জ্বলদর্চি

বার্লিনের ডায়েরি - ৫১পর্ব। চিত্রা ভট্টাচার্য্য

রোমান ফোরাম

বার্লিনের ডায়েরি     ৫১পর্ব।    চিত্রা ভট্টাচার্য্য ।

শ্রীময়ী  ভারাক্রান্ত মনে কোলোসিয়ামের উত্তরের দিকের তোরণ দ্বার দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আরো কিছুটা উত্তরে এগিয়ে গিয়েছিল। অতীতের পৃথিবীর সসাগরা সম্রাটদের রক্ষক হয়ে ভক্ষকের মত এমন নিষ্ঠুর আচরণের উল্লাসে ,মনোরঞ্জনেরএমন  হিংস্র কলুষিত আয়োজনে এম্পিথিয়েটারের মহল স্টেজ ওকে বারবার শিহরিত বিমর্ষ করেছিল। ঐ নির্দয় বীভৎস মৃত্যুর রক্তে রাঙা গুমরেমরা কান্নার জ্বলন্ত সাক্ষী এই কোলোসিয়ামের কাহানি --এক স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের স্বেচ্ছাচারে বাতাস যেন স্তদ্ধ । দ্বিপ্রাহরিক সূর্য সেদিন অসময়ে কালো মেঘের আড়ালে আত্মগোপন করলে শ্রীভাবে কোলোসিয়ামের রাজাদের ঐ নারকীয় কাণ্ডতে প্রকৃতি ও যেন সমান লজ্জিত।

এতদিন পরে ও যখন ও ভাবে তখন ই এক বিষাদময়  বার্তায় ভারী হয়ে ওঠে মন । 

  আলেক্সেই অদ্রিজারা ফিরে গিয়েছিল  ইন্সটিটিউটের সেকেণ্ড হাফের কর্মসূচিতে । ঋষভ  শ্রী কে নিয়ে খুব ধীরে উঁচু নীচু কাকুরে পথ পেরিয়ে এগিয়ে চলেছে সামনের উঁচু পাহাড়ের লাগোয়া একটি নির্জন কোণে টিলার দিকে। যেখানে এক ইতালীয়ান কিশোরী ,বয়স বছর ১৬হবে , রঙ তুলি নিয়ে  ছবি আঁকছিল। শ্রীময়ী  ইউরোপের প্রায় দর্শনীয় স্থান গুলোতেই দেখেছে  ছেলে মেয়েরা নিজেদের পছন্দের কোনো নির্জন স্থান খুঁজে  শিল্প সৃষ্টিতে খুব ছোটোর থেকে মনোনিবেশ করে। কখনো পেন্সিল স্কেচ ,কখনো রঙ তুলি কখনো বা ভাস্কর্য্যতে ওরা মন ঢেলে  দেয়। অকল্পনীয় ওদের শিল্পানুরাগের ধৈর্য্য ও অধ্যাবসা।ছোটোর থেকেই  ওরা আত্মসচেতন ও স্বনির্ভরশীল।ঐ ছবি বিক্রি করে ওরা পকেট মনি সঞ্চয় করে।
রোমের বিজয় তোরণ দ্বার।

 এখানেই আলাপ হলো লম্বা চওড়া স্মার্ট পঞ্চাশোর্ধ্ব ভদ্রলোক একদা ঢাকা ইন্টার ন্যাশানাল এয়ার লাইন্সের পাইলট ক্যাপ্টেন নবারুণ মল্লিকের সাথে। তিনি স্বেচ্ছা অবসরপ্রাপ্ত এবং বিপত্নীক। চাকরী জীবনে বহু দেশের আকাশ পাড়ি দিয়েছেন ,এবং সে দেশের মাটিতে ও পা রেখেছেন কিন্তু দেশটিকে দেখার সুযোগ পাননি। রিটায়ারের পর এই সুযোগ এসেছে দেশ বিদেশে ভব ঘুরের মত ঘুরে বেড়ানোর।এখানে তিনি রোমের নাগরিক ছেলের কাছে আছেন। রোমের ইতিহাসে মুগ্ধ হয়ে পুরোনো স্থাপত্যে শিল্পেরমাঝে বেড়ানো তার ঐকান্তিক ইছে।  

      এক নিশ্বাসে আত্মপরিচয় দিয়ে শ্রীময়ী ও ঋষভের কাছে বড্ড আপন হয়ে উঠলেন দিলদরিয়া মানুষটি। শ্ৰীময়ী ভাবে এই বিদেশের পটভূমিতে শুধু মাতৃভাষার টানে কত অচেনা মানুষকে বন্ধুত্বের বন্ধনে ওরা জড়িয়েছে। চলার পথে কত অচেনাকে   নিস্বার্থ ভাবে আপন সখার মত পাশে পেয়েছেন । কথায় গল্পে মেতে সেই পড়ন্ত বিকেলে ওরা পৌঁছলো পেলেটাইন হিলের মধ্যে অবস্থিত রোমের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ  ''আর্চ অফ কনস্টান্টিন প্রথমের'' বিজয় তোরণ দ্বারের সামনে। যুদ্ধ জয়ের স্মারক চিহ্ন স্বরূপ ৩১২ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ৩১৫ খ্রীস্টাব্দের মধ্যে নির্মিত একটি চমৎকার স্থাপত্য শৈলীর পরিচায়ক এই তোরণটি । ক্যাপ্টেন মল্লিক বলেন মিষ্টার ঋষভ লক্ষ্য করে দেখেছেন ,এই অসাধারণ সুন্দর স্থাপত্য টি রোমান কোরিন্থিয়ান কলামের মধ্যে অবস্থিত তিনটি আর্চের উপরে দাঁড়িয়ে থাকলে ও মধ্যের আর্চটি হচ্ছে সর্বাপেক্ষা বড়। ঋষভ বলে দেখছি লেখা আছে, উচ্চতায় এটি ২১ মিটার ,দৈর্ঘ্যে ২৫.৯ মিটার প্রস্থে ৭.৫মিটার। শ্রীময়ী নোটবুক পেন্সিল বার করে লেখে , "৩১২ খ্রীষ্টাব্দে টাইবার নদীর মিলভিয়ান ব্রীজের যুদ্ধে রোম সম্রাট ম্যাক্সেনটিয়াস কে পরাজিত করে কনস্টান্টাইন রোমের সম্রাট হন। এই বিজয় স্মৃতির সাফল্য স্বরূপ সিনেট দ্বারা ৩১৫ খ্রীষ্টাব্দে এই তোরণ দ্বার নির্মাণ সম্পন্ন হয়।''

 শ্রী তীক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে ঋষভকে বলে লক্ষ্য করে দেখো ; বিভিন্ন সময়ের ভাস্কর্য্য কে একত্রিত করে এই তোরণ দ্বার টিকে সুসজ্জিত করা হয়েছে। বিশেষ করে সম্রাট ট্রাজান,হাড্রিয়ান এবং মার্কাস অরেলিয়া সের সময়ে তৈরী বিভিন্ন স্থাপত্য থেকে সংগৃহিত শিল্প শৈলীর সম্মিলিত বিকাশ তোরণ দ্বারে রূপ সজ্জায় প্রকাশ পেয়েছে। ক্যাপ্টেনমল্লিক ও শ্রী কে সমর্থন জানিয়ে বলেন আর্ট শিল্প শৈলী সম্বন্ধে বিশদ ধারনা নেই তবুও এখানের নানান গাইডের আলোচনা শুনে আমার ও ধারণা ম্যাডাম ঠিক আপনার মত ই। ঋষভ ও গাইড বুক ফলো করে শ্রী কে সমর্থন জানায়।

 ওরা অল্প কিছুটা সময় সামনের কফিশপে  আড্ডা মেরে আগামী সকালে রোমান ফোরাম দেখতে আসবে প্ল্যান করেছিল ।  

 রোমের মাটিতে আজ তৃতীয় দিনে যথারীতি সেই সকালবেলায় বেরিয়ে অদ্রিজা ও কোর্ডিলিয়া কনফারেন্স সেরে বেলা এগারটায় ফিরেছে। শ্রী ও ঋষভ রেডি  কিন্তু কাঁদুনে মেঘলা আকাশ , বাদল মেঘে ভরা। তীব্র ঠান্ডা হাওয়ায় সারা শরীরে ঝাঁকুনি দিয়ে নতুন দিনের যাত্রা শুরু হলো। প্রচন্ড শৈত্য প্রবাহ ছুরির ফলার মত দূর থেকে ছুটে এসে শ্রী, তিতিরের চোখে মুখে গালে আঘাত করে।  ঠান্ডায় ঠোঁট ,হাত,পায়ের চামড়া ফেঁটে রক্ত বেরোয়। ভেসলিন , নিভিয়াক্রীম  ঘষেও বিশেষ সুরাহা হয় না। বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়াতেই দূর স্টপেজে থেকে হুড খোলা লাল বাস আসছে দেখেছিল এবং পনেরো মিনিট ও লাগলো না কালোসিয়ামের স্টপেজে পৌঁছতে।  ঋষভ দেখতে পেলো দূর থেকে হাত নেড়ে সাদা রুমাল উড়িয়ে ক্যাপ্টেন এক গাল মুখে হাসি নিয়ে হৈ হৈ করে এগিয়ে আসছেন। কোর্ডিলিয়া তিতির কে হেসে বলে বেশ মজা , দেখ দুই আঙ্কেল কেমন সুপার ফ্রেন্ড হয়ে গেছে। 

কলোসিয়ামের কাছের রাস্তা ধরে রোমান ফোরামে যাবার বড় রাস্তাটি তে বাংলাদেশী হকার সহ নানা দেশের লোক রয়েছে।ব্যস্ত রাস্তায় দেদার ভীড় । ওদের কাছে ঘরের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অফুরন্ত ভান্ডার। প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যে এই পরিশ্রমের বিক্রি তে আদৌ কি যে বিকি কিনি হয় তার ঠিক নেই। ঋষভ বলে , খুব জানতে ইচ্ছে করছে এমন ব্যাবসায় ওদের কত টুকু প্রকৃত লাভ থাকে ? অর্থ নৈতিক সঙ্কট এই ব্যয় বহুল বাজারে কত টা সাফল্য দেয় ? ক্যাপ্টেন বলে প্রায়ই দেখি পুলিশের তাড়া খেয়ে তাদের যেকোনো গলিতে ছুটে পালিয়ে আত্মগোপন করতে।অদ্রিজা বিশেষজ্ঞের মত মাঝখানে ফোড়নকেটে বলে কী আর করবে সব পেটের দায়!

ওরা এবার ক্ল্যাসিক রোমান সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন রোমান ফোরামের কাছে এসে দাঁড়ালো। এই ফোরাম টি আসলে শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি আয়তকার প্লাজা।.তৎকালীন রোমের প্রচলিত অনেক ফোরামের মধ্যে প্যালাটাইন হিল রোমের সাতটি পাহাড়ের কেন্দ্রে এবং অন্যদিকে ক্যাপিতোলিন পর্বতের ছোট্ট উপত্যকার মাঝে নিম্ন ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্ব বৃহত্তর এক কার্য্যালয়। সঙ্গে রোমা টিকিট থাকায় ফোরামের ভিতরে প্রবেশ করতেই সামনেই এক বড় তোরণ দ্বার। গাইড ম্যাপটি দেখে, তোরণ স্তম্ভের গায়ের লেখাটি তিতির মিলিয়ে নিয়েছিলো। এই স্মারক তোরণ  টি সম্রাট টিটাসের মৃত্যুর পর তাঁর ভ্রাতা সম্রাট ডোমিটিয়ান ৮১ খ্রীষ্টাব্দে নির্মাণ করেছিলেন। মূলত এই তোরণটি টি ৭০থেকে ৭১ খৃষ্টাব্দের সম্রাট টিটাসের জেরুজালেমের যুদ্ধ জয়ের পর স্মারক চিহ্ন হিসেবে নির্মিত হয়েছিল। রোমান সামাজ্যের পতনের পর এই ফোরামটি বহুকাল যাবৎ ভূগর্ভের নীচে মাটির তলায় চাপা পড়েছিল। ভূতত্ত্ববিদদের গভীর অধ্যাবসায়, অক্লান্ত পরিশ্রম ও খনন কার্য্যের ফলে কালক্রমে আবিষ্কৃত হতে থাকে প্রাচীন শহরের এই বিশাল ধ্বংসাবশেষ।  

🍂

একটি ভাঙা দেওয়ালের ওপর ঝুলে পড়া ছাদের পাশে দাঁড়িয়ে শ্রী ,অদ্রিজা ও কোর্ডিলিয়া কে বলে   তখন কলেজ লাইফ। ন্যাশানাল লাইব্রেরিতে রোমের ইতিহাসের তথ্য সন্ধানের বই গুলো খুৱ উৎসাহে   পড়েছিলাম।  মধ্যযুগে এই স্থান টি সম্পূর্ণ ভূগর্ভের নীচে চাপা পরে নিশ্চিহ্ন হওয়াতে ,আশে পাশের পুরোনো বিল্ডিংগুলোতে জনসাধারণ পশু পালন করতো ও ছাগল ভেড়া ইত্যাদির খোয়ার গড়ে ছিল। ফরাসী সম্রাট প্রথম নেপোলিয়ানের সময় ১৮০৩ খ্রীষ্টাব্দে কার্লোফিয়া নামক রোমের জনৈক পুরাতত্ত্ব বিদের নেতৃত্বে সেপ্টিমিউস সেভেরাসের তোরণ সংলগ্ন এলাকা থেকে খনন কার্যের ফলে এই আশ্চর্য্য রহস্যাবৃত অঞ্চলটি আবিষ্কৃত হয়েছিল। এবং বিংশ শতকের প্রথম দিকে তাদের এই খননের কাজ শেষ হয়ে থাকে। এই ফোরামের স্থাপত্য গুলো কয়েক ধাপে তৈরী হয়েছিল। কারণ টাইবার নদীর বন্যা প্লাবনে যেমন দুইকূল ভেসে যেত তেমনি বিভিন্ন ভৌগোলিক বিপর্যয়ের ফলে আশেপাশের পাহাড়ে ধ্বস নেমে এই জায়গার উচ্চতাও বেড়ে যেত।প্রাকৃতিক ঝড়ঝঞ্ঝা ভূমিকম্প বন্যা প্লাবন ধ্বস ইত্যাদির কারণে এ প্রাচীন নগরীর ভূগর্ভের নীচে তলিয়ে গিয়ে ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়। পরবর্তী কালে নতুন স্থাপত্য পুরোনো স্থাপনার ওপরেই গড়ে তোলা হতো এবং ধ্বংস স্তূপের খননের ফলে ধারাবাহিক ভাবে রোমান দের বিভিন্ন সময়ের স্থাপত্য ও ক্রমশঃ আবিষ্কৃত হতে থাকে। ইতিহাস বলে রোম সাম্রাজ্যের পতনের পর বহু বছর ধরে ধ্বংসীভূত স্তূপ থেকে ইট পাথর ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী ধর্ম গুরু  শাসন কর্তা পোপ সহ স্থানীয় লোকালয়ের জনসাধারণ দ্বারা লুন্ঠিত হয়ে নিজেদের নতুন ইমারত তৈরীর কাজে ব্যবহার করাহয়। শ্রীময়ী তন্ময় হয়েছিল অতীতের স্মৃতি চারণে।হঠাৎ চমকে তাকায়  দেখে শুধু তিতির কোর্ডিলিয়া নয়, দলের বাকী সদস্য রা ও ধৈর্য্য ধরে একমনে ওর বক্তব্য শুনছিল।     
                                                                                           ক্যাপ্টেন বলেন এখনো ও খনন কার্য্য সমানে চলেছে। জুলিয়াস সীজার সম্রাট অগাস্টাসের আমল থেকে সেই সময়ের মানুষের জীবন যাত্রায় ধর্মীয় প্রভাব ,রাজনৈতিক সামাজিক বাণিজ্যিক অর্থনৈতিক বিচার ব্যবস্থা ইত্যাদি সম্যক ধারণা জ্ঞাত হওয়ার জন্য এই রোমান ফোরাম ব্যবস্থার চলছিল। চারদিকে ঘিরে আছে প্রাচীন রোমের বহু সরকারি স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ। কোর্ডিলিয়ার স্মৃতিতে আবছা হয়ে ভেসে ওঠে সেই কোন ছোটবেলায় মমের হাত ধরে একবার সে এসেছিল। অদ্রিজা ও বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকে।ওর মনে পড়ে রাজগীরের ট্রিপে দেখা নালান্দার ধ্বংসাবশেষ বা স্কুলের ইতিহাসে পড়া সিন্ধু নদের ধারে মাটির তলে চাপা পড়ে থাকা  হরপ্পা মহেঞ্জোদাড়োর সভ্যতার ইতিহাস ।         

       রোমান প্রজাতন্ত্রের যুগে সেকালে নানা ঘটনার স্বাক্ষী থাকতো এই ফোরাম। রাজকীয় বক্তা দের সমাবেশ থেকে বিজয়োৎসব -গণ সমাবেশ ,সালিশি ,গ্ল্যাডিয়েটরদের যুদ্ধ ইত্যাদির সাথে মিলনোৎসবের মূল কেন্দ্র স্থল হয়ে উঠেছিল এই স্থানটি।ফোরাম কে ঘিরে অনেক সময় লড়াই দ্বন্দযুদ্ধ ও বেঁধে যেত। সৱ শুনে কোর্ডিলিয়া বলে প্রাচীন যুগে সম্রাটদের দেখছি একমাত্র কাজ ছিল লড়াই যুদ্ধ ,লুট ডাকাতি অপহরণ দস্যু বৃত্তি অত্যাচার করে রাজ্যবিস্তার করা। 
 নানান আলোচনার মাধ্যমে সামাজিক ও রাজনৈতিক বহু সমস্যার সমাধান হতো। সেকালে প্রচুর খোলা বাজার বসতো। ,অজস্র দোকানপাট ছিল। এবং ছিল  নানান রোমান দেবদেবীর মন্দির। ক্যাপ্টেন মল্লিক ঋষভ কে নিয়ে পুবদিকের কোণে এগিয়ে যান ,একটি  ভাঙা মন্দিরের দেওয়াল দেখিয়ে জানান এখানে রয়েছে  দেবী ভেস্তার প্রাচীন মন্দির।   

শ্রী বলে ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী রোমান ফোরাম টি রোম সাম্রাজ্যর পুনর্নির্মানের পর যখন ধর্ম ও ধর্ম নিরপেক্ষ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কেন্দ্র হয়ে ওঠে তখন এখানে ক্রমশঃ বেশ কিছু মন্দির ও সৌধ নির্মাণ করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে বেশ কয়েক শতাব্দী যাবৎএটি রোমের নাগরিক জীবনের কেন্দ্র বিন্দুর এক অপরিহার্য্য অঙ্গ হয়ে উঠেছিল। এমন কি নাগরিক জীবনের সুবিধা অসুবিধা শাসন ব্যবস্থা ইত্যাদি সম্যক ধারণা জ্ঞাত হওয়ার জন্য এই রোমান ফোরাম ব্যবস্থার চল ছিল। অদ্রিজা ও কোর্ডিলিয়া হতাশ হয়ে বলে চারদিকে ঘিরে আছে প্রাচীন রোমের বহু সরকারি স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ। যার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মনে হোলো আমরা প্রাচীন একসাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষের মধ্যদিয়ে হেঁটে চলেছি।এখানে স্মারক তোরণ দ্বারের ভাস্কর্য্য টি র দিকে শ্রী দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে তোমরা লক্ষ্য করে দেখেছো কি.ঐ ভাস্কর্য্য টি তে রাজা টিবারের জেরুজালেম বিজয়ের পর রোমান বীরগণের রাজা সলমনের মন্দির লুঠ করে সম্পদ বহন করে আনার বিজয় মিছিল রিলিফ চিত্রাকারে খোদিত রয়েছে। সেখানে ইহুদী মন্দিরের সাতটি প্রদীপ রাখার স্ট্যান্ড টি পবিত্র ''মেনোরাহ" ও রৌপ্য নির্মিত ডঙ্কা বহন করে আনার দৃশ্য প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। অন্য একটি প্যানেলে দেখা যাচ্ছে ঘোড়ার রথে চড়ে গর্বিত বিজয়ী রাজা টিটাস তাঁর পাশে দন্ডায়মান বিজয়ী দেবী ঘোড়ার লাগামটি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। রোম নগর

খ্রীষ্টপূর্ব পাঁচ শতক থেকে এক শতকের ভিতর ফোরামের মাঝের অংশ প্রায় ফাঁকা ছিল জনতার ভীড়ের জন্য। তারপর ক্রমশঃ শুন্য স্থান জুড়ে নানান দালান স্থাপত্য কীর্তি গড়ে উঠেছিল। আজ অবশ্য সেই   ধ্বংসাবশেষের সামনে ওরা দাঁড়িয়ে আছে ,সেই ঐতিহাসিক দালান কোঠা স্তম্ভ ঘর দোর সব ধূলিসাৎ। রাজা টিটাসের আর্চ ও বিজয় তোরণ পার হয়ে ফোরামের অন্দরে প্রবেশ দ্বারের কাছে একটি উঁচু খাড়া পাহাড়ের ওপর অবস্থিত ছিল রোমের সবচেয়ে বড় ভেনাস বা শুক্র দেবীর অপূর্ব কারুকার্য্যে খচিত  মন্দির । এই মন্দির টি ১৩৫ খ্রীষ্টাব্দে সম্রাট হাদ্রিয়া কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল।যদিও এই মন্দিরটি  তে পৌঁছোনো মোটেই সহজ গম্য ছিল না।

জানালার বাইরে নিকষ কালো রাত। মায়াবী পৃথিবী সুপ্ত আঁধারের আঁচলছায়ায় ঘুমিয়ে আছে। বাইরের জমাট ঘোর অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে কলম হাতে নিয়ে চুপ করে ভাবছিল সেদিন কেমন করে ওই পাহাড় বেয়ে অত উঁচুতে উঠেছিল? সেখানের মন্দিরে গ্রীকদের প্রেমের দেবী ভেনাসের মর্মর পাথরের শুভ্র স্নিগ্ধ হাসি তে ভরা মুখের অপরূপ মূর্তি টি মায়ার বাধঁনে জড়িয়ে আজো বুঝি দুই হাত প্রসারিত করে ওকে ডাকে। ঘন ঘোর কালচে নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে শ্ৰীময়ীর আঁখি পাতায় স্বপ্ন নেমে আসে।দেবী ভেনাস শ্বেত শুভ্র পরীর পাখায় আকাশ থেকে নেমে এসে পরম যত্নে সোনার মায়া কাঠি বুলিয়ে দিয়ে যান।

Post a Comment

0 Comments