জ্বলদর্চি

বার্লিনের ডায়েরি /৬৩ পর্ব /চিত্রা ভট্টাচার্য্য

সমাধি নগরী পম্পেই

বার্লিনের ডায়েরি      
৬৩ পর্ব      
চিত্রা ভট্টাচার্য্য 
(সমাধি নগরী পম্পেই )

সাগরের উপকূল থেকে দানবীয় ঘূর্ণিঝড়ের ক্রমাগত স্বঘোষিত রণ হুঙ্কারে গগন বিদারী গর্জন।   সারাদিন ধরে চলেছে শুম্ভ নিশুম্ভের প্রলয়ঙ্কর রব। ড্রয়িংরুমে সামনের দিকে সোফায় ঋষভের হাতে  ২০১৫--১৬ সালের রোম ভ্রমণের শেষে পম্পেই ট্রিপের অ্যালবাম। বছর কয়েক আগের স্মৃতি রোমন্থনে নির্বাক স্ট্যাচুর মত ঋষভ কে দেখে শ্রী ও থমকে গিয়েছে। হাজার ছবির মাঝে ভেসে আসে এমনি প্রকৃতির রোষে ধ্বংস হয়ে যাওয়া পম্পেই নগরীর পুরোনো দিনের অসংখ্য ছবি। শ্রীর চঞ্চল মনে আশঙ্কার ছায়া নামে।  

 জানালার বাইরে তখন বিশালাকারের গাছের সারির ডালপালায়  দাপুটে ঝোড়ো হাওয়ার এলোপাথারি খ্যাপামিতে মত্ত হাতির মত শূন্যে মাথা ঝাঁকানো। বিধ্বংসী ঝড়ের আস্ফালনে ভীষণাকার প্রাবল্যে গত দুদিন ধরে কম্পিত শঙ্কিত জনজীবন। ঘোলাটে আকাশের বুক চিরে অভ্রভেদী বজ্র বিদ্যুতের চোখ ধাঁধানো আলোর ঝলকানিতে কেঁপে ওঠে ধরাতল। শ্ৰীময়ীর মনেপড়ে ২০০৪ সালের ডিসেম্বরের সুনামি ঝড়ের দৃশ্য-- ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপের কাছে সমুদ্রের তলদেশে ৯ .১ মাত্রার ভূমিকম্পের পর ৩০ ফুট উচ্চতার প্রায় ৭৫০ মাইল দূরে ভারত ও শ্রীলঙ্কার পূর্ব উপকূলে আঘাত করেছিলো। সে সময় শ্রী চেন্নাই তে। অশান্ত  ভারত মহাসাগরের সেদিনের ভয়ানক বিধ্বংসী দৃশ্য মন ভোলে না । কত ক্ষয় ক্ষতি ,কত প্রাণ ভয়ঙ্করী প্রকৃতির রোষে নিমেষে নির্মূল হয়েছিল।মনে পড়ছে, ২০০১ সালে গুজরাটে ভুজের ভূমিকম্পের ধ্বংস লীলায় একটা গোটা শহর তাসের দেশের মত চুরমার হয়ে ভেঙে পড়েছিলো। তছনছ হয়েছিলো সাধারণ জনজীবন।সাদা চাদরে ঢেকে অহর্নিশি চলেছিলো মৃত্যুর মিছিল। লক্ষ্যাধিক মানুষের বীভৎস মৃত্যুর হাহারব আজ ও যেন প্রতিধ্বনিত হয়ে বেড়ায় এমন বেপরোয়া ঝড়ের সংকেতে।
পম্পেই।

 পাগলপারা ঝড়ের তান্ডবের মাঝেই শ্রী  দক্ষিণের বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। প্রবল ঝঞ্ঝার কবলে বাগানের শখের আমগাছের করুণ পরিণতি।যেন ডালপালা সমেত এক্ষুনি ভেঙে গুড়িয়ে পড়বে। মাধবীরলতা আগেই ধরাশায়ী , লুটিয়ে পড়েছে উঠোনে। অসংখ্য তাল তমাল নারকেল গাছের এলোপাথারি ভেঙে পড়ার দৃশ্য। প্রলয় নাচে উন্মত্ত নটরাজের জটার বাঁধন খসে পড়েছে।  বাঁধভাঙা বন্যার প্লাবণে গ্রামকে গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে জলে তলিয়ে যাবার খবরে উদ্বিগ্ন মন।  শ্রী এই কর্মনাশা দিনে গৃহবন্দি হয়ে সময় কাটাতে ডায়েরির পাতায় দানবীয় ঝড়ের বর্ণনা লিখতে কলম  নিয়ে বসেছিলো। কিন্তু ওর মনের আয়নায়  স্পষ্ট হয়ে উঠলো ,সেই দুই হাজার বছর আগের প্রাচীন মৃত্যুপুরী পম্পেই নগরীর ছবি।  এক ধ্বংসাত্মক প্রকৃতির অগ্নুৎপাতের  লীলায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া  অভিশপ্ত নগরীর মর্মান্তিক করুণ পরিণতির কাহিনী। বাস্তব থেকে বিলুপ্ত হয়ে হারিয়ে যাওয়া মৃত অভিশপ্ত নগরীর ইতিবৃত্ত। মন মজেছে সেই হারিয়ে যাওয়া নগরীর অন্ধঅতীতের স্মৃতি চারণে।এই দুর্যোগের দিন চার দেওয়ালের বাইরে অশান্ত প্রকৃতি মনে করিয়ে দিল ''বার্লিনের ডায়েরির '' ভ্রমণ বৃত্তান্তের শেষ অধ্যায়-- লেখা হয়নি গুরুত্বপূর্ণ মৃত পম্পেই শহরের সেই মর্মান্তিক ইতিবৃত্ত।     
                ক্যাপরি সাগর।                                  

শ্ৰীময়ীর চোখে সিনেমার দৃশ্যপটের মত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া পম্পেই নগরের মর্মান্তিক ছবি ভেসে ওঠে। বিষণ্ণ মনে একটু সময় চুপ করে থেকে ঋষভ কে বলে ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতে নিঃশেষে ধ্বংস হয়ে যাওয়া মলিন পৃথিবীর রুদ্ধ দ্বারে আমাদের দেখা পম্পেই নগরী ঠিক যেন  এক মর্চেপড়া বন্ধ বিরাট লৌহকবাটের সিংহ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শুধুই স্বল্প সময়ের জন্য কড়া নাড়ার প্রচেষ্টা। এই যা দেখা, এই যা ছোঁয়া অচেনা অতীত --যা বহুকাল ধরে রাশিরাশি ছাইয়ের তলায় চাপা পড়ে থেকেছে মূক বধিরের মত। খেয়ালী প্রকৃতির এমন বিপদ সংকুল ঝড়ের সংঘাত  শ্রীময়ীর ঘুমিয়ে থাকা চেতনা ,ভুলে যাওয়া মন কে সজোরে ঝাঁকুনি দিয়ে গিয়েছিল। ও ভাবে পম্পেই নগরীর গল্প না লিখলে অসম্পূর্ন থেকে যাবে ওর  ''বার্লিনের ডায়েরির '' ভ্রমণের কাহানি । স্মৃতি বড়ো দূর্বল। বয়সের চোখ রাঙানি ও অবহেলায় মনের মণিকোঠা থেকে বিশ্বাসঘাতকতা করে মুছে যেতে চায়। ওর সাবধানী ভীরু মন বলে, 'তোমার দিন ফুরোনোর আগে কালির আঁচড়ে সাজিয়ে রেখো সঞ্চিত যত ঝুলিভরা অভিজ্ঞতা ।             
🍂

           পৃথিবীর জন্মের আদিপর্ব থেকে জীবনের ভাঙা গড়ার খেলায় কোথাও ঘটেছে উত্থান কোথাও বা পতন।  যুগে যুগে কত চমক প্রদ,অজানা মর্মস্পর্শী হৃদয় বিদারক ঘটনা অনবরত ঘটে চলেছে। তার সব খবরের হদিস কে রাখে ? কিন্তু কোনো দেশের হঠাৎ পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার মর্মান্তিক বিবরণ কারো কলমের প্রয়াসে একদিন ইতিহাসের হলদে হয়ে যাওয়া বিবর্ণ পাতায় লেখা রয়ে যায়। এই নগরীর ধ্বংস হওয়ার কাহিনী সম্পূর্ণ অন্যরকম এক অসাধারণ ঘটনা। হারকুলেনিয়ম ও পম্পেই নগরী , এক পাহাড় প্রমাণ জমে থাকা ছাইয়ের গাদার তলায় চাপা পড়া ধ্বংস স্তূপের আড়ালে থরেথরে সাজানো ২০০০ বছরের পুরোনো নাগরিক জীবনের করুণ গাঁথা।             

   বিদেশে থাকার সেই সময়ে বার্লিনে দুপুরের বিস্তর অবকাশে  অদ্রিজার পড়ার টেবিল থেকে বিদেশী জার্নালিস্ট ঔপন্যাসিক রবার্ট হ্যারিসের ইতালী রোম ভ্যাটিকান সিটি ও পম্পেই শহরের ওপর লেখা বই টি হাতে পেয়ে খুব মনোযোগ সহকারে শ্রীময়ী পড়েছিল।  বহুযুগ আগে '' লাস্ট ডেজ অফ পম্পেই '' সিনেমায় দেখেছিল এই বিলাসী অভিশপ্ত পম্পেই নগরীর ওপরে ভিসুভিয়াসের মহাপ্রলয় কাণ্ডের ধ্বংস যজ্ঞ। প্রাগে বেড়ানোর সময় অন্বেষণ এবং রোমের ফোরামের পথে ক্যাপ্টেন নবারুন মল্লিকের কাছে আগ্নেয়গিরি ভিসুভিয়াসের পম্পেই সহ কয়েকটি শহর কে আত্মসাৎকরার করুণ  কাহিনী ,ওরা বারবার ঋষভ কে বলেছিল খোলা আকাশের তলে জীবন্ত সমাধি ক্ষেত্র পম্পেই নগরী নামক রহস্যেভরা প্রকৃতির জাদুঘর টি অবশ্যই যেন দেখে তারপর স্বদেশে ফিরতে। এখন বাস্তব চোখে সেই অভিশপ্ত মৃত নগরী কে দেখতে চলেছে শ্রী। ভাবতেই ওর মনে প্রাণে সারা শরীরে এক অদ্ভুত শিহরন জাগে রোমাঞ্চ অনুভব করেছিলো ।

 ঐশ্বর্য্যে বিলাসে সমৃদ্ধ নগরী অধুনা মৃত্যুপুরী সমাধি নগরী পম্পেই । যে নগরী যুদ্ধ বিগ্রহ বা বিধ্বংসী বোমার আঘাতে নয় ,মানুষে মানুষে হানা হানি লড়াই বা রক্ত ক্ষয়ী সংগ্রামে নয়  হঠাৎ জেগে ওঠা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের লেলিহান শিখায় আকস্মিক ভাবে একদিন পৃথিবী থেকে মুছে গিয়েছিল। ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছিল প্রাকৃতিক রোষানলে। ঐতিহাসিক সূত্র বলে সেই প্রাচীন যুগে দুই হাজার বছর আগে জ্বলন্ত আগ্নেয় লাভায় ডুবে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে যাওয়া মানুষের মৃত্যুর হাহাকার আর্ত চিৎকার যেন আজ ও প্রতিধ্বনিত হয়ে বেড়ায় পম্পেইয়ের আকাশে বাতাসে পাথরে  দেওয়ালের স্তূপে। সেদিন ধ্বংস প্রাপ্ত নগরীর প্রাচীন অলিগলির পথে হাটতে গিয়ে কত যে হারিয়ে যাওয়া ঘটনার সংস্পর্শে শ্রীময়ী এসেছিল --তার ঝুড়ি ঝুড়ি বিবরণ মনের কোণে দেখা দিয়েছিল। একে একে সেই কাহিনী  নানা ভাবে বর্ণনা করে তবু ও  ওর বেড়ানোর গল্প বলা শেষ হয়ে ও শেষ হতে চায় না।                    

ইতালীর দক্ষিণ পশ্চিমে ক্যাম্পানিয়া অঞ্চলে নেপলসের অনতিদূরে ভিসুভিয়াস সুপ্ত আগ্নেয়গিরি মালার থেকে মাত্র ৮ কিঃমিঃ দূরে নেপল উপসাগরের উপত্যকায় প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্য ভরা অপরূপ এক জনবসতি পূর্ণ লীলা ভূমি গড়ে উঠেছিল। যেখানে রোমানদের আধিপত্যে তারাই সর্বেসর্বা।প্রকৃতির মায়াবী আঁচলের স্নেহচ্ছায়ায় পাহাড়ের মৌন গম্ভীর দৃঢ় সান্নিধ্যেপায়ের কাছে নীল সাগরের অদম্য উচ্ছল সাদা ঢেউ এর কিনারায় জেগে ওঠা শহর টির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছিল অতুলনীয়। কালক্রমে সমকালিন বিশ্বের অন্যতম নগরগুলোর মধ্যে বিত্ত বৈভব ও আভিজাত্যে ব্যবসা বাণিজ্যে সংস্কৃতি ও শৌর্য্যে বীর্য্যে বিলাসিতায় এক শ্রেষ্ঠ নগরীতে পরিণত হয়ে ওঠে এই নগরী টি। এবং পৃথিবীর প্রাচীনতম অভিজাত শ্রেষ্ঠ সুন্দর এক সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্য পূর্ণ নগরী রূপে পম্পেই বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।পম্পেই ও হারকুলেনিয়াম ও আরো কয়েকটি ছোট্ট শহরে রোমান এবং গ্রীক রাজারাজরা অমাত্য আমলা শ্রেণী ও সমাজের বিশিষ্ট নাগরিক দের আমোদ প্রমোদ উল্লাসের আসর বসিয়ে রাতারাতি বিলাসী বৈভবের সমৃদ্ধতর নগরী তে রূপান্তরিত হয়েছিল ।

 কোনো ঐতিহাসিকের মতে দ্বিতীয় সামনাইত যুদ্ধের মাধ্যমে পম্পেইয়ের আবির্ভাব হওয়ার সময় থেকেই নগরীর উন্নয়ন স্থাপনা ও মন্দির নির্মাণ কার্য্যে সৌন্দর্যে  শিল্পে প্রাসাদে দালানে ভাস্কর্য্যে প্রযুক্তি ও ধন সম্পদের দিক থেকে এবং শিক্ষায় দীক্ষায় ব্যবসা বাণিজ্যে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছিল এই নগরী।ওয়াইন এবং খনি জাত পেট্রোলিয়াম দ্রব্যের প্রচুর উৎপাদনে রপ্তানি আমদানির ব্যাবসায় বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগের ফলে বিশাল সাফল্য ও অর্জন করেছিল। ১৭০ একর আয়তনের নগর টি ক্ষুদ্রহলেও ইতিহাসে যদিও সঠিক হিসেব নেই কোন সময়ে এ নগরীর উত্থান হয়েছিল তবে অনুমান করা হয় খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শতকে ইতালীর রাজা ওসকান পম্পেই নগরের গোড়া পত্তন করে ছিলেন। এবং ভূমধ্য সাগরীয় উপত্যকা অঞ্চলে গড়ে ওঠায় জলপথে ইতালী রোমান গ্রিক ছাড়াও এবং অন্যান্য দেশ গুলোতে গুরুত্ব পূর্ণ শহরের যাতায়াতের পথ সুগম হয়ে উঠলে বাণিজ্যিক প্রসারতা লাভ করে | 

  রোম এবং নেপলসের মধ্যে রেল যোগাযোগ পরিষেবা দ্রুত গতির ফ্রেসসিবিয়াঙ্কা ,ফ্রেসসিয়ারোসা ,নাইট ইন্টার সিটি ইত্যাদি দূর পাল্লার ট্রেন, রোমা টার্মিনি স্টেশন থেকে প্রতিঘন্টায় ছাড়ে এবং দেড় ঘন্টায় পৌঁছে যায় নেপলসে। সেখান থেকে বাসে বা মেট্রোয় প্রায় ৪০-থেকে ৪৫মিনিট সময়ে  ২৬ কিলোমিটার দূরের পম্পেই নগরীতে অনায়াসে পৌঁছে যাওয়া যায়।  যথারীতি হাড় কাঁপানো ভীষণ ঠান্ডায় সকাল ৭টা তেই রোমা টার্মিনি স্টেশনে পৌঁছে সোজা নেপলস শহরের উদ্দেশ্যে ট্রেনে এক রোমাঞ্চ কর যাত্রা শুরু । সেই সকালেই যাত্রী তে কম্পার্টমেন্ট ভরে গেছে।শহর নগর গ্রাম পেরিয়ে ট্রেন ছুটছে। বন্ধ কাঁচের জানলার বাইরে যত দূর দেখা যায় মেঘে ঢাকা আবছা কালচে পাহাড় পর্বত দ্রুত বেগে চোখের সামনে থেকে মিলিয়ে যাচ্ছে। সৌম্য শুভ্র আলপ্সপর্বত থেকে যার উৎপত্তি খুব সম্ভবত সেই আপেনাইন পর্বত মালা গ্রন্থি --সে ও চলেছে ওদের সঙ্গে। পাহাড়ের মাঝে সুড়ঙ্গ কেটে ছুটে চলার রেলপথ ,ট্যানেলগুলো শেষ হলেই কালচেনীল মেঘের ছায়ায় ঢাকা পাহাড় ক্ষণিক জেগে উঠে দেখা দিয়ে চলে যায় দৃষ্টির অন্তরালে।       

 ট্রেনে প্রায় আধো ঘুম চোখে ভূমধ্য সাগরের তীরে নেপলসের বন্দর শহরটি তে শ্রী পৌঁছেছিলো। নীল টাইরেনিয়ান সাগরের অগুনিত ঢেউয়ের তালে অজস্র বাণিজ্যিক জাহাজ ভেসে চলেছে। কেউ বা নোঙ্গর বেঁধেছে বন্দরে। রৌদ্রোজ্জ্বল এই সাগরের তীরে দাঁড়িয়ে নেপলস থেকে অনেক যাত্রী বিশাল ওশান লাইনারে করে কাপ্রিদ্বীপের দিকে ঢেউ তুলে জলভেঙে যাচ্ছিল।  অদ্রিজার ইচ্ছে পম্পেই দেখে ফেরার পথে  ঐ দূরের দ্বীপবাসিনী ক্যাপ্রিদ্বীপে ওরা ও বেড়াতে যাবে ?  ঋষভ বলে সময় হবে না আজকে রাতের ট্রেনেই যে রোমে ফেরার টিকিট । ক্যাপ্রিদ্বীপে যেতে হলে অন্ততঃ একটা দিন চাই।  পরেরদিন  সকাল ১১টায় বার্লিন ফেরার ফ্লাইট।
দূরে ভিসুভিয়াস সুপ্ত আগ্নেয়াগিরি।

 শ্রী সাগর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। নীল আকাশ নীল সমুদ্র নীল রঙের ঢেউয়ের মাথায় সাদা ফেনা ,ধবধবে সাদা এলবাট্রস পাখিদের শিকারের সন্ধানে তীব্র কল কোলাহল।  ঢেউয়ের মাথায় ওরা ঝাঁক বেঁধে উড়ে উড়ে ভেসে যায় কত দূর সমুদ্রে। গভীর নীল জলে ঢেউ তুলে ভেসে যাওয়া সুসজ্জিত প্রমোদতরণী ,আর সার বাঁধা স্পীডবোটগুলোর দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে শ্রী। নিঃসঙ্গ সুন্দরী " দূর 'দ্বীপবাসিনীর '' জল পথে ছলাৎছল শব্দ , রাশিরাশি ঢেউ  ভেঙে  পাল তুলে যাত্রী নাও অজানা সাগরে ভেসে যায়। ঝরঝরে নীলাকাশ মাথার ওপর জানুয়ারী মাসের হাঁড়কাঁপানো ঠান্ডা তবু ও বেশ মনোরম ভারী মধুর সে সকাল বেলাটি।

Post a Comment

0 Comments