জ্বলদর্চি

শব্দে গাঁথা মণি-মালা : ৫০ / সালেহা খাতুন

বন্ধু শুভাশিস ও তাঁর গ্রন্থ

শব্দে গাঁথা মণি-মালা : ৫০ / সালেহা খাতুন 

শুভাশিসের পরামর্শ আমি প্রায়ই গ্রহণ করি। সেটা শুভাশিস খানিকটা জানে আর কিছুটা ওর অজানা। শুধু আত্মকথা লিখতে গিয়েই নয় অধ্যাপনাকালীন শিক্ষার্থীদের রবীন্দ্রসাহিত্যের ডিসার্টেশান পেপার লেখার সঠিক নির্দেশনা দেওয়ার আগে ওর ফেসবুক পেজ প্রায়ই ভিজিট করি। বিশেষ করে যারা রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে কাজ করে তাদের রেফারেন্স বইয়ের নাম সহজেই দিতে পারি শুভাশিসের জন্যই। সম্পাদক ও অনুবাদক রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে কেউ কাজ করলে ওর “সম্পাদক রবীন্দ্রনাথের লেখকেরা” বইটির কথা বলি। করোনাকালে খুব স্বল্পসংখ্যক অধ্যাপক ও শিক্ষার্থী লাইব্রেরিতে যাওয়ার অনুমতি পেত যখন তখন ওর ঐ বইটি মেদিনীপুর কলেজ লাইব্রেরিতেই প্রথম পড়ি।

আসলে আমার এম. এ. ক্লাসের সহপাঠীরা এতোটাই গুণী যে ওদের সবার গুণকীর্তন করতে থাকলে আমার ‘শব্দে গাঁথা মণি-মালা’ কোনোদিন থামবে না। তবু থামতে হয়। থম মেরে ভাবতে থাকি আমি পুঁথিগত শিক্ষাতেই কী শুধু শিক্ষিত হয়েছি! সমাজ প্রকৃতি পরিবার থেকে কিছুই কি শিখিনি? আমার শিক্ষা আমাকে জীবিকা এবং জ্ঞান দুটোই দিয়েছে। তাই বাতাসে কান পাতলে ফিসফিস শব্দ শুনি অসূয়াআক্রান্ত লোকে আমাকে নিয়ে কী ধারনা পোষণ করেন! এই তো করোনাকালে শ্বশুরমশাই যখন চলে গেলেন ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়া আমার বড়োজা যাঁকে আমি শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখি তিনি চিৎকার করে বলছেন ‘শিক্ষিত মেয়ে আর নেবো না। ওদের শুধু পুরুষ বন্ধু থাকে। দিনরাত ফোনে থাকে’। আমাকে না বললেও, খুব গায়ে লাগলো কথাটা। কলেজে পড়া পুত্রবধূকে তাড়িয়ে ডিভোর্স দিইয়ে তিনি পুত্রের দ্বিতীয়বার বিয়ে দিচ্ছেন সবে মাধ্যমিক দিয়েছে এমন একটা বাচ্চা মেয়ের সঙ্গে। ওখানে আমিই ধোপে টিকবো না তো প্রতিবাদ কী করবো! আমি তো অপর। আমার জন্য জাহান্নামের পথ উন্মুক্ত হয়ে আছে। আমার আর্থিক স্বাবলম্বন আছে তাই ওঁদের থেকে দূরে থাকি। কোনো বাক্যবাণই আমাকে ছুঁতে পারে না । ফলে নারীমুক্তি কথাটা অনেক সময়ই দেখি সোনার পাথরবাটি। ক্রমশ একা হতে থাকি। রবীন্দ্রনাথের ‘স্ত্রীর পত্র’- এর মেজো বৌ মৃণালের মতোই আমিও ঐ বাড়ির মেজো বৌ। অন্যদের ভাবনা চিন্তা বদলাতে পারি না বরং তাঁরা আমাকে বদলানোর চেষ্টা করেন।

🍂

না বিশ্ববিদ্যালয়েই আবার ফিরে যাই। এম. এ. পাশ করতে হবে তো। ছিয়ানব্বইয়ের ডিসেম্বরে এম .এ. পার্ট টু পরীক্ষা। পার্ট ওয়ানে মাত্র চার নম্বরের জন্য ফার্স্ট ক্লাস পেলাম না। রিভিউ করলাম। দ্বারভাঙা বিল্ডিংয়ে রিভিউ সেকশনে গিয়ে জানলাম একটি পেপারে চার নম্বর বেড়ে ফার্স্ট ক্লাস হয়ে গিয়েছিল কিন্তু অন্য পেপারে দুনম্বর কমিয়ে দেওয়া হয়। ফলে হতাশ হওয়া ছাড়া আর কিছু পেলাম না। রিভিউ সেকশন অধ্যাপক মানস মজুমদারের সঙ্গে কথা বলতে বললেন। আমি স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম স্যার আমার নম্বর কমানো হলো কেন? স্যার বললেন ‘এসব তথ্য তোমাকে কে দিলো’? তিনি ভাবছিলেন কোনো অধ্যাপক হয়তো জানিয়েছেন। আসলে যাঁরা অফিসে থাকতেন তাঁরা শিক্ষার্থীদের অত্যন্ত স্নেহ করতেন। এম.এ. পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপ করার সময় আমি আমার ডেট অফ বার্থ লিখি কুড়ি সেপ্টেম্বর উনিশশো পঁচানব্বই। ওঁরা হেসে লুটিয়ে পড়েন। বলেন বাহ্ খুব ভালো একবছর বয়সেই এম.এ. পরীক্ষা দিচ্ছ! দু হাজার দশ সালে রিফ্রেশার্স কোর্সে গিয়ে এম.এ.র সার্টিফিকেট নিতে গিয়ে ওঁদের কী স্নেহটাই না পেলাম। বললেন মেদিনীপুরে অনেকদিন তো হলো এবার এদিকে চলে এসো।
শিক্ষাই সাক্ষর করবে/কর্মে সফলতা আনবে
 
ওদিকে বাবা আমার পড়াশোনায় যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে তাই এম .এ.পার্ট টু পড়ছি যখন অর্থাৎ এম.এ. ক্লাসের পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে তখন আমার গ্রাম সাহাপুরেরই অসিত কাকুর কর্মক্ষেত্রের এক ম্যানেজমেন্ট ট্রেনি যুবকের সঙ্গে আমার বিবাহের জন্য যোগাযোগ শুরু করেন। বলা যায় অসিতকাকুর জোরাজুরিতেই এ যোগাযোগ শুরু হলো। দু’পক্ষকেই তিনি বোঝাতে থাকেন পাত্রপাত্রী পরস্পরের কতটা যোগ্য। ডিসেম্বরে আমার পরীক্ষা, সেপ্টেম্বরের সাত তারিখে অফিস কলিগদের সঙ্গে সালাউদ্দিন এলেন পাত্রী দেখতে। কেরোসিনের আলোয় পরস্পরের দেখা। এর আগে অনার্সের শুরুতে বাবার স্কুলের সঙ্গে যুক্ত শ্রীযুক্ত বিষ্টুপদ নস্কর মহাশয়, আমার বন্ধু বিভাসের বাবা তাঁর কর্মক্ষেত্র ইণ্ডিয়ান রেলওয়ের এক ইঞ্জিনিয়ারকে পাত্র রূপে এনেছিলেন। অত্যন্ত ভদ্র। এবং আমার থেকে বয়সে অনেকটাই বড়ো। তিনি বাবাকে বলেন ওতো বাচ্চা মেয়ে, পড়াশোনার স্বপ্ন দুচোখে। ওকে পড়তে দিন। এমন সুচারু রিজেকশন আমাকে পড়াশোনায় আরো বেশি বেশি করে আগ্রহী করে তোলে। 

 হ্যাঁ মাঝে আরো কিছু যোগাযোগ হয়তো বাবা করেছিলেন কিন্তু আমাকে তাঁদের মুখোমুখি হতে হয় নি। পাড়ার রায় বাড়ির দিবা কাকুও কোনো এক অধ্যাপককে আমার জন্য পাত্র রূপে নির্বাচন করেছিলেন। সেখানে পত্র মাধ্যমে যোগাযোগ চলে।

(ক্রমশ)

বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments