জ্বলদর্চি

বার্লিনের ডায়েরি --৪২পর্ব। চিত্রা ভট্টাচার্য্য /( জলকন্যা ভেনিস। অন্তিম পর্ব )

বুরানো দ্বীপের রঙীন বাড়ি।

বার্লিনের ডায়েরি --৪২পর্ব। চিত্রা ভট্টাচার্য্য 
( জলকন্যা ভেনিস। অন্তিম পর্ব )

গত রাতে হোটেল রুমে পৌঁছনোর পর দুধসাদা পালকের নরম  বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে সারাদিনে ক্যামেরায় বন্দী  ছবিগুলো তিতির খুব যত্নে ল্যাপটপে মননিবেশ করে আপলোড করছিল। শ্রী কে দেখেই বলে, আমাদের  আগামী সকালের প্ল্যান ,মেসত্রে থেকে রঙিন শহর বুড়ানো হয়ে তারপর লিডো দ্বীপে এবংসারাদিনের আলোর সময় টুকুতে ঘোরার পালা শেষ করে মার্কোপোলো এয়ারপোর্ট থেকে সন্ধ্যে রাতের ফ্লাইটে সোজা বার্লিনে উড়ে যাবার প্ল্যান টা তোমার মনে আছে তো মা ?  দিনভর বেড়ানোয় ক্লান্ত অবসন্ন শরীর টিকে কম্বলের উষ্ণতায় জড়িয়ে নিয়ে শ্রী কোনো মতে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়। ডায়েরির পাতায় প্রতিদিনের রোজনামচা গুছিয়ে লিখতে বসে কলম কে আপন মনে চলতে দিয়ে আধ ঘন্টার মধ্যেই শ্রীর চোখের পাতায় তন্দ্রা নেমে এলে ডায়েরির সাদা পাতা গুলো খোলাই থাকে ,ঢাকনা বিহীন কলম গড়াগড়ি খায় ,শ্রী পাড়ি দিয়েছিল নিস্তব্ধ জোনাক জ্বলা ঝিলিমিলি রাতে  সাগরপাড়ের গভীর ঘুমের রাজপুরীতে।
লিডো দ্বীপে সূর্যাস্ত।

 খুব ভোরে পুবের আকাশে তখন সবে মাত্র সূর্যোদয় হয়েছিল , কোনো রাত জাগা পাখির তীব্র কাতর চিৎকারে  শ্রীর সকালের মধু ঘুম ভেঙে গেল। শৌখীন বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে গিয়ে মনে পড়লো   আজ ই এই সুন্দরী জলকন্যার মায়া কাটিয়ে বার্লিনে ফিরতে হবে। ধীরে ধীরে তৈরী হয়ে শ্রী নীচে হোটেলের লনে নেমে যাবার সময় করিডরে বিরাট একটি এক্যুরিয়ামে সোনালী কমলা লাল কালো আকাশী রুপালি রঙের বাহারী মাছ তাদের বিদেশী নাম দেখে চুপটি করে দাঁড়ায়, মাছেরা আপন মনে খেলে বেড়াচ্ছে কাঁচের দেওয়ালের ঘেরাটোপে ,কৃত্রিম মৃদু ঢেউয়ের তালে। সাগরতলের সবুজ ফার্ন প্রবাল মুক্তোয় সজ্জিত এক্যুরিয়ামের টলমলে শ্যাওলা রঙা জলে। সে যে ভারী মনগ্রাহী দৃষ্টি নন্দন। নানা রকম অর্কিড আর সিজিওনাল ফুলের গাছে সাজানো বাগান টি তে ঘুরে বেড়িয়ে  কিছুটা সময় কাটিয়ে হোটেলের কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট সেরে  লাগেজ রুমে ব্যাগেজ  জমা রেখে আবার ওরা ভেনিসিয়ার পথে বেরিয়ে পড়েছে ।

  মেসত্রের হোটেল থেকে এঞ্চেত্তরের জেটি তে যাবার সময় কালোপাথরের বাঁধানো ফুটপাতের ওপর লম্বা লম্বা পা ফেলে ঋষভ ভাবে দেশ ভ্রমণের ব্যাপারটা ঠিক যেন এক ছোট গল্পের মত শেষে হয়ে ও শেষ হতে চায় না।  ওরা আজ  বুড়ানো ও লিডো দ্বীপ তো বটেই সামনে আরো যে কয়েক টি দ্বীপ পড়বে তাও ঘুরে বেড়াবে। সেই অনুযায়ী  টিকিট বুক করা। এবং ঠিক পাঁচ মিনিট ও হয়নি হ্রদের শান্ত জল তোলপাড় করে ভেপোরাত্ত এসে গেল। ওরাও যেন  হংস পাখায় ভেসে চলেছে দূর সমুদ্রে।ভেনিস থেকে মাত্র সাত কিমি দূরে তিনটি চ্যানেল পার হয়ে চারটি ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই বুড়ানো দ্বীপে চোখের পলকে পৌঁছে গিয়েছিল।বুড়ানো দ্বীপটি  ভেনিসের উপকূলের সর্বাপেক্ষা রঙিন ভূমি। শোনা যায়  আড্রিয়াটিক সাগরের উপকূলে ভেনিসিয়ান হ্রদের তীরে উত্তরইতালীর এই দ্বীপটি গড়ে তুলে ছিল রোমান রা। এই শহরের ছোটবড়ো বাড়ি গুলোর  বিচিত্র রঙের বাহার দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল শ্রী ,ঋষভ দুজনেই ।  প্রত্যেকটা বাড়িই উজ্জ্বল রঙের বেশীর ভাগ কমলা হলুদ ও লাল বেগুনী এবং সবুজ ও আছে। কত রঙের মিলন হ্রদের জলে তারই ছায়া কেঁপে কেঁপে মিলিয়ে যাচ্ছে। দূরের সাগরে উত্তাল ঢেউয়ের মাথায় ভাসছে নীলসাদায় মেশানো মাছের ট্রলারের সারি। 
ভেপোরাত্তি থেকে ভেনিসের দ্বীপ।

 এখানে এসেই শ্রীর প্রথমেই  চোখে পড়লো নতুন ল্যান্ডস্কেপ ,ওয়াটার স্কেপ।এই বুড়ানোর অধিবাসীরা কিন্তু তাদের নিজস্ব ঘর বাড়ি গুলোকে নিজের পছন্দ মত যেমন খুশি তেমন রঙ করতে পারে না। বাড়ি নির্মান ও  রঙের ব্যাপারে প্রথমে সরকারের কাছের থেকে অনুমতি নিতে হয় এবং সরকার অনুমোদিত রংই বাড়ির গায়ে লাগাতে হবে। শ্রী আবাক হয়ে ভাবে এতদিন সব শহরে দেখা গেছে একই রকম বাড়ির ডিজাইন ,একই কালার একই উচ্চতা কিন্তু ভেনিসের এই শহরেই যত ব্যতিক্রম। ঘর বাড়িগুলো নির্মাণে রঙের পরিপ্রেক্ষিতে এমন বিধিনিষেধের কারণ,অদ্রিজা বুঝিয়ে বলে , ''এ দ্বীপের অধিবাসী দের মূল পেশা মাছ ধরা। তারা মাছ শিকার করে সমুদ্র থেকে ফেরার সময় যাতে খারাপ  আবহাওয়ায় পথ ভ্রষ্ট না হয়ে যায় , যাতে দূর সমুদ্র থেকেও বাড়ির উজ্জ্বল রঙ দেখেই পথ চিনতে পারে ,সামুদ্রিক ঝড়ে যাতেপথ ভ্রষ্ট না হয়। তারই পথ নির্দেশনার জন্য এমন সুদৃঢ় পরিকল্পনা। মুরানো যেমন কাঁচ শিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ তেমনি  বুড়ানো দ্বীপটি লেস শিল্পের  জন্য বিখ্যাত । 

🍂

শ্রী হ্রদের ধার ধরে আপন মনেএগিয়ে চলেছিল ,তিতির দৌড়ে এসে ওর হাতে হাত রাখে। শ্রী খুব খুশি হয়ে বলে মনে হচ্ছে যেন একটি প্রাণবন্ত আঁকা ক্যানভাসের মধ্যদিয়ে হাঁটছি। রঙের সিম্ফোনি মাছ ধরার নৌকাগুলোর সাথে শান্ত জলের প্রতিচ্ছবি হিসাবে জ্বলজ্বল করবে ভিনিসিয়ান লেগুনের উত্তর দিকে অবস্থিত এই ছোট্ট  দ্বীপটির প্রতিটি কোণ। শ্রীর মনেপড়ে  এই সুন্দর দ্বীপটিতেই ভেনিসের  ঐতিহাসিক সান্তামারিয়া আসুন্তা গির্জা দেখেছিল। দূরের বেল টাওয়ার টিও এখান থেকেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। সামনের বিরাট প্লাজাটিতে সাজানো  কিছু স্থাপত্য কীর্তি স্ট্যাচু ,প্রাচীন চার্চ দেখে একটু এগোতেই এবং মিউজিয়ামে  কিছু শিল্পের প্রদর্শনী ও  মন আকর্ষণ করেছিল। আর একটি দ্বীপে কিছুটা  এগিয়ে   'ডেভিল ব্রিজ' দেখতে পেয়েছিল যাকে  শয়তানের দ্বারা বা শয়তানের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নির্মিত বলে মনে করা হয়। এখান থেকে পুরো টরসেলো দ্বীপের মন মুগ্ধ কর দৃশ্য ওরা উপভোগ করে ছিল যেখানে  জনবসতি খুব কম। শীতমাখা সকালের নরম হলুদ আলোয় ছুটি কাটাতে এসে  অবসর যাপনে রত ভ্রমণার্থীরা বাড়ির বারান্দায় বা উঠোনে গার্ডেন চেয়ারে গা এলিয়ে পানীয় হাতে ঘন্টার পর ঘন্টা   প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগে মশগুল ছিল। 

 সকালের আলোয় রঙিন দ্বীপের বাড়ি গুলোর চমৎকারিত্ব মন স্পর্শ করে গেলো। শ্রীময়ীর সাথে অদ্রিজা হেঁটে চলে এসেছে সবুজে ঘেরা ঘন ম্যানগ্রোভের বনের পথ ধরে,গ্রামের দিকে। নোনা জলের আবহাওয়াতে এই ম্যানগ্রোভের বন ই চারদিকে বেশী রয়েছে । এখানের ও ঘর বাড়ি বেশ ছিমছাম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং উজ্জ্বল রঙের বাহারে সাজানো। পথের ধারে নিরালায় খালের মত জলাধার দেখে  অদ্রিজা দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এক ঝাঁক দেশ গাঁয়ের চেনা বুনো হাঁসের মত দেখতে পাখি সম্ভবত ব্রানটার হবে ,জলার ধারে বৈঠকি আড্ডায় জটলা করছে। তিতির দেখায় একটু ঘন ঝোপের আড়ালে   দল ছুট মা পাখিটি পুরু শ্যাওলায় ডিম গুলো লুকিয়ে রেখে পাহারা দিচ্ছে ।ভারী অদ্ভুত দৃশ্য। সমস্ত পরিবেশ  শান্ত নির্জন। অদ্রিজা বলে নির্ঘাত কারো প্রাইভেট প্রপার্টির মধ্যে চলে এসেছি। কি জানি কার বাড়ির সীমানা ?' চলো ফিরে যাই।  

আবার সমুদ্র ধারে ধরেই ওরা ফিরে এলো।  ঋষভ একাকী চুপটি করে সাগরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। ওর মনে পড়ছে সাংবাদিক বন্ধু স্টিফানো বার্তোলোর কথা। এতো সব সৃষ্টির এমন আয়োজন দেখে মন যখন ভারী উৎফুল্ল তখনই কিছুক্ষণ  আগে শোনা গাইড রুবেল সাহেব এর কথা মনের মাঝে   আন্দোলিত হয়। এক করুণ সম্ভাবনার কাহিনী শ্রীময়ী ও তিতিরের কানে ও বাজলো। তিনি বলেছিলেন ''আড্রিয়াটিকের রানী ভেনিসিয়া কে ইউনেস্কো আধুনিক প্রযুক্তির বিধ্বংসী লীলার  করাল গ্রাস থেকে বাঁচানোর জন্য ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট  হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবুও আশঙ্কা রয়েছে এই অনন্য সৌন্দর্যে  ঘেরা অনুপম শহর টির এক ভয়াবহ দুঃখ জনক পরিণতির । শুনে অবিশ্বাস্য লাগে এই শহরটির পরিস্থিতি এখন ক্রমশঃ অবনতির পথে। পরিবেশবিদ এবং ভৌগোলিক দের মতে সমুদ্রে জলের স্তর বেড়ে যাওয়া ও  বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে ভেনিস অতি ধীরে ধীরে সাগরের জলের  অতল তলে  তলিয়ে যাচ্ছে।  ২০০০সাল থেকে ২০১০ সালের  এক পরিসংখ্যানে হিসেব করে দেখা গেছে প্রতি বছর গড়ে ০.০৪ থেকে ০.০৮ইঞ্চি ভূমি চলে যাচ্ছে সাগরের গহ্বরে। এছাড়া ও আছে মাটির গভীর থেকে অনবরত জল উত্তোলনের ফলে খনিজ স্তর ক্রমশ আরো গভীরে নীচের দিকে নেমে  যাওয়াতে শহরটির ভিত্তি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। নতুন কোনো বৈজ্ঞানিক চিন্তা বা সুরক্ষার পথ  আবিষ্কার  না হলে এ শহর আগামী তে ধ্বংসের পথে এগিয়ে ঘোরতর বিপদের সম্মুখীন হবে। 

দ্বিপ্রাহরিক ভোজন পর্ব  ইতালীয়ান রেস্তোরাঁয়  পাস্তা পিজ্জা  দিয়ে  সারতে ইচ্ছে  হোলো না । পায়ে পায়ে খাবারের দোকান এখানেও আছে তবে সর্বত্রই চলতি বাজারের থেকে দাম বেশী ,খুব ব্যয় বহুল , আর ট্যুরিস্ট দেখলে তো কথাই নেই।  এবারে দুপুরের ভোজন পর্ব তে  মেনু কার্ডে স্প্যাগেটি ,ইটালীয়ান সালসার ভিনিস্বাসী স্টার্টার খাবারের চেনা নাম গুলো দেখে অদৃজা তাই  অর্ডার দিয়েছিল এবং শেষে ইটালীয়ান এসপ্রেসো কফি । মাঝারি গড়নের যুবক টি অর্ডার নিয়ে গেল কিন্তু দশ মিনিটের  মধ্যেই খাবার সার্ভ করে দেওয়াতে হাতে অনেকটা সময় পাওয়া গেল। রেস্তোরাঁর বিল মিটিয়ে বাইরে এসে    নতুন উদ্যমে আবার চলা শুরু হলো।  সাগরের তীর ভূমি ধরে এক প্লাজায় এসে পৌঁছলে এখানেও  চলছে  মানুষের অবাধ আনন্দ হৈ হৈ কান্ড। ঘরবাড়ির রঙের বাহার শপিং সেন্টার গুলো ঘুরে দেখে    এখান থেকে লিডো দ্বীপের দিকে এগিয়ে যাওয়া। 
ভেনিসের জল পথ

ভেপোরাত্ত নিমেষে পৌঁছে গিয়েছিল সোনালী দ্বীপ লিডোর তীরে। এখন অপরাহ্নের শেষপ্রহর ।সূর্যাস্তের আলোয় এ দ্বীপ সোনার বরণী হয়ে ওঠে বলে ভ্রমণার্থীদের কাছে লিডো সোনালী দ্বীপ নামে পরিচিত। এই দ্বীপটি লম্বায় অনেকটা বড়ো  কিন্তু চওড়ায় বেশ ছোট মাত্র আধ ঘন্টা লেগেছিল একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে। লিডোর ছোট্ট সমুদ্র সৈকত জুড়ে সূর্যাস্ত দেখার আশায় দর্শনার্থীর ভীড়ের কমতি নেই যদিও সূর্যের ডোবার পালায় এখনো অনেক দেরী। গাছ পালা দিয়ে সাজানো এক কৃত্রিম পার্কের পাশ দিয়ে বেশ কিছু রাস্তা গেছে সমুদ্রের ধার বরাবর ক্যাসিনোর দিকে। ক্যাসিনো পার্লার গুলোতেও বেশ রমরমা ভীড়।পাশেই নিঃশব্দ সমুদ্রের তীর শুধুই ঢেউয়ের আছড়ে পড়ার শব্দে অবুঝ শিশুর দৌরাত্মি। তার হাসির মত খলখল ছলছল শব্দ। নোনা হাওয়ার পথ ভুলে এলোমেলো বয়ে যাওয়া।  

ঋষভ ,শ্রীকে বলে শুনেছি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এই লিডো দ্বীপে। যদি ও এখন কোনো চলচিত্র উৎসবের সময় নয় তবুও মনের মধ্যে দুর্নিবার আকাঙ্খা কেমন সেই সৌধ ভবন টি যেখানে সারা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্ৰ গুলো প্রদর্শিত হয়ে থাকে। চলচ্চিত্র পরিবেশিত হয় প্রতিযোগিতার বিচারে । বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বনাম ধন্য বিশেষ জ্ঞানী গুণী শিল্পীগন পরিচালক বৃন্দরা ফটোগ্রাফার সাংবাদিক বহু মানুষ এই উৎসব উপলক্ষ্যে এখানে সমবেত হন । সেই বিশ্ব বিখ্যাত সিনেমা  উৎসবের আয়োজক এই ছোট্ট সোনালী দ্বীপ লিডো ।এখানেই চলে সিনেমার প্রতিযোগিতা  নিয়ে গভীর উত্তেজনা উন্মাদনা। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিশ্ব সেরা চলচ্চিত্রগুলোর  সমালোচনা এবং জুড়ি গণের বিচার ও পুরস্কার প্রদান। মনে পড়লো পৃথিবীর অন্যতম সেরা ভারত বিখ্যাত এবং বাঙালির গর্ব স্বনাম ধন্য চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় এখান থেকেই বিশাল এক সম্মানের অধিকারী হয়ে "গোল্ডেন লায়ন" পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। এবং চলচ্চিত্র শিল্পে ভারতবর্ষ কে এক বিশ্ব সভায় খ্যাতির শিখরে বসিয়েছেন। 
ভেনিসের স্থাপত্য

  ভীড় জমেছে বীচের ওপর এখানে গোধূলীতে সূর্যাস্ত কখোন কমলা রঙে আকাশ কে রাঙিয়ে দিয়ে স্বর্ণকাঁটা বালুচরীতে নিজেকে আড়াল করে সাগরের জলে অবগাহন করে। ধীরে ধীরে গোধূলির রাঙা মেঘ আকাশের বুক জুড়ে। হয়তো  আল্পস পাহাড়ের নীল চূড়ার শিখরে অস্তগামী সূর্যের সিঁদুরে লাল আভার রক্তিম প্রতিচ্ছবির ছায়ায় লিডো দ্বীপ ঘিরে ছড়িয়ে পরে। হ্রদের জল দিকে দিকে রাঙা বরণ কনের রূপ নিয়ে রাতের প্রতীক্ষায় নিমেষ গোনে। একদিকে প্রাসাদ অন্য দিকে ধুঁধুঁ বালুকা ভূমি প্রান্তর । অপরূপ সে সুর্যাস্তের শোভা। তারপরে খুব ধীরে পৃথিবীর বুকে আঁধারের কালো ছায়া নেমে এলে সর্বত্র এক মোহময়ীর সর্বংসহা মাতৃ মূর্তির মত অভয় দানে ব্যাপৃত থেকে বিস্তীর্ন হ্রদের জল অবিচল স্থির দাঁড়িয়ে থাকে ভোরের আলোর প্রতীক্ষায়। শ্রী বলে দিন ফুরোলো আমাদের ও ভেনিস থেকে  বিদায় নেওয়ার সময় এগিয়ে এলো।    

মার্কোপোলো এয়ারপোর্ট এখান থেকে খুব দূরে নয়। ভেনিসে আকর্ষণীয় সব ক্যাথেড্রাল জাদুঘর আর ভবনের সংখ্যা এতো বেশী মায়ার ছায়ায় ঢাকা সব শান্তির নীড় নিঃসঙ্গ দ্বীপ গুলো।দুই দিনে এর অর্ধেক দেখাও সম্ভব হয়ে ওঠেনা। তবুও এই অল্প সময়ে শ্রী ভাবে যত টুকু দেখতে পেয়েছি সে দেখা জানার  অভিজ্ঞতা অপরিসীম।তড়িৎ গতিতে শেষ হয়ে এলো সময় এবার ঘরে ফেরার পালা। সাগর  সৈকতে বসে ওরা দেখেছিল শেষ বেলাকার অস্তগামী সূর্যের বিনা আড়ম্বরে সিঁদুর রাঙা আকাশের বুক থেকে টুপ করে সাগর গভীরে ডুব দিয়ে হারিয়ে যাওয়া। চারিদিকে সোনালী আলোর মায়ায় নিজেরাও ভেসে গিয়ে এবারে এগিয়ে চলেছিল  এয়ার পোর্টের দিকে। হাতে আর বেশি সময় নেই।এক ভারাক্রান্ত মন নিয়ে মায়া নগরী ভেনিস কে বিদায় জানিয়ে আপাততঃ শ্রী ফিরে  চলেছে  বার্লিনের ঘরের নিভৃত পরিচিত কোণে।

Post a Comment

0 Comments