জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /আভা সরকার মণ্ডল


গুচ্ছ কবিতা 
আভা সরকার মণ্ডল 


হিসেব-নিকেশ

যখন তোমার দুয়ারে হাত ফেলে 
বলি, এসে একবার ভালোবাসো
পরখ করে অতল গভীরতা 
নির্দ্বিধায় এক অথই সুখে ভাসো ---

অবিশ্বাসী মেঘের ছায়া কাঁপে 
তোমার দুটি চোখের তারার ধীরে 
দেখে আমার খাঁ খাঁ মরু হৃদয় 
দৃষ্টি বাঁধে শূন্যতাকেই ঘিরে ।

একদিন মেঘ ঠিকই কেটে যাবে 
গোধূলির রঙ রাঙিয়ে দেবে মুখও
আটপৌরে সব দুঃখ ঝেড়ে ফেলে
বলবে তখন-- হৃদয়ে থাক সুখও।

জমা সুখের হিসেব-নিকেশ দুজন 
মিলেমিশেই করব আশায় থাকি 
একদিন পথ এক হবে তা জেনেই 
ভালোবাসায় পথ ভিজিয়ে রাখি ।


ঝড়ের খবর

ঝড়ের খবর পাসনি কি তুই
শুনিস নি কি মেঘের ডাক ?--
ফেলতে তারা চাইছে ফাঁদে 
একটু না হয় দূরেই থাক!

এ মেঘ ওড়ে মনের কোণে
প্রলয়োল্লাস বাঁধে তান
সতর্ক না হলে খুবই
সংকটে যে পড়ে প্রাণ!

ঝড় দাপায় সব ভাঙতে চেয়ে
হাওয়া যে তার আকর্ষণ
এড়িয়ে তাদের সরতে দূরে
পারে না তো বিবশ মন!

ফেঁসে গিয়ে ভুগছি আমি 
তুই অন্ততঃ দূরে যাস---
নইলে যে কেউ আটকাতে আর
পারবে না সেই সর্বনাশ!



নদী

সংক্রান্তিতে কত মানুষ 
দূর দূরান্ত থেকে 
আসে বলেই নদী যেন
খুশি হয় তা দেখে ।

পসরা সাজায় দোকানীরা 
সেই  নদীটির তীরে
ঘাটগুলো সব ভরে ওঠে 
পূর্ণার্থীদের ভিড়ে ।

বিক্রি বাট্টা জমে ওঠে 
জমজমাট হয় মেলা 
ছোটো ছোটো বাচ্চা খেলে 
কত রকম খেলা ।

কেনাকাটার ধুম চলে আর
সঙ্গে পুণ্য স্নান ও
গরীব দুখী হাত পেতে নেয়
সবার থেকে দানও ।

উৎসব শেষে দূষণ বুকে 
নদী যে হয় দুখী
চায় না সে যে আর কখনও 
হতে উৎসবমুখী।

মেলার সময় আবর্জনা 
না ফেলে কেউ জলে
দূষণ রোধের নিয়ম নীতি 
যদি মেনে চলে---

তবেই নদী খুশি খুশি 
উৎসবে যোগ দিয়ে
স্বচ্ছ ধারা উপহারে 
সবাইকে যায় দিয়ে ।


সাদা-কালো

নির্বাচিত পথেই জীবনভর
হাঁটলে তুমি রঙিন চশমা পরে
সঙ্গে থাকা সাদা-কালো ক্ষণ
দুঃখ পেয়ে তাই তো গেল স'রে !

সহজ-সরল ছিল কতক দিন
ছিল না সে দিনের দেখনদারি
সাদা-কালো বলেই শুধু তার
যাত্রাপথে টেনে ছিলে দাঁড়ি !

চোখ জুড়ে আজ আলগা রঙের ঘোর
চশমা খুললেই উঠবে সে রঙ দুলে
দেখবে আকাশ জুড়ে কালো মেঘ
বন্ধু তাকে ভেবেছিলে ভুলে !



সঙ্গী


কেউ ডাকে না একলা পাখির
ঘুম ভেঙ্গে যায় ভোর বেলায়
তাদের খেলার সঙ্গী হয়ে
ভাসে শরৎ মেঘ ভেলায় ।

কাশফুলেরা দল বেঁধে সব
খিল খিলিয়ে হেসেই যায়
দেখে সেসব ঘাটের মাঝি
পাল তুলে দেয় তারই নায় ।

ঝিলের জলে পদ্ম পাতায়
ডাহুক বসে করে ধ্যান
কি করে, কোন পথে আসবেন
মা ও তখন খবর নেন।

Post a Comment

0 Comments