কথা একদা সারা বিশ্বময় প্রচারিত হবে ,-যার গৌরব গাঁথার ঔজ্জ্বল্য একদিন আকাশের সব তারার মধ্যে প্রজ্জলিত হয়ে চির ভাস্বর থাকবে। তাঁর ই স্বপ্ন সফল করতে ডিউক সেমিসলের আদেশে ও ইচ্ছে অনুসারে এই অনিন্দ্য সুন্দর শৈল্পিক প্রাসাদ নগরী টি ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছিল। যদিও এক এক সময়ে মানব সভ্যতার বিকাশে ও নানা বিবর্তনেএই রাজ্যে নানা জাতি উপজাতির নিবাস গড়ে উঠেছিল। তাদের বিভিন্ন ভাষা সংস্কার আচার ব্যাবহারে বৈচিত্র্য থাকলেও ভাল্টাভার স্রোত তাদের ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে দূর থেকে দূরান্তরে।
অন্বেষণ দূরের দিকে ডান হাতটি প্রসারিত করে বলে প্রায় সাড়ে ছয় শত বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক ব্রিজ টি --দেখো কেমন পুরোনো স্টেরমেস্তো ও নতুন লেজার টাউন মালাস্ত্রানা কে এক সূত্রে বেঁধেছে। এই যে ভাল্টাভা নদীর ওপর প্রাগের গর্ব এই মনোরম ব্রিজ টি দেখছো ও পুরোনো নতুন শহর কে এক অদৃশ্য ভালোবাসার মেল বন্ধনে একত্রিত করে রেখেছে। তিরিশ টি ভাস্কর্য্য দিয়ে সাজানো বিশ্বের অন্যসব সেতু থেকে এই ব্রিজ টি এক অনন্য বিশেষত্ব দিয়ে গড়া যদি ও এই ভাস্কর্য্য গুলো রিপ্লিকা আসল নয়। এবং আসল ভাস্কর্য্য গুলো রাখা আছে চার্লস ব্রিজ মিউজিয়ামে। তবে রিপ্লিকা মূর্তি গুলোই এত জীবন্ত এক অনবদ্য নিখুঁত শিল্প চেতনা। খুব সূক্ষ্ণ হাতের কাজ দেখে বিস্মিত হতে হয়।
🍂
পাঁচশ মিটার লম্বা এই বিখ্যাত সেতু টি একাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময় থেকে শুরু করে ভাল্টাভা নদীর ওপর গড়ে তোলার প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়ে যায়। ইউরোপের অন্যতম দীর্ঘ গথিক স্থাপত্যের স্মারক এই ব্রিজ টি অনেক নতুন প্রযুক্তি দিয়ে বানানো সত্ত্বেও বিভিন্ন কারণে ভাঙে এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। অনেক প্ৰচেষ্টার পর ১৩৫৭সালে সম্রাট চতুর্থ চার্লস ব্রিজটির নব ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন ও পুনর্নির্মান করেন এবং তারই নামানুসারে এই ব্রিজটির নাম হয় চার্লস ব্রিজ। সেই সময়ে কুশলী শিল্প কারিগরদের অনলস প্রচেষ্টা এবং সম্রাটের প্রযত্নে ১৫টি পিলারের ওপর স্থাপিত ৬২১মিটার লম্বা ও ১০মিটার চওড়া এই সেতুটি জলের কিনারা থেকে প্রায় ১৩মিটার উঁচুতে দৃঢ় ভাবে স্থাপিত হয়েছিল। এবং ব্রিজটির নির্মাণ শক্ত মজবুত করার জন্য অন্যান্য উপাদানের সাথে অগুনিত ডিম ব্যবহার করা হয়েছিল।এই ব্রিজ টি স্থাপনা তৎকালীন সময়ে বৈজ্ঞানিক চিন্তা ধারার এক সূক্ষ্ণ উৎকর্ষের ফসল। সম্পূর্ণ পাথর দিয়ে তৈরি কোনও সিমেন্ট বালি বা লোহার রড এর নির্মাণ কার্য্যে ব্যবহৃত হয় নি ,তবুও বিশাল লম্বা চওড়া এই ব্রিজ টি এখনো সমান মজবুত।
পুরোনো প্রাগে ঢুকতেই চার্লস ব্রিজের ওপর বিশাল একটি প্রতীকী বিজয় তোরণদ্বার দেখা গেল। শ্রীর মনে পড়ে ইতিহাসে পড়া সে সময়ে প্রাগের রাজ্কাহিনী --,সে যুগে বোহেমিয়া রাজ্যের সম্রাট গণ চার্লস ব্রিজের এই তোরণ দ্বার অতিক্রম করে রাজ্য অভিষেকে যেতেন। রাজ্য জয়ের পর সম্রাটের বিজয় মিছিল রাজ্য পরিক্রমায় বেরোতো এই তোরণ দ্বার দিয়ে। রাজার আদেশে আবার এই চার্লস ব্রিজের ওপর থেকেই যে কোনো অপরাধী কে মাঝ নদীতে নিক্ষেপ করে সলিল সমাধি দেওয়া হতো। সে সময়ে আইন এতো কড়া ছিল যে অপরাধ প্রমাণিত হলে যে কোনো অপরাধী কে যে কোনো অপরাধে মৃত্যু দন্ড দেওয়াই ছিল নিয়ম। সে রাজতন্ত্র বিরোধী হোক ,বা সামাজিক অপরাধী, চোর ডাকাত ,ধোঁকা বাজ যা কিছু অপরাধে দণ্ডিত অপরাধী হোক না কেন তার সলিল সমাধি অনিবার্য।
অন্বেষণ বলে ,ঐতিহাসিক প্রাগ ক্যাসেল কে ও পুরোনো শহরের সঙ্গে যুক্ত করেছে এই সেতুটি। দুপাশ জুড়ে জমে উঠেছে হকার আর বাস্কারদের আসর। ব্রিজের ওপর যেন শিল্পের মেলা ,পসরা সাজিয়ে বসেছে বিপণির দল। চিত্র শিল্পীরা রং তুলির অপূর্ব সমন্বয়ে গভীর মনোযোগে ছবি এঁকে চলেছেন ,হাতে আঁকা অনুপম প্রাকৃতিক দৃশ্য। অদ্রিজা বলে প্রতিদিন প্রায় তিরিশ হাজার ট্যুরিষ্ট লোকের চলাচল হয় এই ব্রিজের ওপর দিয়ে শুনে অবিশ্বাস্য লাগলেও এই সকাল বেলাতেই ব্রিজের বিশাল লম্বা চওড়া হাঁটা পথের ওপর এত মানুষের ভীড় দেখে মনের ভুল ভাঙলো। শ্রী দাঁড়িয়ে থেকে যখন ভাবছিল ছবি কিনবে কিন্তু ততক্ষনে ঋষভ পছন্দের কয়েক টা ছবি কিনে ফেলেছে। এবং আরো একটি চমৎকার মজার খবর অন্বেষণ জানিয়েছিল যে এশিয়ার নব দম্পতির কাছে চার্লস ব্রিজ বিয়ের ফটো তোলার খুব পছন্দের একটি লোকেশন। অদ্রিজা মুখে হাত চাপা দিয়ে হেসে বলে তাই দেখছি চাইনিজ ভিয়েৎনামী বার্মীজ নেপালী পরিবারের নব বিবাহিত দম্পতিরা সানন্দে ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে কত রকম পোজ দিয়ে গলা ও কোমড় জড়িয়ে কত রোমান্টিক ছবি তুলছে।
ব্রিজের ওপরে সাজানো ত্রিশ টি মূর্তির মধ্যে ১৬৮৩খৃস্টাব্দে সবচেয়ে পুরোনো মূর্তিটি হলো এই ব্রিজটির সর্বময় রক্ষা কর্তা সন্ত নেপমূকের ।এই মূর্তিটি পাথরের তৈরী নয় এবং স্টাচুটির মাথার চারপাশে একটি ধাতব রিঙে পাঁচটি সোনালী ষ্টার খচিত আছে। ব্রিজটির এই স্থান টি থেকে ভাল্টাভা নদীর মধ্যে তৎকালীন রাজা শাস্তি স্বরূপ এই সন্ত কে ছুঁড়ে ফেলে সলিল সমাধি দিয়েছিলেন।কারণ সন্ত নেপমূকের কাছে রাজা সন্দেহ বশত জানতে চেয়েছিলেন তাঁর চতুর্থ রানীর গোপন প্রেমের স্বীকারোক্তির কথা। রানীর স্বীকারোক্তি সন্ত জানা সত্ত্বেও রাজাকে না জানানোয় শাস্তি স্বরূপ জীবন্ত সন্তকে ভাল্টাবার জলে নিক্ষেপ করে মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত করে ছিলেন।
কিন্তু এই ঘটনার কিছুদিন পর সন্ত নেপমূক মারা তো যান নি বরং মাথায় উজ্জ্বল পাঁচটি ষ্টার সমেত জল থেকে বেঁচে ফিরেছিলেন। তারপর থেকে প্রাগবাসীদের প্রগাঢ় বিশ্বাস সন্ত নেপমূক অতিজাগ্রত অলৌকিক শক্তির অধিকারী এক দেবদূত সম। এই স্টাচুটি স্পর্শ করলে সবার যে কোনো মনোস্কামনা পূর্ণ হবেই। স্থানীয় মানুষ জন ব্রিজের গায়ে শিকল দিয়ে ছোটছোট তালা লাগিয়ে মানত করেন। শ্রী ভাবে অনেকটা ঠিক স্বদেশের গ্রামে গঞ্জে প্রচলিত জাগ্রত ঠাকুরের থানে লাল সূতো দিয়ে ঢিল বাঁধার মত। কথিত আছে সন্ত নেপমূক হলেন ইউরোপ তথা সারা বিশ্বের সমস্ত ব্রিজের রক্ষা কর্তা এবং তাঁকে উত্তাল সাগরে ,নদীতে কর্মরত নাবিক এবং মৎসজীবি মানুষদের ও রক্ষাকর্তা -সন্ত বলে তিনি স্মরণীয়।
ভাল্টাভা নদীর তীরে।
সুদূর থেকে নদীর দুকূল ছাপিয়ে উদাসী হাওয়ায় গানের সুর ভেসে আসছিল। এই ব্রিজের ওপরের এক ধারে দাঁড়িয়ে তখনো চলেছিল সংগীত প্রেমিদের সুর সাধনা। প্রাণবন্ত এক আকুল করে দেওয়া শীতল বাতাস দূরের পাহাড় থেকে নদী ডিঙিয়ে ভেসে আসছিল। এমন সুন্দর মৃদু ঢেউয়ের তালে বয়ে যাওয়া স্ফটিকের মত জলধারা গানের সুরের সাথে মন ও সুদূরে ভেসে চলেছে। শ্রী ,কান পেতে থাকে ভাবে যদি মিল খুঁজে পায় স্বদেশের নদী পারাপারের ভাটিয়ালির সুরের সাথে। লাষ্ট উইকেন্ডের এক পরন্ত বিকেলে বার্লিনে স্প্রী নদীর ধারে কলেজ পড়ুয়া ছেলেদের গলায় চেনা গানের সুর শুনেছিলো। প্রাণবন্ত এক আকুল করে দেওয়া ঠান্ডা শীতল বাতাস দূরের পাহাড় থেকে নদী ডিঙিয়ে ভেসে আসছিল।
প্রাগের কারু শিল্প
ঋষভ বলে ,উনিশ শতকের ক্লাসিকাল সংগীতের অনুপ্রেরণা এই ভাল্টাভা নদী। এখানে বসেই ধ্রুপদী সঙ্গীত চর্চার প্রথম সূত্রপাত হয়েছিল। অদ্রিজা বন্ধু আলেক্সেই ,জুভান,লুসিদের থেকে এই গল্প শুনেছিল। কেমন করে জন্ম নিয়েছিল বিভিন্ন মিউজিক্যাল আড্ডায় গানের লিরিক্স সৃষ্টি। ঋষভের ও মনস্পর্শ করে যায় এ গানের সুর। ও আপন মনে গুনগুন করে শিস দিয়ে গান গায়। মন কে অজানায় ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে স্প্যানিশ গানের লোক সংগীতের চমৎকার মন ছুঁয়ে যাওয়া সুরটি। অন্বেষণ শব্দের তর্জমা করে বোঝায় ' 'পাহাড়ের চূড়ো থেকে হঠাৎ যখন বৃষ্টি হয়ে তুমি ভেসে আসবে 'ওগো সুন্দরী , কে তুমি কোন বিদেশী ? ''শ্রীর বলে এ যে কবি পূর্ণেন্দু পত্রীর সেই কবিতাটার মত '' ''ক্রেমলিনের চূড়ো থেকে বৃষ্টি ছুটে আসে/ সুতীব্র শীতের ঢাল ,শতশত তীর-''-বেশ মিল আছে।প্রফেসর বলে হয়তো আছে। শ্রী ও অদ্রিজা বেশ উৎসাহিত বোধ করে। ওর কথিত ইতিহাসের বর্ণনায় ওরা মন্ত্র মুগ্ধ। এক অজানা খুশিতে ওদের প্রাগ ভ্রমণ আনন্দ ময় হয়ে উঠলো । ক্রমশঃ
0 Comments