জ্বলদর্চি

যদিদং /পুলককান্তি কর

যদিদং
পুলককান্তি কর 

ঘুম ভাঙতেই অবন্তিকা টের পেল মাথাটা খুব ধরে আছে৷ ক'দিনের টানা ধকলের উপর সারা রাত ঘুম হয়নি তার। বাপ রে, যুবক কোনও ছেলে এমন নাক ডাকতে পারে ! পাশে তাকিয়ে দেখল ওর বর সোমনাথ এখনও ঘুমোচ্ছে। এ মা, বালিশের তোয়ালে তো মুখের লালায় ভিজে গেছে ! হে ভগবান ! সারা জীবন এমন মানুষের সাথে কী করে ঘর করবে সে ? 
গতকালই বৌভাত হল অবন্তিকার। সোমনাথ ওকে দেখতে যখন ওদের বাড়ি এসেছিল, এক ঝলক দেখেই মুখটা শুকিয়ে গিয়েছিল তার। প্রতিটি মেয়েই কৈশোর পার হলে আবছা হলেও নিজের ভাবী বরের একটা চেহারা অবচেতনে এঁকে নেয়; এর কোনও কিছুই যে তার সাথে মেলে না। কালো, বেঁটে, নাদুস-নুদুস টাইপ। মুচ্ছড় মার্কা গোঁফ। চুলটা আবার বেশ মিঠুন স্টাইলের। যোগ্যতা হল সরকারি অফিসের বড় চাকরি। নিজের বাড়ি। নিজের গাড়ি। বাড়িতে শুধু মা। অন্য ভাই-বোন নেই। বাবা, মা, দাদা সবাই বললেন, নির্ঝঞ্ঝাট ফ্যামিলি । মেয়ে রাজার হালে থাকবে। এ পাত্র হাতছাড়া করা চলবে না। সবাই তাড়াহুড়ো শুরু করলেন। বৌদি একবার খাবার টেবিলে বলল, 'খুশি'র পছন্দ হল কি না একবার জিজ্ঞাসা করে তো দেখো ! 
-- ওর আবার কী পছন্দ ! তাহলে এতদিনে কী আর কাউকে পছন্দ করে নিত না ? দাদা বললেন। 
-- কিন্তু সারাজীবন যার সাথে থাকবে, তার সম্বন্ধে ওর মতামতটা অন্তত... 
-- মতামত নিয়ে কী হবে বৌমা ? মত থাকলেও ওখানে বিয়ে হবে, না থাকলেও তাই। এমন সম্বন্ধ সহজে পাওয়া যায় না৷ একটু কঠোর মনে হল বাবার গলা। 
-- কেন, খুশি কী ফেলনা ? নাকি ওর বয়েস গড়িয়ে যাচ্ছে ? ও শিক্ষিত, দেখতে ভালো। আরও ভালো সম্বন্ধও তো পাওয়া যেতে পারে ? 
-- ছেলেদের আবার দেখতে কী ? ভালো রোজগারই  হল ছেলের যোগ্যতা। দেখা নিয়ে কী ধুয়ে খাবে ? আর এই ছেলেটি দেখতেই বা কী এমন খারাপ ? ফর্সা রঙ। আমরা তো আর ওর খারাপ চাই না৷ ভালো ঘরে বিয়ে দিচ্ছি। জলে তো আর ফেলে দিচ্ছি না ! 
-- কিন্তু দু- চারটে দেখলেই বা কী এমন দোষ হয়ে যেত ? দেখলেই তো আর বিয়ে দিতে হচ্ছে না! 
-- বৌমা, তোমার এত আপত্তি কেন ? খুশি কি কিছু বলেছে ? 
-না। 
-- তাহলে তো সব মিটেই গেল৷ শাশুড়িও তাঁর মতামত জানিয়ে দিলেন।
রাতে শোবার ঘরে দাদা একটু রসিকতার ঢঙেই বললেন, এমন করে বোনের পক্ষ নিচ্ছিলে যেন তোমার বাবা-মা আমার সাথে  তোমাকে জোর করেই গছিয়ে দিয়েছিল!
-- দিয়েছিলই তো ! 
-- তা আমার যোগ্যতা কীসে কম ছিল শুনি ? দেখায় না টাকায় ? 
সেদিন আর রঙ্গ রসিকতায় মন ছিল না বৌদির। ভালো কথায়, কটু কথায় চিড়ে ভিজল না কোথাও। অবন্তিকার বিয়ে হয়ে গেল সোমনাথের সাথেই। 
সকালে উঠে চান করেই নীচে গেল সে। শাশুড়ি অলরেডি দুজনের জন্য চা তৈরি করে ফেলেছেন। ওকে দেখে একগাল হেসে বললেন, 'বৌমা, খোকার চা টা উপরে নিয়ে যাও। ওখানেই দুজনে মিলে খাও গে। বিনুর মা এলে জলখাবার উপরে পাঠিয়ে দেব।' 
-- আমি এসে জলখাবার করছি মা। 
-- না বৌমা, সবই তো তোমাকেই একদিন বুঝে নিতে হবে৷ ক'টা দিন একটু বিশ্রাম করো। অষ্টমঙ্গলাটা অন্তত যাক। তারপর হেঁসেল ঠেলো। 
 
লোকটার সাথে জলখাবার পর্যন্ত কী কথা বলবে সে ? ভেতর ভেতর বড় অস্বস্তি হল তার। এই ক'দিন ভাববাচ্যেই কথাবার্তা সেরেছে সে। এখন ঘুম ভাঙাতে গিয়ে কী বলবে ? ওঠো ! উঠুন ! নাকি ঠেলা দিয়ে দেখবে। ঠেলা দিতে গেলে যদি হাত টাত টেনে ধরে ? বড় দ্বিধা নিয়ে উপরে এসে দেখল, ঈশ্বর তার সহায় হয়েছেন। সোমনাথ ঘুম থেকে উঠে বসেছে। 
-- গুড় মর্নিং অবন্তিকা। 
-- গুড মর্নিং। 
-- ঘুম ভালো হয়েছে রাতে ? 
-- হ্যাঁ।
-- ছোটবেলা থেকে একা শুই। সবাই বলে আমার শোওয়া নাকি খুব খারাপ। হাত পা ছুঁড়িনি তো ? 
   ঘাড় নেড়ে না বলল অবন্তিকা। 
-- তোমার যদি আমার সম্বন্ধে কিছু জানার থাকে, স্বচ্ছন্দে জিজ্ঞাসা করতে পারো। সোমনাথ একটু ঘনিষ্ঠতার সুরে বলল। 
অবন্তিকা চুপ করে রইল। 
-- কী গো, কিছু জানার নেই ? 
--  না। 
-- আচ্ছা। আমিই না হয় নিজের সম্বন্ধে তোমায় কিছু জানাই। আমি আর আমার মা এই বাড়ির দুই আদি প্রাণী। বাবা মারা গেছেন প্রায় বিশ বছর। আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন৷। মা ই আমাকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছেন৷ বিনুর মা তারও আগে থেকে আমাদের বাড়িতে আসেন। আমি তাঁকে পিসি বলি। প্রায় আমাদের ঘরেরই লোক। আমি নিয়মিত ধুমপান করি৷ মাসে বন্ধুদের সাথে একবার মাত্র মদ্যপান। তবে মাতলামি করি না। ইনফ্যাক্ট, বেসিক্যালি আমরা কেউ খুব একটা খারাপ লোক নই। কদিন গেলে এই ব্যাপারটা তুমিও নিশ্চয়ই রিয়ালাইজ করবে। 

কী বলে লোকটা ! মদ তো দুরের কথা, বিড়ি সিগারেটও দু'চক্ষে দেখতে পারে না সে। ও পছন্দ করে না বলেই আদিত্য সিগারেট খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছিল। কী ভুল করেছে সে ! আদিত্য তো প্রায় বিবাগি হয়ে গিয়েছিল ওর জন্য। ওর প্রস্তাবে রাজি হলেই ভালো হতো মনে হচ্ছে। কিন্তু আদিত্যও রাতের বেলা নাক ডাকে না - কে গ্যারান্টি দিতে পারে ? মনে একটু নিরাময় পেল সে। 
-- অবন্তিকা, তোমার হবি কী ? 
-- গান শোনা ।
-- কী গান? 
-- রবীন্দ্র সংগীত। 
-- ওই প্যানপ্যানানি ভালো লাগে তোমার ? দূর, কেমন যেন মরা সুর ! আমার একদম ভালো লাগে না। তবে তোমার যখন ভালো লাগে, একটা তালিকা করে দিও। সিম্ফনি থেকে ভালো ডিভিডি আর সিডি নিয়ে আসবো। 
এ কি মানুষ ? রবীন্দ্র সংগীত ভালো লাগে না-- এমন মানুষকে জীবনসঙ্গী কিছুতেই মানতে পারবে না সে। নিশ্চয়ই লোকটার মধ্যে কোনও গভীরতা নেই, কোনও অনুভব নেই। আদিত্য তো কমসে কম রবি ঠাকুরের কবিতা ধার করে ওকে প্রেমপত্র লিখেছিল। 
-- আচ্ছা, সারা জীবন তোমায় অবন্তিকা ডাকতে কষ্ট হবে৷ কোনও ডাক নাম নেই তোমার ? 
- আছে৷ 
-- বাবা মা কী বলে ডাকেন তোমায় ? 
-- চুপ । 
-- চুপ করব কেন ? কী হল ? 

-- না, না। বাপি আমায় চুপ বলে ডাকে। 
-- এ আবার কেমন নাম ? যখন তোমায় চুপ থাকতে বলার দরকার, তখন উনি কী বলবেন ? মজা করল সোমনাথ। 
-- আমি কথা বললে সবাই খুশি হয়। আমাকে চুপ থাকতে কেউ বলে না। 
-- তাও ? 
-- তাহলে একটা শব্দ জুড়ে দিতে হবে -- চুপ করো বা চুপ থাকো। বেশি রাগের মাথায় থাকলে, চোপ!
-- থাক বাবা, দরকার নেই। বড় নির্দয় শোনাবে। অন্য কোনও নাম বল। দাদা-বৌদি কী নামে ডাকেন ? 
-- খুশি। 
-- বাঃ, এটা বেশ ভালো নাম। এই নামে আমি তোমায় ডাকব ? 
-- হুঁ। নৈর্ব্যক্তিক ঢঙে বলল অবন্তিকা। 
-- হুঁ মানে ? আমি তোমায় ব্যাপারটা অবগত করাচ্ছি না, তোমার অনুমতি নিচ্ছি। 
কথার কী মানে বোঝে না লোকটা ? সব কথা কী পুর্ণ বাক্যে জবাব দিতে হবে নাকি ? মনে মনে বিরক্তি বোধ করল সে। তাছাড়া কথার মধ্যে সাধু শব্দ। নিশ্চয়ই দেখনদারি আছে লোকটার। মুখে বলল 'যে কোনও নামে ডাকলেই সাড়া মিলবে।' 
-- আজ একটু শপিং করতে যাবে নাকি ? 
-- না ।
-- না কেন ? শুনেছি মেয়েরা শপিং করতে যাওয়ার কথা শুনলে একপায়ে খাড়া থাকে। 
-- আমি থাকি না। 
-- তাহলে কী ভালো লাগে তোমার ? রেস্টুরেন্টে যাবে ? 
-- না ।
-- তাহলে সিনেমা যাই চলো। কাছেই মাল্টিপ্লেক্স আছে। 
-- আজ থাক। 
সব কিছুতেই প্রত্যাখ্যাত হয়ে চুপ করে গেল সোমনাথ। কিছুক্ষণ বাদে বলল, এ বিয়েতে কি তোমার মত ছিল না খুশি ? 
-- এ কথা উঠছে কেন ? 
-- কেন জানি মনে হচ্ছে। তুমি কি বিয়ের আগে কাউকে ভালোবাসতে ? 
-- না ।
-- আমার কিন্তু একটা অ্যাফেয়ার ছিল। 
-- তাহলে বিয়ে হল না কেন ? 
-- আমি চেয়েছিলাম। মেয়েটা রিজেক্ট করে দিয়েছে৷ 
-- কেন ? 
-- বোধহয় দেখতে-শুনতে ভালো নই বলে। আজ এসব থাক। এসব বৃত্তান্ত পরে বলা যাবে। শোনো, অষ্টমঙ্গলার পরের দিনই টিকিট কাটা আছে জানো তো ? 
হনিমুনে সিমলা, কুলু, মানালি বেড়াতে যাওয়ার কথা আগে থাকতেই ঘোষণা করে রেখেছিল সোমনাথ। বিয়ের আগে বৌদির মুখেই শুনেছে সে। তাই আস্তে করে ঘাড় নাড়ল। 
-- তাহলে শোনো, তোমার যা যা নেবার সব বের করে রেখো, আমি প্যাকিং করে দেব৷। অষ্টমঙ্গলা সেরে বাড়িতে এসে আর গোছানোর দম থাকবে না কারোর। তাছাড়া তাড়াছড়োয় ভুলও হয়ে যেতে পারে। জলখাবার খেয়েই উঠে পড়ো তাহলে। 

🍂
এ তো দেখি তাড়ার ডগায় রাখবে সারা জীবন ! এত গোছানোগাছানি ভালো লাগে না তার। এখনও চারদিন হাতে আছে। এত তাড়াতাড়ি কী গুছাবে সে ? আধ ঘণ্টা আগে গোছগাছ করলেই তো হয়ে যায় !

এই লোকের সাথে আটদিন বাইরে বেড়ানোর কথা শুনে আবার মনটা খারাপ হয়ে গেল তার। 

২ 
রাত প্রায় একটা দেড়টা হবে। এ সি টু টিয়ারের লোয়ার বার্থে শুয়ে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছিল অবন্তিকা। কিছুতেই ঘুম আসছে না তার। উপরের বার্থে সোমনাথের নাকের আওয়াজ হাল্কা শুরু হয়ে গেছে। বাইরে চারপাশটা যেন জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে। মোটা কাচের ভেতর থেকে ভালো ঠাহর হয় না বলে খানিক আগে টয়লেট যাওয়ার পথে দরজা খুলে বেশ কিছুক্ষণ বাইরে তাকিয়েছিল সে। জ্যোৎস্না দেখলেই তার কেমন পাগল পাগল লাগে। মনে হয় সব জ্যোৎস্না যেন ফুরিয়ে যাচ্ছে, ভোগ করে উঠতে পারছে না সে। শুয়ে শুয়ে পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ল তার। স্কুলের কথা, কলেজের কথা। বরাবরই মেয়েদের স্কুলে পড়েছে সে। যখন কলেজে এল, তখন কো-এড। কত ছেলে ইনিয়ে বিনিয়ে প্রেম নিবেদন করেছে তাকে। তবু কেন যেন ছোটবেলা থেকে এভাবে বিয়ের পক্ষপাতি ছিল না সে। একবার কলেজের এক্সকারসানে যাওয়ার সময় এমনই চাঁদনি রাত ছিল। সব মেয়েরা পাশাপাশি বার্থে শুয়েছিল। অবন্তিকা একটা সাইড লোয়ারে পা ছড়িয়ে আকাশ দেখতে দেখতে গুনগুন করছিল “আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে”। এমন সময় আদিত্য এসে বসল তার পায়ের কাছে৷ 
-- কী রে, ঘুমোসনি যে বড় ! 
-- এই একটু আকাশ দেখছিলাম। তুইও তো ঘুমোসনি। অবন্তিকা বলল। 
-- একটা গজলের ক্যাসেট শুনছিলাম। 
-- কোনটা ? 
-- লাভ। তুই শুনেছিস ? 
-না। 
-- তোর গজল শুনতে ভালো লাগে ? 
-- খুউ-ব। 
-- ঠিক আছে, আমার এই ক্যাসেটটা তোকে দিয়ে যাচ্ছি। শুনে দেখিস। 
উঠে যাওয়ার আগে ক্যাসেটের ভেতর একটা চিঠি রেখে গিয়েছিল সে। বেশ কাব্য করে লেখা। উত্তর অবশ্য অবন্তিকা দেয়নি। কাউকে এই চিঠিটার কথা বলেওনি। ওকে কেউ ভালোবাসে, সেটা তো অগৌরবের নয়। এই নিয়ে আদিত্য লজ্জা পাক বা কেউ ওকে ছোট করুক, চায়নি সে। তবে চিঠি পেয়ে এমন ভান করেছে যাতে আদিত্য বুঝে যায় তার অসম্মতি। ওকে যে অবন্তিকার খারাপ লাগত তা নয়, তবু... । উপরে তাকিয়ে দেখল সোমনাথ অঘোরে ঘুমোচ্ছে। ওর নাক ডাকার তীব্রতাটা যেন আরো বেড়েছে। তার উপর আশেপাশের বার্থ থেকে আরও কতকগুলি নাক এসে যোগ দেওয়ায় কোরাসটা বেশ ভালোই জমেছে। যেন নানান সুরে নাকের ছটা ! অল্প একটু হাসি পেল তার। একসঙ্গে এত রকম নাকের ডাক আগে কখনও শোনেনি সে। আর যাই হোক, আজ রাতে আর ঘুম হবে না তার। কী করবে ভাবতে ভাবতে চুপ করে চোখ বুজে শুয়ে রইল সে। কতক্ষণ এভাবে ছিল, ঠিক মনে নেই। হঠাৎ বিকট একটা আওয়াজ শুনল সে৷ কোথা থেকে কত কী যেন এসে পড়ল তার গায়ে, মাথায়। তারপর আর কিছুই মনে নেই তার। যখন জ্ঞান হল, দেখল একটা হাসপাতালে স্ট্রেচারে শুয়ে। একজন সিস্টারকে দেখে জিজ্ঞাসা করল, আমি এখানে কেন ? কী হয়েছে আমার ? 
-- ট্রেন অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। আপনার মাথায় চোট লেগেছিল। তবে এখন সব ঠিক আছে৷ কাল আপনাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। 
-- কবে হয়েছিল ? 
-- কাল রাতে। 
-- কিন্তু আমার হাজব্যান্ড কই ? উনি কি বাইরে আছেন ? 
-- আপনার হাজব্যান্ড তো আপনাকে এখানে আনেননি। গ্রামের লোকজন নিয়ে এসেছিল। 
ধক করে উঠল অবস্তীর বুক। কোথায় গেল সোমনাথ ? ওর কিছু হয়নি তো ? সিস্টারকে বলল, আমার 
মোবাইল ? 
-- সাথে তো আপনার কিছুই ছিল না। 
-- তবে একটা ফোন করতে দেবেন ? 
-- নাম্বার বলুন। 
বাড়ির নাম্বার বলল অবন্তিকা। সোমনাথের নাম্বার মুখস্থ নেই তার। বাবা বললেন, খবর পেয়েই দাদা রওনা হয়েছে। হেল্প লাইনে ফোন করেও সোমনাথের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। কান্না পেয়ে গেল তার৷। ওর যদি খারাপ কিছু হয়ে থাকে ? কিছুক্ষণের মধ্যে দাদা এসে হাজির। জিজ্ঞাসা করল, কেমন আছিস তুই ? 
-- ওর কোনও খবর পেলি ? 
-- না। হেল্প লাইনে এইমাত্র ফোন করলাম। ওরা স্ট্রেস করতে পারছে না। 
-- চল দাদা, ওখানেই যাই। যদি ট্রেনের মধ্যে থাকে ? 
-- তুই কোথায় যাবি পাগলি। ধৈর্য ধর। আমি দেখছি। 
-- না, দাদা। আমি যাব। আমায় নিয়ে চল। পাগলের মতো করতে লাগল সে। 
-- ঠিক আছে৷ তুই একটুখানি বিশ্রাম নে। আমি পাশাপাশি অন্য হাসপাতালগুলোর খবর নিয়ে দেখি। পুলিশেও একটা ডায়রি করা দরকার। তুই হাসপাতালের খাবার খেতে পারবি ? নাকি বাইরের থেকে কিছু আনব? 
-- যতক্ষণ না ওর খবর পাই, আমি কিছুই মুখে দেব না দাদা। 
-- তা বললে কী হয় বোন ? নিজের শরীরের দিকেও তো নজর দিতে হবে। এমনি তোর শরীরটা ভালো নেই। কিছু খেয়ে নে। 
-- তুই আগে যা দাদা, ওর খবর নে। শোন না, ওর মাকে কি খবর দিয়েছিস ? 
-- আমরা কিছুই জানাইনি। তবে এতক্ষণ তো জেনে যাওয়া উচিৎ। 
-- আমার শাশুড়ি পেপার পড়েন না। টিভির খবরও দেখেন না। সুতরাং নিজের থেকে জানানোর কোনও দরকার নেই। বাড়িতে কেউ নেই। উনি সামলাতে পারবেন না। 
-- ঠিক আছে৷ আমি একটু থানায় যাই। 
ঘণ্টা দুয়েক বাদে দাদা ফিরে এলেন। সোমনাথের খবর মোটামুটি পাওয়া গেছে। চেহারা ও পোষাকের বর্ণনা থেকে যা জানা গেল, ওইরকম একজনকে জ্ঞানহীন অবস্থায় সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে আজই সকালবেলা। অবস্থ গুরুতর। অপারেশন করা দরকার। 
-- দাদা, ও বেঁচে আছে তো ? 
-- নিশ্চয়ই আছে৷ ঘাবড়াস না। সব ঠিক হয়ে যাবে। 
-- আমায় এখুনি নিয়ে চল। 
-- তুই গিয়ে কী করবি ? তোকে তো আজ ছাড়বে না৷ আমি বরং দেখে আসি ওটা সোমনাথ কি না। 
-- তুই ডিসচার্জ করিয়ে নে দাদা। আমি যাবই। 

নিজেকে শক্ত করে নিল অবন্তিকা। সোমনাথের খারাপ কিছু হতে পারে না। কিছুতেই তাকে হারিয়ে যেতে দেবে না সে। মনে মনে ঈশ্বরকে বলল, আমার সব আয়ু ওকে দিয়ে দাও ঠাকুর, ও যেন সুস্থ থাকে।

Post a Comment

0 Comments