জ্বলদর্চি

বাংলার ব্রত উৎসব ক্রমেই লুপ্ত হতে বসেছে/পর্ব ৩ /পি.শাশ্বতী


বাংলার ব্রত উৎসব ক্রমেই লুপ্ত হতে বসেছে
পর্ব  ৩

পি.শাশ্বতী
     

বাংলার উৎসব কথা অফুরান। প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর বাঙালি মেতে থাকে সারাবছর। গ্রামাঞ্চলে ও উপজাতি অঞ্চলের আনাচে কানাচে উঁকি দিলে পাওয়া যায় তাদের মধ্যেই সীমিত বহু উৎসব। যেগুলি ব্যাপ্তি ও প্রসার বেশি সেগুলিই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এরকমই 
ছিল 'গাজনের ঝাঁপ'। সারা চৈত্রমাস কিছু মানুষ যারা এই উৎসব এ প্রত্যক্ষ ভাবে অংশ ন্যায় শিব- দুর্গা সেজে ত্রিশূল হাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে। ' বাবা ভোলেনাথর চরণের সেবা লাগে। মহাদেব।' এই ধ্বনি তুলে তারা পথে পথে অর্থ সংগ্রহ করত। তারপর সংক্রান্তির দিনে গাজনের মেলায় ঝাঁপের আয়োজন করত। অনেকেই গায়ে লোহার হুকে নিজেদের বিদ্ধ করে ঝুলত।
কালের নিয়মে এই সব কষ্টকর খেলা বা পেশা এখন বন্ধের পথে। 
আরেকটি বহুল প্রচলিত ছিল 'ঝাপান' উৎসব। যেটি এখন বিলুপ্তির পথে।
‘ঝাপান’ শব্দটি শুনলেই সাপের দেবী মা মনসার পুজোর অনুষ্ঠানের কথা মনে পড়ে যায়। রাঢ়বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মা মনসা আরও অনেক নামেই পূজিতা হন। আঞ্চলিক দেবী হিসাবে তিনি বহু গ্রামের গ্রামদেবী রূপেই পুজো পান। যেমন বর্ধমানে তিনি জগৎগৌরী। আষাঢ় মাসে জগৎগৌরীর বাৎসরিক পুজো উপলক্ষ্যে ঝাপান উৎসব একটি গ্রামীণ লৌকিক উৎসব হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা থানার মণ্ডলগ্রাম, চোৎখণ্ড এবং কালনা থানার নারকেলডাঙা গ্রামে জগৎগৌরী মায়ের ঝাপান উৎসব অত্যন্ত জাঁকজমক করে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই কালনা থানারই উপলতি ও উদয়পুরের মনসামঙ্গল কাব্যের সতী বেহুলার ঝাপান খুবই বিখ্যাত। মা মনসাকে কোথাও কোথাও দিদি ঠাকরুন হিসাবেই পুজো করা হয়। এই জেলারই মেমারি থানার বসতপুরের ঝাপান আবার একটি অভিনব প্রকৃতির ঝাপান।আষাঢ় মাসের পঞ্চমী তিথিতে মণ্ডলগ্রামের জগৎগৌরীর পুজোকে কেন্দ্র করে যে ঝাপান উৎসবের বৈশিষ্ট হল মায়ের সঙ্গে মুনিরাজের বিবাহ। এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আশেপাশের গ্রামের মানুষেরও আনন্দে মেতে ওঠে। মণ্ডলগ্রামের পুজো শেষ হলে সেই রাতে নানা রকম বাজনাবাদ্যি নিয়ে মায়ের বিয়ে দেবার জন্য প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু বাস্তবে বিয়ে হয় না। তার কারণ গ্রামবাসীরা মনে করে  শেষ পর্যন্ত বিয়ে  হলে মাকে মুনিরাজের মন্দিরে রেখে যেতে হবে। তাহলে মায়ের মন্দির ফাঁকা পড়ে থাকবে। তাই তারা আবার ফিরে যায়। পরের বছরও এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। সঙ্গে আনন্দ উৎসব। এই ভাবেই চলতে থাকে বছরের পর মায়ের বিয়ে নিয়ে উৎসবানন্দ আর প্রতীক্ষা। 

🍂

ঝাপান উৎসবের রূপ এক-এক জায়গায় এক-এক রকম। মণ্ডলগ্রামের এক রূপ, আবার কোথাও সাপ খেলার মধ্যে দিয়ে এই উৎসব পালন করা হয়। বৈদ্যপুর গ্রামের প্রত্যেক পাড়া থেকে বের হয় ‘নাচঘর’। একটি গরুর গাড়ির উপরে বাঁশ বাখারি, কঞ্চি চটা ও রংবেরঙের কাপড় দিয়ে একটি ঘর তৈরি করা হয়। সেই ঘরে বাজনার তালে তালে স্ত্রী অথবা পুরুষ কখনো গান, কখনো নাচও করে। গ্রামের পথে পথে চলতে থাকে সেই গোরুর গাড়ি। এটিই হল ‘নাচঘর’।
ঝাপানের আর একটি আকর্ষণ ‘সঙের থাকা’। সঙ অর্থে মাটির পুতুল, আর থাকা বলতে থাক ইংরেজিতে যাকে বলে স্টেপ। এখানেও গোরুর গাড়ির উপর কোনো ঐতিহাসিক বা পৌরাণিক এমনকি সমকালীন কোনো ঘটনা অবলম্বনে তৈরি পুতুল থাকে থাকে সাজানো থাকে।
এইভাবেই পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকায় ঝাপান উৎসব পালনের কথা জানা যায়।

বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

2 Comments

  1. 'ভালোলাগা' নেবেন।

    ReplyDelete
  2. 'ভালোলাগা' নেবেন

    ReplyDelete