অগস্ত্য মুনির কথা
পি. শাশ্বতী
পৌরাণিক যুগের সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল তৎকালীন যুগের তপোবন, এবং সেই তপোবনকে কেন্দ্র করে একএকজন বড় বড় আধ্যাত্মিক ক্ষমতাধারী মুনিঋষির অসাধারণ উপস্থিতি। পুরাকালের সেই সব মুনিঋষিরা যোগবলে নানা রকমের যে সব অত্যাশ্চর্য ঘটনা ঘটানোর ক্ষমতা রাখতেন, আজকের দিনে হয়তো সেটা বাগারম্বর বলে মনে হতে পারে, কিন্তু যোগবলে ঘটানো সেই সব অসাধ্য সাধন যে মোটেই অলীক কোনো কল্পনা ছিল না, সেটা আজকের বিজ্ঞানের নানা রকম অসাধ্য কীর্তির দিকে নজর দিলে, সহজেই অনুমান করা যায়। বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব কল্যাণে আজ কত নভোশ্চর বছরের পর বছর অন্তরীক্ষে অবস্থান করছেন। মাটির নীচ থেকে গ্যালন গ্যালন জল মানব কল্যাণে মাটির উপরে তুলে আনা হচ্ছে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভাবনীয় আবিষ্কারে দুর্ঘটনাগ্রস্ত একটি মানুষের বিকৃত শরীরকে আবার পুনরাবস্থা ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুরাণ কাহনিতে মুনিঋষিদের এমন কত কৃতিত্বের কথাই তো আমরা জানতে পারি। এই রকমই একজন পুরাণ-ঋষি, যাঁর বিষয়ে নানা কাহিনি আজও প্রচলিত আছে। এবং যাঁকে নিয়ে বাংলায় প্রবচন ও বাগধারা বিশেষ প্রসিদ্ধ। তিনি হলেন অগস্ত্য মুনি।
বাংলা প্রবচনে জীবনকালে শেষ যাত্রা বা চিরবিদায় বোঝাতে 'অগস্ত্য যাত্রা' বহুব্যবহৃত একটি শব্দ। মূলত অগস্ত্য মুনির আর্যাবর্ত থেকে দাক্ষিণাত্য গমনের সময়ের ঘটনা থেকে এই বাগধারার উদ্ভব। এছাড়াও 'এক গণ্ডুষে সাগর পান'-এর মতো অধ্যাত্ম কীর্তির মতোই নানা গল্প আজও ফেরে ভরতবংশীয়দের মুখে মুখে।
তাহলে জেনে নেওয়া যাক কে এই অগস্ত্য মুনি? কিভাবে তাঁর আগমন এবং কীই বা তাঁর পরিচয়?
ঋগ্বেদ মতে অপ্সরা উর্বশীর ক্ষেত্র থেকে মিত্রবরুণ তথা সূর্যদেব ও বরুণদেবের ঔরসে যজ্ঞের কুম্ভ থেকে জন্ম নেন দু-জন মহাজ্ঞানী ঋষি। একজন বশিষ্ঠ আর একজন অগস্ত্য।
বেদের একজন মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি হিসাবেও অগস্ত্যর নাম পাওয়া যায়। ভাগবতে এঁকে পুলস্ত্যের পুত্র বলা হয়েছে। তাঁর জন্ম কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। জন্ম মুহূর্ত থেকেই তিনি মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত ছিলেন। মূলত প্রকৃতি প্রদত্ত অভিশাপের কারণেই তিনি হলেন কুম্ভযোনি জাত। অগস্ত্যর অনেক নাম। কুম্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে তাঁর এক নাম কলসীসূত, কুম্ভসম্ভব, ঘটোৎভব, কুম্ভযোনি। মিত্র ও বরুণের পুত্র বলে মৈত্রাবরণি। সমুদ্র পান করেছিলেন বলে পীতাব্ধি। বাতাপিকে বিনাশ করেছিলেন বলে, বাতাপিসূদন বা বাতাপিদ্বীট। উর্বশীর জন্য উর্বশীয়। মহাতেজা বলে আগ্নেয়। বিন্ধ্য পর্বতকে শাসন করেছিলেন বলে বিন্ধ্যকূট। ক্ষুদ্রাকৃতি বলে তাঁর নাম মান।
ব্যুৎপত্তি অনুসারে অগস্ত্য হল অগ– স্তৈ+ক। অগ শব্দের এক অর্থ 'গমন না করা' আবার অগস্ত্যি শব্দের এক অর্থ 'দক্ষিণ দিক'। পুরাণ মতে এই মহর্ষি বর্তমানে নক্ষত্র রূপে আকাশে দক্ষিণ দিকে অবস্থান করেন। সুতরাং দক্ষিণ দিকে তিনি অবস্থান করেন বলে তার নাম অগস্ত্য।
এই অগস্ত্য মুনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি চিরকুমার থাকবেন। একদিন অরণ্যে পরিভ্রমণের সময় তিনি এক রহস্যময় গুহা দেখতে পেলেন। পরিত্যক্ত মনে হলেও তপোবলে অগস্ত্য জানলেন সেখানে তাঁর পূর্বপুরুষেরা অধোমুখে লম্বমান হয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় আছেন। মুনি তাঁর পূর্ব পুরুষদের এমন অসহায় অবস্থার কারণ জানতে চাইলে তাঁরা বললেন, "তোমার চিরকুমার থাকার ব্রত আমাদের এই অবস্থার কারণ। বংশরক্ষা না হলে আত্মার সদ্গতি হবে না। ফলে তুমি যতদিন চিরকুমার থাকবে, ততদিন এই অবস্থা থেকে আমাদের পরিত্রাণ নেই।” অগত্যা অগস্ত্য মত বদলানেন এবং তাঁদের আশ্বাস দিলেন যে তাঁদের মুক্তির কারণেই তিনি তাঁর ব্রত ভঙ্গ করে বৈবাহিকসূত্রে আবদ্ধ বোবেন।
কিন্তু সমস্যা দেখা দিল অন্য জায়গায়। তাঁর ইচ্ছা ছিল পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ কোনো সুন্দরী নারীকে তিনি বিবাহ করবেন। যদিও তিনি নিজে ছিলেন খর্ব কায়। দৈহিক সৌন্দর্য্যও এমন কোনো কান্তিময় পুরুষের মতো ছিল না। ফলে পার্থিব কোনো সুন্দরী নারীই তাঁর প্রস্তাবে সম্মত হতে পড়লেন না। তখন তিনি তাঁর তপোবলে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর সৌন্দর্য্য ও শ্রেষ্ঠত্ব আহরণ করে এক পরমা সুন্দরী কন্যার সৃষ্টি করলেন। পৃথিবীর সমস্ত জীবের শ্রেষ্ঠত্ব ও সৌন্দর্য্য লোপ করে এই নারীর জন্ম। তাই এর নাম হল লোপামুদ্রা। এর প্রতিপালনের ভার দিলেন বিদর্ভরাজের হাতে। সেই কন্যা বিবাহযোগ্যা হলে মুনি বিদর্ভরাজার দরবারে উপস্থিত হয়ে তাঁকে স্ত্রী রূপে প্রার্থনা করলেন।
কিন্তু বিদর্ভরাজ মোটেই রাজি হলেন না তাঁর লালিত পরমাসুন্দরী কন্যাকে এক খর্বকায় দরিদ্র ঋষির হাতে তুলে দিতে। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হল এই যে, লোপামুদ্রা নিজেই এই দরিদ্র ঋষিকে পতিরূপে বরণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করলেন। বিবাহের পর একদিন লোপামুদ্রা তাঁর স্বামীকে স্মরণ করালেন এই বিবাহের উদ্দেশ্যের কথা। তিনি এও বললেন, নিজের সুখের জন্য না হলেও পূর্বপুরুষদের কথা ভেবেই তাঁর সন্তান উৎপাদনের ধর্মপালন করা কর্তব্য। এরপর একদিন লোপামুদ্রা ঋতুস্নান করে এলে মুনি তাঁকে আহ্বান করলেন সন্তান উৎপাদনের জন্য। আশ্চর্যের বিষয়, তখন লোপামুদ্রা ক্ষমা চেয়ে বললেন, “এমন দীন-জীর্ণ অবস্থায় আমি আপনার সন্তান উৎপাদন করতে পারব না। আমার পিতৃগৃহে যেরূপ সালঙ্কারা হয়ে রাজশয্যায় শয়ন করতাম, সেইরূপ অলংকার ও শয্যাসামগ্রী না পেলে আমি সন্তান উৎপাদনে অংশ গ্রহণ করতে পারব না।”
অগস্ত্য বললেন, “প্রিয়ে! তোমার পিতা রাজা, আমি তপস্বী। তাই তোমার এরূপ ইচ্ছাপূরণে আমি অপারগ।”
লোপা নিজের সিদ্ধান্তে অটল রইলেন। অগস্ত্য কষ্ট পেলেও স্ত্রীর বাসনা পূরণের জন্য বিভিন্ন রাজদরবারে হাজির হলেন ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে। কিন্তু কোনো রাজারই এমন উদ্বৃত্ত সম্পত্তি নেই যে মুনির বাঞ্ছা পূর্ণ করেন। অবশেষে রাজা ত্রসদস্যু এক উপায় বললেন। তাঁকে এক ধনশালী রাক্ষস ইল্বলের সন্ধান দিলেন। পুরাণে আছে, পিপ্পলি বনে ইল্বল ও বাতাপি নামে দুই রাক্ষস বাস করত। সেই মায়াদয়াহীন রাক্ষসযুগল কোনো অস্ত্রশস্ত্র ও আক্রমণ ছাড়াই শত শত ব্রাহ্মণকে বধ করতেন।
মায়াবিদ্যায় পারদর্শী বাতাপি ও ইল্বলের এই হত্যাকাণ্ড যজ্ঞানুষ্ঠান সম্পাদিত হতো এক অদ্ভুত উপায়ে। বাতাপি মায়াবলে মেষের রূপ ধারণ করত। আর ইল্বল ব্রাহ্মণদের আমন্ত্রণ করে আনত তাঁদের ভোজন সেবার জন্য। এরপর মেষরূপী বাতাপিকে কেটে রান্না করে সেই মাংস ব্রাহ্মণদের ভোজন করাত ইল্বল। ব্রাহ্মণরাও অমৃতভেবে তা গ্রহণ করতেন। পরে ইল্বল মায়াবলে বাতাপিকে ডাকলে সে ব্রাহ্মণদের পেট ফুঁড়ে বেরিয়ে আসত, উদর ছিন্ন হয়ে করুণ ভাবে মৃত্যু হতো সেই ব্রাহ্মণের। যে বা যারা ইল্বলের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করত তারা সাক্ষাৎ মৃত্যুকে আহ্বান জানাত। রাজা ত্রসদস্যু অগস্ত্যকে বোঝালেন এই রাক্ষসদ্বয়ের কাছে যে বিপুল ধনরাশি সঞ্চিত আছে, তাদের কোনো প্রকারে হত্যা করতে পারলে সহজেই লোপামুদ্রার আব্দার মেটানো যাবে।
অগস্ত্য রাজি হলেন। একদিকে নিষ্ঠুর রক্তপিপাসু রাক্ষস নিধন অপর দিকে প্রিয়তমার মানভঞ্জন। অগস্ত্য মুনি গেলেন বাতাপি ও ইল্বলের রাজ্যে। রাক্ষসরা তো মহাখুশি। ইল্বল সাদরে আপ্যায়ন করলেন অগস্ত্যকে। তাদের কার্যকলাপের সমস্ত বিষয়ে অবগত অগস্ত্যও অভিনয় করলেন ও ছলের আশ্রয় নিলেন। তিনি বললেন, "হে বৎস! আমাকে আজ মেষ মাংস আহার করাও ! বহুদিন যাবৎ মেষমাংস আহারের ইচ্ছা।"
উৎফুল্ল ইল্বল মেষরূপী বাতাপিকে জবাই করে রান্না করল। এদিকে অগস্ত্য মুনি স্নান সমাপন করে কমণ্ডলুতে গঙ্গাকে আহ্বান করে মাটির পাত্র নিয়ে আহারে বসলেন। বললেন, "বৎস! আমাকে সবটুকু মেষ মাংসই প্রদান করো। লোভবশে তুমি নিজের জন্য সামান্য মাংসও যদি সঞ্চিত রাখো, তাহলে কিন্তু যোগবলে সেটা আমি জানতে পারব এবং তোমাকে আমি শাপ দেবো।"
ইল্বল মাটির পাত্রে অন্ন, ব্যঞ্জনাদি ও সবটুকু মেষমাংস প্রদান করল। মুনির আহার শেষ হলে হৃষ্টচিত্তে ইল্বল বাতাপির নাম ধরে ডাকতে লাগলেন। মুনি তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বললেন, "তোমাদের সকল ছলচাতুরি আমি জানতাম। তোমাদের বিনাশের জন্যই আমার এখানে আগমন। বাতাপি আর আসবে না। সে বেঁচে নেই। আমি তাকে হজম করে ফেলেছি।" এই কথা শুনে ক্রুদ্ধ ইল্বল, মুনিকে বধ করতে উদ্যত হলে, মুনিও তপোবলে তাকে ভস্মীভূত করলেন।
ইল্বল ও বাতাপিকে বধ করে অগস্ত্য বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হলেন। পূর্ণ হল লোপামুদ্রার মনস্কামনা। এইবার তিনি অগস্ত্যের কাছ থেকে এক বীর্যবান পুত্র প্রার্থনা করলেন। দৃড়স্যু নামে তাদের শক্তিশালী এক পুত্র লাভ হল। এবং সেই পুত্র অগস্ত্যের পূর্বপুরুষদের ঝুলন্ত অবস্থা থেকে মুক্ত করলেন।
নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী সম্পাদিত ‘পুরাণকোষ’ গ্রন্থে 'অগস্ত্য' শব্দের ব্যুৎপত্তিতে বলা হয়েছে 'স্তৈ' ধাতুর সাথে 'অগ' শব্দ যোগে অগস্ত্য শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে। ‘স্তৈ' ধাতুর অর্থ স্তব্ধ করা। 'অগ' শব্দের অর্থ পর্বত। বিন্ধ্য পর্বতের (অগ) উচ্চতরগতি ও দর্পকে স্তব্ধ করেছিলেন বলে তার নাম হয় অগস্ত্য। তিনি মূলত অগ্নির স্বরূপ। একসময় দেবরাজেন্দ্র দেবতা-বিদ্বেষী দানবদের পুড়িয়ে মারার জন্য অগ্নি ও মরুৎকে( বায়ু) আদেশ করেন। বায়ুর সহায়তায় অগ্নি হাজার হাজার দানবকে দগ্ধ করতে লাগলেন। তখন অত্যন্ত ভীত হয়ে তারক, কমলাক্ষ, কালদ্রংষ্ট, পরাবসু, বিরোচন প্রমুখ দানব পালিয়ে গিয়ে সমুদ্রের তলদেশে জলদুর্গে আশ্রয় নিলেন। ফলে অগ্নি ও বায়ু তাদের আর ক্ষতি করতে পারলেন না।
ইন্দ্রের আদেশ পালন করলে সমুদ্রের বহু নিরপরাধ প্রাণীর জীবন নাশ হয়ে যাবে এই ভয়ে অগ্নি ও বায়ু এ ধরনের পাপাচারণ করতে রাজি হলেন না। আদেশ লঙ্ঘনের অপরাধে ইন্দ্র তাদের অভিশাপ দিলেন, “তোমরা দু-জনেই এক দেহে মুনি হয়ে জন্মাবে, অগ্নি তখন অগস্ত্য নামে বিখ্যাত হয়ে সমুদ্র শোষণ করবেন। তখনই আবার তিনি দেবত্ব লাভ করবেন।” এই অভিশাপের ফলেই অগ্নি ও বায়ু এক দেহে অগস্ত্য রূপে জন্মগ্রহণ করেন। ( মৎস্য পুরাণ)
ঘটনাক্রমে বৃত্তাসুর নামে এক অসুর স্বর্গ-মর্ত্য-পাতালের শান্তি ভঙ্গ করছিল। আর এদের সহযোগী ছিল কালকেয় জাতির অসুরগণ। এক সময় দেবরাজ ইন্দ্র মহামুনি দধিচীর অস্থি দিয়ে বজ্র নির্মাণ করে বৃত্তাসুরকে বধ করেন। কালকেয় অসুরগণ দুর্বল হয়ে লুকিয়ে পড়ল সমুদ্রের গভীরে দেবতাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য। কিন্তু ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য প্রতি রাতে সমুদ্র থেকে বেরিয়ে এসে মানুষ ও মুনিঋষিদের ওপর তাণ্ডব চালাতে লাগল। সেই সঙ্গে সমুদ্রের নিরীহ প্রাণীদেরও হত্যা করতে শুরু করল। তাদের কথা ভেবে দেবতারা মহামুনি অগস্ত্যের দ্বারস্থ হলেন।
তপোবলে অগস্ত্য মুনি সাগরের সব জল পান করে কালকেয় অসুরদের বের করে আনলেন। তখন দেবতারা তাদের বিনাশ করল। ভগীরথ স্বর্গ থেকে দেবী গঙ্গাকে আনলে আবার সমুদ্রের জল পূর্ণ হয়। এই ঘটনা থেকে ‘এক গণ্ডুষে সাগর পান’ কথাটি প্রচলিত।
এছাড়াও,
"সংস্থপ্য মৃণ্ময় পাত্রে তাম্রপাত্রম সুসংস্কৃতম
ছদ্যে শিখিগ্রীবেন ছরদ্রভিহ কাষ্ঠপমসুভিহ।"
অগস্ত্য সংহিতার একটি শ্লোকে উদ্ধৃত পংক্তিগুলির অর্থ হল একটি মৃত্তিকা পাত্রে তামার পাত দিয়ে একটি শিখগ্রীবা স্থাপন করতে হবে। এতে কাষ্ঠ গুঁড়ো, জিঙ্ক বা দস্তা এবং পারদ ছিটিয়ে সেখানে তার সংযুক্ত করলে মিত্রবরুণ শক্তি পাওয়া যাবে। এখানে শিখগ্রীবা শব্দের অর্থ ময়ূরের ঘাড় নয়। ময়ূরের ঘাড়ের রঙের রাসায়নিক পদার্থ বা কপার সালফেট। এই শ্লোকের বিবরণ নানকে তৈরি হয় আধুনিক যুগের অপরিহার্য বস্তু ব্যাটারি। যেটা প্রস্তুত হয় open circuit 1.38 Volt এবং free circuit current of 23 Milli Ampire প্রদান করে। অর্থাৎ কত কাল আগে এই মুনি ব্যাটারির ধারণা দিয়ে গেছেন।
এছাড়াও তিনি বিভিন্ন শ্লোকে নানাবিধ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার পদ্ধতি উল্লেখ করে গেছেন। যার মধ্যে জলে তড়িৎ বিয়োজন দ্বারা অক্সিজেন হাইড্রোজেন বিয়োজন এবং হাইড্রোজেন দ্বারা আকাশে উড্ডয়ন সম্ভব বলেও জানিয়েছেন।
অর্থাৎ পুরাণ বর্ণিত তথ্য বর্তমানের প্রেক্ষিতেও পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যা কিছু নিরন্তর ঘটে চলেছে আমরা তার কার্যকারণ বুঝতে অক্ষম হলেও সব কিছুরই পূর্বাপর কারণ রয়েছে। কোথাও অভিশাপ কোথাও আশীর্বাদ বা বর, কোথাও বা প্রকৃতি তার কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনে কোনো ঘটনা সংঘটিত করে চলেছে। যা মানব সমাজের এত অগ্রগতির যুগেও বোধ-বুদ্ধি-ব্যাখ্যার অগোচরেই থেকে যায়।
0 Comments