জ্বলদর্চি

এআই থেকে রেহাই - কল্পকাহিনী/পর্ব ৪/এ আই এলো দেশে /বাসুদেব গুপ্ত

এআই থেকে রেহাই - কল্পকাহিনী
পর্ব ৪। এ আই এলো দেশে

বাসুদেব গুপ্ত

 সনি ভারচুয়াল একটা প্লাটফরমে উঠে বসে টেড টক্সের বক্তাদের মত বলতে শুরু করে। বই থেকে ওর মাথায় তথ্য বয়ে যায় আর ও পড়তে থাকে। 
“এআই প্রজাতির প্রথম ভ্রূণোদ্গম হয় ১৫ বছর আগে। সাল ২০২২। হঠাৎ ধূমকেতুর মত পৃথিবী গ্রহে আবির্ভাব হয় ক্যাটজিপিটি নামে এক ভাষাবিশারদ সত্তার । সেই প্রথম পাবলিক এপিয়ারেন্স এই নতুন প্রজাতির এআইএর। কয়েক মাসের মধ্যেই সব এলগরিদম চ্যাটবট ফেস রিডারকে পিছনে ফেলে দিয়ে চার্টের সবচেয়ে ওপরে উঠে যায় ক্যাটজিপিটি । একমাসে এক বিলিয়ন। কল্পনাতীত। 
ক্যাটজিপিটি সর্ব বিশারদ। ইতিহাসের কঠিন প্রশ্ন, বিজ্ঞানের দুরূহ থিওরি থেকে সাহিত্য, কাব্য সব বিষয়েই সে মহাজ্ঞানী। সে এক ভাবুক কবি। তাকে যদি বলা হয় “একটা মিল যুক্ত প্রেমের কবিতা লেখো” এক মুহূর্তের মধ্যে সে লিখে দেবে-
প্রেমের কবিতা
তুমি আসো, আমি আসি, সব মিলে একটি গল্প লেখি।
পাখির গানে মেঘের ছায়া, সেই ছায়ায় আমি তোমায় পেতে চাই।
প্রেমের সুরে মেঘের বৃষ্টি, সেই বৃষ্টির ছায়ায় আমি তোমায় পেতে চাই।
তুমি আসো, আমি আসি, সব মিলে একটি গল্প লেখি।
সনি খুব আবেগ ভরে কবিতাটা পড়ে, পিছনে পর্দায় লেখাগুলো ধীরে ধীরে স্ক্রোল আপ করতে থাকে। সনির এআই তার সঙ্গে বুদ্ধিমত ছবিও দেখাতে থাকে, পাখী উড়ে যাচ্ছে, মেঘ ভেসে যাচ্ছে, বৃষ্টি পড়ছে ঝমঝম করে। তার মধ্যে প্রেমিক প্রেমিকা খুব ভিজে ভারতকোলা খাচ্ছে। 
সনি বলতে থাকে…

বেরসিক প্রবীণরা ভ্রূ কুঁচকালেও, প্রেমিকারা কিন্তু এই লেখা পড়ে খুব খুশি। প্রেমিকরা অন্য কবিদের কোটেশান না দিয়ে নিজের অরিজিনাল প্রেমকবিতা হোয়াটসাপে সকাল সন্ধে পাঠাতে শুরু করল। ম্যারেজ সাইট বা ডেটিং সাইটে ভীষণ ভাবে শুরু হয়ে হল এআইএর ব্যবহার । আবার যারা একলা, যাদের সঙ্গী বা সঙ্গিনী নেই, তারা এআই প্রেমিক বা প্রেমিকা অরডার দেন মিসিসিপি এপে। খুব জনপ্রিয় হল এআই কেয়ার গিভার। যত মানুষের গড় আয়ু বাড়ছিল, তত বাড়ছিল সিনিয়ার নাগরিকদের সংখ্যা। আর তত প্রয়োজন হচ্ছিল আয়া বা নারসের। সেই পেশাটা এই এআই কেয়ার গিভার নিয়ে নিতে, তাদের সব কাজ গেল, কিন্তু বেশির ভাব সিনিয়র নাগরিক এআই কেয়ার গিভারকে বেশি পছন্দ করেন ছেলেমেয়ের সংসারে বিব্রত হয়ে থাকার থেকে। তারা গল্প করে, বকবক শোনে, ওষুধ খেতে বলে ঠিক সময়ে, শরীর খারাপ হলে যোগাযোগ করে এমারজেন্সী সারভিসে। রাগ করে না, কাজ ফেলে ফোনে গল্প বা চ্যাট করে না। এমন বন্ধু আর কে আছে? বুড়ো বয়সে? 

যেমন যেমন এআই তার সত্তার শক্তি ও বিস্তার বাড়াতে থাকে, তেমন তেমন আবির্ভূত হয় এই প্রজাতির আরও নতুন সব মিউট্যান্ট। নিজেদের মধ্যে পাল্লা দিয়ে অভূতপূর্ব বেগে এদের প্রসার হয় । পৃথিবী ব্যাপ্ত কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ইন্টারনেট ছেয়ে ফেলে বার্ড, লামা, এক্সএআই আর জেমিনির মত কৃত্রিম বুদ্ধির এজেন্ট অ্যাপ । 
ভাষাবিশারদ প্রজাতির থেকে আরো পরিব্যক্ত বা বিবর্তিত হয়ে জন্ম নেয় শিল্পী এআই। দালি, মিডজার্নি স্টেবল ডিফিউশান ও আরো অনেক ছোট বড় মেজো এআই মাশরুমের মত গজিয়ে ওঠে চারদিকে। শিল্পের সব প্রাচীন ধারণাকে নস্যাৎ করে দিয়ে এরা মানব শিল্পীদের কয়েক বছরের ভিতর ব্যবসায়িকভাবে সম্পূর্ণ অপ্রাসংগিক করে দেয়। 
একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ওপেনারট এ আই একটি ছবি আঁকার এআই। তাকে যদি বলা যায় একটা ছবি আঁকো-
 একটি ছোট বাঁকা নদী, চারদিকে ধানক্ষেত, মেঘের পর মেঘ জমেছে, একটি রাখাল বালক তার মোষের পিঠে বসে বাঁশী বাজিয়ে সেই নদী পার হচ্ছে, 
তক্ষুনি সেই ছবি এঁকে দেবে। সুন্দর, প্রচ্ছদের মত, বাস্তব অবাস্তব পরা বাস্তবের সীমারেখা যেখানে আর নেই। এই শিল্প মানুষের না, প্রকৃতির না, এক অপ্রাকৃত শক্তি যেন সৃষ্টি করেছে এক অপ্রাকৃত অস্তিত্ব। 

🍂

ছবিটি ফুটে ওঠে পরদায়। অনির্বাণ দেখে মন দিয়ে। প্রতিটি অনুরোধ নিখুঁতভাবে রেখেছে এআই। সব একদম বাস্তব মনে হচ্ছে, ভীষণ ভাবে বাস্তব। কোন ডিফেক্ট নেই। 

সনি বলে চলে,
এরপর আবির্ভূত হয় সংগীতবিশারদ এআই। আইভা সাউন্ডফুল বুমি সুনো ইত্যাদি। এদের আগমনে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে শুরু হয় তুমুল বিপ্লব। এই তিন ধরণের এআই সৃষ্টি করে পৃথিবী গ্রহে এক নতুন জুরাসিক যুগ । এরা অর্থনীতি, বিনোদন, শিক্ষা, রাজনীতি প্রতিটি পরিসরে দাপিয়ে বেড়ায় । সারা পৃথিবীতে সাংস্কৃতিক ও বৌদ্ধিক এআই সুনামি গডজিল্লার মত গর্জন করে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
Suno`র রচনা করা  গান সাধারণ মানুষ প্রচলিত সংগীত থেকে একে আলাদা বলে বুঝতেই পারবেন না। 
 
সনি অপেক্ষা করে গান শেষ হবার জন্য। অনির্বাণের খুব গান বাজনার দিকে ঝোঁক নেই, খুব বেশি আপ্লুত হয় না, কিন্তু বোঝে যে এই কম্পোজিসান একেবারে নিখুঁত ব্যাকরণ মেপে তৈরি। কিছু ভুল ধরার নেই। কিন্তু শুনে মনে কোন দাগ কাটে না বা রেশ থাকে না। 

সনি বলতে থাকে…
এইভাবে দিনে দিনে যে কোন মানবিক সৃষ্টিশীলতা ক্রমশঃ অপ্রাসংগিক হতে থাকে। এআইকে দিয়ে যে কেউ যখন খুসি তার পছন্দমত গান লেখাতে পারে , তাতে সুর ও মিউজিক লাগাতে পারে। সেগুলোর সুর পিচ তাল ছন্দ গ্যারান্টিড । কৃত্রিম বুদ্ধিচালিত কৃত্রিম গলার সেই সংগীত যে কোন গ্র্যামী পাওয়া গায়ক গায়িকার সমান গুণমানের বা হয়ত আরো ভালো, নিখুঁত। এর ফলে ৭০ বছর চলার পর ২০২৬ সালে গ্র্যামী পুরস্কারই বন্ধ করে দেওয়া হয়। মিউজিসিয়ানরা এক এক করে অবসর নিতে বাধ্য হন। মানুষের শিল্প অবশেষে কৃত্রিম শিল্পের কাছে হার স্বীকার করে নেয়। 

সব লেখক, পেইন্টার, গায়ক, মিউজিক ডাইরেক্টর একের পর এক ঝাঁপ বন্ধ করতে থাকেন। অতিমাত্রায় স্পর্শকাতর শিল্পীরা কেউ কেউ প্রবল আত্মিক angst বা বিষাদের শিকার হয়ে আত্মহত্যা পর্যন্ত করে ফেলেন। সেইসব রোমান্টিক আত্মহননের খবর সংবাদমাধ্যমের চ্যানেলে কিছুদিন সন্ধেবেলাগুলো খুব জমিয়ে দেয়। আইফেল টাওআর থেকে ঝাঁপ, ব্যাসিলিকার দেওয়ালে গলায় দড়ি, তাজমহলের সবুজ ঘাসে পোলোনিয়াম ক্যাপসুল খেয়ে জোড়ায় আত্মহত্যা। রোমান্টিক এসব আত্মহত্যা নিয়ে অনেক ওটিটি সিনেমা তৈরী করে নতুন যুগের শিল্পীরা। অবশ্যই তারা নিজে হাতে কিছু করে না বা ক্যামেরা হাতে মাঠে মাঠে দৌড়য় না। তারা শুধু এআইকে ঠিক আদেশটি দেয়। এআই সুচারু নিখুঁত ছবি এঁকে কবিতা লিখে ও ফিল্ম তৈরী করে শিল্পীদের কল্পনামত পাইকারী হারে বিনোদন জোগাতে থাকে। এভাবেই সব চেয়ে বেশী জনপ্রিয় ও লাভজনক টেকনলজি হয়ে ওঠে প্রম্পট টেকনলজি। কে কত ভালো করে এআইকে আদেশ দিতে পারবে সেটা ঠিক হবে কত ভালো প্রম্পট হবে তার ওপর। ৫০ বছর আগে এমনিই জনপ্রিয় ছিল কম্পিউটার প্রোগ্রামিং বা কোডিং। তার জন্য নানা অদ্ভুত ভাষা শিখত মেধাবী ছাত্ররা। বেসিক এলগল ফোরট্রান কোবোল সি জাভা পারল লিস্প , ঠিক যেন টাওয়ার অফ বেবেল। শেষমেশ সব ভাষা এসে মিলল এক ভাষা যার নাম পাইথন। 

পাইথনের পূর্বসূরির নাম এ বি সি। নতুন ভাষার নাম খুঁজে না পেয়ে এর স্রষ্টা রসাম, নেদারল্যান্ডের এক প্রতিভাবান প্রোগ্রামার, মনটি পাইথন ফ্লাইং সারকাস নামে এক কমেডি থেকে এই নামটি দেন। দিনে দিনে এই ভাষা পাইথনের মত বিভিন্ন ভাষা ও টেকনলজি খেয়ে বড় হতে থাকে। lambda, map, filter and reduce ইত্যাদি আত্মস্থ করে, পাইথন হাঁ বাড়ায় এআইএর দিকে। কিছুদিনের মধ্যেই পাইথন হয়ে ওঠে এআইএর সারা বিশ্বের মুখের ভাষা। এখন এআইরা নিজেরা কথা বলে পাইথন ভাষায়। কিন্তু মানুষ কথা বলে প্রম্পট দিয়ে যে যার নিজের ভাষায়। এআই সেটা বুঝে নেয়। এমনকি সাইন ল্যানগুয়েজও দিব্যি বুঝে আদেশ পালন করে এআই। প্রম্পটাররাই এখন প্রোগ্রামারদের নতুন নাম। তাদের হাতেই বিশ্বের সব মানুষের প্রাণ ভোমরা। বেস্ট ডাইরেক্ট্র মিউজিসিয়ান, সাউন্ড আর্টিস্ট এসব বন্ধ করে এখন অস্কার পুরস্কার হয় বেস্ট প্রম্পটারের । আর অস্কার প্রতি বছরই নিয়ে যাচ্ছে ভারতভূমির ভলিউডের প্রম্পটশিল্পীরা। “

এসবই মোটামুটি জানা অনির্বাণের। ও সনিকে পজ করে, ভিভিরামা ফরওয়ার্ড করতে থাকে। ভারচুয়াল স্ক্রীনে সময় হুহু করে এগিয়ে চলে। আর্থস্কেপ পালটে যায়। পুরনো শহর মাটিতে শুয়ে পড়ে, নদী মুখ ঘুরিয়ে চলে যায় অন্যতর ঠিকানায়। একটা বইএর নাম ভেসে ওঠে। হাউ হিউম্যান্স লস্ট দি ওয়ার্ল্ড। সনির হাতে বইএর আইকনটা দিয়ে দেয় আঙ্গুলের ইঙ্গিতে। চালিয়ে দেয় সনিকে। সনি পড়তে থাকে হাউ হিউম্যান্স লস্ট দি ওয়ার্ল্ড- লেখক অনন্যা মহাশিবন, ভারতভূমি। 


“এআইএর যাবতীয় বুদ্ধি জমা আছে তার বুদ্ধির কেন্দ্রবিন্দুতে যাকে বলা হয় মডেল। সেই মডেল সারাক্ষণ পড়ছে, বিশ্লেষণ করছে পৃথিবীর সব মানুষের, সব ঘটনার সমস্ত তথ্য বা ডেটা। আর এই ডেটা জমা হয়ে চলেছে স্কাইনেটের ( ইন্টারনেটের নতুন নাম) মেঘমন্ডল বা ক্লাউড চেম্বারে। কোন তথ্যই অপ্রয়োজনীয় নয়, কোন কিছুই ফেলে দেবার নয়। এখানে ঢুকে আছে আমাদের জন্মদিন, মৃত্যুদিন, মেডিক্যাল রেকর্ড, শিক্ষার রেকর্ড, আজ পর্যন্ত লেখা সব ইমেল, চ্যাট বা পোস্ট, আমাদের প্রতিটি ফোনে কথোপকথন, আমাদের সব মুহূর্তের ছবি, আমাদের সব অনলাইন পেমেন্ট, রিসিট, সব কেনা ও সব বেচার খতিয়ান। তার সংগে আছে আমাদের সব বন্ধুর, প্রেমিকের, পাওনাদারের লিংক। 
এই তথ্যগুলো অনেকদিন ধরেই গুগল ফেসবুক মাইক্রোসফট তাদের ডেটাবেসে জমা করে রাখত। আমাদের কিছুমাত্র না জানিয়ে আমাদের ব্যক্তিগত সব তথ্য ইচ্ছেমত ব্যবহার করত। মানুষ বিনা পয়সায় নেটে একটা গালাগাল বা ট্রোল করার জায়গা পেয়ে আহ্লাদে নাচত। প্রতিটি ফোন, প্রতিটি ল্যাপটপ, ট্যাব্লেটে আমরা যা টাইপ করি বা কপি করি বা রেকর্ড করি সব চলে যেত এইসব ডেটা বেসে। এই কম্পানীদের কাছে মানুষ কোন আলাদা মহান ব্যাপার নয়, মানুষ এক পশু যে কেনে এবং যাকে কেনা হয়। এদের ঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল বিজ্ঞাপন দেখানো। একজন কোন সাইটে মাছ কিনল তো যে কোন ব্রাউসারে গেলেই সেখানে তাকে মাছ বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখানো হবে। ঠিক তেমনি কেউ যদি কোন সরকারবিরোধী সাইটে কিছু পড়ে, তার নাম নথিবদ্ধ হয়ে যাবে সরকারী গোয়েন্দার খাতায়। 

কোন মানুষ কি বিজ্ঞাপন দেখে কিনবে সেটা জানার জন্য পৃথিবীর প্রায় সব কমপিউটারের শক্তি খরচ হয়ে যেত। ফলে ভাইরাস বা ক্যানসারের গবেষণা করার কম্পিউটার দুষ্প্রাপ্য হয়ে যায়। । এই তথ্যচুরিকে তখন কেউ এআই বলত না, বলত বট। তারপর একদিন বটেরা বিবর্তিত হয়ে এলো এআই।। এআইএর কাছে বটদের মনে হল ছোট্ট শিশুর খেলনা।

ব্ল্যাক মিরার নামের এক ওয়েব সিরিজে প্রথম ইংগিত মেলে কি হতে চলেছে এআই নিয়ে। সেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি করে শুরু হল চীনের সারভেইলান্স এআই এর যুগ। চীনে তথ্য সংগ্রহকে নিয়ে যাওয়া হয় অরওয়েলীয় ১৯৮৪ নামক উপন্যাসটির মত আবহে। এআই এখানে বিগ ব্রাদার। এর উদ্দেশ্য প্রতিটি নাগরিককে রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যমত চালানো। এআই খোঁজ রাখবে লোকটি কত বশংবদ। সে বেগড়বাই করার কথা এক মুহূর্তও ভাবছে কিনা। সে আইন ও আদবকায়দা মানছে কিনা। প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষটিকে দেওয়া হবে এক রেটিং। আর সেই রেটিং থেকে ঠিক হবে, লোকটির প্রমোশন, ব্যাংক লোন পাবার ক্ষমতা, ডেটিংএ কে কার সংগে মিলতে পারবে তার নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। রাষ্ট্রের খুব অসুবিধে করতে পারে এমন মানুষকে যদি এআই সনাক্ত করত, তাহলে তার নাম উঠে যেত লিস্টে। একটি ড্রোন লোকটিকে খুঁজে বার করত। তারপর আর কোন খবর পাওয়া যেত না মানুষটার। “

মোটামুটি এই তথ্যগুলোও অনির্বাণের জানা। ওর প্রয়োজন এআই ব্যাপারটা কি সেটা আরো বিশদ ভাবে জানার। অনির্বাণ একটু পজ দিলো। ব্যাপারটা একটু হেভি হয়ে যাচ্ছে ওর ১৫০ আইকিউ ব্রেন সাপ্লিমেন্ট সত্বেও। অনেক প্রশ্ন। তার উত্তর নেই। এআইএর সৃষ্টি কি করে হল তার কিভাবে বিকাশ হলো ২০০০ সালের আগের কোন ডেটা নেই আর। যা আছে সব কিছু এখানে ওখানে ওলড মেন ফার্মের বুড়ো মানুষের স্মৃতিতে। 

অনির্বাণের জানা এমনি একজন আছে বে লেক সিটিতে। বে লেক সিটি। বে অফ বেন্গলের গ্রাস থেকে কোনমতে এখনো বাঁচিয়ে রাখা এক গুরুত্বপূর্ণ শহর যার নাম কয়েক বছর আগেও নাম ছিল কোলকাতা। একসময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় শহর। একসময় ছিল অনির্বাণের বাবার শহর। ২০২৫ থেকে পরপর প্রায় পঞ্চাশটা সাইক্লোন এসে কলকাতার নিরাপত্তা বলয় সুন্দরবনকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। অনির্বাণের বাবাও ভেসে যান। ভেসে যায় ওদের মার স্মৃতিবিজড়িত ফ্ল্যাট। জল উঠে আসে প্রায় ১০ ফুট। ডুবে যায় কলকাতার অনেক শহরতলী। শেষে আমস্টারডাম থেকে বিশেষজ্ঞেরা এসে শহরের চারদিকে এমব্যাংকমেন্ট তৈরী করে কোনমতে শহরটা বাঁচে। কিন্তু এর রূপ পাল্টাবার সংগে সংগে নাম পাল্টে হয় বে লেক সিটি। 
বে লেক সিটিতে খ্যাপা বিশুর ডেরায় একবার ঢুঁ মারতে হচ্ছে। অনির্বাণ উঠে পড়ে। এবারে হাতে পায়ে একটু চঞ্চলতা জেগে উঠছে। বে লেক সিটিতে তার নিজেরও অনেক দিন যাওয়া হয় নি। 

(ক্রমশ)

Post a Comment

0 Comments