বার্লিনের ডায়েরি ( ৬২পর্ব / ভ্যাটিকান সিটির শেষ পর্ব)
চিত্ৰা ভট্টাচার্য্য
ভ্যাটিকান গার্ডেনে বেলভেদিয়োর উদ্যান যেন একটি বিলাস বহুল নবজাগরণের আনন্দ উদ্যান। নবম শতাব্দীতে প্রথম পোপের ব্যক্তিগত গার্ডেন অফ ইডেন এক শান্ত মরুদ্যান রূপে গড়ে উঠেছিলো। যেখানে এখনো সারাদিন সাইপ্রাস ,পাইনের ডালে বিচিত্র বর্ণের ভিনদেশীয় পাখির সমাবেশ ,তাদের জটলা। নিশ্চিন্তে গাছের ডালে বসে দোলখাওয়া আর কলতান। ঝর্ণার অবিরত ঝর্ঝরের মাঝে বেজে ওঠে সেন্টপিটার ব্যাসিলিকার বিশাল ঘন্টা ধ্বনির শব্দ। পাহাড়ের গায়ের প্রস্তর খন্ডের গায়ে ধাক্কা খেয়ে শব্দরাশি প্রতিধ্বনিত হওয়ায় যেখানে নিস্তব্ধতা বিঘ্নিত হয়ে চলেছে বারবার। ভ্যাটিকান পাহাড়ের খাড়া ঢালে গড়িয়ে চলা বিস্তীর্ন পান্না সবুজ চোখ জুড়োনো নরম ঘাসের কার্পেট।
গ্রীষ্মঋতুতে রোমের আকাশে সূর্য দেবের প্রখরতা যখন বাড়তেই থাকে তখন এই উদ্যানগুলোর গাছপালা নানারকম ফুলের বাগান ফোয়ারা মন্দির দ্বারা বিস্তৃত পথ এবং ভাস্কর্যগুলো সেকালে যেমন পোপের শান্তির নিবাস ছিল আজও তেমন টি ই আছে। দূরে ছায়া ঢাকা নীল পাহাড় বেলভেদিয়োর উদ্যানের পাশে ব্যাসিলিকার বিশাল গম্বুজের অপরূপ দৃশ্যে শ্ৰীময়ীর মন আচ্ছন্ন হয়ে আছে। চলার পথের ধারে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে স্নিগ্ধ সবুজে পা ফেলে শ্রী ভাবছিল এ ''জীবনে অনেক ধন পাইনি '' তারা নাগালের বাইরে বলে পাবার চেষ্টা ও করিনি। কিন্তু তবুও এই এক জীবনে যা পেয়েছি ভূভারতে তুলনা তার নেই। সে যে অক্ষয় ধন ' সম। না পাওয়া ধনের হিসেব কষতে গিয়ে দেখেছে সে যেন আজ বড়োই তুচ্ছ।
ভ্যাটিকান সিটি
এই পথে মিউজিয়াম প্রাঙ্গণে সারিবদ্ধ ভাবে সাজিয়ে রাখা বেলভেদিয়োর উদ্যানে অপরূপ সুন্দর গ্রীক রোমান মূর্তিগুলো এখোনো শ্রীময়ীর মনে স্মৃতির পাতায় উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। ইলিয়ড মহাকাব্যের ট্রয় নগরীর গল্প আজ কে না জানে ? সেই যুদ্ধের গল্পের ছবি ভাস্কর্য স্থির হয়ে দেখতে থাকলে দেখা ফুরোয় না। তিতির কে ও প্রচলিত কাহিনীর গল্প শোনায়।
সেই সময়ে ''জ্যোতিষী লাকুন'' ছিলেন ট্রোজানদের পক্ষে। দশ বছর যুদ্ধের পরে ও গ্রীকরা ট্রোজান দের হারাতে না পেরে ছল চাতুরীর আশ্রয় নিয়েছিল। তারা ট্রোজানদের দরজায় এক বিশাল কাঠের ঘোড়া রেখে অন্তর্ধান হয়েছিল। এবং ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা লাকুনের নিষেধ ছিল ট্রোজানরা যেন ঐ ঘোড়াটি কে দেশের অভ্যন্তরে না প্রবেশ করায়। কিন্তু গ্রীক দেবী এথেনা ও সমুদ্রের দেবতা পসাইদনের প্রেরিত ভয়ঙ্কর সর্পাঘাতে দুই পুত্র সমেত লাকুনের মৃত্যু হলে ট্রোজানরা নিজেদের জয়ী ও উপহার স্বরূপ প্রেরিত ভেবে কাঠের ঘোড়া টি নগরের অন্দরে নিয়ে আসে। এবং ঘোড়াটির পেটের ভিতরে লুকিয়ে থাকা গ্রীক সৈন্যরা রাতের গভীরে অন্ধকারে বেরিয়ে এসে বাইরে অপেক্ষমান অগণিত গ্রীক সেনাবাহিনীর জন্য নগরীর দরজা খুলে দেওয়াতে ট্রয় নগরীর ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। তারা অকাতরে লুটপাট চালিয়ে আগুন দিয়ে ট্রয় নগরী কে ভস্মীভূত করেছিল। ইতিহাসের সেই বহুল প্রচারিত ট্রয় নগরীর ধ্বংসের গল্পের চমকপ্রদ কাহিনীর ভাস্কর্য্যের সামনে দাঁড়িয়ে ওরা কল্পনায় ফিরে গিয়েছিল ঐতিহাসিক সেই অবিস্মরণীয় কর্মকান্ডের যুগে। এমনি পৌরাণিক গ্রীক দেবদেবী ইলিয়াড ওডিসির কাব্য গাঁথা কে উপজীব্য করে সারি সারি অসংখ্য শিল্প সৃষ্টির ভাস্কর্য্য যেন মহাকাল পেরিয়ে এসে দাঁড়িয়েছিল সেন্টপিটার্স ব্যাসিলিকার দরজায়। ভ্যাটিকান উদ্যান।
খুব কাছেই তিরতির করে ছোট্টছোট্ট ঢেউ তুলে বয়ে যাওয়া টাইবার নদীর তীর জুড়ে গড়ে ওঠা পৃথিবীর অন্যতম সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা বা সেন্টপিটারের রাজপ্রাসাদ ভ্যাটিকান সিটির অপর একটি ভ্রমণ স্থান। প্রাসাদ টি তে ৬৪ খ্রীষ্টাব্দে প্রেরিত ভাববাদী যীশুর শিষ্য শহীদ ক্রশ বিদ্ধ হয়ে মৃত সেন্টপিটার কে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। ঐতিহাসিক দের মতে যেহেতু সেন্ট পিটার্স সর্ব প্রথম পোপ বিবেচিত হয়েছিলেন তাই পোপবাদী ব্যক্তিগণ এখানে এই গীর্জাটি তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে স্মারক স্তম্ভ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। বিশ্বের দরবারে এই গীর্জাটি সেই প্রাচীন কাল থেকে যুগ যুগ ধরে ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের কাছে অন্যতম অতিপবিত্র ধর্মীয় তীর্থভূমি বা তীর্থ স্থান রূপে বিরাজিত হয়ে আসছে। তারই বিশাল প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে ঋষভ ও অদ্রিজা দুজনেই বাকরুদ্ধ। অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছে চারিদিক। অপূর্ব সুন্দর কারুকার্য্য ময় অট্টলিকার প্রাসাদ ভবন সেন্টপিটার্স ব্যাসিলিকা।
🍂
অন্দরে প্রবেশ করে ঋষভ প্রথমেই দেখিয়ে ছিলো প্রধান দরজার ওপরে যীশুর একনিষ্ঠ ভক্ত মহাত্মা সেন্টপিটারের উল্টো ভাবে ক্রশবিদ্ধ ধাতু নির্মিত রিলিফ চিত্র। এর অল্প কিছু দূরে সম্রাট কনস্টান্টাইনের বিশাল স্থাপত্য টি। সারাবিশ্বের ক্যাথলিক ধর্মের খ্রীস্টানদের কাছে এই গীর্জা টি অতি পবিত্র ধর্মীয় তীর্থভূমি। অর্দ্ধাবৃত্তাকারে সাজানো দুইপাশে পর পর সাদা ২৮৪টি শ্বেত পাথরের স্তম্ভ যার মাথার ওপর দাঁড়িয়ে আছে ১৪০ টি ধর্ম যাজকের মূর্তি। সেই শ্বেত পাথরের গোলগোল থামে ঘেরা চত্বর--শ্রী বলে তিতির আমরা বড় দিনের উৎসবে এই সেদিন ও টিভিতে যাকে বহুবার দেখেছি হাজার হাজার মানুষের ভীড়ে প্লাবিত নীরব প্রার্থণার সংগীতে মুখরিত যার কেন্দ্রস্থলে উদ্বেলিত হয়ে উঠছে ভ্যাটিকান সিটির আকাশ বাতাস।
এই বিশাল প্রাচীন গীর্জার অট্টলিকার আঙিনায় এক সাথে প্রায় ষাট হাজার মানুষ অবস্থান করতে পারে। প্রাঙ্গণটির শেষপ্রান্ত জুড়ে দাঁড়িয়ে ১৪২৬সালে নির্মিত প্রাচীন গীর্জা টি এক বিশাল রাজ প্রাসাদ। ঐতিহাসিকদের মতে প্রকৃতপক্ষে গীর্জাটি "গাইউসের স্মারক " এবং মন্যুমেন্ট বা স্মৃতি স্তম্ভ টি হলো বহু বছর ধরে অর্জিত ইতালীয়ান শৈল্পিক শ্রেষ্ঠত্বের একটি অনবদ্য নিদর্শন। সেন্টপিটার্স ব্যাসিলিকাটি ঘুরে দেখা শুরু হলো। এই ক্যাথলিক গীর্জাটি তো শুধুই ধর্ম ক্ষেত্র নয় ,এ এক ঐতিহ্য পূর্ণ সংস্কৃতি , সুসংবদ্ধ নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকা শহরটির সকল আকর্ষণের মূল কেন্দ্র। এই গীর্জাটি ৭০০ ফুট লম্বা এবং ভিতরের ব্যস প্রায় ৪৬৪ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট। গীর্জাটির মধ্যভাগ ১৫০ফুট এবং গম্বুজ টি ৪৫০ফুট উঁচু।
ঋষভ ছাদের ওপরে ওঠার জন্য সরু মত পেচানো সিঁড়িবেঁয়ে ওপরের দিকে উঠতে থাকলে তিতির শ্রী কে বলে এখানে সিঁড়ি ছাড়া ও লিফ্ট আছে চলো লিফ্টের দিকে এগিয়ে যাই । এই ব্যাসিলিকার বিশাল উঁচু ছাদের ওপর লিফ্টে নিমেষে পৌঁছে দেখেছিল অনতিদূরে টাইবার নদী ঘিরে সম্পূর্ণ ভ্যাটিকান শহরের এক অনিন্দ্য সুন্দর রূপ। কিছুটা সময়ের জন্য ওরা মা ,মেয়ে দু জনেই স্তব্ধ ও মোহিত হয়ে গিয়েছিল। শিল্পী মাইকেলেঞ্জেলো যে স্থাপনার স্বপ্ন দেখে বাস্তবে রূপায়ণ করার আগেই কালের করাল গ্রাসে হারিয়ে গেলেন ,তারই কিছু পরিবর্তন সাধন করে কার্লো মার্ডেনো এই অট্টলিকার সম্মুখ ভাগের শ্রী বৃদ্ধি ও প্রসারণ করে ছিলেন। তিনি যীশু খ্রীষ্ট ,ব্যাপ্টিস্ট জন এবং ঈশ্বরের বাণী প্রচারক দের বিশালাকার মূর্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মাইকেলেঞ্জেলোর মূল ডিজাইনের কিছু পরিবর্তন সাধন করেছিলেন। যার মাটিতে ছাদের কোণায় ও দেওয়াল জুড়েআঁকা চিত্রলিপি তে গাঁথা থাকে অপরূপ জীবনের কাব্য কাহিনী।
অমর শিল্পী দের অপরাজেয় জয় গাঁথা তাঁদের ঐকান্তিক সৃষ্টির অসামান্য পরিচয়। বার্নিনি , রাফায়েল মাইকেলেঞ্জেলোর প্রতিভার আকাশের নীল ধ্রুব তারার মত উজ্জ্বল জ্যোতিস্ক সম আলোয় উদ্ভাসিত। এত বিরাট গীর্জাটি জুড়ে নিবিড় নিস্তব্ধতা দেওয়ালের গায়ে কোণায় স্তম্ভে খিলানে দেবদূতের অলৌকিক স্পর্শ এক আশ্চর্য্য আকর্ষণে ঘুরে বেড়ায় এর সর্বত্র।
এবার ঋষভ প্রবল আগ্রহ নিয়ে হাসি মুখে শ্রী ও অদ্রিজা কে বলে অপরাজেয় শিল্পী মাইকেলেঞ্জেলোর সৃষ্টি " পিয়েতা " ভাস্কর্য্য টি কে খুব সামনে থেকে এখানে দেখতে পাওয়া যাবে। ন্যাশানাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে এই বিশ্ব বিখ্যাত ভাস্কর্যটির বিবরণ কতবার পেয়েছি। ইউরোপীয় নবজাগরণ বা রেনেসাঁস যুগের বিশ্ববিখ্যাত শিল্পী চিত্রকর ভাস্কর ও স্থপতি মাইকেলেঞ্জেলোর সৃষ্ট এ এক অনবদ্য কীর্তি। পঞ্চদশ শতাব্দীর একেবারে শেষে ১৪৯৮--৯৯ সালে নির্মিত এই অনুপম ভাস্কর্য টি শিল্পীর একটি অসাধারণ স্থাপত্য কীর্তি। ক্যারেরা মার্বেলে খোদাই করা মাতা মেরীর কোলে শায়িত হয়ে আছে মৃত যীশু। স্নেহ পরায়ণ কোমল মাতৃমূর্তির এক চিরন্তন অপরূপ দৃশ্য। ক্রশ বিদ্ধ থেকে রক্তাক্ত যীশুখ্রীষ্ট কে নামানোর পর মাতা মেরী তাঁর নিথর দেহ কোলে তুলে নিয়েছেন।
এখানে মাতা মেরী কে দেখানো হয়েছে বৃদ্ধ যীশুর তুলনায় খুব কম বয়সী। যতক্ষণ করুণা ধারায় সিক্ত মাতৃ মূর্তি টির দিকেশ্রী তাকিয়েছিল । ওর দুই চোখ ভরে জলে উপচে গড়িয়ে পড়ছিল। অদ্রিজার মনে হয় এ শুধুই সুদক্ষ শিল্পীর হাতে গড়ে তোলা ভাস্কর্য নয়। কানপাতলে যেন শোনা যাবে পাথরের বুকে সুগভীর প্রাণের স্পন্দন। কালজয়ী স্রস্টার অন্যতম প্রসিদ্ধ এক অপরূপ সৃষ্টি । মৃত সন্তান কে বুকে আঁকড়ে ধরে কোলে নিয়ে আগলে বসে আছেন সন্তান শোকাতুরা মা নিশ্চল কিংকর্তব্য বিমূঢ় পাথরের প্রতিমূর্তি --মা বসে আছেন অনন্ত কাল ধরে। একটি মোটা bullet proof কাঁচের আধারে স্থাপত্য টি কে রাখা হয়েছে।
অদ্রিজা বলে আলেক্সেই জুনেভাদের কাছে বহুবার শুনেছে ,পিয়েতা এই ইতালীয়ান শব্দ টির মানে দয়া বা করুণা। এই মূর্তিটি আসলে ফরাসি কার্ডিনাল জ্যঁ দা বিলেরের নির্দেশে গির্জায় তার স্মৃতি রক্ষার্থে একটি আলঙ্কারিক ফলক হিসাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু অস্টাদশ শতকে এই স্থাপত্য টিকে ভ্যাটিকানে আনা হয়েছিল। শোনাযায় একমাত্র এই আকর্ষণীয় পিয়েতা শিল্প কর্মটির মাতা মেরীর গায়ের বস্ত্রের এক প্রান্তে মাইকেলেঞ্জেলো তাঁর নিজের নাম টি লিখেছিলেন। কিন্তু কাঁচের ঘরে সুরক্ষিত মূর্তিটির বস্ত্র প্রান্তে লেখা মাইকেলেঞ্জেলোর নামের স্বাক্ষরটি শ্রী দেখতে পায়নি বলে ওর আফশোসের ও অন্ত ছিলো না। ব্যাসিলিকা গীর্জাটি বিশ্বের সবচেয়ে ধন সম্পদে পরিপূর্ণ জাঁকজমকে ভরা, চার দেওয়াল জুড়ে অপরূপ কারুকার্য্য ময়,এমন কি ছাদ থেকে দেওয়াল হয়ে মেঝের জমিন পর্যন্ত সর্বত্র কত বিখ্যাত শিল্পীর অপরূপ ভাস্কর্য্য চিত্রকলা -- নয়ন ভোলানো শৈল্পিক ঐতিহ্য। এর প্রতিটি অলিতে গলিতে মেঝেতে সিলিং এ কোণাতে মন নিবিড় আকৃষ্ট হয়ে জড়িয়ে থাকে। তিতির বলে যে দিকে তাকাবে সে দিকেই অব্যক্ত অঢেল সৌন্দর্য রাশি ,শিল্পীর হাতের কারুকার্য্য নিপুন তুলির টান মন কে প্রভাবিত করে। কিন্তু এতো ঐশ্বর্য্য এতো বিলাসিতার পিছনে প্রদীপের তলায় অন্ধকারের মত যে গল্প টি উঁকি দিয়ে যায় তাকে ই বা ভোলা যায় কি করে ?
কথিত আছে এখানেই যীশু খ্রীষ্টের সরাসরি ১২ জন শিষ্যের মধ্যে অন্যতম গালি থেকে আসা মাছ ধরে জীবিকা সংগ্রহ করা ধীবর পিটার একদা রোমে এসে তাঁর বিশ্বাস যীশুর বাণী নীরবে প্রচার করতে থাকেন। কিন্তু কুখ্যাত অত্যাচারী রোমান সম্রাট নিরো তাঁকে উল্টো করে নির্মম ভাবে অত্যাচারে র পর ক্রশ বিদ্ধ করে হত্যা করেছিলো । এবং ক্যালিগুলার সেই ওবেলিস্কের সামনে এই চত্বরে অন্যআরো অনেকের সাথে তাঁকে কবর দিয়েছিল। তিতির বলে ভাবতে শিহরণ লাগছে ! আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি এই ব্যাসিলিকার ভূমিতে তার ঠিক নীচের ঘরে সমাধিতে শায়িত আছেন ঈশ্বর ধন্য সেন্টপিটারের সাথে আরো কত সন্ন্যাসী পোপ। সেই চত্বরের ওপর দাঁড়িয়ে আছে সেন্টপিটার্স এই নিখুঁত কারুকার্য্য ময় ঐশ্বর্য্যের প্রতীক ব্যাসিলিকাটি । ভ্যাটিকান সিটির ঐতিহ্য মন্ডিত গর্ব অহঙ্কার পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা ধনী ,মর্যাদা পূর্ণ পবিত্র তীর্থ স্থান টি।
ঐতিহ্যের স্মারক গীর্জার সাথে একদিকে ফোয়ারা আরেক দিকের মধ্য স্থলের কেন্দ্র বিন্দু তে ওবেলিক্স স্তম্ভটি আকাশ ছোঁয়া । ব্যাসিলিকা চার্চ টি দেখে সেন্ট পিটার্স স্কোয়্যারের উল্টো দিকের পথ ধরে সেই উঁচু প্রাচীরের গা ঘেঁষে অনেক দর্শনার্থী দের সাথে ওরা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে নিঃশব্দে হেঁটে চলেছিল। সেন্টপিটার্স ব্যাসিলিকার প্রসারিত বিশাল তোরণ দ্বার টি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল। পাহাড়ের মাথা গাছ গাছালীর ফাঁক দিয়ে প্রবল বেগে শীতলতম বাতাস বৈছিল। ক্লান্ত বিধ্বস্ত শ্ৰীর পা আর চলতে চায় না।রাস্তার একটি ধার ঘেঁষে উঁচু কালভার্টের মত দেখে ও সেখানেই বসে পড়লো ।
বিদায়ী সূর্য কমলা রাঙা হয়ে ঢলে পড়েছে পশ্চিম পাহাড়ের মাথায় উঁচুনীচু ঢেউয়ের আড়ালে । মেহগিনি ,ওকের ছায়া ধীরেধীরে ক্ষুদ্রতর হয়ে আসছে। তার আবীর রাঙা আভায় টাইবারের জলে রঙ্গীন ছায়া ভাসে। শান্ত সমাহিত ভ্যাটিকান নগরীর নিয়ম শৃঙ্খলে বাঁধা জর্জরিত জীবনে পালা বদলের নিয়মের ঘন্টা বেজে ওঠে । সময় এবার শেষ। আসন্ন আঁধারের ছায়া নামে পৃথিবীর বুকে। শ্রীময়ী তখন ও এই সুন্দর ছোট্ট শহর থেকে সংগৃহিত জীবনের শ্রেষ্ঠ পরম ধন কুড়িয়ে নিয়ে --অজস্র রত্ন মনি সঞ্চয়ের ঝুলিতে যত্নে ভরে নিয়ে চলেছে আগামীর আশায় -- নতুন কোনো চলার পথের সংকেত নিয়ে নতুন ঊষার স্বর্ণ দ্বারের সন্ধান দেবে আগামীর ভোর।
বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇
0 Comments