বার্লিনের ডায়েরি
৫৭পর্ব
চিত্রা ভট্টাচার্য্য
(ভ্যাটিকান সিটির পরবর্তী অংশ )
মেঘ ভাঙা রোদ্দুরে ঝলমল নীলাকাশে সাদা মেঘেরখেয়া ভাসছে। তারি সাথে ঝকঝকে সূর্যালোকে পাখা মেলে উড়ছে বলাকার ঝাঁক। সবুজ ঘাসের নরম গালিচায় আনমনে পা ডুবিয়ে চলতে গিয়ে অদ্রিজার রাশিয়ান বন্ধু জুনেভা কে মনে পড়ে। ও বলেছিল 'স্ট্যানজা ডেল ইনসেন্ডিওর 'ঘরটিতে ''ফায়ার ইন দ্য বোর্গ ছবি টি "দেখতে। জুনেভার পূর্ব পুরুষের কাছে গল্প শুনেছিল ওদের অতীতে প্রায় সাত পুরুষ আগে ভ্যাটিকানের খুব কাছেই বোর্গ অঞ্চলের ওরা অধিবাসী ছিল। তারপর জীবনের অনেক ঝড়ঝঞ্ঝায় সময়ের স্রোতের টানে কচুরিপানার মত ভেসে পরবর্তীকালে কেমন করে রাশিয়া ওর জন্মভূমি হয়েছিল সে খবর অবশ্য ও জানেনা। জুনেভা ওর প্রিয়তম আলেক্সেইকে নিয়ে বেশ কয়েকবার ভ্যাটিকান সিটিতে এক অদৃশ্য আকর্ষণে ঐ চিত্র টি দেখতে গিয়েছিল । শ্রী ভাবে জুনেভা অবচেতন মনে গল্প শুনে হয়তো শিকড়ের টানের মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছে।ম্যাপ অনুযায়ী ওরা স্ট্যানজা ডেল ইনসেন্ডিও ঘর টিতে পৌঁছেছিল ।
ভ্যাটিকান সিটির বোর্গ অঞ্চলে ৮৪৭ খ্রীষ্টাব্দে যে অগ্নিকান্ড হয়েছিল সেই চিত্র এখানে আঁকা রয়েছে। ছবির গল্প টি বেশ কৌতূহল জাগায় ,পোপ চতুর্থ লিও ক্রশ চিহ্ন দেখিয়ে মঙ্গল কামনা প্রার্থণার দ্বারা সেই আগুন নিভিয়ে দিচ্ছেন। পশ্চাদপটে দেখা যাচ্ছে ব্যাসিলিকার দরজায় এগিয়ে গিয়েছে জ্বলন্ত আগুনের লেলিহান শিখা ,ডান দিকে দেখা যাচ্ছে পোপ ভ্যাটিকান ছেড়ে চলেছেন এবং বাম দিকে ট্রয় নগরী জ্বলন্ত অগ্নিশিখায় ভস্মীভুত। অসহায় মানুষের হা-হা কারের রব চতুর্দিকে ,তারা প্রাণ বাঁচাতে মরীয়া হয়ে উদ্ভ্রান্তের মত ছুটছে। বিশাল ক্যানভাসের একপাশে অসমর্থ বৃদ্ধ পিতা কে পুত্র কাঁধে বহন করে নিয়ে চলেছে, তাকে অনুসরণ করে পিছনে হেঁটে চলেছে তাঁর স্ত্রী পুত্র পরিবার।
🍂
সেখানে আরেকটি চিত্রে ব্যাটেল অফ অস্টিয়া তে ৮৯৪ খ্রীষ্টাব্দে নৌ যুদ্ধে পোপ চতুর্থ লিওর রোমের নিকটস্থ অস্টিয়া বন্দরে আরব জলদস্যুর আক্রমণ প্রতিহত করে জয় লাভ করার খুশির মুহূর্ত টি অপূর্ব ভঙ্গিমায় আঁকা রয়েছে। শ্রী বলে ,এই ফ্রেস্কো চিত্রগুলো যত দেখছি কী অপূর্ব ! কী অসাধারণ ! জীবন্ত দৃশ্য লাগছে।
ঋষভ যেন আর্ট স্কুলের টিচার। অকারণে মুখে গাম্ভীর্য্য এনে পরীক্ষকের মত শ্রীময়ীকে প্রশ্ন করে , ফ্রেস্কো চিত্র মানে জানো ? ভাব টা যেন সে একাই সব জানে। সন্দিগ্ধ চিত্তে তাকিয়ে থেকে ভাবে অদ্রিজা তো নয়ই ,শ্রীময়ী ও নিশ্চিত জানেনা।
অসামান্য স্থাপত্যর নিদর্শন।
শ্রী বিজ্ঞের মত হেসে বলেছিল উত্তর টা আমার জানা। মনে হয় প্রশ্নকর্তার মোটেই জানা নেই ? তিতির বলে আমি জানিনা তুমি বলো। শ্রী বিশ্লষণ করে , ফ্রেস্কো অর্থাৎ দেওয়াল চিত্র।কথাটা এসেছে ইতালীর আফ্রেক্স মানে দেওয়াল শব্দ টি থেকে। এ এক ধরণের পেইন্টিং পদ্ধতি যা সরাসরি কাঁচা দেওয়ালে করা হয়ে থাকে এবং এই ফ্রেস্কো পদ্ধতিতে সাধারণত ম্যুরাল আঁকা হয়ে থাকে। ল্যাটিন শব্দ মিউরাস থেকে ম্যুরাল শব্দ টি এসেছে যার অর্থ ও দেওয়াল। ম্যুরাল হোলো সিরিজ অফ পেইন্টিং অর্থাৎ কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের জীবনী পরপর ছবিতে এঁকে যখন বর্ণনা করাহয়। এই পেইন্টিঙে রঙ সব সময় সার্ফেস বা জমিকে ঢেকে দেয় এবং রঙ তৈরী হয় একেবারে প্রাকৃতিক উপায়ে। গেঁড়িমাটি ,সিঁদুর মাটি,খণিজ মাটি , নীল ,কাঁচা হলুদ এবং নানা ফল ফুল ,বীজ ও গাছ গাছালির পাতা থেকে। প্রাচীনকালে এই রঙকে স্থায়ী ভাবে ধরে রাখার জন্য গদের আঠার মতো নানা গাছের আঠা ব্যবহার করা হতো কাঁচা দেওয়ালের গায়ে। রঙের উজ্জ্বলতা আনার জন্য ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করা হতো কিন্তু পেইন্টিংগুলো এত যে উজ্জ্বল চকচকে দেখাচ্ছে এতে কোনো তেলের ব্যবহার ছিল না।দেওয়াল শুকোনোর সাথে রঙ ও শুকিয়ে যেত। ভারতবর্ষের অজন্তার গুহা চিত্রে এই ফ্রেস্কো ও ম্যুরালের ব্যবহার দেখা যায়।
ঋষভ অবাক ! সে ও ঠোঁটের কোণে এক ঝলক হাসি এনে তিতির কে বলে পুরো বোল্ড হয়ে গিয়েছি। ফ্রেস্কো মানে প্রাকৃতিক রঙ ছাড়া কিছুই জানতাম না। অদ্রিজা বিস্ময়ে কিছুক্ষণ শ্রীময়ীর দিকে তাকিয়ে থেকে বলে ,মা গ্রেট ! কী সুন্দর বললে। তুমি নিশ্চয়ই গুগুল সার্চ করে জেনেছো ? শ্রী বলে স্টুডেন্ট লাইফে পড়ার টেবিলে পাঠ্যবইয়ের সাথে বিভিন্ন কবি ,সাহিত্যিকের ,কাব্য ,উপন্যাস , গল্পের বইয়ের ও অগ্রাধিকার ছিল। এবং আমার অন্যতম প্রিয় ঔপন্যাসিক নারায়ন সান্যালের "অপরূপা অজন্তা" তে প্রথম ফ্রেস্কো চিত্রের কথা পড়েছিলাম। ঋষভ হেসে বলে তোমার একটা প্রাইজ জিলাতো আইসক্রিম পাওনা রইলো। শ্রী মাথা নাড়ে ,না -না শুধু জিলাতো তে হবে না। সাথে তিনটে গোলাপি 'বুড়ির চুল 'মানে ''কটন ক্যান্ডি ও চাই । ভ্যাটিকান সিটি। এরপর মিশরীয় সংগ্রহের ঘরটিতে পৌঁছে দেখেছিল হাজার হাজার বছর আগের মিশরীয় পুরাতন যুগের মমি ,ও তার কফিনে গৃহস্থালির তৈজস পত্র রয়েছে। প্রাচীন মিশরীয় চিত্র ও লিপি সমন্বিত বহুপ্লেট, মিশরীয় দেবতাদের মূর্তি যেমন বাজ পাখির মাথা ও মানুষের দেহ সমন্বিত। দেবতা হোরাস ,বিড়ালের মাথা সমন্বিত দেবী বাস্টেট ,দেবী আইসিস প্রাচীন মিশরের ফারাও এবং বেলেপাথরের তৈরী মস্তক টি। একের পর এক অনুপম শিল্পকলায় সাজানো গ্যালারিগুলো।
নীলনদের দান মিশরের আশা আকাঙ্খা হিতকারী ভূমির উর্বরতা রক্ষাকারী এবং প্রাচুর্য্যদান কারি রূপে এই ভাস্কর্য্য টিকে দেখানো হয়েছে। একটি ভাস্কর্য্যে আলেকজান্দ্রিয়ার সিক্ত কাদা মাখা ভূমিতে একটি স্প্রিঙ্কসের মূর্তি তে তার বাম বাহুর দিকে শিঙের তৈরী ফলের পাত্রে করনুকোপিয়া ও দক্ষিণ হস্তে এক গুচ্ছ গমের শীষ দেখে অদ্রিজার আনন্দের সীমা নেই বিস্ফারিত নেত্রে তাকিয়ে থেকে বলে এখানেও দেখ কেমন তরতাজা গমের শীষের ছবি। অপর ভাস্কর্য্যটিতে নীলনদের প্রবাহের আশে পাশে ক্রীড়ারত ১৬ টি কিউপিড বা বিবস্ত্র বালক কে দেখানো হয় যা মিশর দেশের সুখ স্বাচ্ছন্দ ও আনন্দের প্রকাশ রূপে। একটি বিশ্রাম রত বন দেবতার মূর্তি দ্য রেস্টিং স্যাটির মূর্তি টি ও খুব সুন্দর লেগেছিল। চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য রঙে রেখায় ভাবনায় চিন্তায় অনবদ্য। কত না বলা কথা অব্যক্ত ধ্বনি দেহের ভঙ্গিমায় সৃষ্টির চেতনায় স্থাপত্যে ভাস্কর্য্যে পাথরের বুকে হাতুড়ি ছেনির নিপুন ব্যবহারে রঙ তুলির টানে কি সাবলীল ছন্দের ভাষায় বলা হয়ে গিয়েছে কত শত না বলা কথা। দৈনন্দিন জীবনের কত সাধারণ ঘটনা অসাধারণ হয়ে উঠেছে এই অনুপম শিল্প সৃষ্টির মাধ্যমে । ব্রাসিও নুয়োভো গ্যালারিতে প্রথম শতাব্দীর দুই অশ্ব দ্বারা চালিত মার্বেলের রথটি , এবং পিও ক্লিমেন্টাইন গ্যালারি তে " ডিস্কোবোলাস "গ্রীক যুব ক্রীড়াবিদদের মার্বেলের অপরূপ মূর্তি ক্রীড়াবিদের শরীরে মননে একাগ্রতা গ্রীক শিল্পী এপোলোনিয়াসের নির্মিত হাত পা মাথা ছাড়া শুধুই পুরুষ দেহের নগ্ন মধ্য অংশ টি ও বেলভেডিয়ার টোর্স নামে বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে। শোনাযায় টোরসো মূর্তির এই অঙ্গ সৌষ্ঠব প্রখ্যাত শিল্পী মাইকেলেঞ্জেলো কে কর্মঠ তেজোদীপ্ত উন্নত দেহ শৈলীর মূর্তি বানাতে অনুপ্রাণিত করেছিল। যে কোনো একটি শিল্প কর্মের দিকে তাকিয়ে থেকে অনায়াসে সারাদিন কেটে যেতে পারে।কিন্তু সময় কম , শুধু দর্শনার্থী মানুষের স্রোতে ভেসে চলা কোথাও স্থির হয়ে বেশীক্ষন দাঁড়ানো যাবেনা। কোনো ঘরে ট্র্যাপেস্ট্রির বিশ্ব সেরা অনবদ্য সংগ্রহ ,কোথাও ফ্রেস্কো কোথাও প্রাচীন রূপকথাকে উপজীব্য করে পেইন্টিং .--জীবনের অনবদ্য কাব্য রঙ তুলির টানে গড়ে উঠেছে। তার প্রতিবেদন অসামান্য।
ম্যাপের ঘরে প্রাচীন সব ম্যাপের দৃশ্য যা অজস্র পেইন্টিংয়ের মাধ্যমে এক দৃষ্টি নন্দন শিল্পকলায় পরিণত হয়েছে । ঋষভ নীরব হয়ে দেখে আপন মনে বলে সভ্যতার আদিতে সেই প্রাচীন সময়ের বরেণ্য শিল্পী দের আঁকা ছবি গুলোতে দৃশ্য পট কত সজীব আকাশ আলো জল মাটি মানুষ সব নিখুঁত । মনে হচ্ছে শুধুই যেন মুহূর্তের কোনো ছবিতে নয় প্রকৃত আকাশ বুঝি ক্যানভাসের ওপর নেমে এসেছে। কল্পনার তুলিতে মনের ভাবনা কে রেখায় রঙে রসে মিশিয়ে চিত্র কর্ম আর সুনিপুন হাতের সূক্ষ্ণ কাজ সহস্রাধিক ভাস্কর্য্যগুলো এতো প্রাণবন্ত ও মুখর । তবে যুগ যুগ ধরে এই সহস্রাধিক শিল্প কর্ম কে যাঁরা এতো যত্নে সুরক্ষিত করে রেখে দিয়েছে তাদের কৃতিত্ব ও অনস্বীকার্য্য ।
স্মৃতির পাতায় দোল খেয়ে যায়। ওর তৎকালীন ডায়েরিতে সব বিবরণ নিখুঁত ভাবে লেখা না থাকলে ও কিছু কিছু ঘরের দৃশ্য শ্রীর বেশ মনে পড়ে। সেখানেই তো দেখেছিল ,একটি গ্যালারি তে প্রাচীন ইতালীয় সভ্যতার প্রত্নতাত্বিক কিছু নিদর্শনের চিহ্ন। সিরামিক ও মাটির তৈরী পাত্র জলের কলসী রান্নার বাসন পত্রগুলোর সাথে আধুনিক কালের ব্যবহার্য্য জিনিসের কত মিল। সোনা এবং অন্যান্য ধাতুর তৈরী গয়না ইত্যাদি ও রয়েছে ।
একটি কামরায় মার্স অফ টোডি বিশাল একটি ব্রোঞ্জের যোদ্ধা মূর্তি এপোলো বেলভেডিয়ার বা পাইথিয়ান এপোলো নামে মার্বেল পাথরের একটি বিখ্যাত মূর্তি পিও ক্লিমেন্টাইন গ্যালারিতে আছে। গ্রীক পূরাণের অনুসারে এপেলো কবিতা কলা সংগীত দৈববাণী আলোক তীরন্দাজির অধিপতি ও দেবতা জিউস ও তাঁর পত্নী লেটোর পুত্র। এই ভাস্কর্য্যটি তে তীরন্দাজ এপেলো তীর ছুঁড়ে অব্যর্থ লক্ষ্যে তাঁর পুত্রদের পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ কারী দৈত্যাকার পাইথন কে হত্যা করেছেন। তার বাম হাতটি সদর্পে তূণীর ওপর নিবদ্ধ হয়ে আছে। একটি কক্ষে সাদা রঙের মার্বেল পাথরের তৈরী শবাধারে প্রত্যেকটির ওপর রিলিফের কাজ ছিল।
গ্রীক বীর গণ আমাজন স্ত্রী যোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত। গ্রীক পুরাণের মতে আমাজনেরা আদিম নির্মম যুদ্ধবাজ স্ত্রী যোদ্ধার জাতি। অন্য একটি তে গ্রীক বীর মেলিয়ানগর কে কুকুর ও অনুচর সহ বন্য শুকর শিকার করতে দেখা যাচ্ছে। মিউজিয়ামের সারি বদ্ধ যত দৃশ্য গুলো দেখছিল সব যেন নির্বাক চলচ্চিত্রের মত একে একে চোখের ওপর দেখা দিয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। ছবি তে গল্প গুলো পৌরাণিক ,রূপকথা মহাকাব্য ধর্মগ্রন্থ রাজ কাহিনীর ইতিহাস কে স্থাপত্যে ,ভাস্কর্য্যে শিল্পের নিপুণতায় প্রকাশ করে এক অতুলনীয় অমরত্ব দান করেছে। আলেক্সেই এবং জুনেভা দুজনেই পিনাকোটেকা চিত্র শালার গল্প অদ্রিজাকে বিস্তারিত বর্ণনা করে শুনিয়েছিল। দোতলায় সেই ঘরটি খুঁজে পেয়ে প্রবেশ করে শ্রীর মনে হয়েছিল মহাকাব্যিক গল্প গাঁথার শতাধিক মহাচিত্রে সাজানো বিস্ময়কর পেইন্টিং গ্যালারি । এখানে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ,রাফায়েল পেরুজিনো ক্যারাভাগ্নি জিয়োত্তর প্রভৃতি বিখ্যাত চিত্র শিল্পীদের অসাধারণ শিল্প কর্মে সাজানো এই চিত্রের সংগ্রহ শালাটি পিনকোটাকে কম করে ও ১৮ টি ঘর ছিল ,এবং সব ঘর গুলোর গ্যালারী ভরে আছে বিচিত্ৰ সব চিত্র শিল্পের সংগ্রহে। খ্রীষ্ট ধর্মের ঘটনা কে উপজীব্য করে এই চিত্র গুলো অধিকাংশ আঁকা হয়েছিল। এবং এই ফ্রেস্কো গুলোতে তৎকালীন সামাজিক রীতিনীতি ধর্মীয় আচার ব্যবহার সংস্কারের চিত্র ,রাজ্শাসন তন্ত্র যুদ্ধ,বিগ্রহ ষড়যন্ত্র ,অর্থনৈতিক বিধি ব্যবস্থার সুস্পষ্ট ছবি দেখেছিল।
শ্রীর যুক্তি বাদী মন কত কথা ভাবে --তিতির বলে কী এত ভাবছো ? শ্রীময়ী বলে ভাবছি ,-- সেই প্রাচীন যুগের ইতিহাসে তখন কোনো লেখ্য ভাষা ছিল না।হয়তো লেখার ভাষা সবার পক্ষে বোঝার থেকে ছবির ভাষা বোঝা সহজ ছিল। বরেণ্য শিল্পী দের সৃষ্টি এই অসাধারণ চিত্র কল্পের মাধ্যমে সমাজ জীবনকে সচেতন করার কাজ ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য। সমাজ জীবনের দর্পন এই ছবিগুলো ছিল রঙ তুলির মাঝে জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার এক অসাধারণ প্রয়াস। এই ছবি তো শুধুই ছবি নয় বলাযায় কালের দর্পণ। শত শত বছর আগের নীরব স্বাক্ষী ইতিহাসের এক অমূল্য সম্পদ। কিন্তু দর্শকের ভীড়ে ও সময়ের অভাবে সব দেখার সুযোগ হয় না । তবু ও কয়েকটি চিত্র আজো যেন স্মৃতিতে স্বর্ণজ্জল হয়ে আছে।
মনে পড়ে , শিল্পী জিয়োভান্নির আঁকা "সেন্ট জেরোমো এন্থ্রোন্ড ", মোরেত্তোর আঁকা ম্যাডোনা এন্ড চাইল্ড -- যীশু কে কোলে নিয়ে মাতা মেরী ও দুই দিকে দন্ডায় মান দুই সাধু।
পিয়েত্রো পেরুগিনের আঁকা শিশু যীশু কে কোলে নিয়ে মাতা মেরী উচ্চাসনে আসীন ও নীচে দুই পাশে চারজন সাধু। সদ্য মাতৃত্ব পাওয়ার গর্বে মাতৃ হৃদয়ে,শরীরের কমনীয়তা মুখের বাৎসল্য,স্নেহার্দচোখের অসাধারণ করুণাময় দৃষ্টি জীবনের সুধারসে ঢালা তাকিয়ে থাকার অনুপম দৃশ্যটি এত নিখুঁত তুলির টান রঙের ব্যবহারে ছবি গুলো অনন্য সাধারণ জীবন্ত হয়ে উঠেছে, মনেহয় অনুভবী শিল্পী পরম যত্নে তাঁর সদ্যআঁকা ছবিটিতে তুলির টান টি দেওয়া শেষ করে গ্যালারি তে এইমাত্র সাজিয়ে রাখলেন। ক্রমশঃ
0 Comments