জ্বলদর্চি

রাত্রির তপস্যা: বেঁচে থাকার তপস্যা /সূর্যকান্ত মাহাত

রাত্রির তপস্যা: বেঁচে থাকার তপস্যা

সূর্যকান্ত মাহাত

কবি সর্বজয়া আচার্য নন্দের 'রাত্রির তপস্যা' কবিতা সংকলনটি সম্পর্কে কিছু বলার আগে একটা কথা বলে রাখা ভালো, আমি কোন সমালোচক নয়। সামান্য পাঠক মাত্র। কোন কবিতা পাঠ করার সময় আমি কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পথকেই অনুসরণ করি। তিনি বলেছেন, "অপরের কবিতা পাঠ করার সময় আমি শুধুই একজন বিনীত নম্র ও উদগ্রীব পাঠক, এবং নিজস্ব আবেগ ও বাসনার সঙ্গেই কবিতাকে মিলিয়ে নিতে চাই। তাছাড়া কবিতার কাছে আর কি দাবি করব?" ( সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, কবিতা পরিচয়, ১৯৬৭) আমিও তাই। আমারও কবিতার কাছে কোন দাবি নেই। কবিতা তো  জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। কবিতার শব্দগুলো দিয়েই তো গড়ে উঠেছে আমাদের জীবন। এক একটা ছোট শব্দ, কিন্তু তার বিস্তার বিরাট। কবিতার শব্দবন্ধ ছন্দের মতোই আমাদের জীবন। আবার তারই মতো মাঝে মাঝে ঘটে যায় ছন্দপতনও। হোক না অন্য কোন এক কবির কবিতা, কিন্তু সেখানে তো আমাকেই আমি খুঁজে পাই। কবি জয় গোস্বামী কী সেকারনেই বলেছেন, "এভাবেই আমাদের কবিতা জীবন সংগ্রহ করতে করতে চলে, আমার জীবন কথা যে বলে, সে আমার কবি।" (রৌদ্র ছায়ার সংকলন জয় গোস্বামী) কবির চাওয়া পাওয়া, আশা-আকাঙ্ক্ষা, ভয়, ভীতি, ইচ্ছা, অনিচ্ছা, কামনা-বাসনা এসব কিছু তো কবির একার নয়। সেখানে আমাদেরও আবেগগুলো জুড়ে জুড়ে থাকে। জয় গোস্বামী তাই বলেছেন, "আমাদের সমস্ত জীবনই আজ কবিতার অন্তর্গত।"(রৌদ্র ছায়ার সংকলন)

জলদর্চি থেকে প্রকাশিত 'রাত্রির তপস্যা' কবিতা সংকলনটি কবির নবম কবিতা সংকলন। এই সংকলনে মোট চারটি অংশ রয়েছে। গ্রন্থের একেবারে সূচনাতে কবিপুত্রের লেখা 'মায়ের স্যার' নামে একটি প্রতিবেদন রয়েছে। এরপর তিনটি পর্বে বিভক্ত করা হয়েছে মূল কবিতাগুলোকে। সব শেষে রয়েছে 'লেখিকার কথা'। কবিতা সংকলনটি আর পাঁচটি বইয়ের থেকে একটু ভিন্ন। তবে ছিন্ন নয়। পৃথক হল বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে এমন মানুষটিকে নিয়ে একটি মননশীল লেখা। কবি সর্বজয়া আচার্য নন্দ বইটি উৎসর্গ করেছেন তার গুরুদেব অধ্যাপক শ্রী সন্তোষ কুমার পড়্যা মহাশয়কে। কবি পুত্র পবিত্র কুমার নন্দ বইটির শুরুতেই এই গুরুদেবকে নিয়ে একটি সমৃদ্ধ ও মননশীল স্মৃতিচারণ করেছেন 'মায়ের স্যার' শিরোনামে।  আদর্শবান এই শিক্ষকের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান কীভাবে নির্মিত হয়েছে, এবং আজীবন সেই মানুষটিকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করতে পারাটাকে ঐশ্বরিক আশীর্বাদ বলে মনে করেছেন সেটাই আবেগের সঙ্গে ব্যক্ত করেছেন। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনার কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। মায়ের নির্দেশে একদিন সাইকেলে চাপিয়ে গুরুদেবকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিলেন। ছেলেটিকে কষ্ট দেওয়ার জন্য গুরুদেবেরও কষ্ট হয়েছিল বলে তার মাথায় হাত বুলিয়ে সে কথা বলতেই কবিপুত্র উত্তরে জানিয়েছিলেন, ঈশ্বর এই  সুযোগটা তাকে দিয়েছেন। পরে হয় তো আর কোনদিন সে সুযোগ নাও আসতে পারে। এই ঘটনাকে তিনি ঈশ্বরের আশীর্বাদ বলেই মনে করেছিলেন। একটা মানুষ হৃদয়ের ঠিক কোন জায়গায় স্থান লাভ করলে, তার একটু সেবা করতে পারাকেই জীবন ধন্য মনে করা হয়, এটা বোধহয় তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

🍂

মূল তিনটি পর্বে কবিতাগুলো বিভক্ত। 'ক', 'খ', 'গ'। 'ক' পর্বের শিরোণাম 'রাতের প্রহরে'। এখানে ৩৮ টি কবিতা রয়েছে। দ্বিতীয় 'খ' পর্বের শিরোণাম 'তপস্যার বাটে'। এখানে ২৪টি কবিতা রয়েছে। তৃতীয় 'গ' পর্বের নাম 'তপের নিধি', এখানে মোট ৩৫ টি কবিতা রয়েছে। অর্থাৎ সম্পূর্ণ কবিতা সংকলনটিতে মোট ৯৭ টি কবিতা রয়েছে।

প্রথমে একটা প্রশ্ন জাগে, কবিতা সংকলনের নাম 'রাত্রির তপস্যা' কেন? সেই উত্তর খুঁজতে হয় না। কবি নিজেই দিয়েছেন। 'রাত্রি' হল কবির কাছে সৃষ্টি ও আবেগের মেলবন্ধন। প্রথম পর্বের 'অর্চনা' নামক একটি কবিতায় কবি বলেছেন, "রাত্রি আমায় টানে জেগেরই সে কারণে/করে না সে বিচলিত ব্যর্থ কোনদিন.../ব্যথার অশ্রু মুছে বাঁচার আশ্রয় দেয়//অনুভবে বুঝি কে সে রয় অন্তরীন...।।" তপস্যা তো একরকম কঠোর সাধনা, কঠিন সে পথ। তারপরেও কেন সেই পথ অনুসরণ করা? তবে কি সেই কঠিন পথেই আছে কোমল সুখের হাতছানি! না হলে কেন বিনিদ্র রাত্রির কঠিন তপস্যায় বারবার কবির মগ্ন হওয়া! কবি তো বলেইছেন তার "ধূসর জীবনের পাতা থেকে"একটি একটি করে অর্চনার রাত্রিগুলো ঝরে গেলেও কবি হতাশ নন। বরং সৃষ্টির আনন্দ কণা সেই তিমির হতাশাকে দূরীভূত করেছে বারবার। রাত্রি কঠিন হলেও এই সৃষ্টিধারা  কবিকে রাতের পর রাত প্রাণবন্ত করে রাখতে পেরেছে।
শুধুই কি সৃষ্টি সুখের সন্ধানে রাত্রির তপস্যা? দিবসের কর্মযোগে আমাদের যে শ্রান্তি, ক্লান্তি, অবসাদ, নানান প্রমাদ আমাদের শরীর ও মনকে একেবারে অবসন্ন করে তুলে, তার থেকে শান্তি ও মুক্তি পেতেও তো বারবার রাত্রির কোলে মাথা রাখা। কবিও তার ব্যতিক্রম নন। 'গুন্ঠন খোলো' কবিতায় তিনি তো সে কথাই ব্যক্ত করেছেন। "রজনী! গুণ্ঠন খোলো বাড়াও দুই বাহু সম্মুখে/ প্রতীক্ষা সয় না প্রাণে ছোটে সে তোমার অভিমুখে,/জুড়াও শীতল স্পর্শে দিবসের ক্লান্তি অবসাদ/সযত্নে মুছে দাও সে অবসাদ- সহস্র প্রমাদ।"

সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কবি বারবার রাত্রির কাছে ছুটে চলার এক অমোঘ আকর্ষণ  অনুভব করেছেন। এই প্রবল  টানের নিদারুণ আকর্ষণ কবিকে যেন ঘোর নেশায় আসক্ত করে তুলেছে। তাই রাত্রির উপর কবির কপট অভিমানও ঝরে পড়েছে। 'রাত কাবার' নামক কবিতায় সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। "কেন বাঁধলে এমন প্রীতির ডোরে/কেন প্রাণে জ্বালাও হোমের শিখা?/কেন বেড়ি পরাও দুটি পায়ে?/জাগিয়ে রাতে কেন বসিয়ে রাখা?/"
বারবার রাত্রির কাছে এভাবেই কবির ছুটে চলা। রাত্রির নীল আকাশটাও যেন কবিকে ডাকে। 'মনের ডিঙি' কবিতায় সে কথাই বলেছেন, "মাথার পরে নীল আকাশটা কেন---/প্রতিরাতে আমায় ডাকে কাছে"। এসব কিছু কি তবে মুক্তির জন্য? কিসের মুক্তি? কি থেকেই বা মুক্তি? এই জীবন ও সমস্যা থেকে? নাকি এর আড়ালে এক সুপ্ত মৃত্যু চিন্তাও জেগে উঠেছে? "মনের ডিঙি" কবিতায় এই অদ্ভুত বৈপরীত্যই ধরা পড়েছে। একদিকে যেমন দায় দায়িত্ব, অন্যদিকে তেমনি দায় মুক্তির বাসনা। একদিকে জীবন ও সমস্যা। অন্যদিকে তার থেকে মুক্তির প্রবল বাসনা। ডিঙি বেয়ে ওপারে যাওয়ার চেষ্টা তো সেটাই ইঙ্গিত দেয়। আমাদের জীবন যন্ত্রণাময়। সর্বত্র আমরা সেই ব্যথা থেকে মুক্তির প্রয়াস খুঁজি। কবিরও কি সেরকম কোন গোপন ব্যথা আছে রাত জাগা পাখিগুলোর মতো! না হলে কেনই বা তিনি লিখলেন, "রাতের পাখি ডানা ঝাপটে জানায়---/তার মনেও আছে গোপন ব্যথা...।"
নারীদের সংসার সমুদ্র থেকে মুক্তি লাভ সহজ নয়। কবিও সেটা অন্তর থেকে উপলব্ধি করেছেন। মুক্তির প্রবল আকাঙ্ক্ষা থেকেই এ সমুদ্র পারাবার হতে চেয়েছেন। হয়তো সেটা সম্ভব নয়, তবুও প্রচেষ্টা করলে দোষ কোথায়। তাই বলেছেন,"দাঁড়টা কেন ধরেই রাখা শুধু---/দিই না ছেড়ে- যাক না কোথায় যাবে/ভাসুক ডুবুক একটা কিছু হবেই---/শেষ দেখাটা দেখাই যাক না তবে...।" কিন্তু কবির ডিঙি পাড়ে ভিড়তে ব্যর্থ। কেন এই গেরো? কারণ সংসারের ঠ্যালা। এ বাঁধন থেকে মুক্তির ডাক হৃদয়ে বারবার জাগলেও সেই কুহকে প্রত্যাবর্তনই যেন নিয়তি। তাই কবিও ফিরে এসে সাংসারিক কাজেই ফের দায়বদ্ধ হয়ে পড়েন। তখন আমাদেরও প্রশ্ন জাগে এ তপস্যা অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তরণ, নাকি অন্ধকারেই মুক্তির যথার্থ আলো? 

দ্বিতীয় পর্বের নাম 'তপস্যার বাটে'। এই পর্বে মোট ২৪টি কবিতা আছে। নামকরণ দেখে বোঝা যায়, কবির রাত্রি আরাধনার যাত্রা পথ হল এই পর্ব।  কেমন সেই যাত্রাপথ! তপস্যার পথ কি কখনো সুগম হয়! হয় না বলেই কবি ব্যক্ত করেছেন, "সে পথ মসৃণ নয়-ক্ষুরধার-বিপদ- সংকুল-"শুধু তাই নয়, সুদীর্ঘ কন্টকাকীর্ণও বটে। এ পথে বোধনের আনন্দ ও বিসর্জনের ভীতি সমানে বিরাজ করে। কঠিন সে পথ ঝরা ফুলের মতোই অনুজ্জ্বল। তাই করুনার প্রত্যাশাতেই তো এই ব্যথা ভুলে যাওয়ার অঙ্গীকার। মন তো কত কিছুই হতে চায়। সব সময় কি সেটা সম্ভবপর হয়ে ওঠে। সময়ে সময়ে কত কিছুই জীবনে"সয়ে যেতে হয় বাধ্য হয়ে।"(বাধ্য হই) জীবনে প্রিয় মানুষটির প্রতি প্রেম-প্রীতি-ভালবাসার থেকেও তার অভাব ও বিরহ যাতনা আমাদের মনে বেশি প্রকট। দিনের ব্যস্ততায় স্মৃতি কাতরতা ঢাকা পড়লেও রাতের নির্জনতায় সেগুলোই তো বেশি করে ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। মনের এই ব্যথার মাঝেই লুকিয়ে থাকে যে মমতা, সেই সন্ধান বোধ হয় কারোরই জানা নেই। আমরাও অজ্ঞাত জগতের আকর্ষনেই বেশি বিচলিত। তাই আনমনা হয়ে পড়ি। সেটাও তো ঠিক নয়। তারপরেও প্রিয়জনের বিরহে ভালোবাসা আরো বেশি গাঢ় হয়। জীবনে এই বৈপরীত্য থাকাটাই তো স্বাভাবিক। যদিও পরস্পর বিপরীত এই ধর্মকে কবি 'কাঁটা' বলে উল্লেখ করেছেন। একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায় দিনের শেষে আমরা কিন্তু সবাই একা। রাত্রির ঐ একাকীত্ব টুকুই আমাদের প্রকৃত জীবন। ওখানেই চরম প্রশান্তি, আবার ওখানেই যত ব্যথার অনুভূতি। 

তৃতীয় তথা শেষ পর্বের নাম 'তপের নিধি'।  এই পর্বের প্রথম কবিতার নাম 'রাত্রির তপস্যা'। এই কবিতার নামেই 'কবিতা সংকলন'-র নাম রাখা হয়েছে। কেন এই তপস্যা? উদ্দেশ্য কি সিদ্ধিলাভ? নাকি কোন কিছু প্রাপ্তির প্রত্যাশা? কবিই উত্তর দিয়েছেন, "এ তপস্যা চায় না সিদ্ধিলাভ--- চায় না সম্মান যশ খ্যাতি/এ যে স্নিগ্ধ আবেগ খোঁজে-খোঁজে শুধু মরমী হৃদয়..." তাহলে কবি এই তপস্যা থেকে ঠিক কী প্রাপ্তিলাভ করেছেন, এবং তপ ভান্ডারে কী সঞ্চিত হয়েছে! সঞ্চিত হয়েছে এক বিরাট উপলব্ধি। আর সেই উপলব্ধির আবেগ নিঃসৃত সৃজনীধারা।  প্রাপ্তি ঘটেছে সৃষ্টি এবং আবেগের ছোঁয়া। সে এক অন্য জগৎ। সেখানে অবচেতনের সঙ্গে চলে চেতনার আবেগের সঞ্চারণ। বৈপরীত্য ভাবাবেগ। সেখানে যুক্তিগুলো লুটোপুটি হয়ে পড়ে। ব্যথা, বেদনা, মিথ্যা অনুরোধ, সব যেন গ্রাস করে ফেলে। এই পর্বের কবিতাগুলোতে মনের মাঝে নিয়ত তৈরি হওয়া বাসনাগুলোকে মেটানোর তীব্র আকাঙ্ক্ষা আছে। কোনটাই অনুরোধ। কোনোটাই প্রত্যাশার সংশয়। কোনটাই মনোবাসনাগুলোর অতৃপ্ততা। 
এই পর্বে কবি কেবল অনুসন্ধানে রত। কখনো প্রিয় মানুষকে, কখনো নৈরাশ্য থেকে আশার সন্ধানে, কখনো কষ্ট থেকে মুক্তি লাভে,  ভালোবাসা প্রেম সবকিছুরই অবিরাম অনুসন্ধানে কবি রত। সেই সঙ্গে প্রিয় মানুষকে হারানোর এক বিরহ ব্যথাও যেন প্রায় প্রতিটি কবিতার মধ্যে আড়ালে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। 
'তুমি', 'তোমার' এই সর্বনামের উদ্দেশ্যেই কবিতাগুলো রচিত। 'তুমি' বলতে কবি ঠিক কাকে বুঝিয়েছেন, আপন জীবনসঙ্গীকে! গুরুদেবকে! নাকি দুজনকেই,! তবে কি ঈশ্বরকে! সেটাও বড় প্রশ্ন। কবিতায় এই 'তুমি'-র ব্যবহার খুব জটিল। কবি শঙ্খ ঘোষ 'কবিতার তুমি' নামে একটি লেখায় এ প্রসঙ্গে বলেছেন, "...'তুমি' সর্বনাম। এই 'তুমি' কার উদ্দেশ্যে প্রযুক্ত হচ্ছে কবিতায় অনেক সময়েই তা অস্পষ্ট থেকে যায়। হয়তো কখনো কখনো এই অস্পষ্টতা কবিতার সৌন্দর্য বাড়ায়, তার মধ্যে এনে দেয় বহুমাত্রিক সম্ভাবনা।" (গদ্যসংগ্ৰহ, তৃতীয় খন্ড) ঐ লেখাতে 'তুমি'র ব্যবহার প্রসঙ্গে কবি শঙ্খ ঘোষ আরো বলেছেন "অনেক ক্ষেত্রে তুমি কোন নিকট নারী বা প্রেমিকাকে বোঝালেও এর সর্বনাম- সুযোগ অনেক সময়েই চলে যায় তাকে অতিক্রম করে। এই তুমি কোথাও- বা ঈশ্বর, জীবনবিধাতা, কোথাও বন্ধু বা জনসমাজ, অথবা আরো কোন প্রাকৃতিক বস্তু বা নিরুপাধিক সত্তা।" আবার সব সময় কি তুমি মানেই অন্যপক্ষ! তা তো নয়। শঙ্খ ঘোষ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, অনেক সময় এই যে তুমি, সেটা বস্তুত কবির আমিরই আরেকটা নাম। এই বিষয়টি খেয়াল না রাখলে হয়তো কোন বড় গর্হিত ভুল হতে পারে। এসবই পাঠককে খেয়াল রাখতে হয়।

সংকলনের শেষ অংশটি হল, 'লেখিকার কথা।' কবিকে রাত্রি তপস্যায় যে দুজন মানুষ অবিরাম শক্তি ও প্রোৎসাহ জুগিয়েছেন, প্রয়াত জীবনসঙ্গী ও গুরুদেবের ঋণের কথা তিনি বিশেষভাবে এই অংশে উল্লেখ করেছেন। এই কবিতা সংকলনের প্রচ্ছদও খুব সুন্দর ও প্রতীকী। 'রাত্রির তপস্যা' কেন পড়ব, সেটা কবির কথা দিয়েই শেষ করলাম---
"'রাত্রির তপস্যা' কেবল সৃষ্টির সংবেদনা না হয়ে হোক--দুখী মানুষের মাঝে বেঁচে থাকার তপস্যা.."।

Post a Comment

0 Comments