গুচ্ছ কবিতা
মৌমিতা দাস
ন আগষ্ট ভোরবেলায়
কানের পাশে হলুদ রঙের ফুল।
সে সভ্যতার ফুল ফোটাবে বলে।
একটি মেয়ে ভোর আনতে গিয়ে
ভোরের আগেই কোথায় গেলো চলে!
আগামী কাল নিশ্চয় খুব আলো।
আগামী দিন হবেই হবে তাদের।
আলো আনতে গিয়ে যারা হারায়।
তাদের নামেই নাম লেখা তারাদের।
কানের পাশে হলুদ ফুলের মেয়ে।
বনস্পতির ছায়ার মত জীবন।
মৃত্যু দিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে গেলো,
মরণ বুকে বেঁচে থাকাই জীবন।
বন্যা পুরান
সে আমার সবটুকু কেড়ে নিল
দ্রোহ খানি পড়ে রইলো নির্বাক বিকেলে।
বিকেল নাকি সন্ধ্যা নেমেছিল ধানের মাথায়!
কে কখন বেলার হিসেব রাখে !
আমিও রাখিনি।
জুটের বেড়ার ধারে নদী এসে গিলে ফেলে সমস্ত জমানো জীবন
লক্ষ্মীর ঝাঁপি, তামার ঘটি, মায়ের জপের মালা ...
শুধু নাকি নাভি খানি রয়ে যায় বলে আমাদের গঙ্গা যাত্রা হয় মৃত্যুর পরে।
🍂
দেওয়ালি পোকা
শরীর থেকে মন উঠে গেলে অলক্ষে নষ্ট হয়ে যায় চিনিপাতা দই।
দুটো মাছি অযথাই ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে দখল করে আমার অস্তিত্ব।
এই যে জল জমি অরণ্য সবটা একদিন মাছি দখল করবে - এমনটাই বলেছিল মাখনলাল।
দুটো থেকে দুই বিলিয়ন মাছি জন্ম দেখব বলে আমরা সন্ধায় আলো জ্বেলে ডেকে নেই রাত।
স্বপ্ন পরব
এখন রাত ফ্যাকাশে হওয়ার আগেই ঘুম ভেঙে যায়।
অযথা একটি দিন, আরও একটি দিন অযথাই কেটে যাবে।
মিহি মিহি কুয়াশায় পরিদের ছাদ সেজে ওঠে।
আমি অপেক্ষা করি এমন এমন একটি বিলাসী দিনের।
রাত সেখানে চাঁদ মেখে নেবে নুন তেল দিয়ে...
ধোঁয়া ওঠা ভাতের মত সুখ উপচানো জীবন আমারও হবে।
ছায়া টুকু হারিয়ে গেলে
পা টিপে টিপে অন্ধকারের তালা খুলে দেই।
নিজের ছায়াও লুকানো থাকে যেন এমন সিন্দুক এনে রেখেছি কংসাবতী পাড়ে।
এইযে আজীবন ধরে জমানো পশমিনা শাল ফুলপাতা এঁকে ছিল,
উষ্ণতা কোনোদিন উজাড় করে দেয়নি...
হাতে গড়া মাটির প্রদীপ, চেরা কাপড়ের পলতে দিয়ে আগুনে মঙ্গল রেখেছি।
ছোটবেলার একটা মাটির ভালুক প্রতিবার ভেঙে গেলে মাটি লেপে জুড়ে দিত মা।
আজকে যখন সমস্ত অস্তিত্ব টা টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে দিল ব্রম্ভাণ্ডে,
আমার কালো টিপ, মেরুন চুড়ি,সোনালী হাসুলি হারিয়ে গেলো....
একটি বিঘত জমি খুঁজতে খুঁজতে খুঁড়ে ফেলেছি মানচিত্রের বই।
এসো আলো, এসো আগুন।
0 Comments