চিত্রগ্রাহক - মৃণাল ঘোষ
বিশ্বকাপের ছড়া
পীযূষ প্রতিহার
দল যদি হেরে যায়
রাগ হয় ভীষন ই
চোখ ভিজে আসে জল
খাদ্যতে অরুচি।
কার দোষ বেশি ছিল
কার ভুল কোথাতে
কে খুব বাজে খেলে
গেঁথে নিই মাথাতে।
খেলা খুব ভালোবেসে
রাগ ভুলে আবারো
টিভি খুলে বসে পড়ি
কাপ চাই এবারো।
জিতে যদি যায় দল
ওঠে ফাইনালে
সমালোচনার ঝড়
যায় আবডালে।
আবেগের বাষ্পের
মেঘ জমে মনে
আয়োজন বহুবিধ
হয় ক্ষনে ক্ষনে।
ফাইনাল ম্যাচ হবে
টেনশন খুব
সময়ের আগে থেকে
টিভিতেই ডুব।
লাইভ আসতে থাকে
দূর দূর থেকে
ছটফট করে চলি
তিন রঙ মেখে।
বিশ্বকাপের ম্যাচ
ফাইনালে চাপ
কে জেতে কে জেতে ভাব
কার হাতে কাপ!
হৃদপিন্ডটা যেন
উঠে আসে মুখে
পেন্ডুলামের ম্যাচ
দোলে নিজ সুখে।
শেষমেষ কাপ জেতে
আমাদের দল
অবদান সকলের
একতাই বল।
নিন্দুকে যাই বলুক
তার মুখেতে ছাই
বিশ্বকাপটি জিতে
রুদ্রাংশ দাস
নবম শ্রেণি,সোদপুর চন্দ্রচূড় বিদ্যাপীঠ,উত্তর ২৪ পরগণা
রথ ছুটেছে
মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস
গড়গড়িয়ে ছুট দিল রথ,
সামনে খোলা ঘাসমাখা পথ,
কে দিল টান?
কে দিল টান?
অবাক গোঁসাই, অবাক ঢাকি,
পুজো শেষের অনেক বাকি,
টান রশিতে
কার খুশিতে?
ভিড় জমে নি, বৃষ্টি ভারি,
ভিজছে মেলার পুতুল সারি,
পুজোর ঘটা,
চমক ছটা,
নিয়ম নীতি পালতে হবে,
তবেই রশি টানতে হবে।
কিন্তু কেন
ছুটছে যেন
রথটা একা, কিসের টানে?
জগাই জানে, বলাই জানে,
বোনের দাবি,
ভাই সারথি
ইচ্ছে রশির টান দিয়েছে,
গড়গড়াগড় রথ গিয়েছে
খেলার ছলে
মাঠের আলে,
হাততালি দেয় খোকা খুকি
সুভদ্রা দেয় খুশির টুকি৷
পঞ্চম শ্রেণি, অলিগঞ্জ ঋষি রাজনারায়ণ বালিকা বিদ্যালয়, মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
মিথ্যে শহর
রিয়া মন্ডল
একাদশ শ্রেণি
জওহর নবোদয় বিদ্যালয়
পশ্চিম মেদিনীপুর
এ সমাজ বড়ই কঠিন
হিংসায় ভরপুর,
সততা গেছে তেপান্তরের মাঠে
একতা বহুদূর।।
কেহ কারুর নয়কো আপন
হাজার সত্য এখন গোপন,
সুযোগ পেলেই দেবে ফাঁসি
সব মিথ্যার কভার হাসি।।
ভাবে না কেউ পাপ-পূণ্য
মানসিকতা একেবারেই শূন্য,
শুধুই ছুটছে স্বার্থের গাড়ী
মানুষ চেনা সাগর পাড়ি।।
মিথ্যার দুনিয়া গড়ছে আজ
বাক্সে ঢুকিয়ে রাখছে লাজ,
কদ্দিন চলবে এই মিথ্যা
কেউতো করবে এর হত্যা।।
এ সমাজ বড়ই কঠিন
হিংসায় ভরপুর,
সততা গেছে তেপান্তরের মাঠে
একতা বহুদূর।।
শুভশ্রী সরকার
শতদল বালিকা বিদ্যায়তন, নবম শ্রেণি, উত্তর ২৪ পরগণা
রথের কথা ২
তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
হিন্দু ধর্মে জগন্নাথের রথযাত্রাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থেও এর উল্লেখ রয়েছে। তাই আজ তোমাদের রথযাত্রার গল্প শোনাব।
আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় দিনে জগন্নাথ রথযাত্রা বের হয়। যা পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে বিখ্যাত গুন্ডিচা মাতার মন্দিরে যায়। এখানে প্রভু ৭ দিন বিশ্রাম করেন এবং তারপরে তার আবাসে শ্রীমন্দিরে ফিরে যান। জগন্নাথ দেবের রথযাত্রায় তাঁর ভাই বলভদ্র এবং বোন সুভদ্রা সঙ্গে থাকেন। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, ওড়িশার পুরী ক্ষেত্র ভগবান কৃষ্ণের মাসির বাড়ি এবং তিন ভাই-বোনই এখানে তাদের মাসির বাড়িতে বেড়াতে আসেন।
জগন্নাথ রথযাত্রার জ্যোতিষশাস্ত্রেও তাৎপর্য রয়েছে এবং জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে যাত্রা শুরুর দিন সূর্য কর্কট রাশিতে প্রবেশ করে। এরপর ভারতে বর্ষা আসে। এই রথযাত্রা বর্ষা ঋতুর প্রতীক এবং সমৃদ্ধির প্রতীক।
🍂
কবে থেকে রথ তৈরি হয়?
রথযাত্রায় ব্যবহৃত রথ প্রতি বছরই তৈরি করা হয়। অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে রথ নির্মাণ শুরু হয়।
জগন্নাথদেবের রথ নন্দীঘোষ, বলরামের রথ তালধ্বজ, ও সুভদ্রার রথ দর্পদলন বা দেবীদলন। ৩ ভাইবোনের ৩টি রথ। তাদের প্রত্যেকটি রথের রয়েছে বিশেষত্ব।
>>জগন্নাথদেবের রথের নাম নন্দীঘোষ। উচ্চতা ৪৫ ফুট। মোট ৮৩২টি কাঠের টুকরো লাগে এই রথ নির্মাণে। পীত বর্ণের রথের চূড়ায় চক্র ও শ্রীগরুড়দেব অধিষ্ঠিত থাকার জন্য এর আরও দুটি নাম চক্রধ্বজ বা গরুড়ধ্বজ।
জগন্নাথের ১৬টি রথের চাকা ষোড়শকলার প্রতীক স্বরূপ। চাকার ব্যাস ৭ ফুট। পাটাতন ৩৫ বর্গফুট। রথের রক্ষক শ্রীনৃসিংহনাথ। সারথির নাম মাতলি। চারটি অশ্বের নাম রেচিকা, মোচিকা, সূক্ষ্মা ও অমৃতা। এদের গায়ের রঙ সাদা।
>>বলরামের নীলবর্ণের রথের শীর্ষভাগে তালচিহ্নের কারণে রথের নাম হয়েছে তালধ্বজ। একে হলধ্বজও বলে। উচ্চতা ৪৭ ফুট। চাকার ব্যাস সাড়ে ছয় ফুট। রথটি নির্মাণ করা হয় ৭৬৩টি কাঠের টুকরো দিয়ে। পাটাতন ৩৪ বর্গফুট। চাকার সংখ্যা ১৪টি।
>>সুভদ্রার রথের কথা। পদ্মধ্বজ, দর্পদলন বা দেবীরথ নামেই রথের পরিচিতি। উচ্চতায় ৪৩ ফুট। চাকার ব্যাস ৬ ফুট। কৃষ্ণবর্ণের রথ। এটি নির্মাণে কাঠের টুকরো লাগে মোট ৫৯৩টি। পাটাতন ৩৩ বর্গফুট সুভদ্রার রথের বারোটি চাকা দ্বাদশ মাসাত্মক বৎসররুপী কার্যচক্র।
এই রথের রক্ষক বনদুর্গা। সারথি অর্জুন। রথের চারটি অশ্বের নাম অধর্ম, অজ্ঞান, অপরাজিতা ও জ্যোতিনী। এদের গায়ের রং কালো।
>>প্রতিবছর উল্টোরথের পরে এই তিনটে রথ-ই ভেঙ্গে দেওয়া হয়, অবশ্য রেখে দেওয়া হয় পার্শ্ব দেব-দেবীর মূর্তি, সারথি ও ঘোড়াগুলোকে। আবার সরস্বতী পূজোর দিন থেকে শুরু হয় নতুন রথ তৈরীর যোগাড়যন্ত্র । জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার সমস্ত দায়দায়িত্ব থাকে মন্দিরের দাইতাপতি সেবকদের। জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা ও সুদর্শন গর্ভগৃহ বা জগমোহন থেকে রথে ওঠার জন্য শ্রীমন্দিরের বাইরে আসেন ধারি পাহন্ডি প্রক্রিয়ায়। ধারি পাহন্ডি মানে জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা ও সুদর্শনের সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়া। আরেকটা হল গোটে পাহন্ডি, – উল্টোরথে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। তবে দু’ক্ষেত্রেই জগন্নাথ দেব আসেন সবার শেষে, – প্রথমে সুদর্শন, তারপর বলভদ্র ও সুভদ্রা। গোটে পাহন্ডির সময় একই কারণে প্রথম মন্দিরের রত্নবেদিতে উপবিষ্ট হন সুদর্শন, তারপর বলভদ্র, সুভদ্রা ও সবশেষে জগন্নাথ। এই দুই পাহন্ডির সময়ই মুর্তিগুলোর নিচে তুলোর মোটা গদি দেওয়া থাকে, -যাতে ভারী মুর্তিগুলো কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। – একে বলে ‘তুলি’। রথযাত্রার দিন মন্দিরের পূর্বদ্বার অর্থাৎ সিংহদ্বারের সামনে ‘নন্দিঘোষ’, ‘তালধ্বজ’ ও ‘দেবদলন’ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকে। ঐদিন শ্রীজগন্নাথকে বিশেষ ভোগ নিবেদন করা হয়।তাতে যেমন থাকে খিচুড়ি তেমন পিঠে-ও।
ওড়িয়া ভাষায় রথযাত্রাকে বলে আড়পযাত্রা।‘আড়প’ শব্দের অর্থ জন্ম। গুন্ডিচা মন্দিরের রত্নবেদিতে জন্ম অর্থাৎ মহাআবির্ভাব জগন্নাথদেবের, তাই এই নামকরণ। পতিতের উদ্ধারে এই যাত্রা, তাই এর আরেক নাম পতিতপাবন যাত্রা। এছাড়াও ঘোষযাত্রা, মহাবেদিযাত্রা বলেও রথযাত্রাকে মানুষ অভিহিত করে। প্রীতি, মৈত্রী ও সাম্যের মহাঅনুষ্ঠান এই রথযাত্রা। যাত্রার ন’দিনের মাথায় উল্টোরথে মহাপ্রভু ফিরে আসেন নিজের মন্দিরে। রথযাত্রার শুভ মুহূর্তের সূচনা হয় পুরীর গজপতি রাজার হাতে। সোনার ঝাড়ু দিয়ে রথ ও রথের যাত্রাপথ পরিষ্কারের কাজটা করেন তিনিই। – একে বলে ‘ছেরা পঁহরা’। উপস্থিত থাকেন পুরীর শঙ্করাচার্য। শঙ্খধ্বনির মাঝেই টান পড়ে রথের রশিতে, – জয় জগন্নাথ ধ্বনিতে চারিদিক মুখরিত হয়।
জীবজন্তুদের নানা মজার কথা
সুমনা সাহা
পর্ব- ১০
সাপ নিয়ে নানা রহস্য আর গুজব
বুকাই বলে, “দাদু, সাপ কি খুব হিংসুটে? আর রাগী?”
দাদু বললেন, “সাপ নিয়ে নানা রকম অন্ধবিশ্বাস আছে লোকের মনে। সাপ ভারি দুর্বল। কারণ মেরুদণ্ড থাকা সত্ত্বেও সে সোজা হয়ে চলতে পারে না, পোকা মাকড়ের মতোই মাটিতে বুকে হাঁটে। অন্য জন্তু জানোয়ার বা মানুষের পায়ের তলায় পিষে যাওয়ার ভয়ে সে ছোবল মারে, নিজেকে বাঁচানোর তাগিদে। আত্মরক্ষার অধিকার তো সকলেরই থাকা উচিৎ, কি বলো?”
“আর ‘নাগিনা’ সিনেমায় যে সাপ মানুষ হয়ে নাচে, প্রতিশোধ নেয়, সেসব কি মিথ্যে?”
“ঐ যে বললাম, লোকের মনে সাপ নিয়ে নানা ভুলভাল ধারণা তৈরি হয়েছে। আসলে কি জানো? বিষধর সাপের কামড়ে মানুষ মারা যায় দেখতে না দেখতেই, এমন তীব্র বিষ। আগে গ্রাম ছিল, অনেক গাছপালা, ঝোপঝাড় ছিল, ফলে সাপের সংখ্যাও ছিল অনেক বেশি। মানুষ মাঠে ঘাটে কাজ করতে গেলে, বা অন্ধকারে বনের পথে চলতে গিয়ে প্রায়ই সাপের কামড়ে মারা যেত। সেই আতঙ্ক থেকে সাপ নিয়ে নানা রকম গল্প গড়ে উঠেছে। সাপের বিষ যখন অন্যের শরীরে যায়, তখন দু’ভাবে বিষক্রিয়া হতে পারে। একটি কার্ডিও টক্সিন, যা হৃদযন্ত্র ও রক্ত-সংবহনতন্ত্রকে, অন্যটি স্নায়ুতন্ত্রকে বিকল করে। আবার বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, ভারতে যত লোক সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয় বা মারা যায়, তার মধ্যে শতকরা ৮০ শতাংশই ঘটে অবিষধর সাপের কামড়ে। এসব মৃত্যুর মূল কারণ বিষক্রিয়া নয়, বরং ভয় থেকে। “আমাকে সাপে কেটেছে, আমি আর বাঁচবো না”, এইরকম আশঙ্কা থেকে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু সত্যি কথা হল, সাপ অত্যন্ত নিরীহ প্রাণী। জনবহুল স্থানে তারা থাকেও না। যেখানে লোকজনের আনাগোণা, বা অন্য জন্তু-জানোয়ারের চলার পথ, সেসব জায়গা সাপ এড়িয়ে চলে। দেশের আনাচে কানাচে প্রায় ৮০ প্রজাতির সাপ ঘুরে বেড়ায়। এর মধ্যে শঙ্খচূড়, গোখরো, কেউটে ইত্যাদি মাত্র সাত থেকে আট প্রজাতির অত্যন্ত বিষধর সাপের কামড়ে মানুষ বেশি মারা যায়। সচেতনতাই পারে বিষাক্ত সাপের কামড় থেকে বাঁচাতে।
“আর সিনেমায় যে দেখায় সাপ মানুষের রূপ ধরে, সেটা কি সত্যি?”
“ইচ্ছাধারী নাগের কথা বলছ? না দাদুভাই, তেমন কিছু হয় বলে অন্তত আমি তো বিশ্বাস করি না। তবে কি জানো? সাপ তার জীবনে অনেকবার খোলস ত্যাগ করতে পারে। ছোট অবস্থায় বছরে চার বার সাপ খোলস ত্যাগ করে। পূর্ণ বয়স্ক সাপ বছরে দু’এক বারই খোলস পাল্টায়। ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠার সময় পুরনো খোলসের তুলনায় দেহের আকার বেড়ে যায়, তাই ঘন ঘন খোলস পাল্টায়। এর মানে ও বাড়ছে। পুরনো খোলস জামাকাপড়ের মত ছেড়ে ফেলে নতুন হয়ে উঠছে বলেই হয়তো মানুষের কাছে এটা নবজন্মের প্রতীক বলে মনে হয়েছে। তাই গ্রামবাংলার মেয়েরা সন্তান কামনায়ও মনসা পুজো করে থাকে। এর থেকেই হয়তো ইচ্ছাধারী নাগের ধারণা এসেছে।
সাপের বিষে মৃত্যু—এই ভয় থেকেই হিন্দুদের মধ্যে সাপকে সমীহ করে ও পুজো করে তুষ্ট করার ধারণা এসেছে। ভারতীয় গল্পে নাগ ও অস্ট্রেলিয়ার গল্পে রেইনবো সারপেন্ট দুইই জলের রক্ষাকর্তা। পুকুর, নদী, সাগর সমস্ত জলের উৎসই এর মধ্যে পড়ে। এখান থেকে ধন সম্পদ পাহাড়া দেওয়া যক্ষ সাপের ধারণাও এসেছে। হিন্দুদের মধ্যে এরকম একটা বিশ্বাস আছে যে আমাদের পূর্বপুরুষ বাস্তুসাপ হয়ে আসে ও আমাদের সম্পদ রক্ষা করে, উত্তরপুরুষদের ভাবী বিপদ থেকে বাঁচায়। তাই বাস্তুসাপ মেরে ফেলাটাকে হিন্দুরা পাপ বলে মনে করে। কখনো সামনে থেকে সাপ দেখেছ?”
“না, কিন্তু ছবি দেখেছি।”
“ছবিতে দেখেছ তো সাপ কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে থাকে? হিন্দুধর্মে সাপের কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকা যোগের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছে। মানুষের দেহের ভিতরে সুপ্ত আধ্যাত্মিক শক্তি সাপের মত কুণ্ডলীকৃত অবস্থায় থাকে, যোগের পরিভাষায় এর নাম কুলকুণ্ডলিনী বা শক্তি। কুলকুণ্ডলিনীর নিদ্রা ভঙ্গ হয়ে জাগ্রত হলে শক্তি দেহের নিম্নতম অংশ থেকে ঊর্ধ্বমুখী হয় এবং মস্তিষ্কের ভিতরে অবস্থিত সহস্রা চক্রে পরম শিবের সঙ্গে মিলিত হয়। একে শিব-শক্তির মিলন বলা হয় এবং যোগীদের যোগসাধনার এটাই চরম লক্ষ্য।
চাণক্যের শ্লোকে সাপকে ক্রূর বলা হয়েছে, মানে শঠ, বা কপট। সাপের জিভ চেরা, তাই কোন ব্যক্তি যখন ছলনা করে, মুখে একরকম বলে ও অন্তরে আরেকরকম ভাবে, তাকে দুমুখো সাপ বলে নিন্দা করা হয়। তবে চলতে চলতে সাপ বার বার জিভ বের করে। লোকে বলে, সাপের কান নেই, তাই সাপ নাকি জিভ দিয়ে শুনতে পায়। আসলে সাপের জিভের ডগায় ‘জেকবসন অর্গান’ নামে একধরনের গ্রন্থি আছে, যার সাহায্যে সাপ বায়ুতে নানা পদার্থের অস্তিত্ব অনুভব করে। একে ঘ্রাণ নেওয়াও বলা যেতে পারে।
আর হিংসার কথা বলছ? সাপের দৃষ্টি ঝাপসা। তাদের চোখের সামনে হাত, পা বা কোন কিছু নাড়ালেই তারা সেটাকে শত্রু মনে করে কামড় দেয়। কিন্তু তাতে বিষ থাকে না। বিশেষজ্ঞরা এগুলোকে ‘ড্রাই বাইট’ বলেন। বিষ ঢালার উদ্দেশ্যে কামড় দিচ্ছে বলে সাপ নিজেও বুঝতে পারে না। আক্রান্ত হলে বা ব্যথা পেলেই জোরে কামড় দেয়, তখনই বিষথলি থেকে বিষ বের হয়। আত্মরক্ষার জন্য প্রকৃতি তাকে ওইভাবেই সৃষ্টি করেছে। আমরা শীতের শেষে শুকনো পাতার মধ্যে দিয়ে খস খস করে চিত্র বিচিত্র সাপ চলে যেতে দেখতাম। বড়রা দেখলেই মেরে ফেলত। পরে জেনেছি, ওগুলো দাঁড়াশ সাপ। ওদের বিষ নেই। অনেকের ধারণা দাঁড়াশ সাপের লেজে বিষ থাকে। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। এদের লেজেও বিষ নেই, বিষদাঁতও নেই। মূলত একটি নির্বিষ সাপ। শীতের সময় এরা মাটির নিচে গর্তের ভিতর ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়। দু’এক মাস কিছুই খায় না। শীতের শেষে বসন্ত কালে এরা গর্ত থেকে খাবারের খোঁজে বেরিয়ে আসে। খুব খিদে পায় যে! এরা ইঁদুর এবং ছোট পাখি ধরে খায়। ছোটখাটো বিষাক্ত সাপও এদের প্রধান খাবার। কিন্তু লোকে না বুঝে ভাবনা চিন্তা না করেই সাপ দেখেই ভয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে।
আর সাপুড়ের বীণ শুনে ফণা দোলানোর ব্যাপারটা বলি শোন। মূলত সাপ ঝাপসা দেখে। দৃষ্টিশক্তি দুর্বল। দিনে চোখে কম দেখে তাই ধীরে চলে, দিনের বেলা বের হয় না খুব একটা। রাতের অন্ধকারে কিন্তু সাপ ১০ গুণ বেশি দেখতে পায়। সাপের কোনো কান নেই। আবার দৃষ্টিশক্তিও প্রখর নয়। ফলে বীণ শুনে বা দেখে ফণা দোলানোর প্রশ্নই নেই। যারা বীণ বাজান, তারা সেটি সাপের মুখের সামনে দোলাতে থাকেন। সাপও চোখের সামনে দুলুনি দেখে মাথা দোলাতে থাকে এই ভেবে যে, কোনো শত্রু বুঝি সামনে আছে।
“তাহলে কি সাপ কিছুই শুনতে পায় না?”
“আমরা কি ভাবে শুনি বলো তো?
“কান দিয়ে।”
“ঠিক। আমাদের এবং বেশির ভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীর মাথার দুই পাশে দুটি কান রয়েছে। কিন্তু সাপের সে ধরনের কোনো কান নেই। তাহলে সাপ শুনতে পায় কিভাবে? মানুষের যে কান দুটো বাইরে থেকে দেখতে পাও, সে হল বহিঃকর্ণ। কানের তিনটে অংশ—বাইরের দৃশ্যমান অংশ ছাড়াও রয়েছে মধ্যম অংশ এবং একটি অভ্যন্তরীণ অংশ। যেকোনো শব্দ বাতাসে তরঙ্গ সৃষ্টি করে। মানুষের কানের পর্দায় সেই শব্দের তরঙ্গ আঘাত করে, সেখান থেকে শব্দ পৌঁছে যায় মাঝের অংশে, তারপর ভিতরের অংশে যায়, যার নাম অন্তঃকর্ণ। সেই শব্দের কোড থেকে ধ্বনি ও অর্থ বুঝে নেওয়ার কাজ হল মস্তিষ্কের। কিন্তু সাপের বাইরের ও মধ্যম কর্ণ নেই, আছে শুধু অন্তঃকর্ণ। তাই সাপ বাতাসে ভেসে আসা শব্দ তরঙ্গ শুনতে পারে না। সাপ মূলত মাটির কম্পন থেকে শব্দ শুনে থাকে। এ জন্য তাদের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। সাপের মুখের ভেতর সূক্ষ্ম এক জোড়া হাড় থাকে। এই হাড় সাপের নিচের চোয়ালের সঙ্গে অন্তঃকর্ণের সংযোগ সাধন করে। চলার পথে সাপ এই কারণেই প্রায়ই মাটিতে মুখ ছোঁয়ায়। মাটি স্পর্শ করে সাপ মাটির কম্পন সংগ্রহ করে ও নির্দিষ্ট হাড়ের মাধ্যমে অন্তঃকর্ণে পাঠিয়ে দেয়। এভাবেই শব্দ শোনে সাপ।
(ক্রমশ)
0 Comments