কবি জীবনানন্দ দাশ-এর কবিতা-ভিত্তিক চিত্র। শিল্পী - অর্ণব মিত্র
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।
(বনলতা সেন, কাব্যগ্রন্থ-বনলতা সেন)
গভীর হাওয়ার রাত ছিল কাল- অসংখ্য নক্ষত্রের রাত;
সমস্ত মৃত নক্ষত্রেরা কাল জেগে উঠেছিল- আকাশে এক তিল ফাঁক ছিল না;
(হাওয়ার রাত, কাব্যগ্রন্থ-বনলতা সেন)
সারাদিন একটা বেড়ালের সঙ্গে ঘুরে ফিরে কেবলই আমার দেখা হয়ঃ
গাছের ছায়ায়, রোদের ভিতরে,
(বেড়াল, কাব্যগ্রন্থ-বনলতা সেন)
অনেক রাত হয়েছে-অনেক গভীর রাত হয়েছে;
কলকাতার ফুটপাথ থেকে ফুটপাথে- ফুটপাথ থেকে ফুটপাথে-
কয়েকটি আদিম সর্পিণী সহোদরার মতো
এই-যে ট্রামের লাইন ছড়িয়ে আছে,
পায়ের তলে,সমস্ত শরীরের রক্তে এদের বিষাক্ত বিস্বাদ স্পর্শ
অনুভব করে হাঁটছি আমি।
( ফুটপাথে,কাব্যগ্রন্থ- মহাপৃথিবী)
থুরথুরে অন্ধ প্যাঁচা এসে
বলেনি কিঃ ‘বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনোজলে ভেসে?
চমৎকার!
ধরা যাক ‘ দু-একটা ইঁদুর এবার!’
(আট বছর আগের একদিন,কাব্যগ্রন্থ- মহাপৃথিবী)
ধান কাটা হয়ে গেছে কবে যেন- ক্ষেতে মাঠে পড়ে আছে খড় ,
(ধান কাটা হয়ে গেছে, কাব্যগ্রন্থ-বনলতা সেন)
পাণ্ডুলিপি কাছে রেখে ধূসর দীপের কাছে আমি
নিস্তব্ধ ছিলাম বসে;
শিশির পড়িতেছিল ধীরে ধীরে খশে
নিমের শাখার থেকে একাকীতম কে পাখি নামি
উড়ে গেল কুয়াশায়,
(স্বপ্ন, কাব্যগ্রন্থ- মহাপৃথিবী)
🍂
2 Comments
বাক্ রূদ্ধ হলাম
ReplyDelete
ReplyDeleteঅর্নব মিত্র জীবনানন্দের কবিতার ভাব যেভাবে ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন তা বেশ কিছুটা গদ্যময়। আসলে জীবনানন্দের কবিতার চিত্রকল্প কবিতাগুলিকে বিমূর্ত করে তোলে। তাকে রূপ দেওয়া বড় কঠিন!
জীবনানন্দের কবিতা হল 'ভিস্যুয়াল পোয়েট্রি'।
তাঁর কবিতা জুড়ে থাকে অপার বিস্ময়, উদাসীন বিষাদময়তা, অথচ এক ধরনের প্রকৃতির নৈঃশব্দের সুর, যা আমাদের আপ্লুত করে, আমাদের মন আচ্ছন্ন করে, আমরা কবিতাগুলির পরিসরে বারে বারে ফিরে যাই।
তাই অর্ণবের ছবিগুলো 'নিরবয়ব' হলে হয়তো আরেকটু বেশি ভালো লাগতো।