জ্বলদর্চি

দূরদেশের লোক গল্প—আলবেনিয়া (ইউরোপ)কচ্ছপের কর্মফল /চিন্ময় দাশ

চিত্র- চন্দ্রিমা ঘোষ

দূরদেশের লোক গল্প—আলবেনিয়া (ইউরোপ) কচ্ছপের কর্মফল

চিন্ময় দাশ


একদিন কচ্ছপের ভারি খিদে পেয়েছে। আর, খিদে বলে খিদে। পেট যেন চুঁই-চুঁই করছে। হঠাৎই ঈগলের কথা মনে পড়ে গেল। অনেক দিনের ভাবসাব তার সাথে।

ঈগলের বাড়ি পৌঁছেছে, ঈগল দেখে বলল—আরে, কচ্ছপভায়া যে। হঠাৎ কী মনে করে?

--আর বোল না, ভাই। কচ্ছপ বলল—ঘরে কিচ্ছুটি নাই। এদিকে খিদেয় মরে যাচ্ছি আমি।

শুনে ঈগল খুব খুশি। বলল-- কপাল ভালো বলতে হবে তোমার। আমরা সবাই একটা ভোজসভায় যাচ্ছি। দারুণ খাওয়া-দাওয়া হবে। তুমিও চলো আমাদের সাথে। 

ভোজসভার নামে কচ্ছপের মন তো নেচে উঠেছে। বলল—খুব ভালো কথা। তা কোথায় তোমাদের ভোজসভা? 

--বিধাতা পুরুষ দিচ্ছেন ভোজসভা। সব পাখিদের সেখানে নেমন্তন্ন।

যতটা ফূর্তি হয়েছিল মনে, উত্তর শুনে ততটাই হতাশ কচ্ছপ—ওরে বাবা, বিধাতা তো থাকেন সেই আকাশেরও ওপরে। তাছাড়া ডেকেওছেন পাখিদের। সেখানে আমি পৌঁছাব কী করে? 

ঈগল হাসিমুখ করে বলল—সে ভাবনা আমার ওপর ছেড়ে দাও, সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি আমি। 

সাড়া পড়ে গেল ঈগলদের পাড়ায়। ঈগলরা হোল দুনিয়ার সবচেয়ে বড় পাখি। বিশাল ডানা তাদের। পালকও বড় বড়। সবাই একটা করে পালক খুলে দিল কচ্ছপকে। 

আঠা দিয়ে ভালো করে সেঁটে, ইয়াব্বড় দুটো ডানা তেরি হোল কচ্ছপের পিঠে। কিছুটা ওড়াউড়ি করে, পরখ করে দেখেও নেওয়া হোল, কচ্ছপ উড়তে পারবে কিনা।

ঈগলরা চলেছে দল বেঁধে। কচ্ছপও দিব্বি চলেছে তাদের সাথে। খানিক দূর গিয়েছে। কচ্ছপ বলল—শোন, তোমরা সবাই। এখন ডানা লাগিয়ে নতুন চেহারা হয়েছে আমার।  তাহলে নামটাও নতুন হওয়া উচিত। এখন আমার নাম—কুলু। সেই নামেই ডাকবে আমাকে। নীচে ফিরে আসবার পর, আবার সেই পুরাণো কচ্ছপ নামই হবে আমার। 

এতে আপত্তি করবার কী আছে? সবাই সায় দিয়ে দিল। কেউ জানতেই পারল না, মনে মনে একটা ফন্দি এঁটে রেখেছে কচ্ছপ। কচ্ছপ ভালো করেই জানে, সে দেশে ‘কুলু’ কথার মানে হোল—সব, সবকিছু। 

আকাশে পৌঁছে বেশ আদর-খাতির পেলো সবাই। যত্ন করে বসানো হোল আসনে। বড় বড় গামলায় খাবার-দাবার ডাঁই করে রাখা। একেবারে ভূরিভোজের আয়োজন। সব দেখেশুনে লালা ঝরছে কচ্ছপের মুখে। একেবারে সামনের আসনে গিয়ে বসে আছে সে। সবাই তাকে দেখছে আর অবাক হয়ে যাচ্ছে। এ আবার কোন পাখি? সবার থেকে আলাদা। দেখিওনি কখনও আগে।

সবাই বসে গিয়েছে। এবার পরিবেশন শুরু। খাবারের ঝুড়ি নিয়ে একজন এগিয়ে এসেছে। সামনের আসনেই ছিল কচ্ছপ। সে জিজ্ঞেস করল—এই খাবারটা কার জন্য?

লোকটা বলল—কার জন্য মানে? কুলু-র জন্য।

আসলে লোকটা বোঝাতে চেয়েছে, সবার জন্য। এই ফন্দিটাই করে রেখেছে কচ্ছপ। সে বলে উঠল—তাহলে, এখানে দাও। আমিই তো কুলু। ঈগলদের দিকে তাকিয়ে বলল—কীগো, বলো তোমরা সবাই। কুলুই তো আমি, না কি?

কচ্ছপের ফন্দি তো কেউ জানে না। তারাও সায় দিয়ে বলল—হ্যাঁ, হ্যাঁ। তুমিই কুলু। 

পুরো ঝুড়িটা কচ্ছপের পাতে নামিয়ে দেওয়া হোল। আলো জ্বলে উঠল তার চোখ দুটোতে। এখন পেটে যেন তার বকরাক্ষসের খিদে। গপাগপ খেয়ে চলেছে। দেখতে না দেখতে পাতা প্রায় সাফ। দু-চার টুকরো যা পড়ে আছে, পাশের জনের দিকে এগিয়ে দিল। 

তার নাম শুনে, আর খাওয়ার বহর দেখে, লোকগুলো ধরে নিয়েছে, এই নতুন পাখিটা খেলেই সবার খাওয়া হয়ে যাচ্ছে। তারা সব খাবার এনে কচ্ছপের পাতের সামনে নামিয়ে রেখে যাচ্ছে। কচ্ছপও দেখল ভারি মজা। মুখে বাক্যটি নাই তার। চোখ তুলে চাইছেও না কারও দিকে। খাচ্ছে তো খেয়েই যাচ্ছে। খাচ্ছে আর ঢেকুর তুলছে বড় করে। ঢেকুর তুলছে আর খেয়ে যাচ্ছে হাপুস হুপুস করে। 

সবাই অবাক হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখছে কচ্ছপের খাওয়া। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ঈগলেরাও। 

একসময় খাওয়া শেষ হোল কচ্ছপের। যা কিছু বাড়তি রয়ে গেছে, সেগুলোই এগিয়ে দিয়েছে অন্য পাখিদের দিকে। সবার পেটে খিদে। অগত্যা মুখ বুজে সেই এঁটোকাটা খেয়েও নিয়েছে সবাই।

খাওয়া শেষ হলে, কচ্ছপ বলল—ভোজ তো শেষ হোল। আমরা তাহলে ফিরব কখন?

ঈগলরা কিছু বলবার আগে, একটা বুড়ো পেঁচা এগিয়ে এল সামনে। সব দেখে শুনে, ভয়াণক রাগ হয়েছে তার মনে। সে বলল—সবে ভুরিভোজ খাওয়া হোল। এখনই ফেরার কথা কেন? কিসের তাড়া আমাদের? তার আগে বরং সবাই একটু গড়িয়ে নেব। তাতে শরীরও ঠাণ্ডা হবে একটু। 

কচ্ছপ তো শুনে ভারি খুশি। এই ভারি পেট নিয়ে উড়ে উড়ে যাওয়া কম মেহনতের হোত না। ছোট্ট করে একটু ঘুম দিয়ে নিতে পারলে, শরীর বেশ ঝরঝরে লাগবে।

সে খুশি হয়ে বলল—ঠিক বলেছ, দাদা। খাসা মগজ তোমার। 

পেঁচা মনে মনে হাসল এক চোট। ইয়াব্বড় গোল গোল দু’খানা চোখ পেঁচার। চোখজোড়াকে চরকি পাক খাইয়ে পেঁচা বলল—মগজের খেলা কতটুকুই বা দেখালাম। সবটা দেখলে চমকে যাবে একেবারে। এমন আরও একটা খেলা দেখাবো না, সারা জীবনেও ভুলতে পারবে না কেউ। যাকগে, এখন কথা থাক। একটু ঘুমিয়ে নিই চলো সবাই। 

কচ্ছপ তো এটারই অপেক্ষায় ছিল। সে বলল—ঠিক বলেছ। চলো, একটু গড়িয়ে নেওয়া যাক। 

বিশাল হলঘর দেওয়া হয়েছে পাখিদের জিরিয়ে নেবার জন্য। শুতে গিয়েই, আটকে গেল কচ্ছপ। এত বড় বেখাপ্পা দুখানা ডানা নিয়ে, শোয়া ভারি মুশকিল। 

তার অবস্থা দেখে, পেঁচাই এগিয়ে এলো—এখন তো তুমি ঘুমাবে। পালকগুলো খুলে রেখে, আরাম করে ঘুমিয়ে পড়ো। যাবার বেলা, আবার জুড়ে, ডানা বানিয়ে দেওয়া হবে তোমার। 

শুনে কচ্ছপ তো গদগদ খুশি।  সে রাজি হয়ে গেল। পাখিরা এক একজন গিয়ে, নিজের নিজের পালক খুলে নিয়ে এল। কচ্ছপ এখন নিজের চেহারায়। বেশ হালকা লাগছে। আরামও বোধ হচ্ছে তাতে। সেখানেই গড়িয়ে পড়ল সে। গভীর ঘুমে ডুবে গেল পড়ামাত্রই।

ফসর-ফসর নাক ডাকতে শুরু হয়েছে কচ্ছপের। পেঁচা বলল—এই মওকা। চলো, সবাই সরে পড়ি। এখানেই পড়ে থাক হতভাগা কুলু।

🍂
কতক্ষণ বাদে ঘুম ভাঙল কচ্ছপের। চোখ খুলে তো তার আক্কেল গুড়ুম। সব ভোঁ-ভোঁ। গোটা হলঘর ফাঁকা। কেউ কোত্থাও নাই। তার মানে, সবাই চলে গেছে? 

বুকটা ধড়াস করে উঠল কচ্ছপের। এখন ফিরব কী করে? ডানা দুটোও নাই আর। বেরিয়ে লোকগুলোকে জিজ্ঞেস করল—পাখিরা সব কোথায় গো?

--কোথায় আবার? যে যার বাড়ি ফিরে গেছে। 

--সে কী? বাড়ি ফিরে গেছে মানে? আমাকে না নিয়েই?

--যাবে না? যা ব্যবহার করেছ তুমি সবার সাথে। কেন যাবে তোমাকে দয়া দেখাতে?

কচ্ছপ তাদের ধরে পড়ল—কিছু একটা উপায় করে দাও তোমরা। আমি যাতে ঘরে ফিরে যেতে পারি।

একজন খেঁকিয়ে উঠল—অত ভাববার কী আছে? এসেছিলে পরের পালকে ভর করে। এবার নিজের পায়ে ভর করে ফিরে যাও। দিয়ে দাও লম্বা করে একটা লাফ। সোজা নিজের উঠোনে গিয়ে হাজির হয়ে যাবে। 

কচ্ছপ গায়ে মাখল না খোঁচাটা। বরং তার বেশ মনে ধরেছে কথাটা। কিন্তু তার আগে একটা ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই নিরাপদে ঘরে ফিরে যাওয়া যাবে। 

কচ্ছপ সেই লোকটাকেই বলল—অনেক ধন্যবাদ তোমাকে, বন্ধু। ভালো কথা বলেছ। কিন্তু আমার বাড়িতে একটা কথা বলে পাঠাতে হবে তার আগে। তার কোন উপায় করা যাবে?

একজন বলল—যাবে, যাবে। দেখে এলাম একটা বুনোহাঁস বসে বসে গল্প করছে রসুইঘরে। সেও তো ফিরবে একটু বাদে। তাকে ডেকে আনছি। যা বলবার বলে পাঠাতে পারো। 

শুনে মহা আনন্দ কচ্ছপের। ডেকেও আনা হোল বুনো হাঁসকে। কচ্ছপ তাকে বলল— ছোট্ট একটা উপকার করে দাও আমার।

হাঁস চেয়ে চেয়ে দেখল কচ্ছপের দিকে। মনে মনে বলল—কাল তুমি যা উপকার করেছ আমাদের, সে ভোলার নয়। মুখে বলল--ছোট্ট কেন গো, বিপদে পড়েছ, বড় উপকারও করে দেব তোমার। বলো, কী করতে হবে।

--আমার বাড়িতে একবার যেতে হবে। কচ্ছপ বলল—আমার বউকে বলবে—যেখানে যত নরম জিনিষ আছে, এই ধরো লেপ বালিশ বিছানাপ্ত্র সব যেন বের করে, উঠোনে পেতে দেয়। এখান থেকে ঝাঁপ দিয়ে নামতে হবে আমাকে। ভালো করে বুঝিয়ে বোল কিন্তু।

--হ্যাঁগো, হ্যাঁ। সুন্দর করে বুঝিয়ে বলব তোমার বউকে। কিচ্ছু চিন্তা কোর না। হাঁস মনে মনে বলল—এমন করে বুঝিয়ে বলব, সুন্দর করে সাজিয়ে বিছানা পেতে রাখবে তোমার বউ। লাফ দেবার পরে, তুমিও বুঝতে পারবে। এমন উপকার পাবে, তুমি কেন, তোমার নাতিপুতি, তাদের নাতিপুতিরাও জন্ম জন্ম ধরে মনে রাখবে সবাই। এই কথা দিয়ে গেলাম। 

হাঁস ফিরে এসেছে। নিজের ডেরায় না গিয়ে, সোজা কচ্ছপের বাড়িতে এসে, হাঁক পাড়ল—দিদি, একটু বাইরে এসো। খবর আছে।

কচ্ছপের বউ বেরোতে, তাকে বলল— বিধাতার নেমন্তন্ন পেয়ে, তোমার বর গিয়েছিল আকাশে ভোজ খেতে। এতো দুষ্টু ঈগল পাখিগুলো, কী বলব। তাকে নিয়ে গিয়েছে ভোজ খাওয়াতে। ফিরিয়ে আনার কথা মনেই নাই তাদের। বেমালুম ভুলে মেরে দিয়েছে। 

বউটা তো ভড়কে গেছে—হায়, হায়। এখন কী উপায় হবে তার?

--ঘাবড়াচ্ছো কেন? তোমার বর কত বড়ো বীর, জানোই না তুমি। কাল সকালে নিজের চোখে দেখতে পাবে সব। 

বউটার মাথায় কিছু ঢুকছে না। সে বলল—খুলে বলো তো, কী বলছ।

হাঁস বলল—সেই কথাই তো বলতে এলাম তোমাকে। ঘরের যত শক্ত জিনিষপত্র আছে, সব বের করে উঠোনে পেতে দিতে বলেছে। এই ধরো খাট-পালঙ্ক, আলমারি-দেওয়ালগিরি, চেয়ার-টেবিল এইসব। ঘরে যা আছে, সব বের করে ফেলবে। সকালের আগেই সব সাজিয়ে দিও কিন্তু। ভুল না হয় যেন। 

বউটা কাজে লেগে গেল। ভোরে উঠে কাজ করার চেয়ে এখনই সেরে রাখা ভালো। দুনিয়ার যত শক্ত জিনিষ সব বিছিয়ে রেখে দিল সামনের উঠোন জুড়ে।  

তবে, বউটার মনে একটু খটকা। লাফিয়ে নামবে, তো শক্ত জিনিষ কেন? কিন্তু কী আর করা যায়? যেমনটা বলেছে, ঠিক মত করে রাখাই কাজ তার। কে জানে, কত কেরামতি জানে লোকটা। 

পর দিন। সকাল হয়েছে। কচ্ছপ গিয়ে বিধাতাকে একটা পেন্নাম ঠুকল লম্বা করে। বিধাতা একটু মুচকি হাসলেন। সব জানেন তিনি। একটু বাদে কী হতে যাচ্ছে বেচারার, তাও ভালোই জানেন। মুখ ফসকে বলে ফেললেন—বেঁচে-বর্তে থাকো। দীর্ঘজীবি হও। 

দুনিয়ার আর কোন জীব স্বয়ং বিধাতার মুখ থেকে আশীর্বাদ শুনেছে? বেশ আহ্লাদ হোল কচ্ছপের। মনের পুলকে লাফ দিয়ে দিয়েছে বাড়ি ফিরবে বলে।

নীচে এসে পড়ল যখন, কোথায় লেপ-বালিশের নরম বিছানা? ধপাস করে পড়েছে শুকনো কাঠ-কুটোর ওপর। তাতে যা হবার তাই হোল। অতখানি ওপর থেকে পড়েছে। চাট্টিখানি কথা তো নয়। শক্ত খোল ছিল কচ্ছপের পিঠে। ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ল চার দিকে। 

খবর পেয়ে খরগোশ এসে হাজির হোল। সে হোল বনের বদ্যিঠাকুর। কারও কিছু অসুখ-বিসুখ হলে, তার ডাক পড়ে। সে তো কেঁপে উঠল অবস্থা দেখে। এমন ঘটনা কখনও দেখেনি জীবনে। তাড়াতাড়ি করে খোলের টুকরোগুলো কুড়িয়ে জড়ো করা হোল। বাবুই পাখিকে নামিয়ে আনা হোল গাছ থেকে। রিপু করবার কাজে তার কোন জুড়ি নাই।

খরগোশ আর বাবুই—দুজনে মিলে ভারি যত্ন করে সারল কাজটা। টুকরোগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে দিল বদ্যিমশাই। বাবুই অনেক সময় নিয়ে গেঁথে গেঁথে সেলাই করে দিল টুকরোগুলোকে। কোনরকমে সে যাত্রা বেঁচে গেল কচ্ছপ।

বুনোহাঁস মনে মনে বলেছিল না, এমন উপকার করে দেব কচ্ছপের, তার নাতিপুতির নাতিপুতিরাও মনে রাখবে সেটা। ভাঙা টুকরো জোড়ার দাগ আজও দেখা যায় কচ্ছপের পিঠে। 

বিধাতা পুরুষও কথা রেখেছেন। দীর্ঘজীবি হও বলেছিলেন। লম্বা আয়ুই দিয়েছেন কচ্ছপকে। দুনিয়ায় যত প্রাণী আছে, সবচেয়ে বেশিদিন বাঁচে কচ্ছপেরাই। বলতে কী, কয়েক শ’ বছর বেঁচে থাকে তারা।

প্রকাশিতব্য...

Post a Comment

0 Comments