জ্বলদর্চি

থ্যাংকস গিভিং ডে /দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে


থ্যাংকস গিভিং ডে

দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

আজ ২৮শে নভেম্বর, থ্যাংকস গিভিং ডে। এই দিনটি কিভাবে পালিত হয়, তার সবকিছুই আমরা সবিস্তারে জেনে নিই।

থ্যাঙ্কস গিভিং ডে-এর ঐতিহ্য এই দিনে, পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব সবাই একত্রিত হয়ে প্রত্যেকের জীবনের প্রতিটি সাফল্যের জন্য, দেশ ও জাতির সাফল্যের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান। প্রতিবছর, নভেম্বর মাসের চতুর্থ বৃহস্পতিবার 'থ্যাঙ্কস গিভিং ডে' পালিত হয় এবং এই বছর এটি পড়েছে ২৮শে নভেম্বর, বৃহস্পতিবার।

প্রত্যেক বছরে নভেম্বর মাসের ৪র্থ বৃহস্পতিবারে আমেরিকায় এবং অক্টোবরের ২য় সোমবারে কানাডায় এই দিনটি পালন করা হয়। থ্যাংকস গিভিং ডে-কে অনেকে আবার দ্যা টার্কি ডে ও বলে থাকে। ঐতিহাসিকভাবে থ্যাংকস গিভিং ডে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক একটা অনুষ্ঠান।

থ্যাংকস গিভিং ডে'র মূল উদ্দেশ্য, পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবসহ সবাই একত্রিত হয়ে সবার জীবনের প্রতিটি সাফল্যের জন্য এবং দেশ ও জাতির সাফল্যের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান। খাবারের তালিকায় থাকে টার্কি রোস্ট, ক্র্যানবেরি সস, মিষ্টি আলুর ক্যান্ডি, স্টাফিং, ম্যাশড পটেটো এবং ঐতিহ্যবাহী পামকিন পাই। টার্কি ময়ূরর মতো বড় সাইজের বনমোরগ।এই দিনটি তারা পরিবারের সঙ্গেই উপভোগ করতে বেশি পছন্দ করে।

🍂

থ্যাংকস গিভিং ডের ইতিহাস অনেকটা এইরকম,১৬২০ সালে ‘মে ফ্লাওয়ার’ 
নামের এক জাহাজে চড়ে ১০২ জন নানা ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে ধর্ম চর্চা করার জন্য ইংল্যান্ড ছেড়ে নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে বের হয়েছিলেন। কয়েকমাস পর তারা ম্যাসাচুসেটসে এসে থামেন। যাত্রীদের অনেকেই অর্ধাহারে ও শীতের কোপে অসুস্থ ও দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তাদের মধ্যে যারা সুস্থ ছিলেন তারা জাহাজ থেকে তীরে এসে নামেন। ওখানেই তারা প্লিমথ নামে একটি গ্রাম গড়ে তোলেন। স্কোয়ান্তো নামের এক উপজাতি আমেরিকান ইন্ডিয়ানের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। স্কোয়ান্তো তাদের নিজে হাতে শিখিয়ে দেয় কীভাবে কর্ন চাষ করতে হয় বা মাছ ধরতে হয় এবং কীভাবে ম্যাপল গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হয়।

১৬২১ সালের নভেম্বরে প্লিমথবাসী তাদের উৎপাদিত শস্য কর্ন নিজেদের ঘরে তুলতে পেরেছিল। কর্নের ফলন এত বেশি ভালো হয়েছিল যে, গভর্নর উইলিয়াম এ উপলক্ষে সব আদিবাসী এবং নতুন প্লিমথবাসীর সৌজন্যে ভূরিভোজের আয়োজন করেছিল। ওই অনুষ্ঠানে সবাই প্রথমে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান তাদের সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ও এমন সুন্দর শস্য দান করার জন্য। তারপর উপস্থিত সবাই সবাইকে ধন্যবাদ জানান সারা বছর একে অপরকে সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য। এই অনুষ্ঠানটি আমেরিকার প্রথম থ্যাংকস গিভিং ডে হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

মূলত মার্কিনি সংস্কৃতির অংশ হলেও, বর্তমানে থ্যাঙ্কস গিভিং ডে পালন করছেন ভারতীয়রা। বন্ধুদের বা পরিবারের নিকটদের সঙ্গে যদি দেখা করার সুযোগ নাও পান, হোয়াটস অ্যাপ বা ফেসবুকের মাধ্যমেই তাঁদের কাছে পাঠিয়ে দেন এই শুভেচ্ছা বার্তা।

এটি মূল প্রতীকী একটি অনুষ্ঠান। আসলে পরস্পরের পাশে থাকা, আপাদে বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া, এবং আগামী দিনগুলির জন্য শুভেচ্ছা জানানোর উদ্দেশ্যেই বছরের পর বছর ধরে এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে। 

এর সঙ্গে খাওয়া খাওয়ার বিশেষ যোগ আছে। ঐতিহ্যবাহী নানা পদ এদিন রান্না হয়। সেটি ছাড়াও এদিন টার্কির মাংস খাওয়ারও চল আছে। এদিন অনেকে আবার নতুন ফসলও রোপন করেন।
প্রকৃতপক্ষে এই দিনটি পালনের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে সৌভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্কে জড়িয়ে থাকতে চান, যা আগামীর জন্য সকলের পক্ষে মঙ্গল।

Post a Comment

0 Comments