জ্বলদর্চি

গহ্বর /স্বাগতা রায়

গহ্বর

স্বাগতা রায়

মানুষ মারাটা অভ্যেসের থেকেও নেশায় পরিণত হয়েছে।এখন আর বিবেকে বাঁধে না।বরং একদিনও রক্ত হাতে না মাখলে মরিয়া হয়ে উঠি।

কি?
মানসিক রোগী? তা ভাবাই যায়।
মন!মনন! বড়ই অদ্ভুত সব।আয়নার ওপারের রাজ্যের মত।সবটাই উল্টো।
শুরুটা কিভাবে হলো?
দুর্ঘটনা!
বাড়িতে এক মাথা কাজের চাপ নিয়ে ঢুকে দেখি বউটা মেয়েটাকে পেটাচ্ছে।অসহ্য চিৎকার!
উফ্...
মাথাটা ফেটে যাচ্ছিলো।
ধমক দিয়ে কাজ না হওয়ায় বউকে ধাক্কা দিতেই সে পড়লো সবজি কাটার বটি তে।গলায় গেঁথে গেলো পুরো।
রক্ত....
রক্ত!!!!
ফিনকি দিয়ে রক্ত....
মেয়েটা আমার তখন মাত্র চার।দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে কাঁদতে লাগলো তারস্বরে।মাথাটা তখনও গরম ছিল। মেয়ে টাকে নিয়ে বন্ধ করে দিলাম বাথরুমে।দিয়েই বেরিয়ে গেলাম ঘর থেকে,কিছু টাকা পয়সা নিয়ে।বাস ধরলাম ধর্মতলার।সেখান থেকে সোজা পুরী।হোটেলে গিয়ে উঠলাম।টিভি চালাতেই খবর পেলাম!
আমাকে পুলিশে খুঁজছে।ততক্ষনে কি করেছি বুঝতে পারলাম। মেয়ে টা বাথরুমে পড়ে পড়েই মরে গেছে,জানালো খবরে।মায়ের গলায় বটি।

কেমন একটা লাগলো ।
মাথার ভিতর টা কেমন একটা করছে। ঘোর লাগছে।আমি পারছি না।আর পারছি না....
অন্ধকার.....


সকালে নিজেকে আবিষ্কার করলাম জেলে। মার খেলাম প্রচন্ড।কিন্তু সুযোগ বুঝেই পালালাম সেখান থেকে।
তার পর থেকেই আরম্ভ হলো এই নেশার কারবার।
৩২ টা খুন করেছি আমি।কখনো পথ চলতি লোক,আবার কখনো গ্রামের দিকে রাতে ফেরা মেয়ে।বাচ্চাদের মারতে গিয়ে বড়ো কষ্ট হয়।মেয়েটার কথা মনে পড়ে খুব কিন্তু রক্ত না দেখলে যে আমি বাঁচতে পারব না।তাই নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে মারতে হয়।

আজও তাক করছি মারার;রাত ২ টো।ফুটপাথের ধারে একটা মেয়ে।অপেক্ষা করছে কারোর।
একা।
এই সুযোগ !পিছন থেকে গিয়ে পিঠে চাকু টা বসিয়ে দি।তারপর হবে উল্লাস।রক্ত....
রক্ত......
ফিনকি দিয়ে উঠবে রক্ত....

অল্প কিছুটা এগাতেই হঠাৎ দেখি একটা ছেলে এলো,বাইকে করে। মেয়ে টাকে তুলে নিলো বাইকে।চলে গেলো।
ধ্যাত।
আজ হাতছাড়া হলো।দেখি অন্য কাউকে পাই কিনা।


না পেলাম না...
শরীর টা ক্রমে অবশ হয় আসছে।রক্ত চাই রক্ত।আর পারছি না।

যেকোনো ভাবেই হোক আজ আমাকে একটা খুন করতেই হবে। একী।সেই মেয়ে টাই তো।বাহ্।আজ আর না,একে ছাড়ছি না ।আজ কেউ আসার আগেই একে মারতে হবে।

আস্তে আস্তে মেয়ে টার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।শান্ত মানুষের মত বললাম"দিদিভাই কটা বাজে?"
একটু বাঁকা ভাবে তাকালো সে,আর বললো
"সাড়ে ১১"
"কারোর অপেক্ষা করছেন?"
কোনো উত্তর দিল না সে
ভাবলাম এত আস্পর্ধা!আমার বউটার ও এরকমই আস্পর্ধা ছিল।আমার সোজা কথার উত্তর দিত না।ভাবলাম দেব চাকুটা বসিয়ে!

হঠাৎ কোথা থেকে কি হলো মাথাটা একেবারে ঘুরে গেলো।পড়ে গেলাম।
সকালে উঠে দেখি বাস স্টপে পড়ে আছি।কি যে হলো। যাহ!আবার শিকার ফস্কে গেলো।


সারা দিন পাগলের মত পাশের জঙ্গলে ঘুরে বেড়ালাম।সন্ধ্যে নামল।
রাত ঘনিয়ে এলো।আমি একটা গাছের পাশে বসলাম।সামনে রাস্তা গেছে।হাই রোড।
একটা দুটো গাড়ী চলে যাচ্ছে।
হঠাৎ ল্যাম্প পোস্টের কাছে একটা মেয়ে দেখলাম মনে হলো।সাবাস!এই তো! পেয়েছি!
একে যেতে দেবো না কিছুতেই..
আস্তে আস্তে এগোলাম।
আরেহ একী! এ তো আবার সেই মেয়েটি ই!আশ্চর্য!
এ এখানে?
যাক ভেবে লাভ নেই।যাই গিয়ে কার্যসিদ্ধি করি ।রক্ত চাই রক্ত...
হঠাৎ ! একী!কোথায় গেলো মেয়েটা?
এদিক ওদিক ঘুরলাম ।কোথাও নেই।তাহলে কি ভুল দেখলাম!
নাহ! এতো ভুল তো....

আস্তে আস্তে এগাতে লাগলাম।হঠাৎ করে পিছনে একটা শব্দ পেলাম...ঘুরে দাড়াতেই দেখি শাইই করে একটা গাড়ি চলে গেলো।আর একি।পিষে দিল মেয়ে টাকে।উফফ।রক্ত যে...কাছে গেলাম।

রক্ত । তাজা রক্ত।হাত দিলাম।কিন্তু;একী হাতে রক্ত লাগলো না যে।কি হলো!
নিচে দেখি মেয়েটা নেই।একী!

পিছনে ফিরতেই.....


"আজ সকালের মুখ্য সমাচার। দিল্লী হাইরোড এর কাছে এক ব্যক্তির লাশ মিলেছে।শরীরে কোনো ক্ষত চিহ্ন নেই,কিন্তু আসে পাশে রক্তের বন্যা।পুলিশ সূত্রে খবর এই ব্যক্তি সেই সিরিয়াল কিলার যে কিনা কিছু দিন আগে নিজের স্ত্রী,সন্তান কে খুন করে পালিয়েছিলেন।পুলিশ আন্দাজ করছে এই ব্যক্তিটি প্রায় ৩০ এর ওপরে খুন করেছেন।
পুলিশ তদন্ত করছে।"

🍂


Post a Comment

0 Comments