বাংলার ঘাস পাতা ফুল ফল, পর্ব -- ৫৫
খেজুর
ভাস্করব্রত পতি
"শীতের সূচনাতেই পাড়ার পাঁচ কুড়ি খেজুর গাছের বন্দোবস্ত পেল মোতালেফ। গত বছর থেকেই গাছের সংখ্যা বাড়ছিল। এবার চৌধুরীদের বাগানের দেড় কুড়ি গাছ বেশি হল। গাছ কেটে হাঁড়ি পেতে রস নামিয়ে নিতে হবে। অর্ধেক তাঁর। মেহনৎ কম নয়, এক একটি করে এতগুলি গাছের শুকনো মরা ডালগুলি বেছে বেছে আগে কেটে ফেলতে হবে। বালিকাচায় ধার তুলে তুলে জুৎসই করে নিতে হবে ছ্যান। তারপর সেই ধারালো ছ্যানে গাছের আগা চেঁছে চেঁছে তার মধ্যে নল পুততে হবে সরু কঞ্চি ফেড়ে। সেই নলের মুখে লাগসই করে বাঁধতে হবে মেটে হাঁড়ি। তবে তো রাতভরে টুপ টুপ করে রস পড়বে সেই হাঁড়িতে। অনেক খাটুনি, অনেক খেজমৎ। শুকনো শক্ত খেজুর গাছ থেকে রস বের করতে হলে আগে ঘাম বের করতে হয় গায়ের। এতো আর মার দুধ নয়, গাইয়ের দুধ নয় যে বোঁটায় বানে মুখ দিলেই হল।"
খেজুর ফল
শীত এলেই যাঁদের দেখা মেলে সেই 'শিউলী'দের জীবনের রূপ-রস-গন্ধ প্রতিভাত নরেন্দ্রনাথ মিত্রর 'রস' গল্পে। 'চতুরঙ্গ' তে পৌষ ১৩৫৪ বঙ্গাব্দে (১ জানুয়ারি, ১৯৪৭ সালে) গল্পটি প্রকাশিত হয়েছিল। আজ থেকে ৬০ বছর আগে। কাহিনীর মোতালেফ, ফুলবানু, মাজু খাতুন, রাজেক মৃধাদের এখনও দেখা মেলে শীতের দিনগুলোয় গ্রামগঞ্জের অন্দরমহলে। খেজুর গাছের সাথেই লেপ্টে থাকে তাঁদের যন্ত্রণাক্লিষ্ট কণ্টকময় জীবন। তাঁরা 'শিউলী'। তাঁদের হাতে তৈরি সুস্বাদু খেজুর গুড়ে যাঁদের রসনা তৃপ্ত করে, তাঁরা কি কখনও খোঁজ নেয় আজকের মোতালেফ-রা কেমনভাবে দিন কাটায়? কিভাবে বানায় মুম্গন্ধের খেজুর গুড়? রসের নাগরদের রসহীন জীবনের উথাল পাথালের কাহিনীর কথা শুনতে চায় ক'জন?
রসে জ্বাল দেওয়া চলছে
খেজুর গাছে রস দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয় কার্তিক মাসের প্রথম থেকে। যেখানে খেজুর রস ফুটিয়ে গুড় তৈরি হয়, তাকে বলে 'শাল'। আর যাঁরা গুড় বানায় তাঁদের বলে 'শিউলী' বা 'শিবলী'। যেহেতু তাঁরা গাছে উঠে ভাঁড় বাঁধে তাই তাঁদের 'গাছি'-ও বলে। 'রাজেকের মতো অমন নামডাকওয়ালা গাছি ধারে কাছে ছিল না।'
প্রথমে গাছ কাটা হয়। অর্থাৎ যেখানে রস পড়ে সেই স্থান চেঁছে দেয় গাছি। গাছ চাঁছাকে বলা হয় 'চাঁদি' করা। একে 'গাছ মুড়ো দেওয়া'ও বলে। তবে গাছ রস দিতে শুরু করে চাঁছার অনেক পরে কার্তিকের ২৫ তারিখ নাগাদ। বারংবার গাছে ওঠা, চাঁছা, ভাঁড় বাঁধা, নামানোর ক্ষেত্রে পরিশ্রমের অঙ্ক কষলে ধাঁধিয়ে যাবে মাথা। গুলিয়ে যাবে ঘিলু। 'রস' গল্পের সুর টেনে বলা যায় 'কেবল খাটতে জানলেই হয় না। গাছে উঠতে নামতে জানলেই হয় না, গুণ থাকা চাই হাতের। যে ধারালো ছ্যান চামড়ায় লাগলেই ফিনকি দিয়ে রক্ত ছোটে মানুষের গা থেকে, হাতের গুণে সেই ছ্যানের ছোঁয়ায় খেজুর গাছের ভিতর থেকে মিষ্টি রস চুঁইয়ে পড়ে। এতো আর ধান কাটা নয়, পাট কাটা নয় যে, কাচির পৌঁচে গাছের গোড়াসুদ্ধ কেটে নিলেই হল। এর নাম খেজুর গাছ কাটা। কাটতেও হবে আবার হাত বুলোতেও হবে। খেয়াল রাখতে হবে গাছ যেন ব্যাথা না পায়, যেন কোনো ক্ষতি না হয় গাছের। একটু এদিক-ওদিক হলে বছর ঘুরতে না ঘুরতে গাছের দফা রফা হয়ে যাবে, মরা মুখ দেখতে হবে গাছের।'
খেজুর
গাছ কাটার ক্ষেত্রে বিচক্ষণতা এবং অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। খেজুর গাছ চাঁছাকে বলা হয় 'ছাঁদি' বা 'ছিলা দেওয়া'। এই কাজে যে যথেষ্ট ব্যুৎপত্তির প্রয়োজন হয় তা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। চাঁছা অংশে 'ললি' মারা থাকে। বাঁশ দিয়ে তৈরি হয় 'ললি'। বিশেষ গঠনশৈলীর এই ললি দিয়েই খেজুর গাছের মজ্জা থেকে চুঁইয়ে আসা রস ফোঁটা ফোঁটা করে জমা হয় মাটির ভাঁড়ে। গাছ কাটার একটু ভুলচুক হলেই রস পড়া বন্ধ। সব পরিশ্রম বৃথা। 'সে গাছের গুঁড়িতে ঘাটের পৈঠা হবে ঘরের পৈঠা হবে, কিন্তু ফোঁটায় ফোঁটায় সে গাছ থেকে হাঁড়ির মধ্যে রস ঝরবে না রাত ভরে।'
ভোর ৪টা নাগাদ গাছ থেকে রস ভরা কলসি পাড়া শুরু হয়। শীতের রাতের আমেজ মেখে সারা গ্রাম শহর যখন গরম লেপের তলায় সুখনিদ্রায় মগ্ন, তখন শুরু হয় গাছে ওঠার পালা। রস ভর্তি ভাঁড় নামানোর পালা। ঠাণ্ডাকে রেয়াত নয়। কষ্টকে মর্যাদা নয়। আরাম এবং বিলাসিতা ঝেড়ে তাঁদের দিন শুরু হয় গাছে গাছে। হাতে বিঁধে যায় খেজুর কাঁটা। রক্ত পড়ে, যন্ত্রণা হয়। ঠাণ্ডায় আরও কনকনিয়ে মোচড় দেয় সেই যন্ত্রণা। তবুও কুয়াশা মেখে আঁধার থাকতে থাকতেই রসের সন্ধানে নেমে পড়েন তাঁরা। পেটের কান্না থামাতে হবে তো! সংসার আছে। বৌ বাচ্চা আছে। তাঁদের কথা ভেবে কোমরে দড়ি বেঁধে খালি পায়ে চাদর সোয়েটার ছাড়াই এ গাছ থেকে ও গাছ চড়তে হয়। যেন 'গেছোবাবা'। সকাল ৬টা পর্যন্ত চলে রস নামানোর পর্ব। এরপর সেই রস চলে যায় যেখানে 'শাল' বসেছে, সেখানে।
রস জ্বাল দেওয়া হয় বড়সড় টিনের কড়ায়। একে 'নৌকা' বলে। তবে শিউলীরা বলেন 'সালতি'। আগে লোহার কড়া ছিল। এখন টিনের ডোঙা হয়েছে। উনুনটিও বেশ! লম্বা গড়ন, অনেকগুলো মুখ। রস দেওয়ার উনুনকে বলা হয় 'বান'। অনেকে বলেন 'গাড়া'। যেসব কলসিতে রস চুঁইয়ে পড়ে সেই সব কলসি সকালে এইউনুনের মুখে উপুড় করে রেখে একটু 'সেঁকে' বা 'পুড়ে' নিতে হয়। এতে নাকি কলসির ভিতরের গন্ধ দূর হয়। খেজুরীর চতুর্ভুজচকের কানাই বেরা, শক্তি বেরা, নির্মল বেরা, হৃষিকেশ বেরা, সন্টু বেরা-রা আটিলা মাটি দিয়ে তৈরি করেন খেজুর রসের জন্য বিশেষ আকারের কলসি। যাইহোক, সেই লম্বা উনুনে জ্বাল দেয় শিউলী বা গাছিদের বউরা। যেমন ভাবে 'মোতালেফে'র প্রথম বউ মাজু খাতুন জ্বাল দিত। 'সারে সারে উনান কেটে তার উপর বড় বড় মাটির জালা বসিয়ে সেই চালাঘরের মধ্যে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রস জ্বাল দেয় মাজু খাতুন'। জ্বালানি হিসেবে শুকনো খড়, পাটকাঠি, হোগলা পাতা আর খেজুর গাছের শুকনো ডাল ব্যবহার করা হয়। সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত চলে জ্বাল দেওয়ার কাজ। এখানেই মুন্সিয়ানা। সবাই তো আর মাজু খাতুন নয় যে নিপুন হাতে জ্বাল দেওয়ার কেরামতিতে গাছের রস হয়ে উঠবে নলেন গুড়! ফুরফুরে গন্ধ। ফুলবানুর মতো রস জ্বাল দেওয়া বউ ঘরে থাকলে অবশ্য গাছির ভারি কষ্ট! সারা দিনের পরিশ্রমটাই বৃথা।
ফের বেলা বাড়ার সাথে সাথে আবার গাছে উঠতে হয় ফাঁকা ভাঁড় বাঁধার জন্য। সারা রাত ধরে 'ললি' বেয়ে রস চুঁইয়ে পড়ে ভাঁড়ে। পরদিন সেই রস জ্বাল দেয় মোমেনা বিবি, রবিদান বিবিরা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গরম উনুনের কাছে বসে রস জ্বাল দিতে দিতে মনের রস শুকিয়ে যায় তাঁদের। ধোঁয়ায় চোখ জ্বলে। জল পড়ে ঠঠস্। ঝলসে যাওয়া রূপ আর চিমসে হয়ে যাওয়া চামড়ায় শীতের ঠাণ্ডার কাঁপুনিও বসতে লজ্জা পায়। এভাবেই চলে সংসার। এভাবেই চলে শিউলীদের জীবন।
একবার গাছ কাটার চার দিন পর ফের সেই গাছ কাটতে হয়। এ আসলে গাছকে বিশ্রাম দেওয়া। একে বলে 'জিরেন কাট'। দিন বদলে বদলে গাছ কাটাকে বলে 'পালি' করে কাটা। ৩ 'পালি' গাছ এ ভালো রস হয়। সুস্বাদু এবং মিষ্টি রস হয়। গুড়ও ভালো হয়। ২ পালি গাছে অবশ্য তা হয় না। গাছের রস ভালো হয় ঠাণ্ডা বেশি পড়লে বা উত্তুরে বাতাস বইলে। এতে নাকি রস বেশ 'চখা' হয়। আকাশে মেঘ করলে অবশ্য রস ঘোলা হয়ে যায়। টক্ টক্ স্বাদ হয় রসের। মোটামুটি ১ কলসি বা ১৫ কেজি রস জ্বাল দিলে ১ কেজি ২৫০ গ্রাম গুড় মেলে। সব দিন সমান রস পড়ে না। ফলে তারতম্য ঘটে গুড়ের পরিমাণে। লাভেরও তারতম্য হয়।
রসের বহু রকমফের আছে। গাছের প্রথম রস থেকে যে গুড় তৈরি হয় তাকে বলে 'জিরান গুড়' বা 'দানা গুড়'। পাতলা গুড়কে বলে 'ডোকা গুড়'। নিয়ম বলে বছরের প্রথমে গাছকে দুবার চাঁছতে হয়। প্রথম চাঁছার ২৪-৩০ দিন পর আবার চেঁছে রসের কলসি বাঁধতে হয়। কেননা গাছটাকে 'আঁটতে' দিতে হবে তো!
উনুনে জ্বাল দিতে দিতে সাদা জলের মতো রসের রঙ বদলে যায়। ঘন হয়ে ওঠে। এই গুড়কে বলে 'মৌঝোলা'। আমরা যে বাজারে নলেন গুড় খাই তা এই পর্যায়ে তৈরি হয়। আর নলেন গুড় দিয়েই তৈরি হয় পাটালি। পাটালিতে আদার রস দিলে হয় 'আদরকি'। তবে সারাদিনের ময়লা রস-ও ফেলা যায় না। সেসব জ্বাল দিয়ে 'মোতালেফ'রা বানাতো তামাক খাওয়ার চিটে গুড়। নলেন গুড় বা ঝোলা গুড় বানাতে 'শিউলী'রাউনুনে জ্বাল দেওয়া 'সালতি' তে 'তাক্' বুঝে ব্যবস্থা নেয়। কখন বেশি জ্বাল, কখন কম জ্বাল দিতে হবে-তা তাঁদের জানা।
খেজুর গাছ ক্রমশঃ কমে যাচ্ছে। ফলে কমে যাচ্ছে শিউলীর সংখ্যা। কমছে গুড় উৎপাদন। গাছের অভাব। চোখ মেললেই পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, উত্তর ২৪ পরগণা, হুগলীতে নজরে পড়বে খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধার দৃশ্য। তবে তা আগের চেয়ে কমে গেছে অনেকখানিই। গরিব মানুষের কর্মসংস্থানের নানা প্রকল্প রূপায়িত করছে সরকার। ফলে বাপ ঠাকুর্দার পেশায় আর মন মজছে না বর্তমান প্রজন্মের।
বাংলা সাহিত্যে শিউলীদের নিয়ে নরেন্দ্রনাথ মিত্র ছাড়া তেমন কোনও রচনার দেখা মেলে না। তবে প্রবাদ প্রবচনে খেজুর গাছ, গুড় নিয়ে অনেক বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে। প্রবাদগুলি নানাভাবে বাংলা ভাষাকে মর্যাদা দিয়েছে। খেজুর গাছ আর গুড় তাই মোটেই ফেলনা নয়। সাহিত্যরসিক আর খাদ্যরসিক দু'দলের কাছেই তা উপাদেয়।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশে এবং সিন্ধু সভ্যতাতে হাজার হাজার বছর আগেও খেজুরের ব্যবহার হত অন্যতম খাদ্য হিসাবে। ৭০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মেহেরগড়ে খেজুর চাষের বিষয়ে আর্কিওলজিক্যাল প্রমাণ মিলেছে। পরবর্তীতে হরপ্পা সভ্যতাতে ২৬০০-১৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দতেও খেজুরের চাষের বিষয়ে জানা যায়। প্রাচীন রোমেও খেজুর বাগানের কথা পাই। প্রাচীন আরবে ৫৫৩০ থেকে ৫৩২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে খেজুর গাছের চাষের প্রমাণ মেলে।
সারা পৃথিবীতে ৩০০০ ধরনের খেজুর গাছের খোঁজ মেলে। এগুলি আলাদা করা হয় এদের আকার, গঠন, উৎপাদন, ফলন, উপকারীতা, ব্যবহার, রঙ ইত্যাদির ওপর।
আজও খেজুরের চাহিদা সমানভাবে বজায় রয়েছে। একসময় ভারত থেকে প্রচুর গুড় রপ্তানী হত বিদেশে। তবে সেই গুড় আসলে আখ গুড়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গুড়ের বাজার হল উত্তরপ্রদেশের মুজাফরনগর। তবে অন্ধ্রপ্রদেশের চিলাখাসওনম এক্ষেত্রে সমোচ্চারিত নাম।
গুড়ের সংসারে খেজুরের গুড় এর লালিমা একটু বেশি। গুড় দিয়ে পঞ্চাশ রকমের সন্দেশ তৈরি হলেও খেজুর রস থেকে তৈরি নলেন গুড়ের ভারিক্কি আলাদা। কোনও বিকল্প হয়না। সারা ভারত জুড়ে অবশ্য গুড়ের মিষ্টির (বেশিরভাগই আখগুড়) একটা আলাদা চাহিদা আছে। কর্ণাটকে আনডে, পায়েস, ওরাটু, আসামে তিলাপিঠা, কেরলে পায়েসম, গুজরাটে তালকা লাডু বা তাল সাঁকলি, বিহারে ঠেকুয়া, তামিলনাডুতে পোঙ্গল স্পেশাল ছককারাই পোঙ্গল এবং পশ্চিমবঙ্গে গুড়পিঠা এক অতি পরিচিত নাম।
কিন্তু খেজুর গুড়ের বিশেষ করে নলেন গুড়ের পাটালি বা সন্দেশ এদের চেয়ে বহুলাংশে এগিয়ে। খেজুরের জনপ্রিয়তা সারা বিশ্বে থাকলেও খেতুর গুড়, খেজুর রস, পাটালি গুড়, নলেন গুড় কিন্তু একান্তভাবে বাংলায় নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের ফসল। বাংলার রূপ রস গন্ধের খোঁজ মেলে নলেন গুড়ের সুবাসের মধ্যে।
কার্তিক মাস এলেই শুরু হয়ে যায় রস সংগ্রহের ব্যস্ততা। চেক ছাপ লুঙ্গি পরা একদল গরিব মুসলিম বউ বাচ্চা নিয়ে হাজির হয়ে যায় গ্রামে। খেজুর ডাল ও হোগলা দিয়ে বানানো ঘরে শুরু হয়ে যায় তাঁদের রস সংগ্রহের পালা। সেই রসকে ফুটিয়ে তৈরি হয় গুড়। একটা অদ্ভুত জীবনের ঘেরাটোপে থাকেন আমাদের এই রস সংগ্রহকারী শিউলীরা।
'চণ্ডীমঙ্গল' কাব্যে পাই 'শিউলি নাগোরে বইসে খেজুর কাটিয়া রসে গুড় করে বিবিধ বিধানে।' এই শিউলীরা আজ থেকে বহু বছর আগে যেভাবে রস সংগ্রহ করতেন আজও সেই একই পদ্ধতি অনুসরণ করে চলেছেন। শীতের সময় ২-৩ মাস এঁদের এই রসালাপ। তারপর এঁরা অন্য কাজে যুক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তুশীতের আমেজ এলেই এঁরা ঝাঁপিয়ে পড়ে রসের সাথে সখ্যতা বানাতে।
এঁদের জীবন নানা যন্ত্রণায় পরিপূর্ণ। নানা ধরনের না পাওয়ার অতৃপ্ত বাসনা লুকিয়ে থাকে নলেন গুড়ের অপরূপ সুবাসের আড়ালে। তরল গুড়ের তারল্যে নিজেদের জীবনের কঠিন বাস্তবগুলো কেমন যেন মাখামাখি হয়ে যায় অন্য এক ধরনের প্রলেপে। আমাদের মতো রসপিয়াসী মানুষজনের চোখে শুধু রসের নির্ঘণ্ট ছোঁয়াতেই মন আকুপাকু করে। কিন্তু, সেই সুমিষ্ট রসের আড়ালে খেজুর কাঁটায় বিদীর্ণ ছাপোষা মানুষগুলোর নিরস জীবনের কাহিনী আমাদের চোখে ধরা দেয় না। আলোড়িত হয় না হৃদয়। কঁকিয়ে ওঠেনা মনপ্রাণ।
মোতালেফ, মাজু খাতুনরা আজও আছে আমাদের চারিদিকে। একই সঙ্গে 'নাস্তা ও নেশা' নিয়ে বিরাজমান মাজু খাতুনদের জীবনের রূপ রস গন্ধ হারিয়ে যায় উনুনের জ্বাল দেওয়ার তপ্ত আগুনে, আর চোখ জ্বালাধরা ধোঁয়ায়।
ইতিহাস বলে, জাহাজে চাপিয়ে নন্দীগ্রাম ও খেজুরীর খেজুর গুড় এক সময় পাঠানো হতো সুদূর রোম শহরে। তখন রমরমা ছিল খেজুরী বন্দব। সেই বন্দর দিয়েই খেজুর গুড় যেত রোমে। আজ সেই ঐতিহ্য নেই। তবে আজও কিছু খেজুর গাছ টিকে আছে। সেই গাছকে আশ্রয় করে বেঁচে আছে শিউলীরা। যাঁদের পিঠে থাকে তালপাতা দিয়ে তৈরি বিশেষ ঝুড়ি 'খুলি'। যার মধ্যে থাকে 'হাঁসুয়া' বা 'হেঁসো' বা 'দা'। আর থাকে মোটা কাছি। এক সময় যে গুড় ছিল ১২ আনা কিলো। সেই গুড় এখন ১০০-১২০ টাকা কিলো। তবুও লাভের মুখ দেখা হয়ে ওঠেনা একালের 'মোতালেফ'দের। ঘরদোর ছেড়ে খেজুর গাছের খোঁজে পাড়ি জমাতে হয় অন্যত্র। খেজুর গাছের ডাল দিয়ে বানানো অস্থায়ী চালা ঘরে শুরু হয় চার মাসের অন্যরকম বসবাস। 'গোঁফ খেজুরে' হয়ে নয়, রীতিমতো পরিশ্রম করেই খেজুর গাছের মজ্জা থেকে নিংড়ে আনা 'বৃক্ষপানি'ই হাতের গুণে হয়ে ওঠে উপাদেয় খেজুর গুড়। যার আস্বাদনে গাইতে ইচ্ছে করবে "খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন / নইলে রস গড়িয়ে গোড়া পচে / অকালে হবে মরণ / খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন / মাটির একখান হাঁড়ি নিয়ে/রশ্মি দিয়ে বেঁধে তারে/ উপরে করো তারে ঝুলন / খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন / ও গাছে জোয়ার আসিলে/ওগাছে কাটো কুশলে/কোনার দড়ি ছিঁড়ে যেন পড়োনা তলে/নইলে তলে পড়ে তোমার দেখি/অকালে হবে মরণ/সুরসিক গাছি যারা / গাছের ওপর উঠে তারা / করে রস আস্বাদন / খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন/অরসিক গাছি যারা/গাছের উপর উঠে তারা/আর কোনার দড়ি ছিঁড়ে তাদের/অকালে হবে মরণ/ খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন।"
সংস্কৃত শব্দ 'খর্জুর' থেকে এসেছে খাজুর বা খেজুর কথাটি। কিভাবে এসেছে তা 'বঙ্গীয় শব্দকোষ'তে লিখেছেন হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
সংস্কৃত 'খর্জুর'> পালি, প্রাকৃত 'খর্জুর' > বাংলা খাজু (জু)র'।
সংস্কৃত 'খর্জ' ধাতুর অর্থ আকর্ষণীয়। সেই আকর্ষণীয় ফল 'খর্জুর'-ই এখনকার খেজুর।
'চলন্তিকা'-তে রাজশেখর বসু লিখেছেন 'খর্জুর' থেকে 'খেজুর' হয়েছে। তেমনি 'সংসদ বাংলা অভিধান' অনুসারে (সাহিত্য সংসদ) এই 'খেজুর' কথাটি এসেছে সংস্কৃত 'খর্জুর' শব্দ থেকে।
খেজুর গাছকে ইংরাজীতে বলা হয় DATE PALM TREE ল্যাটিন পরিভাষায়
খেজুরের 'গন' PHOENIX। তবে প্রজাতি অনেক আছে।
বিভিন্ন স্থানে খেজুরকে যে নামে ডাকা হয়-
বাংলা - খেজুর
হিন্দি - খাজুর
ওড়িয়া- খাজুরা
অসমীয়া - পেরিচাম পাঝাম
মালয়লাম- ইথা পাঝাম / তেনিচাঈ
তেলেগু - খাজুরা পাণ্ডু
মারাঠী - খাজুর
গুজরাটী - খাজুর
তামিল - পেরিচাঈ
কাশ্মীরী - খাজলা
সংস্কৃত - খায়জুর
গ্রীক- FOINIKS
হিব্রু- TAMAR, TAMARIM
ফরাসী - DATTE
ল্যাটিন - PALMULA
ইতালী- DATTERO
হিস্পানি- DATIL
বঙ্গদেশে তিন ধরনের খেজুরের কথা জানা যায়। যেমন- (১) পিণ্ড খর্জুরী: একে সংস্কৃতে বলে দ্বীপ্যা, ছোহারা, সুলেমানী, রাজখর্জুরী, মধু খর্জুরিকা। এছাড়া অসমীয়াতে খুস্ মতির, খুর্মাখস্ক, গুজরাটীতে খারক, খজুর, কন্নড়ে সিংহ ইঞ্চিলু, মারাঠীতে খজুরী, তেলুগুতে খজুরপ পুণ্ডু এবং হিন্দিতে পিণ্ড খজুর বলে। (২) ভূখর্জুরী: এটি খুব ছোট গাছ। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম PHOENIX ACCULIS এবং PHOENIX FARINIFEA (৩) বন্য খর্জুর : এই ধরনের গাছকে সংস্কৃতে খর্জুরিকা এবং খজিরি বলে।
খুব ছোটবেলায় খেজুর পাতা তুলে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করতাম 'পতিঙ্গা'। খেজুরের কাঁটায় গেঁথে হাতে ধরে রাখতাম কাঁটা-টা। বাতাসের দিকে মুখ করলে বন বন করে ঘুরতো তা। এ যেন সেই নেদারল্যান্ডের হাওয়া কল। দারুণ মজাদার উপকরণ ছিল তখন। সেই খেজুর পাতার পতিঙ্গা তৈরির চল আজকের ছেলেমেয়েদের মধ্যে দেখাই যায় না। অনেকেই তো কিরকম পতিঙ্গা বানাতে হয়, তাও জানেনা। যদিও গত ২০ মার্চ (২০১১) নারায়ণগড় ব্লকের মনিনাথপুর গ্রামে গিয়েছিলাম 'কোল হো' জনজাতির মানুষ কার্তিক বাআঁদা-র বাড়ি। খড়ের চাল দেওয়া কার্তিকবাবুর বাড়ির সামনে তাঁর দুই ছেলে মেয়ে লিপি ও সানম খেজুর পাতার পতিঙ্গা বানিয়ে খেলছে। সভ্য জগতের ছেলেমেয়েদের হাতে যখন মোবাইল উঠে এসেছে, তখন সংখ্যালঘু পিছিয়ে পড়া এই 'কোল হো' জনজাতির মানুষগুলোর গাঁয়ে এখনও সংস্কৃতিকে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চোখে পড়ল।
খেজুর পাতা দিয়ে 'ঘোল মুয়া'-র কাজও করা হত। দুজন দুটি খেজুর পাতার দুপ্রান্ত ধরে ঘোল মুথুনির দড়ি টানার মতো টানাটানি করত। এবার পাতায় পাতায় ঘর্ষণ লেগে তা বেশ সরু সরু হয়ে যেত। তারপর তার রস চুষে খাওয়ার আস্বাদনটাই আলাদা। কেক, প্যাস্ট্রির রমরমা বাজারে এভাবে খেজুর পাতার রস নিংড়ে খাবার সংস্কৃতির কথা কেউ কি বিশ্বাস করবে?
গ্রামবাংলায় তো আর বাজারের দামী খেজুর মিলতো না। অগত্যা জংলি খেজুর খাওয়ার হিড়িক ছিল ছোটদের মধ্যে। ভোর হতেই সোজা গাছের গোড়ায়। পাকা খেজুর কুড়োনোর মজা ও আনন্দটাই আলাদা। আজ সেইসব দস্যি দামাল ছেলেদের উত্তরসুরিরা খেজুর গাছের গোড়ায় গোড়ায় ঘোরে না পাকা খেজুরের খোঁজে। কখন একটা পাখি এসে বসবে, আর তার পায়ের আঘাতে দুটো খেজুর টুপ করে খসে পড়বে নিচে। ব্যাস, খপাৎ করে কুড়িয়ে গপাৎ করে মুখের গহ্বরে চালান দেওয়ার তৃপ্তি ক'জন বোঝে? যাঁরা একটু চালাক প্রকৃতির তাঁরা আবার হলুদ হয়ে যাওয়া খেজুরের কাঁদি কেটে জলে ডুবিয়ে রেখে দেয়। ঘন্টা কয়েক পরে সেই কুল পেকে যায়।
খেজুর কুল খেয়ে বীজগুলো ফেলে দিলে কিছুদিন পর তা থেকে ছোট ছোট চারা গাছ জন্মায়। তখন সেই চারাগাছ (বীজসহ) উপড়ে বীজ থেকে গাছটা ছিঁড়ে ফেলা হয়। এবার ঐ বীজটির শক্ত খোসা ছাড়িয়ে ভিতরের নরম শাঁস খাওয়ার মজা অবাক করার মতো। একে 'সুপারি' বলা হয়। যাইহোক, খেজুর কেন্দ্রীক এইসব ছোট ছোট সংস্কৃতি বা মজাদার কাহিনী আজ চমকিত করবেই।
দেবাদিদেব মহাদেবের ত্রিশূল বানানো হত খেজুর পাতা দিয়ে। গোটা কুড়ি খেজুর পাতা হলেই অন্তত দেড় হাত মাপের একটা শিবের ত্রিশূল বানিয়ে 'শিব শিব' খেলার রেওয়াজ আমরা ভুলিনি। আজও মনে হয় আবার যদি একবার সেই ছোটবেলার দিনটা ফিরে আসতো।
গোয়ালারা হাঁড়িতে বা ড্রামে করে দুধ নিয়ে যাওয়ার সময় একটা করে পাতা যুক্ত খেজুর ডাল ঐ হাঁড়ি বাড়ামে পুরে রাখে। কেন না এতে নাকি যেমনি দুধ নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না, তেমনি দুধ ছলকে মাটিতেও পড়তে পারে না।
খেজুরের বীজকে দু ফাঁক করে চিরে সেই বীজ দিয়ে 'অষ্টা' খেলা হয়। যদিও কাটাকুটির সেই 'অষ্টা' খেলার চল আজ নেই বললেই চলে। সেই সংস্কৃতি হারিয়ে গেছে আধুনিক সভ্যতার যাঁতাকলে।
বাংলাদেশে 'বাইল্লে ঘুরানো' একটি অতি পরিচিত এবং চমৎকার বিষয়। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন একটি বড় তারাবাজিতে আগুন লাগিয়ে ঘোরানো হচ্ছে। এতে ইচ্ছে মতো স্থানে ধোঁয়া তৈরি করা যায়। এই 'বাইল্ল্যে' হল একটি কাঁচা, শক্ত, সরু এবং লম্বা দড়ির মতো লতার এক প্রান্তে যে কোনও ভারী বস্তু বাঁধা হয়। এক্ষেত্রে ঢেলা ব্যবহার হয়। এবার অপর প্রান্তে খেজুর গাছের চামর বা ফ্যাৎরার মাঝে বা কেন্দ্রে ফুটো করে ঢিলের প্রান্তে জড়ো করা হয়। ব্যাস, তৈরি হল 'বাইল্ল্যে'। এবার সবশেষে ফ্যাৎরার উপর প্রান্তে আগুন ধরিয়ে লম্বা লতাটির অপর প্রান্ত ধরে ঘোরানোকেই বলে 'বাইল্ল্যে ঘোরানো'।
খ্রিস্টানদের একটি পরবের নাম 'পাম সানডে'। সাধারণত গুড ফ্রাইডের আগের রবিবার এটি অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দু বাঙালীরা ঠিক যেমন পৌষ পার্বণের সময় ধানের ছড়া বাড়িতে রাখে, তেমনি খ্রিস্টানরা পাম সানডে-তে ঘরের মধ্যে খেজুর পাতা সাজিয়ে রাখে। তাঁরা খেজুর পাতা দিয়ে 'ক্রশ' তৈরি করে অতিথি অভ্যাগত এবং আত্মীয়-স্বজনদের উপহার দেয়। গীর্জাতেও খেজুর পাতা দিয়ে সাজানো হয়। হিন্দুদের তুলসি, বেলপাতা, দূর্বা পাতার মতো খ্রিস্টানদের কাছে পাম গাছের পাতা বেশ পবিত্র।
হিন্দুরা মারা গেলে শ্মশানে চিতা সাজানোর পরে তুলসী গাছ পুঁতে দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। তেমনি মুসলিমদের কবর স্থানে পারলৌকিক ক্রিয়ার অঙ্গ হিসাবে কবরের চারকোণে চারটি খেজুর ডাল পুঁতে দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগণার স্বরূপনগরের লৌকিক দেবী 'বুড়িমা'-র অধীষ্ঠান খেজুর তলাতেই। মানুষের বিশ্বাস এই খেজুরতলার মাটি কাঁচা বা জলে গুলে খেলে নাকি সব ধরনের রোগ থেকে মুক্তি লাভ হয়। তাই এখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার এই জনসংখ্যা কয়েক গুন বেড়ে যায়। আর যাঁরা নক্সার কাজ করেন তাঁদের কাছে 'খেজুরদড়ি' নকশাও এক অতি পরিচিত নক্সার নাম। জানালা, দরজা বানাতে এই নক্সা অনেক সময় কাজে লাগানো হয়।
বাংলাদেশ সীমানায় অবস্থিত সুন্দরবন অঞ্চলে মুসলিম ও হিন্দু ধর্মের লোকজন আলাদা আলাদাভাবে অথবা একসাথে মিলিতভাবে উদযাপন করেন 'খেজুরভাঙা উৎসব'। এই উৎসবে ঘুরে-ঘুরে শাঁখ বাজিয়ে 'মাগন' করে। অর্থাৎ সাহায্য চায়। তখন গৃহকর্ত্রীরা তাঁদের সাধ্যমত টাকা-পয়সা, চাল বা অন্যান্য সামগ্রী দেয়। মোটামুটি এভাবে ১২-১৫ দিন ধরে চলে এই মাগনের কাজ। অবশেষে মাগন করে যাওয়া সামগ্রী দিয়ে শুরু হয় পূজা এবং মেলা। বাংলাদেশের সুন্দরবনে যা খেজুর ভাঙা উৎসব হিসেবে পরিচিত তা ভারতের সুন্দরবন অঞ্চলে 'মাগন সংগ্রহ' বলে। এই উৎসবের সাথে খেজুর গাছের কোনো মিল নেই।
কেবল খেজুর গাছ বিষয়কে সামনে রেখেই কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত একটি কবিতা লিখেছিলেন ১৩৩০-১৩৩৪ নাগাদ তাঁর 'মরুশিখা' কাব্যগ্রন্থতে। কবিতাটির নাম হল- 'খেজুর বাগান'। সেই কবিতার কথা আমরা অনেকেই জানিনা।
'চাষে আর কিছু নাই,
হুঁশিয়ার চাষা লাগালো হাজার খেজুরের চারা তাই।
ধীরে ধীরে বাড়ে খেজুরের চারা কাঁটাভরা সারা দেহ। চাষবাস বড় লাগে না একটা, মুড়ায়ে খায় না কেহ। দেখিতে দেখিতে মাঠ হ'তে মাঠ খেজুর বাগানে ছায়, ফাঁকে ফাঁকে চাষা খেজুর তলায় মটর ছোলাও পায়। খেজুরের আংটি পরে পরিপাটি গজায় নূতন চারা,
বুঝে নিল চাষা, খেজুরের চাষ সকল চাষের বাড়া।'
🍂
0 Comments