জ্বলদর্চি

বিশ্ব খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধ দিবস (১৭ই জুন)/দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে।

বিশ্ব খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধ দিবস (১৭ই জুন)

দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

আজ ১৭ই জুন,বিশ্ব খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধ দিবস। এই দিবস সম্পর্কে জানার আগে, আমাদের মন উৎসাহী হয়ে ওঠে,খরা এবং মরুকরণ কি? জানার জন্য। 
খরা হলো, জল সরবরাহে দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতির একটি ঘটনা, যা বায়ুমণ্ডলীয় (গড় বৃষ্টিপাতের নীচে) ভূ-পৃষ্ঠের  বা ভূগর্ভস্থের জলকে বোঝায়। একটি খরা এক মাস, এমনকি এক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এটি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র এবং কৃষির উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে, এছাড়াও স্থানীয় অর্থনীতির ক্ষতি করতে পারে।
আর মরুকরণ সম্পর্কে প্রথমেই বলতে হয়। মরুকরণ হলো, একটি ভূমি অবক্ষয়ের ঘটনা বা প্রক্রিয়া, যেখানে মানুষের কার্যকলাপ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সম্পদের ব্যবহার এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে ভঙ্গুর পরিবেশগত অবস্থার উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়।
 সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে বিশ্ব। প্রাকৃতিক দুর্যোগের নানা পরিবর্তনের মধ্যে জলবায়ুর কুপ্রভাবে বিশ্বে মরুকরণ একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা। 
বিশ্বের জলভূমির ৭০ শতাংশ ইতিমধ্যে মরুকবলিত হয়ে পড়েছে, যার পরিমাণ পৃথিবীর মোট ভূমির চার ভাগের এক ভাগ। নিষ্কাশনে অব্যবস্থা ও লবণাক্ততার কারণে সেচের আওতাধীন আবাদি জমির বিশাল অংশ অবক্ষয়ের সম্মুখীন। মরুকরণ, ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য এক ভয়াবহ সমস্যা।এ জন্য মরুকরণ বিস্তার রোধ করা প্রয়োজন। 
সারা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ১৭ই জুন খরা মোকাবিলা ও মরুকরণ মোকাবিলায় রাষ্ট্রসংঘের কনভেনশনের প্রতি জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য এই দিবস পালন করা হয় ৷

১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের পক্ষ থেকে খরা ও মরুকরণের প্রতি সোচ্চার হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। এই ধারবাহিকতায় ১৯৭৭ সালে নাইরোবিতে বিশ্ব মরুকরণবিরোধী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এখানেই গঠিত হয়, ‘আন্তর্জাতিক মরুকরণ প্রতিরোধ কনভেনশন’। এরপর ১৯৯৪ সালে এ কনভেনশনের আলোকেই জাতিসংঘ বিষয়টি নিয়ে একটি স্বতন্ত্র দিবস পালনের ঘোষণা দেয়। তারপরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৫ সাল থেকে খরা ও মরুকরণ সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করে তুলতে ১৭ই জুন পালন করা হয় ‘বিশ্ব খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধ দিবস’।

দেশের বেশকিছু পরিবেশবাদী সংগঠন ও পরিবেশবিদরা বিভিন্ন আয়োজন পড়ে থাকেন এই সমস্যা কি প্রতিরোধ করার জন্য। তারা খরা অঞ্চলে মানববন্ধন ও বিভিন্ন আলোচনার মাধ্যমে দিনটিকে উদযাপন করে থাকেন। 

 বৃষ্টিপাত না হওয়া, পর্যাপ্ত বন না থাকা, কৃষি কমে যাওয়া ও জলাধার দখল হয়ে যাওয়ার কারণে খরার ঝুঁকি আরও বাড়ছে। যদি এসব রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যতে দেশে খরা অঞ্চল আরও বাড়বে। এজন্য প্রাকৃতিক জলাধার বাড়াতে না পারলেও অন্তত দখলমুক্ত করতে হবে। গাছ না কেটে, বনোউন্নয়ন করতে হবে এবং কৃষিভিত্তিক উন্নয়নও করতে হবে।

মরুকরণ প্রতিরোধের বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, যেমন,
(ক) যথাযথভাবে তৃণভূমি ও বনভূমি সংরক্ষণ করতে হবে। বনসৃজন করে, এদের আয়তন ক্রমশ বাড়াতে হবে।

(খ)  সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে ঝাউবন ও ম্যানগ্রোভ অরণ্য সৃষ্টি করতে হবে।

(গ) মরুভূমি সংলগ্ন স্থানে বৃক্ষ রোপণ করতে হবে।

(ঘ) নিয়মিতভাবে পশুচারণ করতে হবে।

(ঙ) খরা প্রতিরোধকারী শস্য উৎপাদন করতে হবে।

(চ) ভূমির বহন ক্ষমতা অনুসারে জমি ব্যবহারের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

(ছ) মাটির নিচের জলভাণ্ডারকে সর্বদা সঠিকভাবে সঞ্চিত রাখতে হবে।

(জ) মরুকরণের কারণ ও তা প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জনসচতেনতা গড়ে তুলতে হবে।

🍂

আমাদের দেশ যে সার্বিকভাবে মরুকরণ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়েই যাচ্ছে, তা স্পষ্ট,ফলে এখন থেকেই আমাদের সচেতন হতে হবে। সতর্ক ও সচেতন হওয়া গেলে বিপর্যয় কিছুটা ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হতে পারে,ফলে মরুকরণ রোধে জরুরি কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। যেসব কারণে মরুকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়, তা রোধে সরকারকে কঠোর হতে হবে। নদ-নদী দখল কিংবা  জলাশয় যেন কেউ ভরাট করতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারি থাকা বাঞ্ছনীয়। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে, বৃক্ষ নিধনসহ, বন্যপ্রাণী নিধন বন্ধ করতে হবে এবং যেহেতু বনোন্নয়ন মানে, মরুকরণের প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া, সেহেতু অধিকমাত্রায় বনোন্নয়ন করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে দেশের প্রতিটি নাগরিককেই ভাবতে হবে। অন্যদিকে নদ-নদীগুলোর জলপ্রবাহ যাতে ঠিক রাখা যায়, সে ব্যাপারেও সঠিক উদ্যোগ নিতে হবে।

 ক্ষয়প্রাপ্ত মাটিকে সুস্থ মাটিতে পরিণত করার জন্য এই দিনটি পালিত হয় । এর লক্ষ্য মরুকরণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সমাধান খুঁজে বের করা এবং খাদ্যের উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য ক্ষয়প্রাপ্ত জমির পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করা।

এই দিনের তাৎপর্য হিসেবে বলা যায় যে,এই দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ । রাষ্ট্রসংঘের মতে, ২০২৫ সালের মধ্যে ১.৮ বিলিয়ন মানুষ জলের সংকটের সম্মুখীন হবে । পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ একটি সংকট পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে ৷ ২০৪৫ সালের মধ্যে প্রায় ১৩৫ মিলিয়ন মানুষ জলশূন্যতার কারণে বাস্তুচ্যুত হতে পারে।

 দিনটি  উদযাপন করা হয় বিভিন্নভাবে, যেমন, পরিবেশবাদী এবং সংরক্ষণবাদীরা মরুকরণ এবং খরার বিরুদ্ধে লড়াই করার উপায় সম্পর্কে মানুষকে শিক্ষিত করে, উপস্থাপনা দেয় । তারা বলেন "আপনার জমিতে মাটি রক্ষা করার উপায় শিখুন । সম্পত্তিতে অন্তত একটি গাছ লাগান ৷ বীজ ব্যাংকের সুবিধা সম্পর্কে নিজেকে শিক্ষিত করুন । ভিডিয়ো দেখুন এবং মরুভূমি ও আমাদের গ্রহে তাদের প্রভাব সম্পর্কে নিবন্ধ পড়ুন"

প্রত্যেকটা দিবসের একটি করে প্রতিপাদ্য বিষয় বা থিম থাকে। বিগত বছর গুলিতে থিম এইরকম ছিলো, যেমন, ২০২২সালের থিম ছিলো, একসাথে খরা থেকে উঠে আসা
২০২১ সালের থিম ছিলো, পুনরুদ্ধার, জমি  পুনরুদ্ধার। আমরা সুস্থ জমি দিয়ে আরও ভালোভাবে গড়ে তুলি

২০২০সালের থিম ছিলো, খাদ্য খাওয়ান। ফাইবার - খরচ এবং জমির মধ্যে সংযোগ।
২০১৯ থিম ছিলো,আসুন একসাথে ভবিষ্যত বৃদ্ধি করি (২৫বছরের অগ্রগতির প্রতিফলন এবং পরবর্তী ২৫এর পরিকল্পনা করা) 

২০১৮সালের থিম ছিলো, জমির প্রকৃত মূল্য আছে। এতে বিনিয়োগ করুন।

শিক্ষিত নাগরিকদের সঙ্গে,সঙ্গে সকল নাগরিকদের খরা ও মরুকরণ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে, এবং সকলে মিলে, সমবেত প্রয়াসে খরার হাত থেকে দেশকে তথা বিশ্বকে বাঁচাতে হবে।

বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments