বিভূতিভূষণ দাস সহ ১৭ শহীদ (২৯ শে সেপ্টেম্বর, ১৯৪২, ভগবানপুর)
ভাস্করব্রত পতি
১৯২৩ সালে ভগবানপুরের বরতন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বিভূতিভূষণ দাস। তাঁর বাবা বরেন্দ্রনাথ দাস ছিলেন এলাকার বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতৃত্ব। মূলতঃ পিতার অনুপ্রেরণাতেই তিনি নিজেকে বিপ্লবমন্ত্রে দীক্ষিত করে তুলেছিলেন। মুগবেড়িয়ায় ১৯৩৮ সালের ১২ ই এপ্রিল একটি জনসভায় বক্তব্য রাখেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। সেই বক্তৃতা শুনে তাঁর মনে তুমুল আলোড়ন। এর ঠিক চার বছর পরে ১৯৪২ সালে মহাত্মা গান্ধীর ডাকে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন। এই ভারত ছাড়ো আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী ভাবনা থেকেই। ১৯৪২ এর ২৯ শে সেপ্টেম্বর ভগবানপুর থানা দখল করতে গেলে পুলিশের গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়।
ঘটনায় জানা যায়, থানা দখলের সময় পুলিশের গুলিতে আহত সংগ্রামীদের মুখে তিনি জল দিতে গিয়েছিলেন। তখন ফের গুলি ছোঁড়ে পুলিশ। সেই গুলিতে তিনিও গুরুতর আহত হন। এরপর তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সম্পূর্ণ বিনা চিকিৎসায় তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনার সময় তিনি আই এ পাঠরত ছাত্র ছিলেন। সেদিন ভগবানপুর থানা দখলে মোট ১৭ জন নিহত হন এবং ৮৭ জন আহত হন।
১৯৪২ এর ২৯ শে সেপ্টেম্বর ভগবানপুর থানা দখল অভিযান সুনির্দিষ্ট হয় বিকাল ৩-৩০ মিনিটে। সেই মোতাবেক মোট ৪ টি মিছিল আসবে বলে ঠিক হয়। পূর্বদিকের মিছিলে নেতৃত্ব দেন পীতবাস দাস এবং ভূপেন্দ্রনাথ মাইতি। পশ্চিমদিকের মিছিলে নেতৃত্ব দেন প্রিয়নাথ পণ্ডা ও বরেন্দ্রনাথ দাস। উত্তরদিকের মিছিলে নেতৃত্ব দেন অশ্বিনীকুমার মাইতি এবং খগেন্দ্রনাথ বেরা। দক্ষিণ দিক থেকে যে মিছিল আসে তাতে নেতৃত্ব দেন হৃষিকেশ গায়েন এবং মুরারিমোহন শাসমল। সে সময় পুলিশ সুধাংশু দাশগুপ্ত এবং অমূল্য ঘোষের নেতৃত্বে প্রস্তুত ছিল আগত বিপ্লবী জনতাকে ঠেকানোর জন্য। অবশেষে চলল গুলি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ১৪ জনের। আর চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যু হয় আরও ৩ জনের। সব মিলিয়ে ১৭ জন মারা যান সেদিনের ঘটনায়।
বিপ্লবমন্ত্রে দীক্ষিত 'মেদিনীপুরের মানুষ রতন' সেই ১৭ জন শহীদরা হলেন --
১. বিভূতিভূষণ দাস, বরতন, পিতা - বরেন্দ্রনাথ দাস
২. যুধিষ্ঠির জানা, সিমুলিয়া, পিতা- ইন্দ্রনারায়ণ
৩. ভূষণচন্দ্র সামন্ত, বেনাউদা, পিতা- ভীখনচন্দ্র
৪. তারকনাথ জানা, বেঁউদিয়া, পিতা- উদয়চাঁদ
৫. জগন্নাথ পাত্র, নূনহণ্ড, পিতা-কৈলাস
৬. জ্ঞানদাচরণ মাইতি, টোটানালা, পিতা- রঘুনাথ
৭. রঘুনাথ মণ্ডল, বেতুলিয়াচক, লালপুর, পিতা- জনার্দন
৮. শ্যামাচরণ মাইতি, বাহাদুরপুর, পিতা- দ্বারিকানাথ
৯. হরিপদ মাইতি, গুড়গ্রাম, পিতা- ঈশ্বরচন্দ্র
১০. শ্রীনাথচন্দ্র প্রধান, কুলবেড়িয়া, (ইনিই প্রথম নিহত হন। এঁর ভাই কামদেব প্রধান মাশুড়িয়াতে পুলিশের গুলিতে মারা যান)
১১. পরেশচন্দ্র জানা, গড়াবাড়, পিতা- শ্যামাচরণ
১২. কৃষ্ণমোহন চক্রবর্তী, বাসুদেবপুর, এগরা
১৩. রজনীকান্ত মাইতি, খাজুরাড়ী, পিতা- রামপদ
১৪. ভূপতিচরণ দাস, শ্যামসুন্দরপুর (সবং থানা), পিতা- কালাচাঁদ
১৫. ভরতচন্দ্র সিংহ, নেলুয়া গোপালচক, পিতা- মধুসূদন
১৬. ধীরেন্দ্রনাথ দলপতি, কসবা, ৫.১০.১৯৪২, পিতা- নীলকণ্ঠ (থানা হাজতে ১৮ দিন বেঁচেছিলেন)
১৭. কেদারনাথ মাইতি, বাহাদুরপুর, পিতা - সীতানাথ, ৩.৪.১৯৪৩ এ মৃত্যু হয়।
🍂
0 Comments