যদিও বর্ণহীন
অক্ষরের দাগে তুমি দৃপ্ত-ভাষী চেঙ্গিজ
প্রাচীরের ওপারে অসংখ্য বিটুমিন
শত্রু হয়ে আছে যাদের বর্ণময় জিন
লাঙ্গলের ফালে যারা ফলিয়েছে বীজ।
জুগিয়েছে অক্ষরের ঘরে যত নির্বাণ
বিসর্গের পরে মুছে নেয় ঘর্মাক্ত শ্রম
আরো এক অস্তের খাদে ওরা ভ্রম
সূর্যের বুকে বসে ওরা গায় না গান।
নবান্নের ঘ্রাণ নিয়ে ঐযে অস্বচ্ছ শরীর
ছুঁড়ে ফেলে কত কাগজের কাগ
ডাস্টবিনে জমে উঠে বর্ণহীন দাগ
দাগহীন শরীরে গড়ে ওরা প্রাচীর।
টেবিলের নিচে সব মৃত ফিসফিস
অলস ওঠনে বসে মুখে ভরা পান
অক্ষর ভারে ওরা ধরে রাখে মান
সুযোগী ফ্যাসিবাদে উচ্ছসিত শিস।
ঘন্টার কাঁটাগুলি জেগে উঠে ভোরে
সৃষ্টির সব কিছু কাঁধে নিয়ে দায়
জৈবিক অক্ষরে প্রিয়াকে হারায়
রাজপথ আগুনে ওরা কাজ করে।।
ওরা ফ্যাসিস্ট তাই
রক্তে মিসে আছে একটিই ভ্রুন
পেশির গোছায় বাঁধি অসমাপ্ত পূর্ণচ্ছেদ
চিরকাল প্রতিশ্রুতিই আমার উত্তরণের
আঁতুড় ঘর
তারপর কৌটিল্যের অক্ষিপটে
বানিয়ে ফেলি একটি লৌহ কপাট
শব্দের ঝাপটা লাগে পলল শিলার
স্রোতস্বিনীর অহেতুক স্রোত লাগে পালে
বার্লিনের উচ্চতা আমার অদ্বিতীয় একক
তাই লোহার গারদ থেকে উগরে দিই
আগ্নেয়গিরি নিমেষে কখনো বুকে
কখনো মাথায়
তারপর সবেগে একই পৃষ্ঠা পড়ে যাই
বারবার অসমাপ্ত কাহিনীর মতো
পিপীলিকা মেরে ভোজ সারি উল্লাসে
গোকুলের শক্তি না মেপেই তারপর
সেতারের ঝংকার তুলি জগদ্দল প্রাসাদে
পেন্ডুলামের সাথে গুনে যাই পরবর্তী
ইতিহাসের পৃষ্ঠা
তারপর-তারপর...।
উৎগিরণ
অসংখ্য নিষ্ঠুর শিলা বেড়ে উঠছে মাথার ভেতর
দিন দিন রমজান আর ঘন্টায় গিলে খাচ্ছে স্রোত
ঝলসানো অবুঝ জড়িয়ে নিচ্ছে শীত নিজের মতো
গঙ্গার জল আজ শুষে নিচ্ছে সব
যার সঙ্গে ধরা ছিল বিবেকের সম্মিলিত ত্রিশূল
যদি মানুষের মতো গজিয়ে উঠতো শিলা
কাঁটা তারের মৃত্যু হত নিশ্চিত।
অজানা পাসওয়ার্ড
পৃথিবীর বুকে জন্ম নিয়েছে এক নতুন কিবোর্ড
পৈত্রিক পাসওয়ার্ডে খুলেনা সে তো
লতানো গাছগুলি শুষে নিয়েছে মাউসের খেতাব
হরমোন রাতে জেগে থাকে লেন্স
শরীর ছুঁয়ে থাকে ক্রোম পিরিতীর খেলায়
প্রেমের ছুটি হয়েছে কবেই
আজ আর টুইটে মন ভরে না কারোই
ম্যাসেঞ্জারে ঢেলে দেয় যৌনদৃপ্ত লিপস্টিক
যে সবুজ অঙ্কুরিত হয়েছিল সৃষ্টির শপথ নিয়ে
আজ তার ডিভাইসে ঠাঁই নিয়েছে ভাইরাস
আপডেট ছাড়া বৃদ্ধ অ্যাপগুলি আলোর
নীচে বসে আলো খোঁজে দিনরাত
পৃথিবীর বীজ অঙ্কুরিত হচ্ছে দ্বিপদী হয়ে
তারা রোবটের হৃৎপিণ্ড নিয়ে পাড়ি
দিয়েছে সুদূর আমেরিকা
দিনান্তের লাঠিগুলি তরল পেনড্রাইভে নিমগ্ন
তাই মরচে পড়া ভবিষ্যতের আশায়
জাবর কেটোনা বন্ধু
দেখে যাও আরও কয়েকটি দশক পরে
কি রত্ন তুলে আনে ওরা তোমার জন্য।
🍂
আরও এক কক্ষ
শোন-একটা কবিতা বুনেছি তোমার জন্য
একটা ত্রিভুজে বানানো আমাদের উঠোন,
বেবি ফুডে বেড়ে ওঠা এক কোমল গান্ধার …
একটু তোমায় একটু আমায় ছুঁয়ে আছে;
অতি যত্নে লালিত তার প্রসস্থ যৌবন-
তোমার তন্ত্রীর সুর চিরকাল সারেগা সুরে
বাজাও তার প্রকোষ্ঠে-
নিটোল নধর তার জীয়ন্ত জীবাশ্মেও
ঝুলিয়েছো তাবিজ -ক্লান্তও হওনি –
আঠারোর হাত কেটে ধরিয়ে দিয়েছো এক কাগজের ফুল রোবটের সংসার থেকে,
আবেগে উন্মুক্ত করেছ তার বহিরঙ্গ পথ–
এমন মাধবী লতার চিরাগ জ্বেলে জ্বেলে
ভাবি জলসায় ভৈরবীর সুর তুলেছিলে তুমি-
আমি দেখেছি তখন তোমার বিনিদ্র যাপন
যদিও তখন আমার ভেতর কি যেন এক
গুঞ্জন উঠেছিল…।
অনেকটা পথ হেঁটেছো তুমি,আমিও-
আজ তোমার কুসুমের রিমঝিম বাজে অন্যলোকে,
চোখে তার সিঙ্গাপুরের আলো-দৌড়-দৌড়-দৌড়-
ইলেকট্রনের কক্ষে আজ তার পদধ্বনি অনিয়ন্ত্রিত হয়েছে দূরন্ত গতি নিয়ে,
তবু পথ খুঁজে পাওনি তার আলেয়ায়-
একটি মাত্র কুসুম কবেই আমাদের নিউক্লিয়াস ছেড়ে কংক্রিট্ হয়ে গ্যাছে বুঝতেও পারোনি-
তুমি কাঁদো উলু বনে আমি ইতিহাস খুঁজি শাজাহানের!
নিষ্প্রদীপ তাসের ঘরে ভৌত বন্ধনে জাবর কাটি তুমি আর আমি অলিন্দের পথ চেয়ে চেয়ে…
তবু তো ফেরে না সে এ কুঞ্জ বনে
ভাবি আবার কি ইতিহাস লেখা হবে শুধুই নিউট্রনের-
যেখানে গাছ নেই বাতাস নেই,
নেই হাতে হাত।
সার্কাস
বিদ্রুপ শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে গেছি
ইঁট কাঠ পাথরগুলি কেবলই উপহাস করে
কবিদের জোকার ভেবে চিরকাল
ভাব জগৎ হেঁটে চলে আকাশ পথে
কখনও আলোর ইশারায়
কখনও অধরা রামধনুর রঙে
খোরাকের তাগিদে হোঁচট খায় বারবার
সে এক নিদারুণ প্রসব যন্ত্রণায়
এইপথেই অসংযমী দোয়াত
এঁকে ফেলে ছন্দবদ্ধ পূর্ণচ্ছেদ
পথ চলতি অকর্মন্য ত্রিভুজ তখনই
গড়ে কৌতুকের বসতবাড়ি
কার্নিশের ওপারে বসে
যে যুগে অক্ষর সেজে ওঠে
দোয়াতের আত্ম কথায়
সুতিকা গৃহে জন্ম দেয়
গীতিময় স্থপতির
যখনই কবিতার সাজঘরে ফুল ফোটে
ভরে ওঠে গোলাবাড়ি ফসলে
মৃত পৃথিবীর দেহে দেয় প্রাণ
সাবেকী শিকড়গুলি ব্যাঙ্গমীর সুরে
আরও আবারও বসিয়ে চলে পৌনঃপুনিক
পুর্ণিমার সাথে অশরীরি খেলায়
আর জোনাকিরা খোদিত হয় স্বরবর্ণের
পাতায় আশিতে আসিওনার মত।
ললিপপ
পাকস্থলীর দাসত্বে অলৌকিক পশুগুলো
জেগে উঠে অলিন্দের সংসারে
খেপে উঠে হিংস্র মালভূমি ভাইয়ের বুকে
রক্ত ঝরিয়ে চেঙ্গিস খাঁ হয়ে ওঠে
তারপর জোয়ারে ভরে ওঠে হীরক মহল
সব সিংহাসনই ঝুলিয়ে রেখেছে
একটি করে ললিপপ্
সরলরেখাগুলি প্রচন্ড অবুঝ
আফিংএর ঘোরে ছুটে যায়
পেন্ডুলামের দিকে
তাবিজের স্পর্শে সমকোণও চৌচির হয়
আর অশান্ত হয়ে ওঠে চতুর্ভুজও
পৃথিবী আজ আগুন গিলেছে বিষের আগুন জ্বালাময়ী হয়ে উগরে দেয় কখনো অযোধ্যায় কখনো চট্টগ্রামে
অথচ তুমি আমি সব বর্ণমালা হিমঘরে
মাথাগুলি রেখে ঘুমাই যুগ যুগ ধরে
কারণ গ্রন্থগুলির ছোঁয়াচে শব্দ-রাশি শিকড় চালিয়েছে আমাদের স্নায়ুর ভেতর।
_
0 Comments